somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোপকাপি প্রাসাদ ইস্তাম্বুল শহর -৫

০২ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রাসাদের ভেতরে ঢোকার রাস্তায় প্রহরী অস্ত্র হাতে প্রহরা দিচ্ছে। দলে দলে পর্যটক ভেতরে ঢুকছে। আয়া সোফিয়ার সাথেই এই প্রাসাদ। তুর্কী সম্রাটদের অগুনতি রাজপ্রাসাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল এ প্রাসাদ। প্রায় ৪০০ বছর ধরে এখানে অটোম্যান সুলতানদের বাসস্থান এবং দরবার ছিল। তোপকাপি প্রাসাদ অনেকগুলো আলাদা আলাদা ভবন নিয়ে গড়ে উঠেছে । তুর্কী ভাষায় তোপকাপি মানে কামান দরওয়াজা। এই প্রাসাদে প্রহরীরা কামান নিয়ে গেটের উপরে এবং পাশে সবসময় প্রস্তুত থাকত। প্রাসাদটা সাগর কিনারে পাহাড়ের উপর বলে এখান থেকে বসফরাস প্রনালী এবং মারমারা সাগরের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়।অটোম্যান সুলতানরা ১৪৭০ সাল থেকে এখানে বসবাস শুরু করেন। ১৮৬৫ সালে সম্রাট আব্দুল মজিদের সময় সুলতানরা তোপকাপি প্রাসাদ ছেড়ে বসফরাস প্রনালীর পাশে বানানো নতুন ডোলমাবাচী রাজপ্রাসাদে চলে যান ।
চীনের ফরবিডেন সিটির মত তোপকাপি প্রাসাদ ইস্তাম্বুল নগরীর মধ্যেই আরেক নগরী। সাত লক্ষ বর্গমিটার এলাকা নিয়ে এই প্রাসাদ গড়ে উঠেছে। এখানে টাকশাল, স্কুল, লাইব্রেরী, মসজিদ, রাস্ট্রীয় কোষাগার ও পারিষদদের বাসস্থান । গোটা প্রাসাদ এলাকা উচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা।ইম্পেরিয়াল বা রাজকীয় গেট দিয়ে ঢুকলে প্রথম যে চত্বর পড়বে তা সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে প্রাসাদ রক্ষীদের বসবাসের স্থান, টাকশাল ইত্যাদি আছে।
তোপকাপি প্রাসাদের ইম্পেরিয়াল গেটের ডানদিকে রয়েছে তূর্কী হাম্মা্ম বা ফোয়ারা, এখানে ওজু ও গোসল করার ব্যাবস্থা রয়েছে। প্রাসাদ দেওয়ালের সাথে আছে হাজিয়া ইরেনী গীর্জা। এটাকে মসজিদে রুপান্তরিত করা হলেও এখানে নামাজ পড়া হতনা। ইরেনী গ্রীক শব্দ, এর অর্থ হল শান্তি। রোমান ভাষায় এ গীর্জাকে বলা হত সান্তা ইরেনী। প্রাসাদ রক্ষী অটোম্যান সৈন্য বা জেনেসারীদের কুচকাওয়াজের মাঠও ছিল এই প্রথমচত্বর।


গেট অফ স্যালুটেশান
এখন কোন জেনেসারী নেই এই প্রাসাদের ভেতরে তবে আজকে অনেক পর্যটকে প্রাসাদের ভেতর মুখরিত। একটু ঘুরে এসে এক উপর থেকে থেকে বসফরাস প্রণালী ও মারমারা সাগরের দৃশ্য দেখলাম কিছুক্ষণ, এখন এখান থেকে নীচের দিকে নামতে দেয় না।
প্রথম চত্বর থেকে দ্বিতীয় চত্বরে ঢোকার জন্য গেট অফ স্যালুটেশান দিয়ে ঢুকতে হয়। প্রশাসনিক এলাকা ছিল এই এলাকা, চত্বরের চারদিকে প্রশাসনিক ভবনগুলো বানানো হয়েছিল।দুই পাশের দুই উচু স্তম্ভের মাঝখান দিয়ে দ্বিতীয় চত্বরে প্রবেশ পথ গেট অফ স্যালুটেশান । এখান দিয়ে সুলতান ছাড়া অন্য কারো ঘোড়ায় চড়ে ভেতরে ঢোকার অনুমতি ছিল না। চত্বরের দক্ষিনদিকে বিরাট রাজকীয় রন্ধন শালা। প্রতিদিন ছয় হাজার লোকের খাবার রান্না হত এখানে । জেনিসারী বা সৈনিকদের কোয়ার্টার, হাসপাতাল , স্কুল ইত্যাদি ছিল এই অংশে।
রাজকীয় হেরেম ছিল সুলতান, ছেলে মেয়ে , উপ পত্নী, প্রধান খোজা সহ পরিবারের অনান্য সবার বাসস্থান। আরবী শব্দ হারেম এর অর্থ হলনিষিদ্ধ। হেরেম এখন যাদুঘরে পরিনত হয়েছে । সুলতানের কোন উপপত্নী সন্তান জন্ম দিলে তিনি স্ত্রীর মর্য্যাদা পেতেন। নিগ্রো খোজা ক্রীতদাসকে নিয়োগ দেওয়া হত হেরেমের রক্ষী হিসেবে। হেরেমের আইনকানুন নিয়ন্ত্রন করতেন সুলতানের মা সুলতান ভ্যালিড। দশম অটোম্যান সম্রাট সুলাইমানের শাসনকাল ছিল অটোম্যান শাসনের স্বর্নযুগ । তার সময়ে অটোম্যান সাম্রাজ্যের আয়তন ছিল ১ কোটী ৬০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। পারস্য থেকে ইউরোপ উত্তর আফ্রিকা প্রভৃতি এলাকা নিয়ে এই বিশাল সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল। সম্রাট সুলাইমান সর্বপ্রথম আইন এবং বিচার ব্যাবস্থার প্রনয়ন করে তা লিপিবদ্ধ করেন। সম্রাট সুলাইমান মাত্র ৪৬ বছর রাজত্বকরেন।
এরপর প্রাসাদের তৃতীয় চত্বর, এর গেটের সামনেই সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ন অনুষ্ঠানগুলো অনুষ্ঠিত হত। তৃতীয় চত্বরে সুলতান বা তার পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কারো ঢোকার অনুমতি ছিলনা।তৃতীয় চত্বরের কেন্দ্র হল সুন্দর সুবিশাল বাগান বা পার্ক। চত্বরের ডান দিকে ছিল সুলতানের কোষগার যা এখন যাদুঘর। এই চত্বরে বাইজেন্টাইন যুগের কিছু নিদর্শনের দেখা মেলে। প্রাসাদের সবচেয়ে আকর্ষনীয় হল যাদুঘর। মোট চারটে বিশাল হলঘরে রাখা আছে অমুল্য প্রত্নতাত্বিক সামগ্রী। এরপর আছে চতুর্থ চত্বর, চতুর্থ চত্বর থেকেবামে বসফরাস প্রনালী এবং ডানে মারমারা সাগর এবং আরো আধুনিক ইস্তাম্বুল দেখা যায়।সময় শেষের দিকে তাই ফিরে পাসাদ এলাকা থেকে দ্রুত বেরিয়ে এলাম।


ট্রামে চলতে চলতে শহরের দৃশ্য


তোপকাপি প্রাসাদ থেকে বের হয়ে আবার আয়া সোফিয়ার সামনে দিয়ে একটা সুন্দর ফোয়ারা বসানো বাগানে আসলাম। সেখানে কিছু ছবি তুলে সুলতান আহমেত ট্রাম স্টেশানে এলাম। আজকে ট্রামে করে শহরের দৃশ্য দেখার জন্য সুলতান আহমেত থেকে টি ১ ট্রামে উঠলাম। শহরের দৃশ্য দেখতে দেখতে ট্রাম লাইনের শেষ স্টেশন বাগছিলার গেলাম তারপর আবার ফিরতি পথে ইমানুনু স্টেশনে নামলাম। সুন্দর সাজান শহর। ট্রাম মাটির উপর দিয়ে চলে বলে আশেপাশের সবকিছু দেখা যায়। চলতে চলতে বায়েজিত এলাকাতে গ্র্যান্ড বাজারের গেইট দেখলাম, সময় কম তাই সবকিছু দেখা সম্ভব না, আরও কয়েকদিন ইস্তাম্বুলে থাকতে পারলে ভাল লাগত। ট্রামের সহযাত্রীরা ও বেশ আন্তরিক, বেশীরভাগই ইংরেজি বুঝে না, তবে এতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি।

- ঐতিহাসিক কিছু তথ্য নেট থেকে
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×