বসফরাসের পাশ দিয়ে কৃষ্ণ সাগর- কিলিয়স, ইস্তাম্বুল -২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
তাক্সিম স্কোয়ার থেকে মেট্রোতে করে হাচি ওসমান স্টেশনে আসলাম। এটা এই লাইনের শেষ স্টেশন। স্টেশনে এসে ট্রেনে উঠার জন্য তিন লিরা দিয়ে টোকেন নিতে হয়, ট্রাভেল কার্ড থাকলে দুই লিরা লাগে। মেশিনে কয়েন কিংবা ৫, ১০ টাকার নোট দিয়ে টিকেট করতে হয়। আমার কাছে কয়েন নেই, এক তুর্কী আমাকে বলল তাকে দুই লিরা দিতে, আমি তাকে টাকা দিলে সে আমাকে গেইট পার করে দিল তার কার্ড দিয়ে।
আমাকে বলল কোথায় যাবে, বললাম কৃষ্ণ সাগরের পাড়ে, সাগর দেখতে যাব।
চেনা কেউ সেখানে আছে কিনা জানতে চাইল
বললাম, না কেউ নেই
বলল শহর থেকে দূরে মানুষেরা ইংরেজি ভাষা বুঝবে না, তোমার সমস্যা হতে পারে।তোমার এই ক্রেইজি শখ হল কি করে?
তাকে বললাম, তুমি কৃষ্ণ সাগর দেখেছ?
সেখানে আমার কেউ থাকে না তাই যাওয়া হয়নি।
আমার জন্য শুভ কামনা করে আমাকে বিদায় দিল।
হাচি ওসমান স্টেশনে নেমে মাটির উপর এলাম, অল্প অল্প বৃষ্টি ছিল তখন ও।বাস স্টেশনে কয়েকটা বাস দাঁড়িয়ে ছিল, ১৫১ নাম্বার বাস ছিল না, অফিসে গিয়ে একজন কন্ডাক্টটারকে বুঝালাম আমি কিলিয়স যাব।
- নো প্রব্লেম
- টিকেট কোথায় পাব? টিকেট কাউন্টার দেখছি না
- এবারেও, নো প্রব্লেম
১৫১ নাম্বার বাস এসে গেল, দেখি সেই লোকই ড্রাইভার,আমাকে বাসে আসতে বলল। বাসে উঠার পথে একজন যাত্রীকে আমার জন্য তার কার্ড পাঞ্চ করে দিতে বলল। আমাকে বলল তাকে ২ টার্কিশ লিরা দিতে। আমি ৫ লিরার নোট দিলাম। টার কাছে তিন লিরা ছিল না , দুই লিরা দিল,আমি বললাম আর লাগবে না।একটু পরে সে বাকী টাকা ফেরত দিয়ে দিল, আমি ভাষা না বুঝলেও এদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হলাম।
বাসে করে বসফরাসের পাশ দিয়ে
বাস কখনো বসফরাসের পাশ দিয়ে, কখনো পাহাড়ের উপর দিয়ে যাচ্ছে,উপর থেকে নীচে ইস্তাম্বুল ও সাগরের নীল দৃশ্য অপুর্ব লাগছিল, প্রথমে একটু বৃষ্টি ও আকাশ মেঘলা ছিল আস্তে আস্তে মেঘ কেটে সূর্য উঁকি দিচ্ছে, আর আমার মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠছে। তুরস্ক দেখতে এসেছি, সোনালি আলোতে সেটা দেখলে মনটা ভরে উঠে।
কিলিয়স সেন্টার, ইস্তাম্বুল
প্রায় তিরিশটা পয়েন্টে বাস থামল, মাঝে মাঝে কেউ উঠছে কেউ নামছে। এক ঘণ্টার পথ পেরিয়ে আমি সারিয়ার জেলার কিলিয়স মারকেজ বা কিলিয়স সেন্টারে নেমে গেলাম। কিলিয়স একটা ছোট সুন্দর শান্ত জনপদ, আকাশে বিকেলের সোনালি আলো, আবহাওয়া একটু ঠাণ্ডা। হালকা পাহাড়ি এলাকা এই অঞ্চল। আসার পথে এই ৩৫ কিলোমিটার এলাকা দেখতে দেখতে এসেছি। এটা এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। পাশেই একটা বেশ বড় মসজিদ, সারা ইস্তাম্বুলে এ ধরনের অনেক মসজিদ আছে। এখানে একটা পার্কের মধ্যে বেশ সুন্দর মনুমেন্ট পাশে তুরস্কের পতাকা উড়ছে। আসে পাশে বেশ কিছু দোকানপাট। নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব জিনিষ সেখানে পাওয়া যায়। আমি কয়েক বোতল পানি কিছু ফল কিনলাম খাবার জন্য।
কৃষ্ণ সাগর- কিলিয়স, ইস্তাম্বুল
আমাকে কৃষ্ণ সাগরে যাবার রাস্তা দেখিয়ে দিল এক যাত্রী। বাস স্টপেজ থেকে সোজা রাস্তা চলে গেছে কৃষ্ণ সাগরের পাড়ে। এটা বেশ চড়াই পথ, প্রায় দশ মিনিট হাঁটার পর একটা হোটেল দেখলাম। সাগর দেখতে এসে হোটেল দেখতে ইচ্ছা করছিল না। তাই হোটেলের একজন কর্মীকে সাগর কোথায় জিজ্ঞাসা করলাম। বেশ আন্তরিক মনে হল লোকটাকে। আমাকে বলল এখানেই এবং ইশারায় নীচের রাস্তা দেখিয়ে দিল। ঘোরানো প্যাঁচানো সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কৃষ্ণ সাগর দেখতে পেলাম। বিশাল সাগর আর পাহাড়ের কাছাকাছি এসে মনটা ভাল হয়ে গেল। এই সাথে প্রকৃতি ও যেন হেসে উঠল, সোনালি আলোর ডানা মেলে দিল সারা এলাকাতে। পর্যটকরা তুরস্কে এপ্রিলেই আশা শুরু করে, কৃষ্ণ সাগর এলাকার রিসোর্টগুলো একটু ঠাণ্ডা বলে আরও কিছুদিন পর এগুলো ভরে উঠবে মানুষে। পাহাড় থেকে নেমে সাগরের পাড়ে গিয়ে কিছু ছবি তুললাম, শহর থেকে রাস্তা এসেছে সাগরের পাড়ে সে পথেই আশা যেত, রাস্তা চেনা ছিল না বলে আসতে পারিনি। এখানে বেশ কয়েকটা রেস্টুরেন্ট আছে, সামনেই বীচ, এখন পর্যটক নেই, তিনটি ঘোড়া নিয়ে মালিক অপেক্ষা করছে। পর্যটকরা এসব ঘোড়াতে চড়ে বীচে ঘুরে বেড়ায়।
কৃষ্ণ সাগর পাড়ে – কিলিয়স, ইস্তাম্বুল
প্রায় ঘণ্টাখানেক আশেপাশে এলাকা ঘুরে কৃষ্ণ সাগর দেখার শখ পূরণ করে সুলতান আহমেত এলাকার বুকিং দেয়া হোটেলে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হলাম। একই পথে কিলিয়স বাস স্টপেজে এসে বাসের জন্য অপেক্ষা করলাম কিছুক্ষণ। আমার সাথে আরও কয়েকজন যাত্রী অপেক্ষা করছিল। বাস চলে এলো কিছুক্ষণের মধ্যে, এক যাত্রী আমার জন্য তাঁর কার্ড পাঞ্চ করে দিল, আমি তাকে দুই টার্কিশ লিরা দিলাম। বিদেশী বলে সবাই আমাকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত বলে মনে হল। তাদের আন্তরিক ব্যবহারে আনন্দ পেলাম, মনে হল বন্ধুদের মাঝেই আছি, তবে কেউই ইংরেজিতে কথা বলতে পাড়ে না। বিকেল হয়ে গেছে, সূর্যের আলো তখনো আছে, পাহাড়ি উঁচু নিচু পথে ফিরে চলছি হাচি ওসমান মেট্রো স্টেশনে। পাহাড়ের উপর থেকে বস ফরাস প্রণালীর দৃশ্য দেখতে বেশ লাগছিল। শেষ বিকেলে পৌঁছে গেলাম মেট্রো স্টেশনে।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
এখানে সেরা ইগো কার?
ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।
‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন
মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন