কৃষ্ণ সাগর থেকে মারমারা সাগরে- ইস্তাম্বুল - ১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
নোবেল বিজয়ী তুর্কী লেখক ওরহান পামুকের ইস্তাম্বুল বইতে ইস্তাম্বুল শহরের প্রাচীন কালের চেহারা এবং কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য নিয়ে অনেক দুঃখের কথা জেনেছি। সেই ইস্তাম্বুল শহর মনের ভেতর তার হারানো অতীতের দুঃখ লুকিয়ে রেখে এখন আবার নতুন ভাবে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে। এখন ইস্তাম্বুলে গেলে অতীতের হারানো নিদর্শনের পাশাপাশি প্রাচুর্যপূর্ণ বর্তমান চোখে পড়বে। আমার কাছে ইস্তাম্বুলকে একটা আন্তরিক আর সুন্দর শহর বলে মনে হয়েছে। এই শহরের মানুষ, নীল আকাশ, বসফরাস আর মারমারা সাগরের গাঢ় নীল জলের অপুর্ব দৃশ্য যে কোন মানুষের মনকে উতলা করবেই। এখানকার মানুষের উদারতা যেন বেশ ভালভাবে অনুভব করা যায়। সপরিবারে মনের আনন্দে এরকম একটা দেশে যাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
তুরস্কে বেড়ানোর শখ অনেক আগে থেকেই ছিল, সময় আর সুযোগের অভাবে তা এতদিন হয়ে উঠেনি। তাই এবার যখন সুযোগ পেলাম তখনই আর দেরী না করে ইস্তাম্বুলে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।আমি ইস্তাম্বুলে যাচ্ছি জেনে তুরস্কের এক পুলিস অফিসার আমাকে তাঁর নাম ঠিকানা লিখা একটা চিঠি দিল, কোথাও যদি কোন সমস্যাতে পড়ি তাহলে এটা দেখাতে বলল। তাঁর আন্তরিকতা দেখে বেশ ভাল লাগল। সাউথ সুদানের জুবা থেকে টার্কিশ এয়ারের বিমান উড়ে না তাই উগান্ডার এন্টেবি থেকে ইস্তাম্বুল হয়ে দেশে ফেরার প্ল্যান করলাম।
ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নেমে প্রথমে ইমিগ্রেশনে গেলাম। অফিসাররা তেমন ইংরেজিবোঝে না, বাংলাদেশীদের জন্য অনএরাইভাল ভিসার ব্যবস্থা আছে। কাউন্টারে পুলিস অফিসার পাসপোর্টে সিল মেরে দিল।প্রথমে লাগেজ জমা দিলাম। ২৪ ঘণ্টার জন্য ১৮ টার্কিশ লিরা, এর বেশী এক ঘন্টার জন্য হলেও আরও ১৮ টার্কিশ লিরা লাগে। লাগেজ জমা দিয়ে বাহিরে এলাম। সুন্দর পরিচ্ছন্ন এলাকা, সামনেই হাভাতাস কোম্পানির সুন্দর চকচকে বাস দাঁড়িয়ে আছে। এই বাস সরাসরি তাক্সিম স্কোয়ারে যায়। ভাড়া দশ টার্কিশ লিরা।
এক ঘণ্টা সময় লাগে তাক্সিম স্কোয়ার যেতে, পথে শহরের নতুন এ পুরাতন স্থাপত্যের দৃশ্য, বসফরাস প্রণালী দেখতে দেখতে চললাম। একটু বৃষ্টি হচ্ছিল, আকাশ মেঘলা, আশা করছিলাম ঝকঝকে সূর্যের আলো। বাহিরে ১৪/১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা, জ্যাকেট পরে নিয়েছি তাই কোন সমস্যা নেই।
তাক্সিম স্কোয়ার
তাক্সিম স্কোয়ার বিশাল এলাকা নিয়ে। মাঝে গোল চত্তর , সেখানে মাটির নীচে মেট্রো স্টেশন।টার্কিশ ডিলাইট মিষ্টি, ঘরে বানানো চকলেট, টার্কির কাবাব ও অন্যান্য খাবারের অনেক দোকান আছে।
তাক্সিম স্কোয়ার
ফলের, ফুলের দোকান , ব্রান্ডের জিনিষপত্রের দোকান সবই আছে এখানে। এটা বেশ পস এলাকা।এখানে একটা ছোট ট্রাম চলে, পর্যটকেরা সেই ট্রামে চড়ে পুরো এলাকা ঘুরে দেখতে ও ছবি তুলতে পারে। ঘুরতে ঘুরতে দুপুর হয়ে গেল খাবার সময়, তুরস্কে এসেছি তাই তুর্কী খাবার খেতে হবে, একটা বড় এবং বেশ চালু রেস্টুরেন্টে গেলাম। অনেক খাবার সাজানো আছে, আরও বানানো হচ্ছে, মানুষ আসছে অর্ডার দিচ্ছে। বেশ ব্যস্ত পরিবেশ।আমরা দুজন দু রকমের মেইন ডিশের অর্ডার দিলাম সাথে কোমল পানীয়। ভেতরে বসতে গিয়ে দেখলাম ব্রেড ফ্রি, সাথে নানা ধরনের সালাদ ও ফ্রি। মজা করে খেয়ে আবার ঘুরতে বের হলাম।
লোভনীয় তুর্কী খাবারের দোকান- তাক্সিম, ইস্তাম্বুল
তাক্সিম স্কোয়ারে বেশ বড় একটা স্টারবাক কফির আউটলেট আছে । এখানে নানা স্বাদের কফি এবং এর সাথে সম্পর্কিত জিনিসপত্র বিক্রি হয়। বসার ব্যবস্থা ও বেশ ভাল, আমরা তৃপ্তির সাথে কফি খেলাম।
এবার ইস্তাম্বুলে আসার আগে কয়েকটা জায়গা ঘুরে দেখার প্ল্যান করেছিলাম।থাকার জায়গা সুলতান আহমেতএলাকা, এটা ইস্তাম্বুলের বেশ পুরানো এবং ইউরোপীয় অংশে। এখান থেকে মারমারা সাগর তুর্কী ভাষায় মারমারা দেনিজি এবং বসফরাস প্রণালী দেখা যায়। বসফরাস প্রণালীকৃষ্ণ সাগর, তুর্কী ভাষায় কারা দেনিয এবং মারমারা সাগরের সাথে যুক্ত করেছে। মারমারা সাগর থেকে অ্যাজিয়ান সাগর হয়ে ভূমধ্যসাগরের যাওয়ার বিখ্যাত জলপথ। এই পথের কারনেই তুরস্ক তথা ইস্তাম্বুল কৌশলগত দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু ইস্তাম্বুলে এসেছি তাই কৃষ্ণ সাগর দেখে যাওয়ার ইচ্ছা হল। ইস্তাম্বুলের পর্যটন এলাকা থেকে একটু দূরে বলে অল্প সময় নিয়ে যারা ইস্তাম্বুলে বেড়াতে আসে তারা সাধারণত কৃষ্ণ সাগর এলাকায় যায় না। তবে বেশ সহজে এখানে আশা যায়। ইন্টারনেট থেকে যাবার রুট এবং কিভাবে যাব তা জেনে নিলাম।
হাচি ওসমান মেট্রো স্টেশন
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
এখানে সেরা ইগো কার?
ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।
‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন
মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন