somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রাভেলগ - উইন্ডো অব দা ওয়ার্ল্ড- শেনঝেন

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


উইন্ডো অব দা ওয়ার্ল্ড


টিকেট কিনে আমরা ভিতরে গেলাম। সাথে ফ্রি ম্যাপ নিলাম স্ট্যান্ড থেকে। এখানে সারা পৃথিবীকে মহাদেশ হিসেবে ভাগ করে সেসব মহাদেশের সব বিখ্যাত স্থাপনার রেপ্লিকা বানানো হয়েছে। ভেতরে ঢুকার পরেই স্টেডিয়ামের মত একটা খোলা মঞ্চ, এর চারপাশ দিয়ে ভেতরে যাওয়া যায়। সুন্দর খোলা মেলা জায়গা, ম্যাপ দেখে আমরা যাত্রা শুরু করলাম। সিঙ্গাপুরের মারলায়ন, দেখে একটু এগিয়ে গেলে আইফেল টাওয়ার চোখে পড়ে। টাওয়ার এলাকাতে প্যারিসের রাস্তা ও বুলেভারডের দৃশ্য দেখা যায়। এরপর বাকিংহাম প্যালেস, ডউনিং স্ট্রিট ও লন্ডন ব্রিজের রেপ্লিকা আছে। সুন্দর লাগছে হল্যান্ডের উইন্ড মিল ও রঙিন ফুলের বাগান। কৃত্রিম এই বাগানে সুন্দর সুন্দর রঙিন পাখা ঘুরছে।


উইন্ডো অব দা ওয়ার্ল্ড- শেনঝেন
পার্কের ভিতর একটা মিনি ট্রেন চলে। টিকেট করে এটাতে চড়া যায়। একটা চক্কর দেয়া যায় এই ট্রেনে করে। সেখান থেকে ইতালির পিসার হেলানো টাওয়ার, গ্রিসের কলিসিয়াম, ইতালির শহরের দৃশ্য দেখতে দেখতে চলেছি। পথে ফ্রেস হওয়ার ব্যবস্থা আছে। হালকা খাবারের দোকান আছে মাঝে মাঝে। দাম তেমন বেশী না। আবহাওয়া ভাল, সোনালি রোদ মাখা দিন, আমরা এগিয়ে চলেছি।

উইন্ডো অব দা ওয়ার্ল্ড- শেনঝেন
ভারতের তাজমহল, কম্বোডিয়ার এঙ্কারওয়াত মন্দির দেখে আমরা ওশেনিয়ার দিকে এগিয়ে চলছি। সেখানে সিডনি অপেরা ও সিডনি হারবার ব্রিজের রেপ্লিকা বানানো আছে। হাওয়াই দ্বীপের পরিবেশের সাথে মানিয়ে আলোহা মানে স্বাগতম জানাচ্ছে একটা এলাকা। সেখানে দ্বীপের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা আছে। দুপুর বেলা কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নিয়ে হালকা খাবার খেয়ে নিলাম। এখানে একটা কৃত্রিম লেক আছে, লেকটা পানিতে ভাসমান নানা রঙের ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো।


উইন্ডো অব দা ওয়ার্ল্ড- শেনঝেন
নায়াগ্রা জলপ্রপাত, আফ্রিকার অরণ্য, মিসরের পিরামিড, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন সব কিছুই দর্শকদের মুগ্ধ করে। আমরা স্কাই ট্রেনে করে সারা এলাকা একবার ঘুরে এলাম। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে একটা বোট রাইডের ব্যবস্থা আছে। বাচ্চা বুড়ো সবাই সেখানে মজা করে চড়ে আর পানিতে ভিজছে। এখানে রাইড গুলোতে টিকেট কিনে উঠতে হয়। ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হলে একটু বসে আইসক্রিম বা পানীয় খেয়ে আবার দেখছি। সারাদিনই কেটে যায় এই জগতে। সন্ধ্যার দিকে আমরা আইফেল টাওয়ারে উঠার জন্য টিকেট করলাম। দুই ধাপে টাওয়ারের শীর্ষে পৌঁছে গেলাম। সেখান থেকে পুরো এলাকা দেখা যায়, আরও দূরে হংকং দ্বীপের স্কাই লাইন ও দেখা যায় এখানে উঠলে। দুরবিন লাগানো আছে এখানে, পুরো শহরটাও একনজরে দেখা যায় এখান থেকে। দেশ থেকে এত দূরে এসে এসব দেখে মনে হচ্ছে ভ্রমনটা বেশ শিক্ষামূলক এবং আনন্দদায়ক হয়েছে। আমরা একটা রাইডেও চড়লাম, প্রাচীন কালের প্রাণীদের জগতে দ্রুত ঘুরে আসা।
সন্ধ্যায় একটা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলো খোলা স্টেজে। এত সুন্দর অনুষ্ঠান আমরা কেই আগে দেখিনি। ডিজিটাল এফেক্ট, নান রঙের লাইট আর সাউন্ড সাথে শিল্পীদের অপূর্ব উপস্থাপনা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। অস্ট্রেলিয়ার সাগরের দৃশ্যের পর ক্যাঙ্গারু নৃত্য, ফিশ শো, সানসেট ডান্স , হাওয়াইয়ান ডান্স, তিমির শো, সাগর পাহাড়ের ডিজিটাল মনোরম দৃশ্য এরকম প্রায় পঁচিশ ত্রিশ ধরনের শো , এক কোথায় অপূর্ব। কিভাবে যে দুই ঘণ্টার উপর সময় পেরিয়ে গেছে টেরই পেলাম না।


শেনঝেন বিমান বন্দর
বাহিরে এসে আবার মেট্রোতে চড়ে বসলাম। হোটেলে আসার আগে ডিনার সেরে নিলাম। আগামিকালের জন্য কিছু জিনিষ কিনলাম। রাতে আর দেরী না করে ঘুমাতে গেলাম। পরদিন সকাল ৮ টার সময় চায়না সাউদার্নের বিমানে কুনমিং এর উদ্দেশে আমাদের রওয়ানা হতে হবে। আমাদেরকে বেশ ভোরে উঠতে হয়েছিল, রাতে ঘুম হয়নি তেমন। ভোর ৫ টার উঠে গেলাম এই সময় ও এখানে অনেক ট্যাক্সি পাওয়া যায়। ট্যাক্সি নিয়ে ছয়টার সময় শেনঝেন বিমান বন্দরে পৌঁছালাম। এখানে নাস্তা সেরে নিয়ে পাশের স্টোর থেকে কিছু কেনাকাটা করলাম।
সোয়া আঁটটার সময় আমাদের বিমান কুনমিং এর পথে উড়াল দিল। ফ্লাইট টাইম দুই ঘণ্টা পনেরো মিনিট। সাড়ে দশটায় বিমান কুনমিং ল্যান্ড করল। ১১-৩০ মিনিটে হোটেলে ফিরে এলাম। বিকেল বেলা কুনমিং ওয়াল মার্ট স্টোরে গেলাম, সন্ধ্যা সেখানে কাটিয়ে আবার হোটেলে ফিরে এলাম। রাতে হোটেলের পাশের স্টোর গুলোতে গেলাম। এসব দোকানে অনেক জিনিসপত্র বেশ সস্তায় পাওয়া জায়।আগে এখানে আসার সময় হয়নি। আজ একটু ঠাণ্ডা পড়েছে, হালকা বৃষ্টিও হয়েছে।
পরদিন সকাল বেলার আবহাওয়া বেশ ঠাণ্ডা, রাতে বৃষ্টি হয়েছে, দুপুরে খেয়ে বিমান বন্দরের দিকে রওয়ানা হলাম। একটার সময় আমাদের ফ্লাইট, দুটার দিকে চায়না ইস্টার্নের বিমান কুনমিং থেকে ঢাকার উদ্দেশে উড়াল দিল বিকাল চারটার সময় বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করল আমাদের বিমান। চীন দেশ আর চীনের প্রাচীর ঘুরে দেখার কয়েকদিনের স্মৃতি নিয়ে ফিরে এলাম নিজ দেশে, আমার প্রিয় বাংলাদেশে।

মঙ্গোল ঠেকাতে
প্রাচীর টিকাতে,
প্রান দিল লাখে লাখে
প্রজাকুল ঝাঁকে ঝাঁকে।
রাজাদের শখে হায়
প্রজাদের প্রান যায়,
তারপর ও থাকেনি
পরাজয় ঠেকেনি।
ইতিহাসে আজও তাই
যুগে যুগে পড়ে যাই।
রাজা আসে রাজা গেলে
যুগে যুগে বয়ে চলে
সাক্ষীর জয়গান
প্রাচীরের গুণগান।
বহুদুর থেকে এসে
চীনারাই দেখছে
মনে পড়ে কত কথা
ঠেকে তারা শিখছে।
চীন দেশ আজ অতি
উন্নতি দ্রুত গতি,
ঝকঝকে চারিদিক
করে শুধু ঝিকমিক,
চীনদেশে গেলে তাই
প্রাচীর দেখে ভাই,
লেগে পর নিজদেশে
দেশ সেবা কর হেসে।
চীনারা যা পেরেছে, আমরাও পারব
সোনার এই দেশটাকে, সোনা দিয়ে গড়ব।।



৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×