somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রাভেলগ চীন-৫ কুনমিং থেকে ট্রেনে বেইজিং এর পথে

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সফট স্লিপার কোচ
ওয়েটিং এরিয়া থেকে গেইট দিয়ে ঢুকে প্লাটফর্মের বে দিয়ে কিছুদুর এগিয়ে গিয়ে আবার সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামতে হল। সিঁড়ির পাশেই আমাদের কামরা। ঝকঝকে ট্রেন, পরিচ্ছন্ন কামরা আমরা আমাদের রুমে সেট হলাম। এই ট্রেনে প্রতিটা বগির জন্য এটেন্ডেন্ট আছে। আমাদের পাসপোর্ট ও টিকেট আবার চেক করল, নিরাপত্তার জন্য ছবি তুলল। আমদের এই ট্রেনে কিছু শিক্ষানবিশ আছে, তাদের আজ প্রথম চাকুরী তাই খুব সুন্দর ভাবে যাত্রীদের দেখভাল করা হলো। এটেন্ডেন্ট আমদের রুমে এক ফ্লাস্ক গরম পানি দিয়ে গেল।


ট্রেন চলতে শুরু করল। জানালা দিয়ে চীন দেশের জনপদ দেখতে দেখতে চলেছি।ইউনান প্রদেশের পাহাড়গুলো বেশ উঁচু, নিচে পাহাড়ের উপত্যকাতে চাষের জমি, মাঝে মাঝে কিছু ঘরবাড়ী চোখে পড়ে। দুই ঘণ্টা চলার পর একটা বড় ট্রেন স্টেশান দেখলাম। ট্রেন এখানে থামেনি, তবে বেশ পরিছন্ন ও গুছানো এই স্টেশান। ইউনান প্রদেশ পাহাড়ি এলাকা, বেশ উঁচু পাহাড় সারির পাশ দিয়ে ট্রেন চলছে। মাঝে মাঝে পাহাড়ের টানেল দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে, এসব টানেলের ভেতর বেশ অন্ধকার, অনেক টানেল পার হলাম এই ট্রেন ভ্রমনে। কোন কোন টানেল পার হতে পাঁচ সাত মিনিট পর্যন্ত সময় লাগে। দুপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেল। মানুষ কম, মাঝে মাঝে চষা জমি ঝোপঝাড় ও দেখলাম। পাওয়ার টিলার দিয়ে অনেক জায়গাতে চাষ হচ্ছে।
অনেক নতুন নতুন স্টেশান বানানো হচ্ছে, পুরানো টানেল বাদ দিয়ে নতুন টানেলের কাজ চলছে। স্টোন ফরেস্টের মত পাথুরে পাহাড়ি এলাকা ও পার হয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। একশ ষাট কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলছে, আমরা পাহাড়ের উপরে পাতা লাইনের উপর দিয়ে চলছি। নীচে নতুন শহর হচ্ছে। বড় বড় কন্ডোমিয়াম তৈরি হচ্ছে। এগুলো বানানো হলে আশেপাশের মানুষ এখানে চলে বসবাস করবে। ছোট বাড়িঘর গুলো ভেঙ্গে চাষের জমি বানানো হবে। সারা চীন জুড়ে যেন এই উন্নয়নের জোয়ার চলছে।
অনেক নাম না জানা স্টেসান পার হয়ে আমরা বেইজিঙের পথে চলেছি। এই ট্রেন সাঁইত্রিস ঘণ্টা চলার পথে উনিশটা স্টেশানে থামে। পথে অনেক দূর অবদি সর্ষের ক্ষেত আর ধান ক্ষেত দেখলাম। অনেক এক্সপ্রেস ওয়ে বানানো হচ্ছে দেখতে পেলাম। পথে নদী পার হলাম নদীর উপর বড় ব্রিজ, নীচে ছোট নৌকা আর মাঝে মাঝে লঞ্চ দেখা যায়। নদীর পারে বেশ কিছু কারখানাও আছে।
দুপুরে ডাইনিং কারে গেলাম। সুন্দর ছিমছাম পরিবেশ। পরিস্কার রান্না ঘর। আমি খাবার অর্ডার দিতে চাই, আমার কথা বা ইশারা তারা বুঝতে না পেরে হেসে কুটি কুটি। একজন স্টাফ আমার কাছে বাংলাদেশের টাকা চাইল, তাকে একটা নোট দিলাম বেশ খুশি। এই ট্রেনে দুপুরে ও সন্ধ্যা ছয়টার সময় খাবারের ট্রলি নিয়ে ডাইনিং স্টাফরা বগিগুলোতে যায়, যাত্রিরা সেগুলো কিনে নেয়। আমাদের এটেন্ডেন্ট থাইল্যান্ড থেকে হসপিটালিটি মানেজমেন্টের উপর কোর্স করে এসেছে। সে ইংরেজি বলতে পারে। আমরা তার সাহায্য নিয়ে চিকেন আর ডিমের কারির অর্ডার দিলাম সাথে ভাত। বেশ মজা করে ডিনার করলাম।
রাতে ভাল ঘুম হল। সকালে একটু মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি হয়েছে রাতে, মাঝে মাঝে বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে চলছে ট্রেন। অনেক গুলো শহর আর জনপদ পার হয়ে আমরা চলছি। কোন কোন জায়গা বেশ উন্নত, কোথাও উন্নয়নের কাজ চলছে। সব মিলিয়ে ট্রেন ভ্রমন বেশ মজাই লাগছে। দুপুরে আবার ডাইনিং কারে এসে খেলাম। এখন আর বাহিরে বেশী খেয়াল করছি না, ট্রেন চলছে একই গতিতে। মাঝের স্টেশানে ট্রেন থামার পর কিছু যাত্রী নেমে গেছে, অনেকে আবার ট্রেনে উঠেছে বেইজিং যাবে বলে। বেইজিং এর কাছাকাছি হচ্ছি আমরা , রাত হয়ে গেছে, রাত এগারটা বিশের দিকে আমরা বেইজিং ট্রেন স্টেশানে পৌঁছালাম।স্টেশান থেকে প্লাটফর্ম ধরে অনেক দূর হেঁটে ট্যাক্সি নিলাম। সুন্দর সাইন পোস্টিং করা ইংরেজিতে, কোন অসুবিধা হয়নি। ট্যাক্সিকে ঠিকানা বলে দিলাম, আমাদের এপার্টমেন্টে আসতে আসতে রাত বারটা দশ বেজে গেল।বেইজিং শহর সারা রাত জেগে থাকে। আমরা রুমে এসে একটু সেট হয়ে খেতে বের হলাম। সামনেই একটা ম্যাকডোনাল্ডের দোকান পেলাম, সেখানেই রাতের খাবার সেরে নিলাম। এই সময় ও অনেক মানুষ এখানে খেতে এসেছে।
বেইজিং এ প্রথমত আমরা গ্রেট ওয়াল দেখতে যাব, আজ বেশী রাতে আসাতে সেটা সম্ভব হবে না। আগামিকাল তাই তিয়েনআনমেন স্কোয়ার ও ফরবিডেন সিটি দেখতে যাব। জিয়াংগোমেন মেট্রো স্টেশনের কাছে আমাদের এপার্টমেন্ট, বেশ সুন্দর এলাকা।সকাল বেলা মেট্রো স্টেশনে গেলাম, এখানে ইংরেজিতে লিখা মেট্রো স্টেশনের লোকেশান ম্যাপ রাখা আছে। জিয়াংগোমেন মেট্রো স্টেশন থেকে এক নাম্বার লাইনে তিন স্টেশন পরে তিয়েনআনমেন ইষ্ট স্টেশন এখানে নেমে তিয়েনআনমেন স্কোয়ার ও ফরবিডেন সিটিতে যাওয়া যায়। কয়েন বা টাকা দিয়ে টিকেট কেনা যায়। মেট্রোর টিকেট কিনে চড়ে বসলাম। অনেক মানুষ, ট্রেন ও অনেক কাজেই সবাই চলছে।


ফরবিডেন সিটি


তিয়েনআনমেন ইষ্ট স্টেশনে এসে আমরা উপরে উঠে এলাম। বেশ ভিড়, সামনে একটু এগিয়ে গেলে তিয়েনআনমেন স্কোয়ার আর এর উল্টা দিকেই একটু দূরে ফরবিডেন সিটি। প্রথমে ফরবিডেন সিটিতে যাওয়ার প্ল্যান করলাম। টিকেট কেনার জন্য বিশাল লাইন। একজন গাইড আমাদের কাছে এসে জানালো সে কিছু টাকা পেলে এই ভিড় বাদ দিয়ে অন্য যায় দিয়ে আমাদেরকে টিকেট কাউন্টারে নিয়ে যাবে। আমরা তার সাথে চললাম। অনেক ঘুরে একটা পার্কের মাঝ দিয়ে অবশেষে টিকেট কাউন্টারে এলাম। এই পার্কে ঢুকতে আবার টিকেট করতে হয়।

৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×