ট্রাভেলগ চীন-৩ স্টোন ফরেস্ট , কুনমিং
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
দুপুরের একটু আগে আমরা রওয়ানা হলাম স্টোন ফরেস্টের উদ্দেশ্যে, -জিওজিয়াং কেইভ থেকে স্টোন ফরেস্ট প্রায় এক ঘণ্টার পথ। কুন মিং শহর থেকে স্টোন ফরেস্ট ১২০ কিলোমিটার দূরে, সরাসরি আসলে প্রায় দুই ঘণ্টার বেশী সময় লাগে। আবার যাত্রা শুরু, কেইভের সুন্দর এলাকা ছাড়িয়ে আমরা আবার পথে নামলাম। রাস্তা বেশ সুন্দর, ট্রাফিক তেমন নেই, অনেক ট্রাভেল এজেন্সি নিজেদের বাসে করে পর্যটকদের নিয়ে যাচ্ছে, প্রায় সবাই চিনা।পথে একটা আপেলের বাগানে থামলাম। অনেক এলাকা নিয়ে এই ফলের বাগান, গাছে এখন ফল নেই তবে কিছুদিনের মধ্যেই তা ফলে ভরে উঠবে, এগুলো বিদেশে ও যাবে,এদেশে অনেক মজার মজার ফল আছে। ফল বাগানে বিরতি নিয়ে আমরা আবার চলছি, এখন পথের পাশে অনেক ছোট বড় পাথরের বোল্ডার দেখলাম, আমরা স্টোন ফরেস্টের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। স্টোন ফরেস্টের কাছাকাছি ট্রেন স্টেশান আছে, কুনমিং শহর থেকে ট্রেনে করে এখানে আশা যায়।ভাষার কারনে ট্রেন থেকে নেমে স্টোন ফরেস্টে যাওয়া একটু কষ্ট ও হতে পারে বিদেশী নবাগতদের জন্য।
স্টোন ফরেস্টের এন্ট্রি পয়েন্টে
এখানে কাছাকাছি একজায়গাতে রাস্তার পাশে স্থানীয় লোকজনের জন্য খাবারের ব্যবস্থা আছে, আমাদের ড্রাইভার গাড়ি কাছের পেট্রোল স্টেশানে পার্ক করে খেতে গেল। সহজে রান্না করা চীনা খাবার, সাথে ফল ও আছে, অনেক মানুষ এখানে বসে চুলা থেকে নামানো খাবার খাচ্ছে। স্টোন ফরেস্টের কাছাকাছি আমরা চলে এসেছি। ভেতরে বেশ বড় এলাকা জুড়ে পারকিং। গাড়ি রেখে আমরা একটু হেঁটে এগিয়ে গেলাম। গাইড টিকেট করতে গেল, টিকেট কাউন্টারে বেশ বড় লাইন। টিকেট নিয়ে আবার লাইনে দাঁড়ালাম, এখানে দর্শকদেরকে বিশেষ ট্রলিতে উঠিয়ে স্টোন ফরেস্টের মূল এলাকাতে নেয়া হয়।
স্টোন ফরেস্ট – কুনমিং
সেখানে নেমে হেঁটে হেঁটে পাথরের বাগানে ঘোরা। টিকেটের একটা অংশ রেখে দিতে হয় ফেরার পথে আবার গাড়িতে চড়ার জন্য।আমরা যখন স্টোন ফরেস্টের ভেতরের দিকে যাচ্ছি তখন দুপুর হয়ে গেছে, সূর্যের সোনালি, আলো নীল আকাশ আর হালাকা হাওয়াতে আমরা চীনের স্টোন ফরেস্টে বেড়াতে চলেছি। বাচ্চারা বেশ মজা পাচ্ছে, সবকিছু সুন্দর ভাবে সাজানো গুছানো।
স্টোন ফরেস্ট – কুনমিং
রাস্তা পার হয়ে বেশ কিছুটা হাঁটতে হয় তারপর লেকের উপর একটা ব্রিজ এটা পার হলে মূল এলাকা, ঢুকতেই স্টোন ফরেস্টের কিছু বৃত্তান্ত লিখা বেশ কয়েকটা পাথরের স্তম্ভ, এগিয়ে গেলে সামনে রাস্তা দুদিকে চলে গেছে, রাস্তার মাথায় একটা চত্তর বানানো, সেখানে নানা রঙের ফুলের বাগান ও পাথরের উপর রঙ বেরঙের চীনা লিখা, দুপুরের এ সময়ে সূর্যের আলো সেই এলাকাতে সরাসরি পড়ছে তাই ছবি তোলার ধুম পড়ে গেছে। আসার পথে লেকের মাঝে ফোয়ারা ও বিশাল বিশাল পাথরের চ্যাঁই, প্রকৃতি যেন সব সাজিয়ে রেখেছে এখানে।
এ যেন এক আজব পাথরের রাজ্য। এর বিশালতা অনুভব করা যায় , প্রান ভোরে দুচোখে তা দেখা যায়, আমার মত সাধারন মানুষের পক্ষে তার রূপ বর্ণনা অসম্ভব। পাথরের রাজ্যে চলছি তো চলছি। নানা আকারের নানা ভঙ্গির পাথরের সাগর, এর মাঝে চলাচলের জন্য সিমেন্ট ও পাথরে বাঁধানো পথ ও সিঁড়ি। কত মোড় কত বাঁক পেরিয়েছি এই বনে তা বলতে পারব না, আনাদের সাথে গাইড থাকাতে ঠিক পথে চলতে পেরেছি, তা না হলে সবকিছু দেখা হয়ত একটু কষ্ট হতো কিংবা বেশী সময় লাগত।
স্টোন ফরেস্ট – কুনমিং-এ যেন পাথরের রাজ্য
কখনো উপরে উঠছি কখনোবা নিচে নামছি, গাইড মাঝে মাঝে থামিয়ে ছবি তোলার জায়গা দেখিয়ে দিচ্ছে। এই বনের দৃশ্য ভাল করে দেখার জন্য কিছু টাওয়ার আছে। পাথরের ফাঁকে ফাঁকে সিঁড়ি দিয়ে ঘুরে ঘুরে টাওয়ারের উপরে উঠতে হয়, সেখান থেকে সামনে তাকালে অনেক দূর অব্দি পাথরের ঘন বন, আল্লার এ এক অপূর্ব সৃষ্টি। হাজার বছর ধরে নানা ঝড় ঝাপটা সহ্য করে এই বন দাঁড়িয়ে আছে যুগে যুগে। ২০০৭ সালে স্টোন ফরেস্ট ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মূলত এইগুলো লাইম স্টোন ফরমেশান, এমন আকার নিয়েছে যে মনে হয় বনের গাছ পাথর হয়ে গেছে।
স্টোন ফরেস্ট – কুনমিং
কোন কোন পাথর দেখলে মনে হয় এটা প্রাচীন কোন প্রাণীর ফসিল, বিশাল বিশাল মানুষের আকৃতির মত ও পাথর আছে। এক এক ধরনের পাথরের গঠন, মসৃণটা, রূপ একেক রকম। সব যেন স্ব মহিমায় উজ্জ্বল। পাথরের বাগানে ঘুরে ঘুরে দেখছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা, তারপর ও কেন যেন ক্লান্তি লাগছে না। একেক জায়গা একেক রকম, সূর্যের আলোর তাপ কম আর হালাকা ঠাণ্ডা বাতাস থাকায় এত হাঁটাহাঁটির পর ও ভালই লাগছিল। গাইড সাথে থাকাতে সুন্দর ভাবে সব দেখতে পেলাম। পথে মারকিং থাকলেও সব কিছু দেখতে হলে একজন গাইড দরকার। আমরা নানা জায়গাতে থেমে ছবি তুললাম।
স্টোন ফরেস্ট – কুনমিং
বাহিরে আসার পথে একটু জায়গা নিয়ে বসার ব্যবস্থা আছে। সেখানে ইয়ুনান প্রদেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। পুরুষ ও মহিলা শিল্পীরা নানা ধরনের বাদ্য যন্ত্র নিয়ে মিউজিক বাজাচ্ছে। দর্শকরা পাশে গাছের গুঁড়িতে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে গান শুনছে। এখানে গলা ভেজাবার জন্য ড্রিঙ্কস, আইসক্রিম চিপস ইত্যাদি পাওয়া যায়। এখান থেকে একটু এগিয়ে গেলে গাড়িতে উঠার কিউ, সেখানে কিছুক্ষণ লাইনে অপেক্ষা করে গাড়িতে করে বাগানের আরেক দিকে চলে এলাম। এখানে লেকের উপর সুন্দর ভাবে সাজানো গ্যালারী আছে। লেকের পানি, আকাশ আর পাথরের রাজ্যের শোভা মিলে জায়গাটা ছবি তোলার জন্য আদর্শ।
আমাদের বেড়ানো প্রায় শেষের পথে, বাহিরে যাওয়ার আগে বেশ সুন্দর সবুজ ঘাসে ছাওয়া অনেক বড় লন আছে। এখানে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। তারপর আস্তে আস্তে বাহিরে যাওয়ার গেইটের সামনে চলে এলাম। এখান থেকে আমাদেরকে পারকিং এরিয়াতে গাড়িতে করে নামিয়ে দিল। আজ সারাদিন অনেক হাঁটা হয়েছে, এখন সবাই একটু টায়ার্ড হয়ে গেছে মনে হল। গাড়িতে ফিরতি পথে চলছি, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, সন্ধ্যার একটু পর আমরা হোটেলে ফিরে এলাম।
ফ্রেস হয়ে হেঁটে স্থানীয় বাজারে গেলাম, এখানে সন্ধ্যার পর দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ফলের বাজার ও কিছু খাবারের দোকান খোলা দেখলাম। অনেক রকমের ফল সাজান, স্থানীয় মহিলারা দোকানে বসে ফল বিক্রি করছে। বেশ কিছু ফল কিনলাম, একদম ফ্রেস দাম ও রিজনেবল। এক্তু একটু ঠাণ্ডা বাড়ছে, এলাকার ভেতর দিয়ে ফিরে আসছি, দুই একটা ছোট দোকান খোলা, সেখান থেকে জুস কিনলাম, রাস্তা একটু অন্ধকার হলেও নিরাপত্তার কোন সমস্যা নেই। আস্তে আস্তে গল্প করে হোটেলে ফিরে এলাম। চীন দেশে বেড়াতে আসা সার্থক হল মনে হচ্ছে।
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
এখানে সেরা ইগো কার?
ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।
‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন
মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন