এই ভুবনে
আয়নাল শেখের শেষ বয়সের "বাবা ন্যাওটা ছেলে" টা হঠাৎ অল্প জ্বর, কাশি, সর্দিতে মারা গেছে। বড় বাবা ন্যাওটা ছেলে। এই দশ/ এগারো বছর বয়সেও বাবার সাথে ঘুমাতে হয়। আর আয়নাল শেখও ছেলেকে ছাড়া ঘুমাতে পারেন না। সেই ছেলে মারা গেল কয়দিন আগে।
গ্রামে গঞ্জে সাধারনতঃ বাড়ীর লাগোয়া কবর দেয়া হয় নিম্ন বা নিম্ন মধ্যবিত্তদের। আয়নাল শেখের ছেলেকেও উঠানের এক কোনায় বড় জামরুল গাছের নীচে কবর দেয়া হয়েছে।
ছেলেটা মারা যাবার পর প্রতিদিন রাতের বেলা আয়নাল শেখ একটা চাটাই আর কাঁথা বালিশ নিয়ে ছেলের কবরের পাশে গিয়ে শোয়। ছেলেটার বড় ভয়, একা ঘুমাতে পারে না। রাতের বেলা নাকি দু একজন দেখছে আয়নালের পাশে একটা ছেলে ঘুমায়।
অন্যভুবনে
আয়নাল শেখের শেষ বয়সে স্ত্রী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যাবার পর, সেই ছেলেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করে যখন দশ / এগারো বছর বয়স সেই সময় আয়নাল শেখ মারা গেল অল্প জ্বর, কাশি, সর্দিতে। ছেলেকে ছাড়া আয়নাল শেখ কিছু বুজত না।
গ্রামে গঞ্জে সাধারনতঃ বাড়ীর লাগোয়া কবর দেয়া হয় নিম্ন বা নিম্ন মধ্যবিত্তদের। আয়নাল শেখেকেও উঠানের এক কোনায় বড় জামরুল গাছের নীচে কবর দেয়া হয়েছে।
বাবা মারা যাবার পর প্রতিদিন রাতের বেলা মা মরা বাবা সোহাগী ছেলেটা একটা চাটাই আর কাঁথা বালিশ নিয়ে বাবার কবরের পাশে গিয়ে শোয়। বাবা বুড়ো হয়ে যাবার পর কেমন যেন ভীতু হয়ে গেছিল, ভয় নাকি সন্তানের প্রতি মমতা! একা ঘুমাতে পারে না। রাতের বেলা নাকি দু একজন দেখছে আয়নালের ছেলের পাশে একটা বুড়ো মানুষ ঘুমায়।
ভিন্ন জগতে
আয়নাল শেখের শেষ বয়সের "বাবা ন্যাওটা ছেলেটা" হঠাৎ অল্প জ্বর, কাশি, সর্দিতে মারা গেছে। বড় "বাবা ন্যাওটা ছেলে"। এই দশ/ এগারো বছর বয়সেও বাবার সাথে ঘুমাতে হয়। আর আয়নাল শেখও ছেলেকে ছাড়া ঘুমাতে পারেন না। সেই ছেলে মারা গেল কয়দিন আগে। আয়নাল শেখ এই বয়সে সন্তান হারানোর কষ্ট সইতে পারল না। আধা ঘন্টার মাঝে নিজেও ষ্ট্রোক করে মারা গেল।
গ্রামে গঞ্জে সাধারনতঃ বাড়ীর লাগোয়া কবর দেয়া হয় নিম্ন বা নিম্ন মধ্যবিত্তদের। আয়নাল শেখ এবং তার ছেলেকে উঠানের এক কোনায় বড় জামরুল গাছের নীচে কবর দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি।
অনেকেই দেখছে বাপ বেটা রাতের বেলা কবরের পাশে ঘুমিয়ে আছে।
মানুষ বড় কুসংস্কারাচ্ছন্ন। কি দেখতে কি দেখে কে জানে? ভালোবাসা, মায়া, স্নেহ এগুলোতো দেখা যায় না।
আরো অনেক জগতে আয়নাল শেখ এবং তার ছেলে কিভাবে আছে আমরা কিন্তু.....
“এ ভুবনে ডুবল যে চাঁদ সে ভুবনে উঠল কি তা?
হেথায় সাঁঝে ঝরল যে ফুল হোথায় প্রাতে ফুটল কি তা?
এ জীবনের কান্না যত― হয় কি হাসি সে ভুবনে?
হায়! জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?”
(উপরের লাইন কয়েকটি তারাশঙ্কর এর "কবি" থেকে)
কবর কাউকে নিরাশ করে না। যে যেমন চায় তাকে তেমন দেয়।।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০২০ রাত ১১:৩৩