জিওর্দানো ব্রুনো কে চার্চ হত্যা করেছিলো কারন তিনি বলছিলেন, পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরছে। পৃথিবী সৌরজগতের তুচ্ছ গ্রহ ছাড়া এর আলাদা কোনো গুরুত্ব নেই। পৃথিবী ও বিশ্বজগত্ চিরস্থায়ী নয়, একদিন এসব ধ্বংস হয়ে যাবে। আবার মানুষকে ভালোবাসার কথা বলার অপরাধে যীশু খ্রিষ্ট কে ক্রুশ বিদ্ধ করা হয়েছিল। আশি বছরের গ্যালিলিও গ্যালিলি বিনা চিকিৎসায় কারাগারে মৃত্যু বরন করেন কারন তার অপরাধ ছিল তিনি বলেছিলেন, সূর্য নয়, পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘোরে। ওদিকে অজ্ঞানতার কুপমন্ডুক থেকে আরবদের মুক্তি দেবার জন্য যখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিভিন্ন কথা কথা বলছিলেন, তখন তাকে পাথর মেরে জর্জরিত করেছিল মক্কার বর্বর আরবরা। বিজ্ঞান বা ধর্মপ্রচারের পথ কোনটাই কোন কালেই কিন্তু কণ্টকহীন ফুল বিছানো পথ ছিল না। দুটো পথেই আছে অসংখ্য রক্ত ঝড়ানো ইতিহাস।
এই সব রক্তাক্ত ঘটনাকে ছাড়িয়ে আপনি আরো পিছিয়ে যান যেখানে ইতিহাসের শুরু হয়েছে সেখানে আপনি দেখবেন ইতিহাসের শুরুতে বিজ্ঞান আর ধর্ম কোন আলাদা বস্তু ছিল না, একই পথে ধর্মের পাশাপাশি বিজ্ঞান এগিয়ে যাচ্ছিল, ধর্মের মাঝে থেকেই এক নির্দিষ্ট গোষ্ঠী তাদের জ্ঞান অন্বেষান চালিয়ে যাচ্ছিল। ধর্মীয় পুরোহিতদের মাঝ থেকেই একটা নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বিভিন্নভাবে মানুষের উপকারে আসার জন্য বিভিন্ন আবিস্কার (যদিও আধুনিক বিচারে তা হাস্যকর রকম সামান্য বিবেচিত) করে যাচ্ছিল। এবং তাদের অর্জিত জ্ঞান অনেকটা বংশ বা সম্প্রদায়ের ভেতর অত্যন্ত গোপন রাখত।
এক পর্যায়ে, সে গোপন জ্ঞান মানুষের সামনে প্রকাশ পেতে শুরু করল। কিভাবে? ধরুন কোন একটা মানুষ অসুস্থ্য হয়ে আছে তাকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই ধর্মের নামে ধ্বজ্বাধারী পুরোহিত অং বং করে অনেক মন্তর পরেও ভালো করতে পারল না, অথচ গোপন জ্ঞানের অধিকারী যা বংশ পরম্পরায় অনেক যুগ ধরে কোন এক গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের গবেষনায় নিরাময় যোগ্য তাদের কেউ নির্দিষ্ট ওষুধ দিয়ে ওই রোগীটিকে সুস্থ্য করে তুলল, ব্যাস ওই গোপন জ্ঞানের অধিকারী মানুষটিকে হয়ত ডাইনী বা যাদুকর আখ্যা দিয়ে মেরে ফেলা হল ধর্মীয় পুরোহিতদের দ্ধারা। এগুলো অনেক অনেক সময় আগের কথা, অনেক দিন ধরে অবিচারের কথা। এক সময় ধর্মীয় কুপমন্ডুক স্বার্থান্বেষী পুরোহিতদের বা ধর্মবেত্তাদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেল কিছু মানুষ, যারা স্বাধীন ভাবে জ্ঞান চর্চা শুরু করে। বিজ্ঞান আলাদা হয়ে যায়, ধর্ম থেকে। আবার সব ধর্মবেত্তা যে স্বার্থপর বা অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল তা কিন্তু না, কিন্তু তারা ছিল অল্প। তাই ধর্মের জ্ঞান চর্চার ওপর স্থান নেয় অজ্ঞানতা।
ইতিহাসের শুরুতে কিন্তু সবাই বিজ্ঞানী ছিল না, জ্ঞানতঃ হোক বা অজ্ঞানতা বশতঃই হোক মানুষ ধর্মকে বা সৃষ্টিকর্তাকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকার লড়াই শুরু করে। এক পর্যায়ে সেখান থেকে বিজ্ঞানের আবির্ভাব হয়। আর যদি ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে দেখেন তবে ভিন্ন হিসাব, কিন্তু আমি এই লেখায় কোন ধর্মীয় দৃষ্টি কোন ব্যাবহার করব না।
পৃথিবীতে যে প্রতিদিন কোটি মানুষ বিভিন্ন ভাবে প্রার্থনা করে, সে প্রার্থনা কি আসলে কোন কাজ দেয়? নাকি পূর্ব পুরুষের অভ্যাস? মৃত্যুর পর কি জীবন আছে? মানুষের শরীরের মাঝে কি এমন একটা বস্তু আছে যা হৃদস্পন্দন থেমে যাবার পর মস্তিস্ককে কর্মক্ষমতাহীন করে একটা জীবিত মানুষকে মৃত মানুষ নামে পরিনত করে? মানুষের কি ক্ষমতা আছে অসুস্থ্যকে মানসিক শক্তির মাধ্যমে সুস্থ্য করে তোলার?
এই সব অবৈজ্ঞানিক ব্যাপারকে ব্যাখ্যা করার জন্য বিজ্ঞানের একটা নতুন শাখার জন্ম নেয় যাকে নোয়েটিক সায়েন্স নাম দেয়া হয়। না কোন প্রীষ্ট বা মৌলভী অথবা ধর্মগুরু এই সায়েন্সের জন্ম দেয় নি। এই সায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতাদের নামের মাঝে যে নামটা জ্বল জ্বল করে তার নাম মাহাশুন্যচারী এডগার ডীন মিচেল। ১৯৭১ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী এপোলো-১৪ চন্দ্রযানের মাধ্যমে যিনি প্রায় নয় ঘন্টা চাঁদে হাটেন ষষ্ঠ মানব হিসাবে।
ইনিষ্টিটিউট অভ নোয়েটিক সায়েন্স (IONS) প্রতিষ্ঠার পর এর প্রসিডেন্ট হিসাবে দুই যুগ পার করেন উইলিস হারম্যান কর্মক্ষেত্রে যিনি একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের পেটালুমার অদুরে ২০০ একর জমির ওপর অবস্থিত এই নোয়েটিক সায়েন্সের হেডকোয়ার্টার। বর্তমানে বেশ জোরেশোরেই এর রিসার্চ চলছে যত সব অবৈজ্ঞানিক অশৈলী কান্ড কারখানা নিয়ে।
নোয়েটিক সায়েন্সের মুল ব্যাপারটা আসলে মানব মনের অব্যাবহৃত সম্ভাবনাকে কিভাবে বৈজ্ঞানিক আওতায় আনা যায়। মহাশুন্যচারী এডগার মিচেল দাবী করেন তিনি যখন মহাশুন্য ছিলেন তখন নাকি ই এস পি (Extrasensory perception) বা সিক্সথ সেন্সের মাধ্যমে নোয়েটিক সায়েন্স ইনিষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠায় অর্থ জোগানদাতাদের একজন পল টেম্পেল সহ অনেকের সাথেই যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। ভাগ্যিস এই সব বয়ান একজন এষ্ট্রোনটের মুখ দিয়ে বের হয়েছিল, এগুলো যদি অন্য কারো মুখ দিয়ে বের হত তবে আজকে তুলোধুনো খেতে হত, আর তার সাথে যদি ধর্মের সামান্যতম যোগাযোগ থাকত তবে তো কথাই নেই!
ক্যালিফোর্নিয়ার ইনিষ্টিটিউট অভ নোয়েটিক সায়েন্স এবং প্রিন্সটন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যানোম্যালিস রিসার্চ ল্যাব বেশ পরিস্কারভাবে প্রমান করেছে মানব মস্তিস্ক যদি যথাযথভাবে ফোকাস করা হয় তবে সেটা ভৌত বস্তুকে প্রভাবিত বা রূপান্তর করতে সক্ষম। এটা কোন চামচ বাকানো ট্রিকস না, বরং তার থেকেও বেশী, কিন্তু এটা এখনো পরিস্কার না কিভাবে আমাদের চিন্তাশক্তি ভৌত জগতের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে এর আন্ত আনবিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। সোজা কথায় বস্তুর ওপর মানব মনের প্রভাব।
মানুষ যখন ধ্যানে বা মেডিটেশানে বসে তখন ধ্যানের একটা পর্যায়ে যায়, তখন সাব এ্যাটমিক স্তরে কিছু কনার অস্তিত্ব এবং বিনাশ হয় কেবল মাত্র ওগুলোর অবলোকন করার উদ্দ্যেশ্যর ওপর, এই যে সাব এ্যাটমিক লেভেলে (মানুষের কনসাসনেস আবদ্ধ শারীরিক বস্তুর বাইরে অবস্থিত জগত) যে কনা দেখতে পাওয়া যায় তার অবস্থান বদলে দেবার ক্ষমতা মানুষের মনের আছে তার থেকেও বড় ব্যাপার সেটা নির্দিষ্ট অভিমুখেও পরিচালিত করা যায়। নোয়েটিক সায়েন্সের আর একজন প্রবক্তা লীন ম্যাকট্যাগার্টের কথায়ঃ জীবন্ত সত্তা হল এমন এক ধরনের প্রভাবক যা কিনা কোন কিছুর মধ্য থেকে একদম বাস্তব কিছু বদলে দেবার সম্ভাবনা তৈরী করে। আমাদের এ মহাবিশ্ব তৈরীতে সব চাইতে জরুরী যে উপাদানের প্রয়োজন সেটা হল, এটাকে কোন সত্ত্বা কর্তৃক অবলোকন করা
নোয়েটিক সায়েন্সের সব থেকে মজার ব্যাপার হল, ধ্যানের মাধ্যমে সাব এ্যাটমিক স্তরে যে কনাগুলোর উদয় হয়ে ভৌত জগতকে প্রভাবিত করে তাকে নিয়ন্ত্রনের জন্য অনুশীলনের প্রয়োজন আছে, তবে তার থেকে বড় ব্যাপার কিছু কিছু মানুষ জন্মগত ভাবে এব্যাপারে অন্যদের থেকে বেশি দক্ষতা নিয়ে জন্মায়, যারা হয়ত আপাত দৃষ্টিতে অলৌকিক কাজকর্ম দেখাতে সক্ষম। নোয়েটিক সায়েন্স প্রাচীন আধ্যাত্মিকতা এবং আধুনিক বিজ্ঞানের মাঝে হারানো সংযোগ হিসাবে দেখা দিতে পারে, যদিও এই বিজ্ঞান এখনো প্রাথমিক পর্যায়েই আছে।
প্রতিনিয়ত আমাদের জ্ঞানের পরিধি বিস্তার লাভ করছে, যতই জানতে পারছি ততই আমাদের শেখার ক্ষমতা বাড়ছে, বাড়ছে আমাদের জ্ঞানের পরিধি, বিজ্ঞানের নতুন একটা আবিস্কার আমাদের আর একটা আবিস্কারের পথ উন্মুক্ত করছে, এবং এটা হচ্ছে জ্যামিতিক হারে, এজন্যই বিগত পাঁচ হাজার বছরের তুলনায় গত পঞ্চাশ বছরে বিজ্ঞান অনেক অগ্রগতি হয়েছে।
বিজ্ঞানের সব থেকে যে আধুনিক একটা থিওরী সুপারষ্ট্রিঙ্গ থিওরী। একেবারে নতুন একটি মডেল, একদম রিসেন্টলি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক অবজার্ভেশানের ওপর ভিত্তি করে এটা গড়ে উঠছে, অথচ ত্রয়োদশ শতকে লিখিত ইহুদীদের রহস্যময় “কাব্বালাহ” অনুসারীদের “দ্য কমপ্লিট জোহার” এই সুপারষ্ট্রিঙ্গ থিওরীর দশ মাত্রার পৃথিবীর কথা বলা আছে (অবশ্যই আপনি আশা করবেন না তা আধুনিক কালের গানিতিক হিসাব নিকাশ দ্ধারা পরিপূর্ন)। এরকম আরো কিছু উদাহরন টানতে পারেব, তবে টানব না, কারন সেক্ষেত্রে আমাকে আপনারা আবার কি উপাধি দিয়ে বসবেন আল্লাহ মালুম কারন আমি তো আর এডগার মিচেল না এক অনুবাদ কপি পেষ্ট টাইপ রাইটার।
একটা সময় পৃথিবীর সব থেকে প্রতিভাবান মানুষটিও বিশ্বাস করত এই পৃথিবী সমতল, পৃথিবী যদি গোল হত তবে এর ওপরের সমুদ্রের পানি পড়ে যেত। সে সময় আপনি যদি বলতেন পৃথিবী সমতল তো নাই, বরং গোল এবং এর ওপর এক না দেখা রহস্যময় শক্তি (যাকে আমরা মহাকর্ষ শক্তি বলি) একে পৃথিবী পৃষ্ঠে আটকে রেখেছে, তবে আপনার কি অবস্থা হত ভাবুন দেখি?!
নোয়েটিক সায়েন্স মানুষের মানসিক শক্তি, এবং আধ্যাত্মিক শক্তি নিয়ে গবেষনার এক নতুন দ্বার উন্মুক্ত করছে। এনিয়ে হাসাহাসি কৌতুক আপনি করতেই পারেন কিন্তু কে জানে দিন শেষে হয়ত এডগার মিচেলরাই হাসবে। আজকে যে অনুজীবকে চোখে দেখা যাচ্ছে না, যার প্রভাবে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে হয়ত লাখ মানুষ মারা যাবে, কোন এক দিন দেখব কিছু মানুষ এক জায়গায় হয়ে গোল হয়ে বসে অথবা বিশেষ কোন বৈজ্ঞানিক গ্যাজেট হাতে অথবা মাথায় নিয়ে নিজেদের ধ্যানের চুড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত করে চোখের অদেখা করোনা নামক এই সব অনু জীব গুলোকে নিমেষে ধ্বংস করে দেবে?
কে জানে আমরা যেভাবে মহাশুন্য পাড়ি দেবার কথা ভাবি তা কোন দিন পরিত্যাক্ত হয়ে, মানসিক শক্তিকে এক করে নির্দিষ্ট অভিমুখে গ্যালাক্সির পর গ্যালাক্সি পেরিয়ে যাব, সেদিন হয়ত হাস্যকর ভাবে মানুষ ভাববে এই সময়ের মানুষ কত বোকার মত কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে এক যান্ত্রিক যানের সাহায্যে মহাশুন্য পাড়ি দেবার কথা ভাবছিলো। মানুষের মনের অঢেল শক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য নোয়েটিক সায়েন্সের প্রতিষ্ঠা। আধ্যাত্মিকতার রহস্যময়তা হয়ত কোন দিন ধরা দেবে সেদিন..... সেদিন বিভিন্ন ধর্মগুরুদের অলৌকিক...... বাদ দেন অহেতুক আলোচনা, কিন্তু গ্রীক শব্দ “নোয়াস” থেকে আগত (মানে “মানবমন অথবা জানার পথ”) নোয়েটিক বিজ্ঞান যে নতুন পথের দিশা দেবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই।
কৃতজ্ঞতাঃ লেখাটা লিখতে আমি ড্যান ব্রাউনের দ্যা লষ্ট সিম্বল বই দ্ধারা অনুপ্রানিত যা অতি সম্প্রতি রিভাইস করলাম
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:২০