বেশ ভালোভাবেই লক ডাউন শুরু হয়েছে, যে যার বাড়ীতে গিয়েছে। এগুলো পুরানো প্যাচাল। নতুন প্যাচাল হল, এই যে লক ডাউন চলছে, যে লক ডাউনের কারনে যেখানে নিম্নবিত্ত বা মধ্য নিম্নবিত্তের পেটের খাবারের ঠিক নাই সেখানে ঠিকই সব মসজিদে পাচ ওয়াক্ত নামায জামায়াতে আদায় হচ্ছে, আজকে জুমার দিনও দেখলাম মানুষ দল বেঁধে নামাযে যাচ্ছে। আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখছি আর একটা কষ্ট অনুভব করছি নিজে যাই নি দেখে। কেন যাই নি, সেটা একটু পর বলছি। প্রথমেই দেখি, জুমার নামায নিয়ে হাদীসে কি আছে?
না সরাসরি কিছু নাই, কিন্তু বুখারী শরীফে পরিস্কার লেখা আছে ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি তাঁর মুয়ায্যিনকে এক প্রবল বর্ষণের দিনে বললেন, যখন তুমি (আযানে) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্ বলবে, তখন ‘হাইয়া আলাস্ সালাহ্’ বলবে না, বলবে, “সাল্লু ফী বুয়ুতিকুম” (তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে সালাত আদায় কর)। তা লোকেরা অপছন্দ করল। তখন তিনি বললেনঃ আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিই (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ) তা করেছেন। জুমু’আ নিঃসন্দেহে জরুরী। আমি অপছন্দ করি তোমাদেরকে মাটি ও কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার অসুবিধায় ফেলতে।(সহীহ বুখারী হাদীসঃ ৯০১) মানে রাস্তা ঘাট কর্দমাক্ত হয়ে গেলে জুমার দিনেও মানুষকে কষ্ট করে মসজিদে যেতে নিষেধ করে ঘরে পড়ার জন্য বলা হয়েছে। সেখানে এই ধরনের মহামারীতে যেটা মারাত্মক ছোঁয়াচে তাতে কি মসজিদে গিয়ে জামাতে নামায পড়া খুব বেশী উত্তম?
আমরা ধর্ম নিয়ে কি শিখছি? কাদের কাছে শিখছি? তারা কতদুর জানে? না আমি কাউকে নীচে নামাচ্ছি না, কিন্তু আমার প্রশ্ন হল আজকে যারা জুমার নামাযে গেল তাদের মাঝে যদি একজনও করোনা আক্রান্ত থাকে সে কতজনকে আক্রান্ত করবে? সে না জেনে হলেও। তোলারবাগে আমরা দেখতে পাই দুই জনের মৃত্যু হয়েছে যাদের ইনফেকশান মসজিদ দিয়ে হয়েছে বলে ধারনা করা হয়েছে।
আমি নিজেকে মসজিদে যাওয়া থেকে বিরত রেখেছি, কারন আর একজনের করোনা আছে কিনা জানি না, আমার যে নাই তারতো কোন নিশ্চয়তা নাই, আমার যদি থেকে থাকে তবে আমি কয়জনকে আক্রান্ত করব? এর জবাব আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে কিভাবে দেব? আরব আমিরাতে অনেক আগেই আযানে “সাল্লু ফী বুয়ুতিকুম” প্রচলন করছে (দেখুন করোনা আতঙ্কে আরব আমিরাতে আজানে পরিবর্তন )। পবিত্র কা’বা তাওয়াফ বন্ধ, মসজিদে নববী, মসজিদে হারাম বন্ধ সেখানে আমাদের মুসলমানরা কোন পূন্যের আশায় পাচ ওয়াক্ত মসজিদে গিয়ে নিজে আক্রান্ত হওয়ার রিস্কের থেকে সে যদি আক্রান্ত থাকে তবে অন্যকে আক্রান্ত করার দায় কাধে নিচ্ছে?
আমি জানি হাদীস শরীফে পরিস্কার আছে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পাঁচ প্রকার মৃত শহীদঃ মহামারীতে মৃত, পেটের পীড়ায় মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত এবং যে আল্লাহ্র পথে শহীদ হলো। (সহীহ বুখারী হাদীসঃ ২৮২৯)। এখন কথা হল শহীদি মৃত্যু প্রতিটা বিশ্বাসী মুসলমানের কাম্য কিন্তু আপনার জন্য আর একজন মৃত্যুর হুমকির মুখে পড়লে আপনি মহান রাব্বুল আলামিনকে কি জবাব দেবেন? একবারো কি ভাবছেন? নাকি আমার স্বল্প জ্ঞানে বুজের অভাব আছে? একটু বুজিয়ে দেবেন কি? মানুষজন যেখানে রুটি রুজির জন্য বের হতে পারছে না সেখানে কোন যুক্তিতে আপনি জামাতে নামায পড়তে গিয়ে আর একজনের মৃত্যুর কারন হতে পারেন? এক্ষেত্রে যে কথাটা প্রযোজ্য তা হল ‘সোশ্যাল ডিসটেন্স নয়, ফিজিক্যাল ডিসটেন্স’।
আবার দেখুন, তিরমিযী হাদীসে পরিস্কার লেখা আছে উসামা ইবনু যাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ মহামারী প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলোচনা করলেন এবং বললেনঃ যে গযব বা শাস্তি বানী ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর উপর এসেছিলো, তার বাকী অংশই হচ্ছে মহামারী। অতএব, কোথাও মহামারীর দেখাদিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা হতে চলে এসো না। অপরদিকে কোন এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গাতে যেও না। (তিরমিযী শরীফ, হাদীস ১০৬৫)।
কেন এখনো মানুষ মসজিদে জামাতে যাচ্ছে যেখানে রুটি রুজির জন্য বের হতে পারছে না? এর দায়িত্ব কি একান্ত সরকারের না ইসলামবেত্তাদের? আমি অনেক কিছুই জানি না জানার জন্য পোষ্টটা দিলাম। আজকে বিদ্রোহী ভৃগু ভাইর একটা পোষ্টে মন্তব্যে করছিলাম, তার প্রতি মন্তব্যে আমার ম্যাভাই যে জবাব দিয়েছে সেটা তুলে ধরে এই লেখার সমাপ্তি টানব। কিন্তু কেউ কি জবাব দিবেন কেন এখনো মানুষ অবিবেচকের মত জামাতে যাচ্ছে? এখানে প্রাসাঙ্গিক ভাবে নতুন নকিব ভাইর পোষ্টের লিঙ্কও দিয়ে দিলাম যেখানে আল আযাহার বিশ্ববিদ্যালয় ফতোয়া দিয়েছে এই ধরনের মহামারীতে জামায়াত এবং জুমায়ার নামায সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা যাবে (দেখুন করোনায় মসজিদে নামাজ আদায়: আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফতোয়া )
বিদ্রোহী ভৃগু ভাইর প্রতি মন্তব্য তার পোষ্ট থেকে
টোলার বাগের ঘটনা অবশ্যই অসচেতনতা,এবং এরকম আরো বহু বহু বাগে একই ঝুঁকি রয়েছে। কারণ মসজিদ কমিটিতে কারা থাকে আপনি জানেন। ইমাম বা মুয়াজ্জিনের জ্ঞানের দৌড় খূবই সীমিত। ফলে তাদের কাছ থেকে পূর্ন সচেতনতা পাওয়া যাবে না। ইসলামের যারা নেতৃ স্থানীয় তাদের ভাবনা বা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় যারপরনাই বিস্মিত। তা খোদ আরব ভূমি বলেন বা উপমহাদেশের ইসলামিক স্কলারদের কথাই বলেন।
আমি আমার আম ভাবনা আপনার সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছি না। মনে করুন এই অবস্থায় পোষ্টে শেষে যা বলেছি তার উদ্যোগ নেয়া যেত স্বাস্থ্য সম্মত ভাবেই এবং সরকারী আইন মেনেই।
প্রতিটি মসজিদ হয়ে উঠতে পারতো হাইজিন আর ভরসার কেন্দ্র। মসজিদ গুলোতে অজুখানায় সাবান এবং স্যানিটাইজার রাখতে পারতো। এবং আম মানুষের কাছে বিতরনের ব্যবস্থা রাখতে পারতো। মসজিদে প্রবেশ পথে করোনা টেষ্টের প্রাথমিক তাপমান যন্ত্র রাখা যেতো। এবং প্রতিটি মুসল্লির ডাটা নিত্য আপডেট করার ব্যবস্থা রাখা যেত। এবং সাথে তার পরিবারের তথ্যও। সে ক্ষেত্রে মসজিদ গুলো হয়ে উঠতে পারতো তথ্য ভান্ডার। যা সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সার্ভারে আপডেট করলে সরকারও সঠিক তথ্য লাভ করতে পারতো।
আর যেহেতু টেষ্ট করেই মুসল্লি ভেতরে যেতে পারতো, ভয় ছিল না , তারপরো সতর্কতা হিসেবে পরষ্পরে দূরত্ব বজায় রেখে (কিয়াসের ভিত্তিতে) সালাত আদায় করাই যেতো। তা খোদ কাবা থেকে মহল্লার আম মসজিদ একই রকম ভাবে পরিচালিত হতে পারতো- সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে। আমজনতার আল্লাহ ভীতিকে যেমন অবজ্ঞা করা উচিত নয়, তেমনি তাকে বিপদে ফেলাও উচিত নয়। তাই দরকার মধ্যমপন্থা। যা উপরে উল্লেখ করেছি।
আপনি জুমার নামাজে না গিয়ে চলমান ব্যবস্থায় সঠিক কাজটিই করেছেন। সরকারের আইন মানাও ধর্মের অংশ যদিনা তা আল্লাহ এবং তার রাসুলকে অস্বীকার করার বিষয় হয়। হুম, ভয়ে মানুষ আল্লাহকে বেশী ডাকে। ঝড় জলোচ্ছ্বাস বন্যায় দেখা যায়! করোনাতেও ব্যাতিক্রম নয়। আপনার প্রার্থনা কবুল হোক।
আমাদের সবার প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করুক।।
ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহিত
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৩:১৮