অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসাবে চীন প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছিলো। আপাততঃ এক করোনায় তা আবার টালমাটাল অবস্থায় চলে এসেছে। এই ধাক্কা সামলে উঠতে চীনের খবর আছে। স্বল্প আয়ের দেশ সমূহ সুই থেকে প্লেন কিনতে চীনের দিকে যাচ্ছিল যা পশ্চিমা অর্থনীতির জন্য এক মারাত্মক হুমকি হিসাবেই দেখা দিয়েছিল বিগত এক দেড় দশক। আর কিছু দিন করোনার এই উৎপাত থাকলে চীনের বিশাল জন গোষ্ঠী এক মারাত্মক অর্থনৈতিক ধাক্কা খাবে। আর অবস্থা দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে তাই হতে যাচ্ছে। এতে লাভবান হবে পশ্চিমা বিশ্ব।
আমাদের মত পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র ঘনবসতিপূর্ন দেশের জন্য করোনা আশির্বাদ না অভিশাপ তা বুজতে আরো কিছু সময় লাগবে। তবে আপাতত যে মারাত্মক অভিশাপ তাতে কোন সন্দেহ নাই। বাজার থেকে সাধারন সার্জিক্যাল মাস্ক উধাও। যে মাস্ক দুই দিন আগেও ১৫/২০ টাকা ছিল তার প্রায় দেখা নেই। (দেখুন মাস্ক নিয়ে পেঁয়াজের মতো ব্যবসা হচ্ছে কি না, তদারকির আদেশ হাইকোর্টের ) তিন দিন আগে এব্যাপারে আশংকা করে পোষ্ট দিয়েছিলাম (দেখুন করোনা, ব্ল্যাক ডেথ, নাসিরুদ্দীন হোজ্জা আমরা সাধারন বাংলাদেশী )। অতিশিঘ্রী বিশ্বের কোন দেশ ঘোষনা দেবে তারা করোনা প্রটেকটেড মাস্ক আবিস্কার করছে (ভ্যাক্সিন না কিন্তু)। বিশ্ব জুড়ে সেই মাস্কের রমরমা বিজনেস হবে আর আমাদের দেশের অতি অল্প কিছু মানুষ সেই মাস্ক ইম্পোর্ট করে লালে লাল হয়ে যাবে।
একটা ব্যাপার ঠিক বুজে আসল না কাতার, কুয়েত সহ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশীদের সে সব দেশে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষনা করছে। অথচ পত্রিকায় দেখলাম কাতারেই ১৫ জনের ওপর করোনা আক্রান্ত সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ৩ জন। সেক্ষেত্রে কে কাকে নিষেদ্ধাজ্ঞা দেবে? বাংলাদেশ কাতার কে না কাতার বাংলাদেশকে? নাকি কাতার কুয়েত বিশ্বাস করছে না যে আমাদের মাত্র তিন জন রোগী সনাক্ত হয়েছে? গবীবের বউ আসলে সবারই ভাবী। হাজার হাজার মানুষ তাদের কাজ হারাচ্ছে ওই সব দেশে।
করোনা নিয়ে আমি অত চিন্তিত না, কারন এটা এমন একটা ব্যাপার আমার চিন্তা, অচিন্তা, দুশ্চিন্তায় খুব বেশি কিছু যায় আসে না। এনিয়ে চিন্তিত হবার মত অনেক বড় বড় মানুষ আছে। আমি যেটা করতে পারি তা হল টিভি পত্রিকার ঘোষনা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকতে পারি। সেই সতর্কতারও একটা নির্দিষ্ট লিমিট আছে আমাদের মত মানুষদের জন্য। চাইলেই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা ফার্মগেট, গুলিস্তানের মত পাবলিক প্লেস এড়িয়ে যাবার মত সামার্থ্য আমার নেই। সেক্ষেত্রে ওই সব জায়গায় কারো একজনের যদি করোনা থাকে তবে ঘরে এসে সাবান দিয়ে হাত ধুলে কি হবে?
ডেঙ্গুর সময়ই যে তেলেসমতি দেখছি, চোখে দেখা মশা মারতে মশার ওষুধ নিয়ে যে কাহিনীগুলো নিত্য পেপার পত্রিকায় আসত তার তুলনায় আমরা ভুলে যাচ্ছি ভাইরাস চোখে দেখা যায় না বাতাস বাহিত রোগ। প্যানিক দেখলাম ছড়িয়ে পড়ছে, শেয়ার মার্কেটের অবস্থা করুন। স্যানিটারি জিনিসপত্রের দাম কি আমাদের ক্রয় ক্ষমতার মাঝে থাকবে দুই এক দিন পর? না থাকলে এর সাথে দায়িত্বশীলরা কি তাদের দায়িত্ব পালন করে সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে?
করোনার থেকে আমি ভয় পাচ্ছি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কোন সময় উর্ধ্বগতি শুরু হয়? এদেশে বিনা কারনেই চাল, ডাল, পেয়াজ, লবনের দাম বাড়ে সেখানে যখন দাম বাড়ার যথাযথ কারন থাকবে তখন কি সুবিধাভোগীরা সে সুযোগ কাজে লাগাবে না? ডেঙ্গু টেষ্টে শুরুতে বিভিন্ন হসপিটাল, ক্লিনিক গুলো গলা কাটা শুরু করছিলো পরে বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপে কিছুটা প্রশমিত হয়। করোনায় শুধু দেখছি প্রিকশন নিয়ে নিজেকে সাবধান রাখতে। সেটা না হয় রাখলাম যে যার দায়িত্বে, কিন্তু জিনিসপত্রের দাম সহ সাধারন মাস্কের দাম যেন না বাড়ে সে প্রিকশান কে নেবে? আশা রাখি সরকারের দায়িত্বশীলরা এব্যাপারে অন্তত নিজের গরজে হলেও যেন চোখ কান খোলা রাখে, কারন নগরে আগুন লাগলে যেমন মসজিদ মন্দির কিছুই রক্ষা পায় না, তেমনি ভাইরাসও কিন্তু ধনী, গরীব, সরকারী আমলা, বেসরকারী পাজেরোর মালিক অথবা রিকশাওয়ালা চেনে না।
ভালো থাকুন এই কামনায়। প্যানিক হবার কিছুই নাই সাবধানতা অবলম্বন করুন, কিন্তু বাজারদরটা যেন লাফ দিয়ে লাফ দিয়ে না বাড়ে সেক্ষেত্রে করোনায় না মরলেও কিন্তু না খেয়ে মরতে হবে অনেককেই তবে তারা সাধারন বা নিম্ন শ্রেনী হিসাবে পরিচিত ব্যাবসায়ী বা উচ্চবিত্ত বা আমলা না। করোনা সচেতনতার পাশাপাশি আমাদের দরকার জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেন কোন অবস্থাতেই না বাড়ে সেদিকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের খেয়াল রাখা। যদি বাড়ে সে ক্ষেত্রে আমাদের মত তথাকথিত মধ্যবিত্তের ওপর মড়ার ওপর খাড়ার ঘা নিশ্চিত।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১২:৪৪