আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্নিত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে তিনি মারা গেছেন, তিনি দাড়িয়ে বলতে লাগলেন, “ কতগুলো মুনাফিক বলে বেড়াচ্ছে যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেছে গেছেন। আল্লাহর কসম তিনি মারা যান নি। তিনি কেবল মুসা (অঃ) এর মত সাময়িকভাবে আল্লাহর কাছে গেছেন। মুসা (অঃ) চল্লিশ দিনের জন্য আল্লাহর কাছে গিয়েছিলেন, তখন প্রচার করা হয়েছিল তিনি মারা গেছেন। অথচ তিনি তার পর ফিরে এসেছিলেন। আল্লাহর কসম, মুসা (অঃ) এর মত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আবার ফিরে আসবেন। এখন যারা বলছেন তিনি মারা গেছেন তাদের হাত পা কেটে দেব।” তখন আবু বকর (রাঃ) দ্রুত এখবর পেয়ে আয়েশা (রাঃ) ঘরে গিয়ে দেখেন তিনি সত্যিই মারা গেছেন। এর পর বাইরে বের হয়ে এসে হযরত উমরকে স্বান্ত্বনা দিয়ে কোরানের আয়াত পাঠ করলেনঃ
"মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল ব্যতীত অন্য কিছু নন। তাঁর আগেও অনেক রাসূল গত হয়েছেন। তাই যদি তাঁরও মৃত্যু হয়, তবে কি তোমরা পেছনে ফিরে যাবে? যারা পেছনে ফিরে যায় তারা আল্লাহর কোন ক্ষতিই করতে সক্ষম নয়। শীঘ্রই আল্লাহ কৃতজ্ঞদের পুরস্কৃত করবেন।" (সুরা আল ইমরান, আয়াতঃ১৪৪)
আবু হুরায়রা বলেন, উমর (রাঃ) বলেছেন, আবু বকরের মুখে এ আয়াত শোনার পর আমি হতবাক ও হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে গেলাম। পায়ের ওপর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না, আমি তখনি অনুভব করলাম রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সত্যিই ইন্তেকাল করছেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম ৩৫০-৩৫১)
বিভিন্ন বিষয়ে বই পড়া আমার নেশাই বলতে পারেন, হাতের কাছে যাই পাই তাই পড়ি, নিয়ম করে বই কিনি, যখন দেখি সে বইও শেষ হয়ে গেছে পড়া বই আবার রিভাইস দেই, নেটে বই পড়া আমার ভালো লাগে না, তবে ইদানিং অভ্যাস চেঞ্জ করছি, ইদানিং নেটেও বই পত্র ঘাটাঘাটি করা অভ্যাসে পরিনত করছি। একদিন অবাক দেখলাম, অন্যান্য বিষয়ে যত টুকুই জানি না কেন নিজ ধর্ম সন্মন্ধ্যে প্রায় কিছুই জানি না, অথচ আমার জন্মই হয়েছে এক মুসলিম পরিবারে, যারা মুসলমান রিচ্যুয়ালের স্বাভাবিক ধর্ম কর্ম পালন করে, সে অনুযায়ী আমি নিজে অনেকটা উদাসীন। চেষ্টা করি, কিন্তু হয়ে ওঠে না। তবুও চেষ্টা করি। এক সময় ভাবতাম যেটুকু জানি তাই যথেষ্ট। কিন্তু যখন ধর্ম নিয়ে সেটা শুধু নিজ ধর্ম না, বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে জানতে শুরু করলাম নিজের সামনে এক মহাসমুদ্র আবিস্কার করলাম। আসলেই আমি কিছুই জানি না।
নিজ ধর্ম নিয়ে এখনো অনেক কিছু জানি না, তারপরো লেখার একটা প্রচেষ্টা চালালাম, যদি ভুল হয় তবে যারা জানে তারা যেন শুধরে দেয় এই বিশ্বাস নিয়ে। তবে সবার আগে এটা বলে নেই, ধর্ম তা সে যে ধর্মই হোক বিশ্বাসের ওপর স্থাপিত। আমি কোন দিন কোরান দিয়ে বিজ্ঞান কে জাষ্টিফাই করতে যাই না, আবার বিজ্ঞান দিয়ে কোরান কে মাপতে যাই না, না যাবার যে কারন সেটা হল মনের প্রশান্তি বা কষ্ট মাপার কোন যন্ত্র যেমন আবিস্কার হয় নি বা হবেও না তেমনি ধর্ম দিয়ে সামান্য আবিস্কার কে ধর্মের মধ্যে আবদ্ধ করারও কোন যুক্তি দেখি না।
আজকে আমি লিখব খোলাফায়ে রাশেদিনদের নিয়ে, কালের এবং কর্মের ব্যাপ্তির বিশালতার কারনে এক পর্বে দেয়া সম্ভব হবে না সেক্ষেত্রে চেষ্টা করব ভিন্ন ভিন্ন পর্বে দেবার। আমি মুলতঃ এই লেখা ইতিহাসের নির্মোহ অবস্থান দিয়ে লেখার চেষ্টা করব।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ওফাতের পর খোলাফায়ে রাশেদিন যুগের আবির্ভাব ঘটে। খিলাফতের প্রথম চার জন খলিফাকে বলা হয় “খোলাফায়ে রাশেদিন।” খোলাফায়ে রাশেদিনদের নিয়ে লিখতে যাবার আগে ইসলাম পূর্ব আরবের অবস্থা সন্মন্ধ্যে আপনাকে কিছু জানতে হবে, না হলে কোন কোন ক্ষেত্রে এই সাড়ে চৌদ্দশ বছর পর আপনি হয়ত “মিস জাজ” করবেন। সে কালে আরব সমাজ ছিল গোত্র কেন্দ্রিক। রাষ্ট্র সন্মন্ধ্যে তাদের কোন ধারনাই ছিল না, সমস্ত কিছু কেন্দ্রীভুত ছিল গোত্রকে নিয়ে। মহানবী জীবিত থাকা অবস্থায় এই সব গোত্রগুলোকে এক করে নিজেদের মাঝে এক শক্তিশালী সমাজ ব্যাবস্থা গড়ে তোলে। এই সমাজ ব্যাবস্থা “উম্মাহ” নামে পরিচিত ছিল। উম্মাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ “সম্প্রদায়”।
শেষ নবী যখন মক্কা থেকে মদীনায় “হিযরত” করেন তখন উম্মাহ সমাজ ব্যাবস্থা চালু করছিলেন। মদিনা শহরে তখন বনি আউস এবং বনি খাযরাজ নামে দুটো গোত্র ছিল, সেকালের প্রথা অনুযায়ী দুটো গোত্রে যদি কোন বিষয়ে মতানৈক্য তৈরী হত তবে একজন ব্যাক্তিকে শালিসী মানা হত। তো এই বনু আউস এবং বনি খাযরাজ গোত্রের মাঝে বিবাদে মহানবীকে শালিসী মানা হল এবং তিনি অত্যন্ত সুনিপুন ভাবে তাদের মাঝের বিরোধ নিস্পত্তি করেন। এ অবস্থায় উভয় গোত্র ভীষন খুশী হয় এবং মহানবীকে সর্বপ্রকার সহায়তা দেয়। আবার বনি আউশ এবং বনি খাযরাজ গোত্র প্রধানরা ভাই ছিলেন তাদের বাবার নাম হারেছা বিন ছা'লাবা৷ আর মায়ের নাম ক্বায়লাহ বিনতে কাহিল৷ মায়ের নামে এ দুগোত্র কে একত্রে “বনু ক্বায়লাহ” নামেও ডাকা হতো। এই বনু ক্বায়লাহ গোত্র কে খুশী হয়ে মহানবী “আনসার” উপাধিতে ভুষিত করেন। যার মানে হল “সাহায্যকারী”। এই আনসাররা ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়।
এই “উম্মাহ” গঠনে আনসাররা মুখ্য এবং কার্যকর ভুমিকা রাখে। আইন না বরং চুক্তিই ছিল এই উম্মাহ সমাজের মুল ভিত্তি। মদীনায় তখন বেশ কিছু ইহুদী সম্প্রদায় ছিল তারাও প্রথমদিকে এই উম্মাহ সমাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল, তিনি বুজতে পেরেছিলেন যে ইহুদী সমাজ কে বাদ দিয়ে মদীনায় কোন স্বস্তি ব্যাবস্থা কায়েম করা যাবে না। এখানে উম্মাহর তাৎপর্য ছিল রাজনৈতিক, ধর্মের সাথে এর কোন যোগাযোগ নেই। যে চুক্তির মাধ্যমে এই “উম্মাহ সমাজ” চালু হয় তাই পরবর্তীতে আমরা “মদীনা সনদ” নামে জানি। (muhammad at medina by Montgomery Watt W. page: 227-228, ইসলাম ও খিলাফত লেখক ডঃ মফীজুল্লাহ কবীর) গোত্রীয় আনুগত্য যা ছিল রক্ত সম্পর্কীয় তৎকালীন আরব সমাজের মুল চালিকাশক্তি বা সমাজ ব্যাবস্থা এই মদীনা চুক্তির মাধ্যমে তা অনেকটা গৌন হয়ে গেল। ইসলামী সমাজ ব্যাবস্থার প্রথম ধাপ ছিল এই মদীনা সনদ।
আরব উপদ্বীপে এক নতুন আলোর দিশা হিসাবে দেখা দিল মদীনা সনদ। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে মনে রাখতে হবে যুগ যুগ ধরে চালিত গোত্র ব্যাবস্থা এই মদীনা সনদের মাধ্যমে নবীর জীবিত অবস্থায় গৌন হয়ে গেলেও তার ওফাতের পর তা আবার অনেকটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, যার কারনে আমরা খোলাফায়ে রাশেদীনদের সময় পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখি যত বিভেদ, ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ, অর্ন্তকোন্দল সব কিছুর মুলে কিন্তু গোত্র কেন্দ্রিকতা। আস্তে আস্তে যখন আমরা সেদিকে যাব তখন ব্যাপারটা বুজতে পারবেন।
এইবার আমরা অন্য দিকে একটু দৃষ্টি দেই, আপনি যদি খ্রিষ্টান ধর্ম বা ইহুদী ধর্মের দিকে তাকান তবে দেখবেন কয়েক শত বছর লাগছে এই ধর্মগুলোকে যথাযথভাবে আত্ম প্রকাশ করতে। ৮০০ খ্রিষ্টাব্দে পোপ তৃতীয় লিও খ্রিষ্টান সম্রাট শার্লমেনের মাথায় মুকুট তুলে দেবার মাধ্যমে প্রথম এই ধর্মকে একটি সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়ে আসেন, যদিও খ্রিষ্টান ধর্মে রাষ্ট্র এবং পোপ প্রথা দুটি সামন্তরাল প্রথা হিসাবে দেখা যায়। মুসলিম সমাজ এত দ্রুত সম্প্রসারন ঘটে যে, সেখানে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর কোন ধারনাই ছিল না, গোত্র ভিত্তিক সমাজ ব্যাবস্থাকে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মহানবী একটা “উম্মাহ সমাজ” ব্যাবস্থা চালুর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন যেটা তার জীবদ্দশায় সম্ভব হয়নি, তিনি শুধু ভিত্তি দিয়ে গিয়েছেন। তার দেখানো পথে সেই ভিত্তিকে কাঠামোতে আনতে শত শত বছরের প্রথা ভেঙ্গে খোলাফায়ে রাশেদিনদের দ্ধারাই সম্ভব হয়েছিল, কিন্তু এত দ্রুত পরিবর্ধনশীল মুসলিম বিশ্ব তার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে গিয়ে নিজেদের ভেতর অনেক রক্ত ঝড়াতে হয়েছে। আপনাকে স্বরন রাখতে হবে, শুরুতে খলিফা কোন রাষ্ট্র প্রধান ছিলেন না।
খলিফা মানে “প্রতিনিধি”। শব্দটির আভিধানিক অর্থ উত্তরাধিকারী, প্রতিনিধিত্বকারী, সেনাপ্রধান। ইসলামী পরিভাষায় খলীফা হলেন এমন ব্যক্তি যিনি যাবতীয় বিষয়ে শরীআত অনুযায়ী সমস্ত উম্মাতকে পরিচালিত করেন। আবার দেখুন খলিফা বলতে পবিত্র কোরানে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে কাউকে বুজানো হয়েছেঃ
"হে দাঊদ, নিশ্চয় আমি তোমাকে যমীনে খলীফা বানিয়েছি, অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার করো আর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় তাদের জন্য কঠিন আযাব রয়েছে। কারণ তারা হিসাব দিবসকে ভুলে গিয়েছিল।" (সুরা সা্দ, আয়াত ২৬)
পবিত্র কোরান বা হাদীসে রাষ্ট্রবাদের কোন স্পষ্ট নিদর্শন না থাকায় “রাষ্ট্রপ্রধানের” ধারনাটাও আসে না। তাই খলিফা শব্দটি কিন্তু ইসলাম স্বীকৃত কোন শব্দ না তবে সময়ের প্রয়োজনে তিনটি উপাধি ব্যাবহৃত হয়, আমিরুল মোমিনীন, ইমামুল মুসলিমুন এবং খলিফাতুল মুসলিমুন। এর মাঝে খলিফাতুল মুসলিমুন শব্দটি থেকে খলিফা শব্দটি ব্যাপক প্রচারিত হয়।
এখন আসি খলিফা নির্বাচন নিয়ে কিছু কথায়, পূর্ব উল্লেখিত ধর্মগুলোতে ধর্মপ্রচারক রা তাদের উত্তরসুরী রেখে গিয়েছিলেন, এমন কি খ্রিষ্টান ধর্মে ধরে নেয়া হয় সেইন্ট পিটার যীশুর উত্তরাধিকারী। কিন্তু শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মৃত্যুর সময় কোন উত্তরাধিকারী নির্বাচিত করে যান নি। যেহেতু শেষ নবী তাই নেতৃত্ব নেবার জন্য অন্য কোন নবীর আগমনের অবকাশ ছিল না। এখানে এব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, যদি মহানবী তার মৃত্যুর পুর্বে কোন উত্তরাধিকারী রেখে যেতেন তবে সেটা হত সুস্পষ্ট, যেহেতু তিনি সেটা রেখে যান নি, তাই মহানবীর অবর্তমানে নেতৃত্ব প্রদানের এখতিয়ার তিনি মুসলিম উম্মাহর হাতে দিয়ে গেছেন নিঃসন্দেহে। এখানে উত্তরাধিকার সুত্রের কোন সুযোগই নেই।
মহানবী কর্তৃক উত্তরাধিকারী না রেখে যাবার ব্যাপারটি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রাঃ) আরো পরিস্কার করে দিয়ে গেছেন। তার এ বিবৃতির আগে কেউ কেউ মনে করত মহানবী তার মৃত্যুর আগে হযরত আবু বকর (রাঃ) কে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে গেছেন। কিন্তু হযরত উমর (রাঃ) তার মৃত্যুর পূর্বে উত্তরাধিকারীর প্রশ্নে বলেনঃ আমি যদি খলিফা নিয়োগ করে যাই, তাহলে বুজে নিও যে, যিনি (মহানবী) আমার থেকেও শ্রেষ্ঠতর ছিলেন তিনিও খলিফা নিয়োগ করে গিয়েছিলেন। আর আমি যদি ব্যাপারটা মুসলমানদের স্বাধীন বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিয়ে যাই তাহলে বুজে নিও যে, যিনি (মহানবী) আমার থেকে শ্রেষ্ঠতর ছিলেন তিনিও ওটা তাদের স্বাধীন বিবেচনার ওপর সোপর্দ করে গিয়ে ছিলেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা ৩৪৯)।
মহানবীর মৃত্যু হয় মদীনায়, সেখানে তার দু ধরনের অনুসারী ছিল, এক দল যাদের “আনসার” হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে এবং যাদের পরিচয় পূর্বেই দিয়েছি, আর একদল মহানবীর সাথে মক্কা থেকে বা অন্যত্র থেকে এসে মদীনায় বসবাস করত তাদের বলা হত “মুহাজির”। মহানবীর মৃত্যু পরবর্তী কে হবে ইসলামী উম্মাহর প্রধান এ নিয়ে তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে যায় যখন মহানবীর দাফন ও সম্পন্ন হয়নি।
বনু সায়েদা গোত্রের ছাদ যুক্ত চত্বরের বর্তমান চিত্র
প্রথম দলঃ আনসাররা খাজরাজ গোত্র প্রধান সাদ বিন উবাইদার নেতৃত্বে বনু সায়েদা গোত্রের ছাদ যুক্ত চত্বরে জমায়েত হন তাদের দাবী ছিল যেহেতু তারা ইসলামের দুর্দিনে মহানবী এবং মুহাজিরদের আশ্রয় দিয়েছিল তাই তাদের নেতা সাদ বিন উবাইদা মহানবী পরবর্তী নেতৃত্ব দেবার দাবীদার। দ্বিতীয় দলঃ মুহাজিরদের একটি দল হযরত আলীর (রাঃ) বাড়ীতে গিয়ে তাকে নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ করে যেহেতু তিনি ছিলেন মহানবীর পুত্রতুল্য এবং এক মাত্র জীবিত সন্তান বিবি ফাতেমা (রাঃ) র স্বামী। তৃতীয় দলঃ মুহাজিরদের একটি বড় অংশ ঐক্যবদ্ধ হয় হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত উমর (রাঃ) এর নেতৃত্বে।
এ অবস্থায় হযরত উমর এবং হযরত আবু বকর যখন এই খবর পেলেন তারা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন এই ভেবে যে মহানবীর মৃত্যুর সাথে সাথেই না ভ্রাতৃঘাতী কিছু একটা ঘটে যায়। তারা অতি সত্বর বনু সায়েদার চত্বরে যান এবং হযরত আবু বকরের চমৎকার প্রজ্ঞাপূর্ন বক্তৃতার মাধ্যমে সবাইকে প্রশমিত করেন, এ অবস্থায় হযরত উমর হযরত আবু বকর কে বলেন, “হে আবু বকর আপনার হাত খানি বাড়িয়ে দিন” তিনি হাত বাড়িয়ে দিলে হযরত উমর হযরত আবু বকরের হাতে বাইয়াত করলেন (ইসলাম ধর্মে অধিকাংশ সময়ে বাইয়াত বলতে শপথ পাঠ বা চুক্তিকেই বুঝানো হয়েছে) (দেখুন সীরাতে ইবনে হিশাম ৩৫৪-৩৫৬)। ৬৩২ সালের ৮ ই জুন মদীনার বনু সায়েদা চত্বরে ইসলামের প্রথম খলিফা নির্বাচিত হন।
হযরত আবু বকরের খলিফা হবার মধ্য দিয়ে মুসলমানদের নিজস্ব একটি রাষ্ট্র ব্যাবস্থা, ধর্মীয় ব্যাবস্থার সুরাহা হল মহানবীর মৃত্যুর পর। ৬৩২ সালে আরব উপদ্বীপে ইসলামী খিলাফতের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র ব্যাবস্থা চালু হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সমগ্র আরব উপদ্বীপ ইসলামের পতাকার নীচে চলে আসে। এরপর ৬৩৩ সালে অন্যতম সেরা দুই সম্রাজ্য পারস্য এবং বাইজেন্টিয়াম সম্রাজ্যের সাথে আনুষ্ঠানিক সংঘর্ষ শুরু হয়।
গোত্রীয় শক্তিতে বিভক্ত আরব গোষ্ঠীগুলো এতদিন তাদের তরবারির ধার পরীক্ষা করত এক গোত্র আর এক গোত্রের ওপর ইসলামের পতাকাতলে খিলাফত প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর নিজেদের এক বিশাল শক্তি হিসাবে আবির্ভুত হয়। যে শক্তি অচিরেই ৩০ বছরের কম সময়ে তিনটি মহাদেশে তাদের পূর্ন এবং আংশিক নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করবে।
পরবর্তী পর্বগুলোতে অনেক ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ, পবিত্র কোরান সংকলন, হানাহানি, পাশাপাশি ইসলামের প্রসার নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা আছে। যারা ধর্ম নিয়ে ইন্টারেষ্টেড না তারা অহেতুক বিতর্কিত কোন মন্তব্য দিয়ে কারো মনে আঘাত না দেবার সর্নিবন্ধ অনুরোধ রইল।
যথাযথ স্থানে রেফারেন্স ব্যাবহার করা হয়েছে।
পরবর্তী পর্বঃ খোলাফায়ে রাশেদিন হযরত আবু বকর (রাঃ)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:১২