যীশুর জীবনের অন্যতম রহস্যময় ঘটনা হিসাবে যা আমার কাছে মনে হয় তা হল যীশুর বাল্যকাল। ইতিহাস প্রসিদ্ধ ধর্মপ্রচারকদের মাঝে যীশুর জীবনির একটা অংশ নিয়ে আজো কোন কুল কিনারা পাওয়া যায় নি। দুই বছর বয়সে যীশুকে নিয়ে তারা বাবা মা মিশরের উদ্দেশ্য রওনা দেন, হঠাৎ করে আমরা যীশুর দেখা পাই বারো বছর বয়সে যেরুজালেমে মন্দিরে ইহুদী ধর্মযাজকদের সাথে তর্কে লিপ্ত। তারপর আবার যীশুর কোন খোজ নেই, হঠাৎ করে ত্রিশ বছর বয়সে অনেকটা আকাশ দিয়ে পড়ার মত করে যীশুর আবার যেরুজালেমে আবির্ভাব। এর মাঝে যীশু কোথায় ছিল? কাদের সাথে মিশছে, পুরাটাই ধোঁয়াশা। এব্যাপারে ঐতিহাসিকদের গবেষনা কিন্তু থেমে নেই। চেষ্টা করছে যীশুর এই হারানো সময় মিসিং টাইমটাকে বের করার। এব্যাপারে আমাকে যে বইটি প্রভাবিত করছে তা হল “যেসাস লীভড ইন ইন্ডিয়া” বইটি।
মথির গসপেলের দ্বিতীয় অধ্যায়ে আমরা দেখিঃ
The Magi Visit the Messiah
After Jesus was born in Bethlehem in Judea, during the time of King Herod, Magi from the east came to Jerusalem and asked, “Where is the one who has been born king of the Jews? We saw his star when it rose and have come to worship him.”
“রাজা হেরোডের আমলে যিহুদীয়া দেশের বেথেলহেম শহরে যীশুর জন্ম হয়, সেই সময় প্রাচ্য দেশ থেকে কয়েকজন জ্যোতিষী জেরুজালেম শহরে আসে। তারা জানতে চাইল ইহুদীদের যে রাজা জন্ম গ্রহন করেছেন তিনি কোথায়? প্রাচ্যের আকাশে তার জন্মের প্রতীক তারার উদয় আমরা দেখেছি। আমরা এসেছি তাকে প্রনাম করতে” (মথি ২:১-২)
এখানে একটা ব্যাপার খেয়াল করুন ম্যাজাই বা ম্যাগী বা জ্ঞানী যাই বলুন না কেন তারা কিন্তু এসেছিল প্রাচ্য দেশ থেকে। এই প্রাচ্য দেশ বলতে এখানে পূর্ব দিকের দেশগুলোর কথা বলা হয়েছে, পারস্য থেকে ভারতবর্ষ এর মাঝে পড়ে। আপাতত এইটুকু মনে রাখুন, এইবার যাই অন্য দিকে। কারা ছিল এই ম্যাজাই?
Origen
প্রাচীন গ্রীক ভাষ্যে, এই তিন বিজ্ঞ ব্যাক্তিকে ম্যাগাই (পারসিক ম্যাগাস থেকে) বলা হয়েছে। আর্লেসের সিসিরিয়াস প্রথম বাইবেলের গল্পের ম্যাজাইকে ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রভাবশালী ব্যাক্তি হিসাবে বর্ননা করেন। নবম শতাব্দীতে এই ম্যাজাইদের কাল্পনিক নাম ও আমদানী হয় ক্যাসপার, মেলচিওর এবং বালথাজার। প্রাচীন সুত্রগুলোতে কিন্তু সুস্পষ্ট উল্লেখ্যা নেই কতজন ম্যাজাই যীশুর জন্মের পর হাজির হয়েছিলেন তবে ওরিজনের (আলেকজান্দ্রিয়া খ্রিষ্টান ধর্মবেত্তা এবং শিক্ষক; জন্ম ১৮৫? মৃত্যু ২৫৪ খ্রিষ্টাব্দ) সময় থেকে ম্যাজাইদের সংখ্যা তিনে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় এবং তিনটা উপহার দেয়া হয়েছিল সম্ভবত সেই কারনে।
ধর্মীয় লোক কথা অনুসারে একটা জীর্ন সরাইখানার আস্তাবলে যেখানে কয়েক ঘন্টা আগে একটি শিশুর জন্ম হয়েছিল তার মাথার ওপরে একটি নক্ষত্র দাড়িয়ে পড়ে। সেখানে যখন এই ম্যাজাইরা উপস্থিত হন তখন শিশুটির বয়স দুই বছর হয়ে গেছে। এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় দালাইলামা নির্বাচনে দালাইলামা সন্দেহভাজন শিশুটিকে দুই বছর হতে হবে যা একটি বৌদ্ধ রিচ্যূয়াল। ( এ ক্ষেত্রে এই পোষ্ট দেখতে পারেন জাতিস্মরঃ পুর্নজন্মপ্রাপ্ত ত্রয়োদশ দালাইলামা যেভাবে চর্তুদশ দালাইলামা হিসাবে জন্ম নেয় )
সন্দেহভাজন গসপেল অভ নাজারেনসে নিচের অধ্যায়টি বর্নিত আছে। এখানে সন্দেহ ভাজন কথাটি দ্ধারা আপনাকে বুজতে হবে খ্রিষ্টান ধর্মের শুরুর দিকে অনেক গুলো গসপেল ছিল। গসপেল মানে সুসংবাদ। মার্ক, মথি, লুক এবং যোহানের গসপেলে নিউ টেষ্টামেন্টে লিপিবদ্ধ আছে তার আগের যে অসংখ্য গসপেল যা যীশুর সমসাময়িক সেগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হয় বা ধ্বংসের ভয়ে লুকিয়ে ফেলা হয়।
একেবারে সাম্প্রতিক গবেষনার আলোকে এটা বলা যায় মার্ক ৭০ খ্রিষ্টাব্দের কিছু আগে, মথি (ম্যাথুউ) ৭০ খ্রিষ্টাব্দের কিছু পরে, লুক ৭৫ থেকে ৮০ খ্রিষ্টাব্দের ভেতরে ( কেউ কেউ বলেন ১০০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়) আর যোহানের গসপেল দ্বিতীয় শতাব্দীর (১০০ খ্রিষ্টাব্দ) প্রথম দশকের আগে লেখা হয় নি এটা বলা চলে। সেক্ষেত্রে এটা বলা চলে নিউ টেষ্টামেন্টে আমরা যেসব লেখা দেখতে পাই সেগুলোর প্রথমটাও যদি ধরি তবে সেটা লিখতে লিখতে এক প্রজন্ম পার হয়ে গেছে যদি যীশুর ক্রুশ বিদ্ধ ৩০ শতাব্দীতে ধরে নেই। যাই হোক এনিয়ে অন্য কোন দিন বিস্তারিত আলোচনা হবে, যা বলছিলাম এই চারটি গসপেল ছাড়া ছড়ানো ছিটানো যে কিছু গসপেল পাওয়া যায় তাদের কে সন্দেহজনক আখ্যা দেয়া হয়। (এনিয়ে বিস্তারিত পোষ্ট পরে দেব)
আসুন সন্দেহভাজন গসপেল অভ নাজারেনস এ কি লেখা আছে দেখি
জোসেফ যখন চোখ তুলে তাকালো, সে এক দল ভ্রমনকারীকে এগিয়ে আসতে দেখল (নোটঃ লক্ষনীয় এখানে একদল বলা হয়েছে), সরাসরি গুহার দিকে এগিয়ে আসছে; সে বলল আমি উঠে গিয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানাব।’ গুহা থেকে বের হওয়া মাত্রই জোসেফ সিমনকে বলে, আমাদের দিকে এগিয়ে আসা লোক গুলো বোধহয় জ্যোতিষী দেখ কিভাবে তারা অনবরত আকাশের দিকে তাকায় আর নিজেদের ভেতর কথা বলছে। কিন্তু লোক গুলো বোধ হয় বিদেশী, কারন আমাদের থেকে তাদের পোষাক পরিচ্ছেদ ভিন্ন ধরনের; তাদের পরিধেয় বস্ত্রগুলো মুল্যবান এবং তাদের গায়ের রং কালো আর তাদের মাথায় টুপি পরে আছে এবং আমার কাছে তাদের গাউন গুলোকে নরম মনে হচ্ছে এবং তাদের পদ যুগল ও আচ্ছাদিত।
আজ এতকাল পরে তথ্যের স্বল্পতায় প্রমান করা প্রায় অসম্ভব যে ওই সব ম্যাজাই বা বিজ্ঞ জনেরা পারস্য থেকে না ভারত থেকে আসছিলো। তবে তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মাবলাম্বীরা উচ্চ পদস্থ লামাদের পুর্নজন্ম যেভাবে নিরূপন করে যীশুকে চিহ্নিত করতে আসা ম্যাজাইদের মাঝে এক অসধারন সাদৃশ্য আমরা খুজে পাই।
প্রাচ্যের তিন বিজ্ঞজন জেরুযালেমে যীশুকে চিহ্নিত করার পর ঈশ্বরের কাছ থেকে তার বাবা জোসেফ ঐশী বানী লাভ করেঃ তারা চলে যাবার পর প্রভু পরমেশ্বরের এক দুত জোসেফ কে স্বপ্নে দেখা দিয়ে জোসেফকে বলেন, “জোসেফ, ওঠ, শিশুটিকে এবং তার মাকে নিয়ে মিশর পালিয়ে যাও। আমার আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত তুমি সেখানেই থাকবে। কারন শিশুটিকে হত্যা করার জন্য হেরোড তৎপর হবেন” (মথি ২:১৩)
When they had gone, an angel of the Lord appeared to Joseph in a dream. “Get up,” he said, “take the child and his mother and escape to Egypt. Stay there until I tell you, for Herod is going to search for the child to kill him.”
পালাবার পথে সম্ভবতঃ হেবরন হয়ে বিরসেবায় যান এবং সেখান থেকে মরুভুমি অতিক্রম করে ভুমধ্যসাগরের তীরে পৌছান। কেবল এখানেই মিশরের সীমান্তের কাছে তারা নিরাপদ। সে সময় প্রায় দশ লক্ষ ইহুদী মিশরে বসবাস করতেন এর ভেতর আলেজান্দ্রিয়ায় বাস করত দুই লক্ষ। সামাজিক রীতিনীতির কারনে এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার কারনে মিশর তখন ইহুদীদের কাছে স্বর্গ রাজ্য। যীশুর জীবৎকালে এসেন্স সম্প্রদায়ের এক প্রতিবেদনে গসপেলের উল্লেখিত হেরোডের দ্ধারা সংঘটিত নিরাপরাধ শিশুদের নির্বিচারে নৃশংস হত্যাকান্ডের সত্যতা মেলে। পরবর্তী রাজা, পুরোহিত সম্প্রদায়ের কেউ ছিল না, সে ছিল একটা ভুইফোড়, দুর্বিনীত, এবং নাস্তিক ব্যাক্তি। যুবক বৃদ্ধ সে নির্বিচারে হত্যা করে এবং পুরো দেশে তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে (অ্যাসঃ মোস ৬:২২) (অ্যাস মোস মানে এ্যাজামসন অভ মোজেস)
এখানে আর একটা ব্যাপার উল্লেখ্য না করলেই না খ্রিষ্টান ধর্মের অনেক আগে থেকেই আলেকজান্দ্রিয়ায় বৌদ্ধ বিহার অবস্থিত ছিল। এটা কল্পনা করা অতিরঞ্জিত হবে না যে যীশু ছোটবেলায় মিশরে প্রাচ্য দর্শন সন্মন্ধ্যে ধারনা পেয়েছিলেন বৌদ্ধ পন্ডিতদের দ্ধারা যার কারনে সে যখন বারো বছর বয়সে জেরুযালেম মন্দিরে পুরোহিতদেরর তর্কে চমকে দেয় সেখানে নিশ্চয়ই এমন সব কথা ছিল যা সাধারন ইহুদী ধর্মে ছিল না। “যারা যীশুর কথা শুনছিলেন, তারা সকলে তার কথা এবং বুদ্ধি মত্তা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল (লুক ২:৪৭)
ঘৃনিত স্বৈরাচারী হেরোডের মৃত্যুর পরে পূর্ন দশ বছর অতিক্রান্ত না হওয়া অবদি যীশু নিরাপদে তার জন্মস্থানে ফিরতে সমর্থ হয়নিঃ
“রাজা হেরোডের মৃত্যুর পর প্রভুর এক দুত মিশরে যোশেফকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বললেন, যোশেফ শিশুটিকে ও তার মাকে নিয়ে এখনি ইসরাইল দেশে ফিরে যাও। কারন শিশুটির প্রান নাশের চেষ্টা যারা করছিলো তাদের মৃত্যু হয়েছে, যোশেফ তখন তাদের নিয়ে ইসরাইল দেশে ফেরত আসল, কিন্তু তিনি শুনতে পেলেন আর্কেলাউস তার পিতা হেরোদের স্থলে যীহুদীইয়া প্রদেশ শাষন করছে, তাই সেখানে যেতে তিনি ভয় পেলেন, স্বপ্নে তিনি এ সম্পর্কিত সতর্কবানী পেলেন। তিনি গালীল প্রদেশে চলে গেলেন এবং নাযারেথ নামক এক সম্প্রদায়ের মাঝে বাস করতে লাগলেন। এভাবেই পূর্ন হল নবীদের এই ভবিষ্যতবানী; নাজারিয়া নামে তিনি আখ্যায়িত হবেন।” (মথি ২:১৯-২৩)
এর পরে আলোচনা করব বৌদ্ধ ধর্ম এবং জেসাসের মাঝে সাদৃশ্য। লিঙ্ক বিভিন্ন জায়গায় দেয়া আছে তবে মুল বই হিসাবে "জেসাস লীভড ইন ইন্ডিয়া" কে ধরা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:১৯