SETI's Allen Telescope Array Resumes Listening Duties
সুইস ভদ্রলোক এরিক ফন দানিকেনর নাম কয়জন শুনছেন আমি জানি না, তবে ছোট কাল থেকেই বই পড়ার নেশা থাকায় সেই স্কুল লাইফ থেকে উনার নামের সাথে আমি পরিচিত। বাংলা ভাষায় উনার বইর অনুবাদ করেন শ্রী অজিত দত্ত। তার মধ্যে সেই স্কুল লাইফেই পড়া হয়ে গেছিল "দেবতা কি গ্রহান্তরের মানুষ", "দেবতার গোধূলিবেলা", এর বাইরেও দানিকেন সাহেবের বেশ কিছু বই উনি অনুবাদ করেছেন কিন্তু সেগুলো আর পড়া হয়ে ওঠে নি। উনার কাজ কারবার হল ভীন গ্রহের অধিবাসী ছিল যারা এক সময়ে এই পৃথিবীতে এসেছি এটা প্রমান করা। উনার ব্যাপারে পরে আসব।
The Ancient Aliens Theory Explained By Erich Von Daniken April 2015
যারা সায়েন্স ফিকশান পড়েন তারা নিশ্চয়ই জানেন সায়েন্স ফিকশানের জনক হিসাবে ফরাসী জুলভার্নকে ধরা হয়। সেই ধারায় হালের কার্ল সেগান বা আইজ্যাক আসিমভ এরা তো অনেকটা কিংবদন্তীতে পরিনত হয়েছেন। এরাও কিন্তু বিভিন্ন লেখায় ভিন গ্রহের বুদ্ধিমান জীব নিয়ে লিখে গেছেন বিভিন্ন গল্পে। মজার ব্যাপার হল এদের অনেক গল্প উপন্যাসের বিভিন্ন টার্ম আজকের বিজ্ঞানের অংশ হয়ে গেছে, বা নাসার অনেক প্রজেক্টে তাদের ব্যাবহৃত সায়েন্স ফিকশান গুলোর নাম ব্যাবহৃত হয়।
সেবা প্রকাশনী থেকে অনেক আগে ভিনগ্রহের প্রানী (রহস্য), ভিনগ্রহের প্রানী (প্রমান) নামে দুটো বই বের হয়েছিল, অনেক আগে পড়ছিলাম, আমার কালেকশানেও ছিল কিন্তু কে যেন নিয়ে গিয়ে আর ফেরত দেয় নি। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলও একই আঙ্গিকের বই ছিল। প্রায় ২০/২৫ বছর আগে পড়া বইগুলো স্মৃতি যদি প্রতারনা না করে সে গুলো এরিক ফন দানিকেনের বিভিন্ন প্রমান ট্রমান নিয়ে লিখিত ছিল। আমার সব সময়ই কৌতুহল এই ব্যাপারটা নিয়ে। তাই বিভিন্ন সময় এই সব বই ফিচার দেখলে গোগ্রাসে গেলতাম। আজকে ফিকশান নিয়ে আলোচানায় যাব না, ফ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা করব। মানে আজকের যুগে বৈজ্ঞানিক ভাবে এই পৃথিবীর বাইরে প্রান নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহলে কি কি কাজ হয়েছে তার দিকে আলোকপাত করার চেষ্টা করব।
১৬০০ খ্রীষ্টাব্দের ১৭ ই ফেব্রুয়ারী রোম। গাধার পিঠে চাপিয়ে একজন মানুষ কে “ক্যাম্পো দো ফিওরী” বাংলায় যার মানে “ফুল বাগিচা”য় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, পেছনে পেছেন চলছে খ্রীষ্টান ধর্মযাজকরা পবিত্র স্তোস্ত্র পাঠ করতে করতে। আর বন্দী আট বছর জেলে বন্দী ছিলেন, হাত বাধা, মুখ বাধা, কিন্তু তার বসার মাঝে ফুটে উঠছিলো এক রাজকীয় ঔদ্ধত্য, আর আশেপাশের মানুষ গুলোর প্রতি নিদারুন করুনা। বন্দীত্বের শেষ আট দিন সকাল বিকাল তার কাছে পাদ্রীরা যেতেন, আর বুজাতেন বন্দীর আত্মার মুক্তির জন্য হলেও সে স্বীকার করুক সে ভুল করছে, সে অন্যায় করছে স্বীকার করলে মুক্তিও মিলে যেতে পারে। দুর্বিনীত বন্দীর এক জবাব, “ আমার প্রান দন্ডে আমি ভীত নই, বরং তোমরা ভীত তোমাদের অন্যায় শাস্তির জন্য।”
Biography of Giordano Bruno, Scientist and Philosopher
রোম শহরের ক্যাম্পো দো ফিওরীতে পৌছে গেল মিছিল, এরপর প্রতক্ষ্যদর্শীর বিবরন অনুযায়ী বন্দীকে উলঙ্গ করিয়ে তাকে পীচযুক্ত চটের জামা পরিয়ে দেয়া হল। খুটির সাথে পিছ মোড়া করে হাত বাধা হল, প্রধান পাদ্রী শেষবার তার স্বীকারোক্তির চেষ্টা করল, ঔদ্ধত্য বন্দী চোখ বাধা অবস্থাতেই সোজা তাকিয়ে থাকল। প্রধান পাদ্রীর ইঙ্গিতে চটের জামায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হল। বন্দীর গগন বিদারী চিৎকারে ভরে ক্যাম্পো দো ফিওরীর আকাশ বাতাস, তবে তা অল্প সময়ের মধ্যেই স্তিমিত হয়ে গেল। পুড়ে মারা গেল বন্দী।
ইনকুইজিশান এর নামে সে সময় অসংখ্য মানুষ কে হত্যা করছে চার্চ, ডাইনী আখ্যা দিয়ে অগুনিত মহিলাকে পুড়িয়ে মেরেছে ধর্মের নামে ধ্বজ্বাধারী কিছু মানুষ, মুলতঃ সে সময়ের খ্রীষ্টান পাদ্রীরা। সবার কথা ইতিহাস তো মনে রাখেনি, কিন্তু এই মানুষটির কথা ইতিহাস মনে রেখেছে কারন এর নাম ছিল জিওর্দানো ব্রুনো।
The trial of Giordano Bruno by the Roman Inquisition.
ধর্মের নামে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া ছাড়াও তিনি ১৫৮৪ সালে এক খানি বই লিখেছিলেন যার নাম “ডি ল’ইনফিনিতো উনিভারসো ই মোন্দি”, যাতে তিনি বিশ্ব ব্রম্মান্ডের বর্ননা দিয়েছিলেন, তার মাঝে আবার কয়েকটি লাইন ছিল এমনঃ চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে অগুনিত সূর্য, আর অসংখ্য পৃথিবী। সাতটা গ্রহ (সে সময় পর্যন্ত সৌরজগতের সাতটা গ্রহ আবিস্কৃত হয়েছে) যেমন এখানে ঘুরছে সূর্যের চারপাশে, তেমনই ঐ সব পৃথিবী ঘুরছে তাদের সূর্যের চারপাশে...... মহাবিশ্ব জুড়ে অসংখ্য গ্রহ পৃথবীর মত, পৃথিবীর মত ওখানে বাস করছে নানা রকম জীব।” সে সময় এই ধারনা প্রচার করার থেকে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে! যেখানে তারা ভাবত পৃথিবী এই মহাবিশ্বের কেন্দ্রে।
পৃথিবী কি একক অনন্য? এই রকম কি আর কিছু নেই মহাবিশ্বে? এই তর্ক বিতর্ক কিন্তু অনেক আগের খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে( খ্রিষ্টের জন্মের চারশত বছর আগে) প্লেটোর শিক্ষা মেনে এ্যারিষ্টটল প্রচার করতেন, পৃথিবী এক ও অনন্য, মহাবিশ্বে কোথাও এমন কিছু আর নেই, কিন্তু সবাই যে প্লেটো এ্যারিষ্টটলকে অভ্রান্ত মানতেন তা কিন্তু না, খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে দার্শনিক এপিকুরাস হেরোডেটাসকে, “ মহাবিশ্বে গ্রহ অসংখ্য, যাদের কোনটা আমাদের পৃথবীর মত, কোনটা তা নয়, তবে৩ জীবজন্তু কিংবা অন্য যেসব জিনিস আমরা এখানে দেখি, সে সব কিন্তু রয়েছে সবখানে”। এটা কিন্তু এপিকুরাসের নিজস্ব মতবাদ না তিনি এটা পেয়েছিলেন মেত্রোদোরাসের থেকে, মেত্রোদোরাস বলতেন, অনন্ত বিশ্বে কেবল পৃথিবীতে জীবের বাস ভূমি – “এটা তেমন আজগুবি যেমন আজগুবি এটা দাবী করা যে, বিস্তৃর্ন প্রান্তরে অসংখ্য যবের দানা ছড়ালে তার থেকে মাত্র একটা যবের চারা গজাবে।”
Metrodorus of Lampsacus (the younger)
ভিনগ্রহে জীবনের দাবী যদি এতই প্রাচীন হয় তবে জিওর্দানো ব্রুনো এত দিন পর কেন ইনকুইজিশানের শিকার হলেন, এর উত্তর ও ওই এপিকুরাসের মাঝে লুক্কায়িত। মেত্রোদোরাসের দর্শন (এটা তখন দর্শন শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল, আধুনিক এ্যাষ্ট্রোনোমির জন্মো হয় নি) এপিকুরাস বহন করে মৃত্যু হলে তার পর আর কেউ এই দর্শন প্রচারে এগিয়ে আসে নি, ওদিকে তখন প্লেটো, এ্যারিষ্টটল, সক্রেটিসের ধারনার জয় জয়কার। এ্যারিষ্টোটলের ধারনাকে এগিয়ে নেন দার্শনিক টলেমি খ্রিষ্টপূর্ব ৯০-১৬৮। টলেমি তখন অন্যতম প্রভাবশালী শাষক আর দার্শনিক, এর অল্প কিছুকাল পরেই আবির্ভাব হয় যীশু খ্রীষ্টের তার ধর্মের অনুসারীরা তখন স্বভাবতঃই টলেমির মতবাদ কে গ্রহন করে এটাকেই খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। এই বিশ্বাস অটুট থাকে মধ্যযুগ পর্যন্ত।
Ptolemy
এরপর প্রথ ভেঙ্গে এগিয়ে আসেন নিকোলাস কোপার্নিকাস, গ্যালিলিয়ো গ্যালিলেই সে সাহসের ধারাবাহিকতা আমার দেখি ব্রুনোর মাঝে। গ্যালিলিয়ো কিন্তু চার্চের কাছে নতজানু হয়ে নিজের মতবাদ প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। কিন্তু ব্রুনো করেননি। অবিস্মরনীয় হয়ে আছেন ইনকুজিশানের শিকার আগুন পুড়ে ব্রুনো।
২০১০ সালে ব্রুনো বিশেষ ভাবে স্মরনীয় হয়ে আছেন ভিনগ্রহে প্রানের সন্ধানে গঠিত বৈজ্ঞানিক অন্বেষানে যার নাম “সার্চ ফর এক্সট্রা টেরোষ্টিয়াল ইন্টেলিজেন্স” সংক্ষেপে ইংরেজীতে বলে “SETI”. ধারনা আর পরীক্ষার ওপর বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত এবং এগিয়ে চলছে, “সেটী” ও তার ব্যাতিক্রম না। বিজ্ঞানের এই উদ্যেগের অর্ধশত বার্ষিকী ২০০৯ না ২০১০ সে প্রশ্নে তর্ক আছে, কেন? ১৮৭৭ সালে গিওভান্নি শিওপারেলি দূরবীনে চোখ রেখে মঙ্গলের বুকে কৃত্রিম নদীনালা আবিস্কার (!) করেন যা যথাসময়ে পরিত্যাক্ত হয় ২০০৯ সালে “নেচার” জার্নালে যা প্রকাশিত হয়, আন আইডেন্টিফাইড ফ্লাইং সসার (UFO) যেমন এখনো অবাস্তব এও তেমন অবাস্তব। অন্য গ্রহে জীবের সন্ধানে অবজ্ঞার পরিসমাপ্তি ঘটে ১৯৫৯ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর ওই “নেচার” জার্নালে এক প্রবন্ধ লেখেন দুই বিজ্ঞানী গিয়াসেপ্পী কোকেনি এবং ফিলিপ মরিসন। প্রবন্ধের শিরোনাম “সার্চিং ফর ইন্টারষ্টেলার কম্যুনিকেশান” আর একথা আপনাদের স্বরন করিয়ে দেয়া অবান্তর হবে না যে নেচার বিজ্ঞান জগতের সিরিয়াস জার্নাল কোন ফিকশান বা পাগলামির জায়গা না।
কৃতজ্ঞতাঃ বই, পত্রিকা, নেট
ইটি, সেটি, ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান জীবের অস্তিত্ব কি আসলেই আছে (শেষ পর্ব)