আজ থেকে ৩৫ – ৪০ কোটি বছর আগে আপনার চেনা পৃথিবী কিন্তু এমন ছিল না। তখন সব মহাদেশ কিন্তু এক সাথে ছিল যাকে প্যাঙ্গি (Pangea) নামে অভিহিত করা হয়। আর এর চারপাশে ছিল এক বিশাল সমুদ্র যাকে “সী অভ টেথিস” বলা হত
Map of Pangaea with modern continental outlines
এর পর ২০ কোটি বছর আগে ট্রায়াসিক যুগে প্যাঙ্গি ভেঙ্গে দুই ভাগে ভাগ হওয়া শুরু হল যাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিলেন লরেশীয়া এবং গন্ডোয়ানাল্যান্ড।
The organization of subcontinents (Laurasia and Gondwana)
জুরাসিক যুগে মানে আজ থেকে ১৫ কোটি বছর আগে পৃথিবীর অবস্থান কেমন ছিল দেখুন
Fichier:Earth During the Jurassic Time Period
আজ থেকে সাড়ে ছয় কোটি থেকে সাড়ে চৌদ্দ কোটি বছর আগে যেটাকে জিওলোজিষ্টরা ক্রিটেশাস যুগ বলছে সে সময় পৃথবীর অবস্থা কেমন ছিল জানার জন্য ছবি টা দেখুন।
The Cretaceous Period (146-65 million years ago)
এখন দেখুন আজকের পৃথিবী যেখানে আপনি বসবাস করছেন। এটাকে নিশ্চয়ই পরিচিত লাগছে।
Current world
এইবার উপরের ছবিগুলোকে এক সাথে দেখুন। এই যে গত ৩৫ থেকে ৪০ কোটি বছর আগে সুপার কন্টিনেন্ট ভেঙ্গে আজকের কন্টিনেন্টগুলো তৈরী হয়েছে একে জিওলজির পরিভাষায় কন্টিনেন্টাল ড্রিফট থিওরী বলে। পার্থক্যগুলো ধরতে পারছেন ছবি দেখে?
Continental drift theory
এইবার আসুন আর একটা মজার ব্যপা্রে যাই। জীওলোজিষ্টরা পৃথিবীর বয়সসীমাকে বিভিন্ন যুগ মহাযুগ ভাগ করেছে একে জিওলোজিক্যাল টাইম স্কেল বলে। নীচের ছবির দিকে তাকান এই স্কেলের দিকে তাকালেই আপনি ক্লিয়ার একটা ধারনা পাবেন কোন যুগে কারা পৃথিবীতে এসেছিল? জুরাসিক পার্কের কল্যানে ডাইনোসর কোন পিরিয়ডে পৃথিবীতে এসেছিল তা প্রায় সবাই জানে, অথচ “জুরাসিক” জিনিসটা কি এটা প্রায় ৯০% মানুষই জানে না। আশা রাখি এব্যাপারে এখন আর কোন কনফিউশান থাকবে না।
Geological time scale (MYA= Million years age, Eon= মহাযুগ, Era = যুগ, Period = পিরিয়ড, Major events = উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা)
আজকে আপনি যে পৃথিবী দেখছেন ৭/৮ কোটি বছর পৃথিবী এমন থাকবে না। কন্টিনেন্টগুলো ড্রিফট (সরে) হয়ে প্লেট টেকটোনিক থিওরীর মাধ্যমে অন্য কোন আকার ধারন করবে। এই ক্ষেত্রে প্লেট টেকটোনিক থিওরী সামনে চলে আসে। প্লেট টেকটোনিক থিওরীটা কি? বিজ্ঞানীরা সমস্ত পৃথিবীকে কয়েকটি প্লেটে বিভক্ত করেছেন (সমস্ত পৃথিবী বলতে আমি কিন্তু শুধু মহাদেশগুলোকে বুজাইনি মহাসাগরকেও বুজিয়েছি)। মেজর প্লেটগুলোর মাঝে আছে প্যাসিফিক প্লেট, নর্থ আমেরিকান প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট, আফ্রিকান প্লেট, এ্যান্টার্কটিক্যান প্লেট, ইন্ডিয়ান প্লেট, অষ্ট্রেলিয়ান প্লেট (অনেকে ইন্ডিয়ান আর অষ্ট্রেলিয়ান প্লেট কে একত্রে ইন্দো – অষ্ট্রেলিয়ান প্লেট ও বলে), সাউথ আমেরিকান প্লেট।
Major plate
এর বাইরে কিছু মাইনর প্লেট আছে সোমালি প্লেট, নাজকা প্লেট, আমুরিয়ান প্লেট, বার্মিজ প্লেট এরকম আরো প্রায় সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ টি প্লেট। ছবি দেখুন।
Major and minor plate
এই প্লেট গুলো পৃথিবীর কেন্দ্রে গলিত উত্তপ্ত পদার্থের (একেই আমার লাভা বলি) ওপর প্রতি নিয়ত ভেসে বেড়াচ্ছে ( এই ভেসে বেড়ানোর পরিমান এত সামান্য যে আমরা বুজতেই পারি না। যার কারনে একটা প্লেট আর একটা প্লেটের কাছ থেকে যেমন দূরে সরে যাচ্ছে তেমনি হয়ত অন্য কোন প্লেটের কাছাকাছি চলে আসছে। এই কাছাকাছি চলে আসার সময় প্লেটের বাউন্ডারি বাউন্ডারিতে ঘষা লাগছে এবং একটা আর একটার নীচে চলে যাচ্ছে। হিমালয়ের জন্মও কিন্তু এভাবেই। ছবি দেখুন।
আর তাতেই ভুমিকম্প হচ্ছে। ভুমিকম্পের জোন গুলো হিসাব করলে দেখা যায় প্রায় ভু কম্পন এলাকা গুলো বাউন্ডারি বরাবর। ভুমিকম্পের এটাই এক মাত্র কারন না তবে অন্যতম কারন। আপনি যদি ছবি গুলো দেখেন তবে খেয়াল করবেন হলুদ গোল চিহ্নিত এলাকাগুলো দুটো প্লেটের মধ্যে অবস্থিত।
এইবার নীচের ছবিটা দেখুন বাংলাদেশ মেজর প্লেট ইন্ডিয়ান প্লেট এবং বার্মিজ মাইনর প্লেট এর মাঝে অবস্থিত এই দুটো প্লেট নিয়ত একে অপরের সাথে ঘষা খাছে এবং মাঝে মাঝেই নাড়া দিয়ে যাচ্ছে এবং যখন বাংলাদেশে ভুমিকম্প হয় দেখবেন পেপারে লেখা আছে এদের উৎপত্তি স্থল আরাকান পাহাড়, আন্দামান বা ত্রিপুড়ার দিকে কারন ওই বার্মিজ প্লেট এবং ইন্ডিয়ান প্লেটের মাঝে নাড়াচাড়া। কিন্তু নাড়া দিয়ে যাচ্ছে আমাদের। রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে উলুখড় প্রানে মরে এই আর কি।
এ সংক্রান্ত আমার একটা পুরানো একটা পোষ্ট আছে চাইলে দেখতে পারেন পৃথিবীর জন্ম কথা । জিওলজি আমার একাডেমিক সাবজেক্ট ভার্সিটিতে তাই এই ব্যাপারে লিখতে কিছুটা হলেও স্বাচ্ছ্বন্দ্য বোধ করি। এই পোষ্টে যা লিখেছি সবই খুব সাধারন ভাষাভাষা, কারো যদি জিওলজি নিয়ে জ্ঞান থাকে সে আমাকে হয়ত গালাগালি করবে কিন্তু আমি লেখাটা তাদের জন্য লিখিনি লিখছি যারা ব্যাপারটায় ইন্টারেষ্ট কিন্তু এই ব্যাপারে একাডেমিক না তাদের জন্য। ইচ্ছা আছে ভুমিকম্প নিয়ে আলাদা পোষ্ট দেব। দেখি কেউ যদি সাড়া দেয়।
এ সংক্রান্ত আর একটি পোষ্ট পৃথিবীর জন্ম কথা
যারা ইন্টারেষ্টেড তারা দেখতে পারেন Plate Tectonics Theory Lesson
Continental Drift and Plate Tectonics
ছবি কৃতজ্ঞতায়ঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫২