সন্ধ্যা তখন ঘনিয়ে এসেছে, সেদিন ছিল প্রস্ততির দিন অর্থ্যাৎ সাব্বাথের দিনের আগের দিন। সে জন্য আরিম্যাথিয়া নিবাসী জোসেফ সেখানে এলেন। ইনি ছিলেন ধর্ম সভার একজন সন্মানিত সদস্য। তিনি ঐশী রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশায় ছিলেন। তিনি সাহস করে পীলাতের কাছ থেকে যীশুর মৃতদেহ চেয়ে নিলেন।
এরই মাঝে যীশুর মৃত্যু হয়েছে যেনে পীলাত অবাক হয়ে গেলেন, তিনি সেনাপতিকে ডেকে জিজ্ঞাস করলেন, সত্যিই যীশু এরই মাঝে মারা গেছেন কিনা।
সেনাপতির কাছে এ কথা সত্য জেনে তিনি যীশুর মৃত্যুদেহ যোষেফ কে দিয়ে দিলেন। যোষেফ দামী কাপড় কিনে এনে দেহটিকে নামিয়ে এনে কাপড় দিয়ে জড়ালেন। তারপরে পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা একটা সমাধির মাঝে রেখে দিলেন এবং সমাধিরগুহার মুখে একটি পাথর গড়িয়ে এনে চাপা দিয়ে রেখে গেলেন।
(মার্ক ১৫: ৪২-৪৬)
The Burial of Jesus
42 It was Preparation Day (that is, the day before the Sabbath). So as evening approached, 43 Joseph of Arimathea, a prominent member of the Council, who was himself waiting for the kingdom of God, went boldly to Pilate and asked for Jesus’ body. 44 Pilate was surprised to hear that he was already dead. Summoning the centurion, he asked him if Jesus had already died. 45 When he learned from the centurion that it was so, he gave the body to Joseph. 46 So Joseph bought some linen cloth, took down the body, wrapped it in the linen, and placed it in a tomb cut out of rock. Then he rolled a stone against the entrance of the tomb.
Mark 15:42-46 New International Version (NIV)
এখানে যে কাপড়ের কথা বলা হয়েছে মানে যে কাপড় দিয়ে যীশুর মৃত্যুর (!) পর জড়িয়ে রাখা হয়েছে সেই কাপড় তুরিনের আলখাল্লা নামে ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। বিখ্যাত তুরিনের আলখাল্লা ৪.৩৬ মিটার লম্বা এবং ১.১০ মিটার চওড়া এবং অবিশ্বাস্যভাবে সেখানে একজন ক্রুশ বিদ্ধ হওয়া লোকের দেহের ছাপ দেখা যায়। অর্ধেক আলখাল্লায় রয়েছে পেছনের ছাপ, বাকী অংশে মাথার চারপাশে জড়ানো থাকায় বাকী অংশে সামনের ছাপ ছুটে উঠেছে। এই তুরিনের আলখাল্লায় বা শ্রাউড অভ তুরিনে একজন মানুষের মাথা, মুখমন্ডল, বক্ষপিঞ্জর,বাহু, হাত, পা, পায়ের পাতার ছাপ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ক্রশ বিদ্ধ হবার কারনে রক্তের দাগ সহজেই চোখে পরে যা কালের ছোবলে ম্লান বাদামী বর্ন ধারন করছে।
অনেক দিন ধরেই ইচ্ছা ছিল শ্রাউড অভ তুরিন নিয়ে লিখব। কিন্তু লেখা আর হয়ে ওঠে নি। আজকে লিখতে বসলাম। যীশু বা ঈসা (অঃ) খ্রীষ্টান দের কাছে যেমন ঈশ্বর পুত্র মুসলমান কাছে তেমনি একজন সন্মানিত নবী, যিনি আল্লাহর তরফ থেকে ওহী প্রাপ্ত। তাই শ্রাউড অভ তুরিন নিয়ে দয়া করে কেউ ধর্মীয় ব্যাখ্যায় না গিয়ে অথবা এমন কোন মন্তব্য করবেন না যা কারো কোন ধর্মীয় অনুভুতিকে আঘাত করে। আমি মুলতঃ এই শ্রাউড অভ তুরিনের ঐতিহাসিক পটভুমি এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তুলে ধরার চেষ্টা করব যা বিভিন্ন বই পত্র এবং নেট ঘেটে আমি পেয়েছি। লেখাটা আমি দুই বা তিনটি পর্বে বিভক্ত করে পোষ্ট দেব। তাই দয়া করে সব গুলো পোষ্ট পড়ে আমরা নিজেরা এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ পাব।
আলখাল্লাটা প্রথমেই দেখলেই সবার আগে চোখে পরে দুটো গাঢ় দাগের প্রতি যা কাপড়ের দৈর্ঘ্য বরাবর বিস্তৃত, যা দুটো বড় হীরকাকৃতির দাগের সাথে এসে মিশেছে। এগুলো পোড়া দাগ যা হাল্কা রংয়ের সুতা দিয়ে রিপু করা হয়েছে। ১৫৩২ সালে ফ্রান্সের ক্যামবেরীতে অবস্থিত চ্যাপেলে একটা অগ্নিকান্ডের কারনে হয়েছে। একটা রূপার সিন্দুকে ৪৮ ভাগে রক্ষিত এই কাপড় প্রায় পুড়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল এক অগ্নিকান্ডের কারনে। আগুনের উত্তাপে রূপার সিন্দুক পুড়ে গিয়ে গলিত রূপার ক্ষুদ্র কনা ভাজ করা কাপড়ে এই জ্যামিতিক আকারের পোড়া দাগ তৈরী করে।
কাপড়ের ওপর এই মানবাকৃতি অবয়ব যদি দু হাজার বছর টিকে থেকে সত্যিই হয়ে থাকে তা যেমন এক দিক দিয়ে ধর্ম এবং বিজ্ঞান কে এক বিন্দুতে নিয়ে আসবে তেমনি অনেক অবিশ্বাসীর প্রশ্ন সত্যিই কি যীশুর পুনুরুত্থান ঘটে ছিল কিনা সে বিষয়েরও মীমাংসা হয়ে যাবে।
প্রাথমিকভাবে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেন দু হাজার বছর কি কোন কাপড় টিকে থাকতে পারে? বাস্তবতা হল কায়রোয় অবস্থিত মিশরের জাতীয় জাদুঘরে, তুরিনের মিশরীয় জাদুঘরে, লন্ডনের ঐতিহাসিক মিশর বিষয়ক শাখায়, প্যারিস, বার্লিন, হিল্ডেইসহেইমের সব জায়গায় ৩৫০০ থেকে ৫০০০ বছরের পুরানো নমুনা আমরা দেখতে পাব। কাপড় বা স্ক্রোলের জন্য প্রাচ্যের শুস্ক আবহাওয়া বিশেষভাবে উপযোগী। উভয় ক্ষেত্রেই উদ্ভিজ্জ অনু সেলুলোজ যা খুবই দীর্ঘ স্থায়ী।
গ্রীক শব্দ “সিনডন” যাকে ইংরেজীতে কখনো কখনো মসলিন বলা হয় সংক্ষিপ্ত গসপেলে এই কাপড়ের দৈর্ঘ্য হিসাবে উল্লেখিত আছে। আলখাল্লাটি লিনেনের তৈরী যার সুতাগুলো ৩:১ অনুপাতে বোনার কারনে পানিতে ঢেউ তোলা মাছের আকৃতি নিয়েছে। যীশুর সমসাময়িক এই ধরনের কাপড় খুব কম দেখা যেত, যার কারনে এটা খুবই দামী ছিল। রোমের অন্তর্ভুক্ত তদান্তিন সিরিয়া প্রথম শতকে বোনা এ ধরনের কাপড়ের এক মাত্র নিদর্শন দেখা যায়।
১৯৭৩ সালে ইলেক্ট্রন অনুবীক্ষন যন্ত্র ব্যবহার করে বেলজিয়ামের ঘেনট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেইস তন্তুর মাঝে কিছু তুলার আশঁ দেখতে পান, কিন্তু সমস্যা হল যীশুর আমলে নিকট প্রাচ্যে তুলার চাষ হত না। কিন্তু পারস্য, সিরিয়া, ভারত থেকে কাপড় বোনার জন্য সে সময় তুলা আমদানীর প্রমান পাওয়া যায়।
সুইজারল্যান্ডের উদ্ভিদ এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানী ফ্রাই, পলেন বিশ্লেষনের জটিল পদ্ধতি ব্যাবহার করে কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী সিদ্ধান্তে উপনীত হন। ১৯৭৬ সালে মার্চে প্রকাশিত তার গবেষনামুলক প্রবন্ধ্যে ফ্রেই লেখেন যে তিনি প্রাপ্ত পলেন থেকে মোট ৪৯ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন উদ্ভিদ পেয়েছেন। আলখাল্লার স্ংরক্ষনের ইতিহাসের গতিপথ ব্যাক ট্রেইল করলে সেই এলাকায় এই ৪৯ প্রজাতির গাছের অনেক নমুনা এখনো দেখতে পাওয়া যায়। যার একটা হল লেবাননের সিডর। কিন্তু আলোড়ন সৃষ্টিকারী খবর হল ওই আলখাল্লায় ১১ প্রকার ভিন্ন ভিন্ন উদ্ভিদের পলেন পাওয়া গেছে যা ইউরোপে জন্মায় না কেবল মাত্র নিকটপ্রাচ্যে দেখা যায় যেমন হ্যালোফাইটস। হ্যালোফাইটস উদ্ভিদ কেবল সেখানেই জন্মায় যেখানে মাটিতে মাত্রাতিরিক্ত লবন আছে। যেমন মৃত সাগর (ডেড সী) পার্শ্ববর্তী এলাকা সমুহ। এগারোটার মাঝে কিছু আবার শুধু মরুভুমিতেই পাওয়া যায় যেমন তামারিস্ক, সিবলাইট, আর্টেমেসিয়া।
Chrysanthemum coronarium, now called Glebionis coronaria
In 1997 Avinoam Danin, a botanist at the Hebrew University of Jerusalem, reported that he had identified Chrysanthemum coronarium (now called Glebionis coronaria), Cistus creticus and Zygophyllum whose pressed image on the shroud was first noticed by Alan Whanger in 1985 on the photographs of the shroud taken in 1931
আলখাল্লাটার ইতিহাস তখনো কেবল চৌদ্দ শতকের ধরে নেয়া হয়েছিল ( মানে ফ্রড হিসাবে)। কিছু বিশেষজ্ঞ ধারনা করছিলো ওই সময় আলখাল্লাটা ফ্রান্সের কোথাও বোনা হয়েছিল কারন এটা সংরক্ষিত ছিল ইতালী ফ্রান্সের সীমানা বরাবর। পলেন বিশ্লেষন এটা সুস্পষ্ট এই কাপড় কোন এক সময় ফিলিস্তিন ছিল বা বোনা হয়েছিল, আরো উল্লেখ্যযোগ্য সনাক্তকৃত পলেন বলে যে গ্যালিলি সাগরের যে এলাকায় সর্বাধিক লবনাক্ত সেখানেই এই সব উদ্ভিদ জন্মাত যা আমাদের যীশুর আমলে নিয়ে আসে।
ডাঃ ফ্রাই তখনো জানতেন না তিনি কতখানি গুরুত্বপূর্ন আবিস্কার করছেন।
এরপরের পর্বে আমরা ব্যাক ট্রেইল করে এই তুরিনের আলখাল্লার উৎসে যাবার চেষ্টা করব সাথে থাকুন। এর পর থাকবে আলখাল্লার আধুনিক বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষন। শ্রাউড অভ তুরিন সব সময়ই আমার কাছে এক মিষ্টিরিয়াস ব্যাপার হয়ে আছে আমি শুধু আপনাদের জানাব আমি কি কি জানতে পেরেছি হয়ত আপনি আরো বিশ্লেষন করে কোণ কংক্রিট ডিসিশানে আসতে পারবেন।
পরবর্তী পর্ব সমূহঃ শ্রাউড অভ তুরিন অথবা যীশুর কাফন (দ্বিতীয় পর্ব)
শ্রাউড অভ তুরিন অথবা যীশুর কাফন (শেষ পর্ব)
সুত্রঃ উইকিপিডিয়া
শ্রাউড অভ তুরিন
শ্রাউড অভ তুরিন ওয়েব সাইট
ইউটিউব
Test the Shroud: At the Atomic and Molecular Levels
The Truth About the Shroud of Turin: Solving the Mystery
Jesus lived in India
জেসাস লীভড ইন ইন্ডিয়া বইর pdf