somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলচিত্র ভাষা পেল যাদের হাতে (শেষ পর্ব)

১৮ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
চলচিত্র ভাষা পেল যাদের হাতে (প্রথম পর্ব)

আইজেনষ্টেইনের এই মন্তাজের বিপরিতে যে তত্ত্ব আবিস্কারক তিনি ছিলেন জ্যা রেনোয়া। মন্তাজ তত্ত্বের সাথে যেমন আইজেনষ্টেইনের নাম জড়িত তেমনি মিস এন সিনের সাথে রেনোয়ার নাম মিলে মিশে যায়। মন্তাজ হচ্ছে বিভিন্ন খান্ডাংশ নিয়ে একটি দৃশ্য তৈরী করা তেমনি মিস এন সিন হল একটি দীর্ঘ শটকে ছোট ছোট করে উপস্থাপনা করা।

মানব চরিত্র দ্বন্দ্ব ও কাহিনীর নাটকীয়তা পর্দায় উপস্থাপনের জন্য মিস এন সিনের ব্যাবহার করতেন রেনোয়া। ১৯৩৯ সালে নির্মিত ‘রুলস অভ দ্যা গেইম’ ছবির নতুন ধরনের কাহিনী পর্দার উপযোগী করে ব্যাবহার করার জন্য নতুন একটি ভাষা আবিস্কার করেন। ক্যামেরার বিষয়ে যে ব্যাপারটি চিরকালই মেনে নেয়া হয়েছে তা হল এই যে সন্মূখ পটই মূখ্য। পশ্চাতপট গৌন। রেনোয়া অতিরিক্ত আলো ব্যাবহার করে সামনে পিছনে একই ফোকাস রীতি আবিস্কার করেন। আজ এই রিতী ‘ডীপ ফোকাস’ নামে পরিচিত।

ফ্রান্সের এই নির্মাতার জন্ম ১৮৯৪ সালের। মৃত্যু ১৯৭৯ সালে। ’৫০ দশকে দ্য রিভার ছবির শুটিং করার জন্য তিনি কোলকাতা এসেছিলেন। তার কাজ দেখে সত্যজিৎ রায় বেশ প্রভাবিত হয়েছিলেন।

চার্লি চ্যাপলিনের নাম সবার জানা। যেমন ছিলেন অভিনয়ে পারদর্শি তেমন ছিলেন পরিচালনায়। থিয়েটারে যা ছিল ভাড়ামো তার হাত ধরে তাই হয়ে ওঠে উচুদরের আর্ট। এই সময় কমেডির মধ্যে মানবিক আবেদন এনে ফেলছিলেন। হলিউডে কমেডির জনক হলেন ম্যাক সেনেট। নতুন নতুন ভাব প্রকাশের জন্য চ্যাপলিন সেনেটের ভাষার ওপর নিজস্ব কারুকাজ প্র্য়োগ করেন। অঙ্গভঙ্গি আর চোখের নাড়াচাড়া যে কথার থেকেও বেশী সেটা কিন্তু চ্যাপলিনের হাত ধরে। ১৮৮৯ সালে বৃটেনে তিনি জন্ম গ্রহন করেন আর মারা যান ১৯৭৮ সালে।

চ্যাপলিনের নাম অনেকেই জানলেও ভি আই পুদভকিনের নাম কিন্তু সে রকম শোনা যায় না। সের্গেই আইজেনষ্টেইনের সম সাময়িক হয়েও সিনেমায় স্বতন্ত্র আঙ্গিক তিনি কিন্তু প্রচলন করতে পেরেছিলেন। যে সব পরিচালক অঙ্গভঙ্গি পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ন হয়েছিলেন পুদভকিন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ১৮৯৩ সালে সোভিয়েত রাশিয়ায় জন্ম গ্রহন করেন আর মারা যান ১৯৫৩ সালে।

সোভিয়েত রাশিয়ার আর একজন প্রতিভাবান পরিচালক হলেন আলেকজান্দার পেত্রোভিচ দভজেঙ্কো। চিত্রকলার ছাত্র ছিলেন বলেই তার ছবিতে অদ্ভূত এক কাব্যময়তা ছিল। তার শ্রেষ্ট ছবি ‘পৃথিবী’ না দেখলে বুজা যাবে না কিভাবে চলচিত্র কবিতা হয়ে যায়। ১৮৯৪ সালে জন্ম গ্রহন করেন আর মারা যান ১৯৫৬ সালে ১৯২৩ সালে তিনি চলচিত্রে পদার্পন করেন।

ফরাসী পরিচালক ও তাত্ত্বিক আবেল গাস বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আবিস্কার করেন ট্রাইপিচ বা ত্রিস্তর পর্দা, বহুচিত্র পর্দা, মাল্টিপল সুপার ইমপোজ, ছবিতে প্রথম ব্যাবহার করেন ষ্টেরিওফোনিক শব্দ। তার বিখ্যাত ছবির নাম ‘নাপলিয়ঁন'।

আমেরিকার প্রতিভাধর পরিচালক অরসন ওয়েলেস গতানুগতিক ভাষার পরিবর্তে একটি বিশ্লেষন মূলক চিত্রভাষা তৈরী করেছেন। সিটিজেন কেইন নির্মানের আগে হলিউডের প্রায় সব পরিচালক জ্ঞাতসারে অজ্ঞাতসারে যে নিয়ম মেনে নিতেন তা হল দর্শকের চোখ কানকে অত্যাধিক পীড়া না দেয়া। ওয়েলেস এই বেদবাক্যে আঘাত করলেন। এ ছবিতে রয়েছে তীক্ষ্মতা। হলিউডের প্রচলিত রিতীতে নায়িকার চেহারায় কিন্তু মেকাপম্যান ও ক্যামেরাম্যানকে বেশ সজাগ দৃষ্টি রাখতে হত। সিটিজেন কেইনে ওয়েলস এ রিতী কিন্তু মানলেন না তাছাড়া ছবির সংলাপে এই প্রথম এক অপরিশুদ্ধ বাস্তব চেহারার আত্মপ্রকাশ করল। রেনোয়ার ডীপ ফোকাস তিনি অনায়াসে এ ছবিতে ব্যাবহার করলেন।

ইতালীর পরিচালক ভিত্তোরিয়ো ডে সিকার হাত ধরেই সিনেমা কিন্তু পথে নামল। ষ্টুডিও র সাজানো গুছানো সেট ছেড়ে ক্যামেরা নেমে এল রাস্তায় একেবারে বাস্তবের কাছাকাছি। নেই কোন পেশাদার অভিনেতা। রাস্তার হাজারো মানূষ তার অভিনেতা। ‘বাইসাইকেল থিভস’ এর মাধ্যমে চলচিত্রের এই ভাষা তিনি উপস্থাপন করলেন।শুরু হল নতুন যুগ। ভারতীয় ঘরানার ছবির জনক সত্যজিৎ রায় এই ‘বাইসাইকেল থিভস’ দেখেই কিন্তু উৎসাহিত হয়েছিলেন।

বাইসাইকেল থিভস দেখে উৎসাহিত হলেও পথের পাচালীতে তিনি যে আঙ্গিক উপস্থাপন করেছেন তা কিন্তু একান্তই ভারতীয় ঘরানার। এ ছবির বিষয় বস্তু আর উপস্থাপনা চলচিত্রের নতুন ভাষার জন্ম দিল। এরপর তিনি ‘কাঞ্চনজঙ্গা’ উপাস্থাপন করে সিনেমাকে পরিচিত করলেন সাঙ্গিতিক আঙ্গিক ভাষার সাথে।

এশিয়ার আরো একজন পরিচালক জাপানের আকিরা কুরোশাওয়া সিনেমার ভাষায় আনলেন নতুন দিক। তার বিখ্যাত ছবি ‘রশোমন’ এর অভিনবত্ব বিষয়বস্তু আর আশ্চর্যচিত্র ভাষা সিনেমা সমাঝদারদের অনুপ্রানিত করেছিল। প্রাচ্য আরা পাশ্চাত্যের এক অদ্ভূত সংমিশ্রন তিনি করেছিলেন এ ছবিতে। জাপানের কাবুকি ও নো নাটক অভিনয় রিতী আর জাপানের উড কাঠের চিত্রকল্পের সাথে ওয়েষ্টার্ন ক্ষিপ্রগতি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছিল।

ফ্রিজ শটের মোহনীয় ব্যাবহার যার হাতে আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছিল তিনি ছিলেন ফ্রাঁসোয়া ক্রুফো। সিনেমার এই রিতী তিনি ‘ফোর হান্ড্রেড ব্লৌজ’ এ দেখিয়েছিলেন।

এরপর চিত্রভাষার বিপ্লব সাধন করলেন জ্যা লুক গদার। তার প্রথম বড় ছবি ‘ব্রেথলস’ এ নিয়ম ভাঙ্গার কনভেনশন শুরু করলেন। তিনি চাইতেন কম খরচে ছবি নির্মান। তাই তিনি পেশাদার অভিনয় অভিনেত্রী বাছাই করতেন। ট্রেকিং শট নেবার জন্য ট্রলি না ব্যবহার করে ক্যামেরাম্যানের হাতে ধরিয়ে দিতেন ক্যামেরা। দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যাবার জন্য আগে ডিজলভ ও ফেড রিতী ব্যাবহার করা হত। তিনি নিয়ে এলেন সরাসরি জাম্প কাট। জাম্প কাটের মাধ্যমে এক দৃশ্য থেকে অন্য দৃশ্যে চলে যেতেন। শুরু হল নতুন পথ চলা।

আমেরিকার পরিচালক স্পিলবার্গ জুরাসিক পার্কের মাধ্যমে সিনেমায় আনলেন কম্পূটারের ব্যাবহার। যন্ত্রকে চলচিত্রের সাথে একীভূত করে ফেললেন স্পিলবার্গ। শুরু হল চলচিত্রে কম্পূটার ম্যাজিক। এর সাফল্যজনক ব্যাবহার জেমস ক্যামেরন তার অ্যাভাটর ছবিতে করেন। ১৯৯৬ সালে শিকাগোয় অনুষ্ঠিত এক চলচিত্র সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলেন সিনেমায় ক্যামেরার মৃত্যু হয়েছে।

শেষ
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:২১
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×