মহানবী (সঃ) হাদীসে বলেছেন, যতক্ষন পর্যন্ত না দশটি লক্ষন দেখা যাবে ততদিন পর্যন্ত কেয়ামত হবে না, ধোকা দাজ্জাল, দাব্বাতুল আরদ, পশ্চিম আকাশ সূর্যোদয়, হযরত ঈসা (অঃ) আর্ভিবাব, ইয়াজুজ মাযুযের আবির্ভাব, তিনটি ভূমিধবস একটি প্রাচ্য, একটি পাশ্চাত্য একটি আরব দেশে অতঃপর ইয়ামেন থেকে একটি অগ্নি উত্থিত হয়ে মানুষদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে। (সহি মুসলিমঃকিতাবুল ফিতান)
আমি এখানে আমার সামান্য জ্ঞানে যেটুকু পারি লিখে যাব। হঠাৎ করে সেদিন খেয়াল পড়ল আমি ছোটকালে অনেক নবী ও রাসুলের জীবনী জানতাম, সুন্দর ছোট ছোট বইতে মুক্তধারা আর ইসলামী ফাউন্ডেশনের বইতে পাওয়া যেত। আজকে খেয়াল করতে যেয়ে দেখলাম অনেক ঘটনাই মনে নেই, অনেক কিছু ভূলে গেছি। কেন এমন হবে? আবার পড়তে শুরু করলাম। ধর্ম যার যার বিশ্বাসের বিষয়। প্রত্যেকেরই উচিত প্রত্যেক ধর্মকে সন্মান করা।
পৃথিবী তখন পাপের অন্ধকারে আচ্ছন্ন, মানূষ ধর্মকর্ম ভূলে যেয়ে আবার জাহেলী যুগে ফিরে যাবে এই রকম এক সময় ইমাম মাহাদী জন্মগ্রহন করবে। তার পিতার নাম আব্দুল্লাহ আর মাতার নাম আমেনা। ইমাম মাহাদী বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে দুনিয়ার বুকে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করবেন।
আল মাহদী শব্দের অর্থ ‘পথ প্রদর্শিত ব্যক্তি’। এখানে মাহদী বলে কিয়ামতের প্রাক্কালে হযরত ঈসা (অঃ) এর অবতরন ও দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের সময় মুসলিম নেতৃত্বের যে সংস্কারক মনীষীর আবির্ভাবের কথা আছে তাকে বুজানো হয়েছে।
হযরত ইবনে মাসাউদ (রাঃ) বলেন নবী করিম (সঃ) বলেছেন, আমার উন্মতের শেষ লগ্নে মাহদীর আবির্ভাব ঘটবে। তার শাষনামলে প্রচুর বৃষ্টি হবে, ভূমি থেকে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, পশু সম্পদের বৃদ্ধি হবে। পৃথিবীতে এ উন্মত অতি সন্মানের অধিকারী হবে। সাত আট বছর পর্যন্ত এভাবে চলবে।
এভাবে বহু সহী হাদীসে কিয়ামতের পূর্বে মাহদীর আগমনের কথা বলা হয়েছে। ‘শরহে আকিদায়ী সাকারনী’ কিতাবে ইমাম মাহাদী বিষয়ক হাদীস গুলোকে মুতাওয়াতিরে মা’নুবী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। উপরন্ত এ আকীদা পোষন করা কে আহলুস সুন্নাত ওয়াল-জামা-আতের পরিচয় বলে গন্য করা হয়েছে।
ইমাম মাহদী (অঃ) পরিচয় কি এ ব্যাপারে ইসনা আশারিয়া শী’আ ও আহলুস সুন্নাত ওয়াল-জামা-আতের মধ্যে মত পার্থক্য আছে। ইসনা আশারিয়া শী’আদের মতে হাদীসে বর্নিত ইমাম মাহদী (অঃ) হলেন তাদের দ্বাদশ তম ইমাম মুহান্মদ ইবনুল হাসান আল-আসকারী। সে ২০৬ হিজরী থেকে শত্রুদের ভয়ে ভূগর্ভস্থ একটি গুহায় লুকিয়ে আছেন। কিয়ামতের পূর্ব মূহুর্তে পৃথিবীতে আত্মপ্রকাশ করবে।
কিন্তু আহলুস সুন্নাত ওয়াল-জামা-আতের মতে শী’আদের ধারনা সম্পূর্ন ভ্রান্ত কারন সহী হাদীসে ইমাম মাহদীর নাম, পিতার নাম, দৈহিক বর্ননা, কাজ কর্ম যে বিবরন আছে তাতে শী’আ ইমামের কোন মিল নেই কারন শী’আ দ্বাদশ ইমাম ২০৮ হিজরীতে জন্ম গ্রহন করেছেন আর তার নাম মুহান্মদ ইবনুল হাসান।
আহলুস সুন্নাত ওয়াল-জামা-আতের মতে তিনি সাইয়িদ তথা হয্রত ফাতিমা (রাঃ) এর বংশ থেকে আসবেন, তার শারীরিক গঠন সামান্য লম্বা দেহ উজ্জ্বল বর্ন বিশিষ্ট হবেন। চেহারার আকৃতি নবী করিম (সাঃ) এর মত হবে। তার পিতার নাম হবে আব্দুল্লাহ আর মাতার নাম আমেনা। তার মুখে মৃদু জড়তা থাকবে সে কারনে মাজে মাজে মনক্ষুন্ন হয়ে উরুতে আঘাত করবে। আল্লাহ র পক্ষ থেকে তিনি ইলমে লাদুন্নী প্রাপ্ত হবেন।
ইমাম মাহদীর সন্ধানে
হযরত মাওলানা শাহ রফী উদ্দিন (রঃ) বলেন, মুস্লমানদের বাদশাহ শহীদ হবার পরে সিরিয়া খ্রীষ্টান দের দলে চলে যাবে এবং তারপর খ্রীষ্টান বিবাদ মান দু দলের মধ্যে সন্ধি স্থাপন হবে। অবশিষ্ট মুসলমান রা মদীনায় প্রত্যাবর্তন করবে। খ্রীষ্টানদের আধিপত্য খাইবার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে এ সময় মুসলমান রা ইমাম মাহদী (আঃ) খোজ করতে থাকবেন। যেন তার নেতৃত্বে শত্রুদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
এমন অবস্থা চলাকালীন সময়ে ইমাম মাহদী মদীনায় অবস্থানরত থাকবেন। কিন্তু সেখান জিম্মাদারী অর্পিত হবার আশংকায় মক্কা গমন করবেন। সেখানেও ততকালীন ওলি আবদালগন ইমাম মাহদীর সন্ধান চালাতে থাকবেন। এই সময় কতিপয় ব্যাক্তি নিজেকে ইমাম মাহদী দাবী করে বসবে। ইতিমধ্যে একদিন রুকন ও বায়তুস শরীফ তওয়াফ কালে লোকজন তাকে চিনে ফেলবে এবং তার হাতে বায়াত গ্রহনের জন্য তার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। এ ঘটনা সত্যি হবার একটি প্রমান হবে এমন যে, পূর্বেকার রমযান মাসে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহন হবে।
বায়াতের সময় ইমাম মাহাদীর বয়স হবে ৪০ বছর। তার খিলাফত গ্রহনের সংবাদ মদীনায় পৌছুলে মদীনা থেকে হাজার হাজার সৈন্য মক্কায় ছুটে আসবে। সিরিয়া, ইয়েমেন আর ইরাকের বুজূর্গদ্বীন তার নেতৃত্বে এক হয়ে বিরাট বাহিনী গঠন করবে। এরপর তিনি কাবা শরীফে মাটির নীচে রক্ষিত ভান্ডার তুলে এনে মুসলমান দের মধ্যে বন্টন করে দেবেন।
কেয়ামতের নিদর্শন পরের পর্বে দাজ্জাল কে নিয়ে আলোচনা করা হবে। দাজ্জাল এক হাতে বেহেশত আর এক হাতে দোযখ নিয়ে পৃথিবীতে অবতীর্ন হবে।
চলবে