গুলশান এলাকা থেকে কিছু যুবক কিছুক্ষন আগে দুটো মাইক্রোবাসে করে এসে ধানমন্ডি এলাকায় হঠাৎ করে ঢুকে নির্বিচারে গুলি করে ১৭ জন কে হত্যা করে ৩৭ জন কে আহত করে ৩ জন কে ধরে নিয়ে যায়। আগের জিম্মিদের ভাগ্যে যা ঘটেছে এই তিন জনের ভাগ্যেও একই ঘটনা ঘটবে ধরে নেয়া যায়। এর আগে গুলশানবাহিনী যত বার জিম্মি ধরে নিয়ে গেছে প্রতিবার গুলশান এক নাম্বার চত্বরে তাদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে।
এর প্রতিশোধ স্বরূপ ধানমন্ডি বাহিনী গুলশান এলাকায় গেরিলা হামলা চালিয়ে ২৩ জন কে হত্যা আর ৭জন পুরুষ ও তিন জন মহিলা কে আটক করে নিয়ে গেছে এবং বরাবরের মত শুক্রাবাদ বাস ষ্টান্ডে তাদের হাত পা বেধে জবাই করা হয় আর তিন মহিলা উপুর্যপরি ধর্ষনের শিকার হয়ে মারা গেছে। তাদের মৃতদেহ রাস্তায় পরে আছে।
কি আপনাদের খুব রাগ লাগছে? কেউ কি বিরক্ত হচ্ছেন? নাকি আমার সুস্থ্যতা নিয়ে সন্দেহ পোষন করছেন? সব মানব যে শাস্তি দেবেন সেই শাস্তি মাথা পেতে নেব আমার কয়েক টি প্রশ্নের উত্তর দিন তারপর।
না উপরে উল্লেখিত ঘটনা ঘটেনি তবে যে অবস্থার মধ্যে আমরা দিন যাপন করছি তাতে অবনতি হলে এরকম হওয়া অসম্ভব কিছু না। কারন বুকে হাত দিয়ে সত্য বলুন আজকে বাংলাদেশে আমদের যুব সমাজ যে দাবী নিয়ে আন্দোলন শুরু করছিলো সেখানে ৮০% মানূষের বা তারো বেশী মানূষের সমর্থন ছিল বিধায় একে গনজাগরন নামে অভিহিত করা হয়েছিল। এই ৮০% মানূষ শুধু আওয়ামীলীগের না বিএনপির ও ছিল কেঊ এ কথা অস্বীকার করবে না।
কিন্তু তারপর কি হল?
জামাতের সূক্ষ বুদ্ধির জোরে হোক অথবা আমাদের রাজনীতির নোংরা কালচারে হোক আওয়ামীলীগ এই গনজাগরনের ধারক হয়ে গেল আর বিএনপি অনেকটা ণিশ্চূপ হয়ে প্রকারান্তে জামাতকে মৌন সন্মতি দেয় রাজনীতির কূটচাল হিসাব করে। আন্দোলন যায় দ্বিধা বিভক্ত হয়ে। ধর্মপ্রান মানূষগুলোকে চমৎকার এক চাল দিয়ে (ব্লগার মানে নাস্তিক আর মহানবীকে নাকি কটুক্তি করা হয়েছে) সামনে ঠেলে দেয়। জামাত পেয়ে যায় চমৎকার একটা হাইড আউট।
ফলাফল কি পেলাম আমরা?
একদিনে ৩০/৩২ টা লাশ তার মধ্যে পুলিশ আছে ৪ জন (আমার হিসাবে একটু গরমিল হতে পারে কারন এই সংক্রান্ত খবর আমি শুনিনা বা দেখিনা)। ইউটিঊবে নাকি ভিডিও ছাড়া হয়েছে পুলিশ খুব কাছ থেক পয়েন্ট ব্লাংক রেঞ্জে গুলি করে মানূষ মারছে আর মানূষ কিভাবে পুলিশ মারছে? কোন এক মার্কেটে ১৯ জন পুলিশ তালা বন্দী করে আগুন দিয়ে দেয়, আল্লাহর অসীম করুনা সে রকম কিছু ঘটেনি। কিন্তু না ঘটলেও যা ঘটেছে তা কম কিসে? শাবল দিয়ে থিতিয়ে নাকি মাথার মগজ বের করে নেয়।
এখন কি হচ্ছে?
এখন হাসানুল হক ইনু খালেদা জিয়াকে বলছেন জামাতের অঘোষিত আমীর। তার মানে হল সেই আওয়ামীলীগ আর বিএনপি মুখোমুখী। জামাতের দুই দিনের হরতালের সাথে বিএনপি আরো একদিন হরতাল দিল।এক দিনের হরতালে ৩০/৩৫টা লাশ সামনের দিন গুলোতে কি হবে? কি আর হবে কেঊ কেঊ বলে বসবেন আরো কিছু রাজাকার মরবে, ভাল হবে।
একটু শান্ত হোন
দেশ কিন্তু এখন এক হ য ব র ল অবস্থায় আছে। দেশের অর্ধশিক্ষিত অশিক্ষিত মাদ্রাসার ছাত্ররা কিন্তু এত কিছু জানে না তারা জানে ইসলাম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে যার কারনে তারা কিন্তু জেহাদি যোশে রাস্তায় নামছে, এখানে জীবন দেয়া কিন্তু গৌরবের। কোন ফ্যানাটিক গোষ্ঠী অথবা ধর্মান্ধ মানূষ ছাড়া এভাবে জীবন দেয়া কিন্তু সম্ভব না। জামাত কিন্তু কোন ফ্যানাটিক গোষ্ঠী না। গত কয়দিন যত মানূষ মারা গেছে তাদের পরিচয় বের করুন দেখুন তারা কি করে?
একটু শান্ত হোন। এদেশের আপামর জনগন কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে সেটা প্রমানিত আর এই জাগরন কিন্তু সম্ভব হয়েছিল আপনাদের ডাকে। আপনারা আবারো ডাক দিন সারা বাংলা এক হবার জন্য। আমি আগেও বলছি এখন ও বলছি এদেশে আওয়ামীলীগ বিএনপি এক না হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব না। গায়ের জোরে কথা বলবেন না। এদেশে বিএনপি আওয়ামীলীগ এক না হলে এত বড় বিচার সম্ভব না। যেখানে আওয়ামী বিএনপি র শক্তি প্রায় সমানে সমান।
কার দোষ?
কার দোষ কার গুন এই মুহুর্তে আমি বিচার করব না আমি আর একটা জীবন হানি চাইনা। চাইনা কোন পুলিশের নৃশংস মৃত্যু খবরের কাগজে পড়তে। ব্যাপারটা ভাল কিছু হচ্ছে না আজকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী থেকে বেশী পোষ্ট পরে আওয়ামীলীগ বিএনপি কুৎসা রটনা করে। আমরা আমদের লক্ষ্য থেকে সরে গেছি। জামাত চলে গেছে আন্ডারগ্রাউন্ডে।
তাহলে কি এই বিচার হবে না?
হবে অবশ্যই হবে জনগনের দাবীর যে শক্তি সেই শক্তি আমরা আর একবার প্র্য়োগ করি। আরেকবার আমরা কি পারিনা উভয় নেত্রীকে এক হয়ে বসে এই দেশের এই অচল অবস্থা নিরসনে বাধ্য করতে? যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে উভয়কে ঘোষনা দিতে বাধ্য করতে। ভূলে যাবেন না বিএনপি কিন্তু এক পর্যায়ে গনজোয়ারকে সমর্থন দিয়েছিল।
এই রকম অবস্থা যদি চলতে থাকে মানে পুলিশ জনগন যুদ্ধ তা হলে কি আপনি মনে করেন ভাল কিছু হবে? যে রকম যুদ্ধংদেহী আচরন করে ব্লগে অনেকে পোষ্ট দিচ্ছেন আপনি। কি প্রস্তুত চোখের সামনে আপনার বন্ধু ভাইর মৃতদেহ দেখতে? গত কয়েকদিন ধরে দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে, কোথাও নিরাপত্তা নেই হাওয়ায় শুধু গুজব ভেসে বেড়াচ্ছে। স্ত্রী চিন্তা করে স্বামীর জন্য, স্বামী চিন্তা করে সন্তানের জন্য, ভাই চিন্তা করে বোনের জন্য।
একটু খেয়াল করুন
এই ব্লগে ৩/৪ মাস আগেও যারা নিয়মিত লিখত অথবা একটা নির্দৃষ্ট গ্যাপে লেখা দিতেন তারা অনেকেই আজকে অনিয়মিত যারা আন্দোলন শুরুতেও বিভিন্ন উৎসাহ মূলক লেখা দিয়ে আন্দোলন কে বেগবান করছেন তারা এখন অনেকেই নিশ্চুপ। কেন? এটা যারা নিয়মিত ব্লগে কাটান তারা ব্যাপারটা নিশ্চয় ই খেয়াল করছেন কোন ব্যাপারে কি আপনারা দ্বিধান্বিত?
আমি এবং আমার মত অনেকেই একটা সমন্বিত আন্দোলনে অংশগ্রহন করেছিলাম ‘রাজকারের ফাসি হোক’ এখনো করব। কিন্তু বিচার চাইতে এসে আজকে যে আমাকে আওয়ামীলীগের পক্ষে গিয়ে বিএনপির নামে কুৎসা গাইতে হবে অথবা বিএনপিতে এসে আওয়ামীলীগের গীবত গাইতে হবে আমি এ রাজনীতি করব না কারন এই দেশে জামাত আর জাতীয় পার্টি বাদ দিলে অর্ধেক আওয়ামীলীগ আর অর্ধেক বিএনপি আমার ই কোন ভাই আওয়ামীলীগ করে আবার কোন ভাই বিএনপি করে এই পরিস্থিতি যদি আরো ক্রমাবনতি হয় তাহলে আজকে জামাত শিবিরের ফাদে আর একবার পড়ে আমি আমার ভাইর লাশের ওপর দিয়ে আওয়ামীলীগ বিএনপি রাজনীতি করব না। আমার কাছে পার্টির থেকে ভাই বড়।
দেশে আওয়ামী বিএনপি সংগাত যত রক্ত ক্ষয়ী সংগর্ষের দিকে এগোবে জামাতের জন্য তত সুবিধা হবে আমরা সাধারনরা কেন একসাথে হয়ে ছিলাম? হয়েছিলাম কি যুদ্ধাপরাধী তথা জামাত নিষিদ্ধ আন্দোলনে আওয়ামীলীগ বিএনপি র কাদা ছোড়া ছুড়ি দেখার জন্য না?
আমার কথা হল আজকের এই তথ্যপ্রবাহের যুগে মানূষের বিচার বিবেচনা অনেক বেড়ে গেছে এখনকার ভোটার রা কিন্তু অধিকাংশ সচেতন। ৫০% ভোটার কিন্তু এখন ফ্রি ল্যান্স মানে কোন পার্টি নাই ৫ বছর এক একটা শাষন তিক্ত ভাবে দাত মুখ খিচিয়ে হজম করে পরের পাচ বছর আবার সহ্য করার জন্য। নগদে হাতে একটা ভোট থাকে ওই ভোট খানা প্রয়োগ করে ছোট্ট একখান লাথি দেয় ৫ বছরের জন্য কিন্তু যে আসে সে যে কি করবে তাও জানে।
আমার কথা পরিস্কার যুদ্ধাপরাধীদের কোন ক্ষমা নাই। ইহুদীরা এখন ও খুজে বেড়াচ্ছে সেই ১৯৪৫ সালের কোন নাযী বেচে আছে কিনা তা খুজে বের করার জন্য আমরা ও থামব না কিন্তু কথা হল আমাদের নেতৃরা কি চায়? আপ্নারা কি চান ভাই ভাইর রক্ত ঝরাবে না আপনারা এক হয়ে বসবেন? আর ওনারা যদি একনা হয় আমরা কি পারিনা আবার একটা ডাক দিতে হবে। জামাত কিন্তু অল রেডী ভাঙ্গন ধরিয়ে দিছে এখন কি আমি জামাতের ফাদে পা দিয়ে আওয়ামী বিএনপি মারামারি করব? না জামাতের বিচার নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকব।
খেয়াল করুন
এরশাদ সাহেব কিন্তু জামাতের থেকে অনেক ক্ষমতাধর ছিলেন সেই এরশাদ সাহেবকে কিন্তু দুই নেত্রীর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে হাতে গোনা কয়েকদিনের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত হন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৫০