জঙ্গলে শিকার করতে কুকুর মাস্ট। মানুষের বেস্ট ফ্রেন্ড। এরা অবশ্য এখনো পিচ্চিদের খেলার সাথী।
আগের পার্টের লিঙ্কঃ Click This Link
ট্রেইলটা দুর্দান্ত উঠা আর নামা। মাঝে মাঝে নিচে জুম ক্ষেত আর ছবির মতো সাজানো গোছানো গ্রাম পড়বে, চসুই পাড়া, মুঙ্গোহা পাড়া, রামদু পাড়া। পথে আর কোন নদী বা পানির উৎস নেই। ঝর্ণার পানিই ভরসা (ঝর্না এবং ঝিরি অনেকগুলো) গ্রামগুলো অনেক ফ্রেন্ডলী। মুলত ম্রো নইলে ত্রিপুরা। তবে এরা পেশাগত ভাবে শিকারী আর সবাই শিকারের জন্যে কুকুর পোশে, এই কুকুর গুলো বেশ ঝামেলা পাকাতে পছন্দ করে। গ্রামবাসীরা ঝর্নার পানি বাঁশের পাইপ দিয়ে টেনে আনে। পানির ব্যাপারে মিতব্যায়ী হতে হবে।
আমদের পথ দেখিয়ে সাহায্য করেছিলেন সুভাষ ত্রিপুরা। উনি তিন্দুর একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। উনাদের গ্রাম একদম অনেক বেশী গভীরে নাম মুঙ্গোহা পাড়া (উচ্চারন বানান নিয়ে সন্দেহ আছে)। রাতে তাদের বাসাতেই ছিলাম। ফেব্রুয়ারীর একদম শেষ মার্চ আসি আসি করছিলো, কিন্তু শীত পাহাড়ে একদম হারকাপানো। তবে গ্রামগুলো বন্য ফুলে ভরা এতো বেশী সুন্দর চেয়ে শীতের কষ্ট ভোলা কিছুই না।
পড়ের দিন আবার পাহাড় ডিঙ্গানো। এই পাহাড়গুলো বেশ খাড়া, উঠাটা কোনরকমে করা যায় নামতে গেলেই ভয় লাগে। ক্লান্তির যখন শেষ সীমায় এসে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম তখন চোখে পড়লো পাহাড়ে বুকে থাকে থাকে ছবির মতো চ্যামা খাল। চ্যামা খালের পাড়াটাতে আমরা ঢুকি নাই। প্রয়োজন পড়ে নাই। পানির এখানে অনেক। আর হাড় মাংস এক করে দেয়া ঠান্ডা। চ্যামা খাল দিয়ে ট্রেক শুরু করলে একটু পড় পড় পা বরফ শিতল পানিতে জমে যায়, পাথরের (অনেক বড় বড় অসংখ্যা পাথর) উপরে উঠে গা গরম করতে হয়। শূনেছি এখানে প্রচুর অজগর আছে, ঐ সময়ে সব নিশ্চিত ভাবে হাইবারনেশনে। তবে আমরা গয়াল দেখেছি অনেকবার। বিশাল স্বাস্থ্যের রাজকীয় দেহ। বনগরুও বলে অনেকে ইংরেজীতে GAUR, নেটে কয়েক জায়গাতে ইন্ডিয়ান বাইসন বলেও উল্লেখ দেখেছি। দেখতে ভয়ঙ্কর হলেও না ঘাটালে এরা প্রচন্ড ভালো মানুষ। আরেকটা ব্যাপার বলে রাখি। এই পথের বসতী গুলো মুলত মুরং। মুরং ছেলেরা মাথায় বড় বড় চুল রাখে দারুন সুন্দর করে উপরে একভাজ দিয়ে খোঁপা করে। মেয়েরাই অধিকাংশ কাজ করে। ক্ষেতে খামারে কাজের জন্যে আমাদের সমতলের ছেলেরা সাধারনত শরীরের উপরের অংশে কিছু পড়ে না। মুরং মেয়েরাও তাই। কিন্তু সমতলের কালচারের সাথে পাহাড়ী কালচারের অনেক পার্থক্য। ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক ভাবে নেওয়া উচিত। না নিয়েও উপায় নেই মুরং মেয়েরা শুধু স্বাবলম্বীই নয়, দা-চালাতেও সেভাবে দক্ষ, সবার কাছে বড় বড় দা থাকে, এবং চালাতে মোটেও দ্বীধা করে না বলে শুনেছি। ভুলেও টপলেস মেয়েদের ছবি তুলতে যাবেননা, অকালে প্রান খোয়াবেন নিশ্চিত।
ঝিরির পথে নুড়ির মালা দলে কিছুক্ষন পড়েই মাথার উপরে আকাশ ছোয়া বগা লেকের আগ্নেয়গীরির মতো চুড়াটা চোখে পড়বে। মনে হবে হাত বাড়ালেই ছোয়া সম্ভব। কিন্তু দুনীয়ার পথ ঘুরে বিচিত্র জঙ্গল ঘেসে (জঙ্গলে আমাকে বিচিত্র একটা পোকা কামড়িয়েছিল, ব্যাথায় সেকী অবস্থা, মনে হয় একারনেই এই জঙ্গলটা পছন্দ হয়নি) ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পড়ার শেষ সীমায় গিয়ে বগা লেকের চুড়ায় উঠতে হবে। ( Click This Link )
লেখাটার সাইজ অনেক বড় হয়ে গেল। তাই বগা লেক থেকে চিংড়ী ঝর্না দিয়ে দার্জিলিং পাড়া দিয়ে কেওকারাডং চুড়োয় উঠার বর্ণনা দিয়ে আর বিরক্ত করবো না। তবে একটা কথা বলে রাখি, ট্রেকটা অসাধারন হলেও কঠিন। জঙ্গলটাও বেশ ঘন। পূর্ণীমা রাতে হেড ল্যাম্প আর টর্চ অফ করে চাদের আলোয় পাহাড়ী পথ চলা, উতসুক হরীন আর খরগোশের চোখের পিটপিটে আলো ... স্বর্গীয় তবে একদম নতুন ট্রেকারদের জন্যে না। একটু অভিজ্ঞতা দরকার এই ট্রেকটার জন্যে
ছবিঃ
রামদু পাড়ার ন্যু (ম্রো ভাষায় ন্যু মানে জননী)।
চশুই পাড়া।
চশুই পাড়ার ত্রিপুরা বালিকা, ত্রিপুরাদের ট্র্যাডিশনাল থামি।
আমাদের গ্রামখানি ছবির মতোন, মাটির তলায় তার ছড়ানো রতন।
হায় হায় করে কি?
মুরং পাড়া (গ্রামটার নাম ঠিক মনে নাই। সামনের বাড়িটা কারবারীর, খুব মিষ্টি ঝর্নার পানি খাইয়েছিলেন, ১০মিনিটের ব্রেক নিয়েছিলাম। কুকুর গুলোর অত্যাচারে আর পারি নাই।
জঙ্গলে শিকার করতে কুকুর মাস্ট। মানুষের বেস্ট ফ্রেন্ড। এরা অবশ্য এখনো পিচ্চিদের খেলার সাথী।
মুঙ্গোহা পাড়ায় আমাদের ডিনার রান্না।
সুভাষ ত্রিপুরা পরিবার। আমাদের রাতে আশ্রয় দিয়েছিলেন, নিরাপত্তা দিয়েছেন, পথ দেখিয়েছিলেন বগা লেকের।
সুভাষ-দায়ের বাচ্চা কাচ্চা।
বিরক্তিকর পথ। বিপদজনক ঢালে নামতেই আছি নামতেই আছি পা টিপে টিপে সাবধানে। চ্যামাখাল কত দূর।
ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌছানোর পরে পেলাম ছবির মতো চ্যামা খাল।
আমাদের মনা ভাই আর সুভাষ দা।
মারমা মেয়েরা জঙ্গলে কাঠ কাটতে এসেছে। বাংলা না জানলেও আমাদের অনেক সাহায্য করেছিলেন দিদিরা।
পথে পানির তৃষ্ণা মেটাবে হিম শীতল মিষ্টি ঝর্না টাইপ উৎসগুলো।
ম্রো-মেয়েরা মাছ ধরতে ব্যাস্ত।
ভয়ঙ্কর ঠান্ডা ঝিরির পানি।
গয়াল/বন গরু/ Gaur অথবা ইন্ডিয়ান বাইসন। গরুর আদী-পিতা।
হঠাত পাওয়া বন্ধু নীলরতন ত্রিপুরার সাথে আমি।
জনেরাশ পাড়া থেকে বগা লেকের আগ্নেয়গীরি টাইপ গঠন। জনেরাশ পাড়া গ্রামটা দারুন। সবাই গলায় স্প্রিং এর মতো তামার অলঙ্কার পড়ে
স্বর্গীয় বগা লেক।
খেলার রাজা ক্যারাম।
মুরং পাড়ায় শেখা এই খেলাটার নাম জানিনা (পুরো গ্রামে বাংলাভাষী কারো সাথে দেখা হলো না) একটা মোরগের পায়ে দড়ী লাগিয়ে টানা টানি করতে হয়।
আমি ক্যামেরা ধরলেই পিচ্চি পালায়। অনেকক্ষন পরিশ্রম করার পরে ধরা খাইলো।
অপু-দুর্গা নাকি ডেক্সটার এন্ড ডিডি।
ঐ দেখা যায় কেওকারাডং (ছাউনিটা মুল পিক)। ঐ আমাদের গাঁ,
গর্ব লাগে লাস্ট ১৬মাসে ৩বার এই মুহুর্তটা পেয়েছি। সব ঠিক থাকলে আগামী ১৫ আগষ্ট আবার এই জায়গাতেই থাকবো।
দার্জিলিং পাড়া বম দের গ্রাম।
তিনহাজার ফুট উপরে আকাশে ধুলো ময়লা কিংবা অন্যান্য জিনিস কম থাকে তাই আকাশ শরতের মতো ঝকঝকে নীল। রোমান্টিকরা বলে হাই অল্টিচিউড ব্লু।
পাত্থর কি ফুল।
পাখির চোখে বগা লেক। চিংড়ী ঝর্ণার ওদিক থেকে।
সুন্দরী সাঙ্গু।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:৩৫