বদ্দারহাট বাস স্ট্যান্ড (চিটাগাং)
কাগজে কলমে এখনো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চুড়া কেওকারাডং। বম ভাষায় ডং মানে পাহাড়। কেওকারাডং মানে সবচেয়ে উচু পাহাড় (তাজিংডং মানে সুন্দর পাহাড়)। কেওকারাডং এর উচ্চতা ৩১৯৬ফুট আর সত্যি সত্যি সর্বোচ্চ চুড়া সাকা হাফং বা ক্ল্যান ময় (নাকি তল্যাং ময়) এর উচ্চতা ৩৪৮৮ফুট (এটা নিয়ে বিতর্ক আছে কারন চুড়াটার অবস্থান একদম বাংলাদেশ-বর্মা ইন্টারন্যাশনাল বর্ডার লাইনের উপরে। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি সবচেয়ে বিতর্কিত চুড়া তাজিংডং এর উচ্চতা ২৮০০ফুটের বেশী পাওয়া যায় না।
কেও কারাডং এখন খুব জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট। গাড়ি নিয়ে অবিবেচক ট্যুরিস্টরা একদম চুড়ো পর্যন্ত উঠে আর পুরো এলাকা নোংড়া করে ফেলতে খুব পছন্দ করে। ঢাকায় ফিরে অনেক এডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে। গাড়ি করে যাবার বুদ্ধি কাউকেই দেব না। সাধারণভাবে কেওকারাডং ট্রেকিং করার রাস্তাটা এখন বহুল ব্যাবহৃত। ঢাকা থেকে বাসে বান্দারবান। এরপরে চান্দের গাড়ী নিয়ে রুমা বাজার। সাঙ্গুর পানি কম থাকলে চান্দের গাড়ী সরাসরি রুমা বাজার (উপজেলা সদর) এর কেন্দ্রে চলে আসতে পারে। নইলে নামিয়ে দেবে সদরঘাট (কেউ কেউ গ্যারিসন বলে, কাছেই টেন ইস্টবেঙ্গলের বড় ক্যাম্প)। এখান থেকে নৌকায় অথবা হেটে ৪কিলো দূরে রুমাবাজার আর্মি জোনাল ক্যাম্পে রিপোর্ট করে একজন গাইড সহ রওনা দিতে হয় সুরম্য ঝিরির পথে। ৩/৪ঘন্টা হাটলেই বগা লেকে রাত্রিবাস। নইলে গাড়ীর পথে রুমা পুলিশ থানার সামনে দিয়ে মুংলাই পাড়া (বম পাড়া হলেও প্রচুর বাঙ্গালী সেটলার আছে) হয়ে বগা লেক। রাত্রিবাসের পড়ে পড়ের দিন সকালে ট্রেক শুরু। দার্জিলিং পাড়া হয়ে কেওকারাডং এর চুড়া। এটাই সাধারণ রুট। কিন্তু কেওকারাডং ওঠার আরেকটা দুর্দান্ত রুট আছে। এটাতে ঘন জঙ্গলের ভিতরে দিয়ে চিম্বুক রেঞ্জ ডিঙ্গিয়ে কেওকারাডং রেঞ্জে ঢুকতে হবে। প্রশাসনিক ভাবে থানছি উপজেলা থেকে শুরু করে রুমা উপজেলায় ট্রেক শেষ। বলে রাখি এখানে ওয়াইল্ড লাইফ এখনো বেশ সমৃদ্ধ। বনে ভাল্লুক (চিতাবাঘের কথা বললেও আজ পর্যন্ত প্রমান মেলেনি), খরগোশ, অনেক ধরনের সরিসৃপ এবং হরীণ (বেশ বড় আকারের, মায়া হরীন না, সাম্বারের মতো) চোখে পড়তে পারে।
যাই হোক এই ট্রেকটা নিঃসন্দেহে কেওকারাডং ওঠার সবচাইতে রোমাঞ্চকর আর সুন্দরতম রুট। ঢাকা থেকে বান্দারবানে এসে রুমা গামী চান্দের গাড়ীতে না গিয়ে উঠতে হবে থানছি গামী চান্দের গাড়ীতে। আর্মি ইঞ্জিনিয়ার্স সেখানে অসাধ্য সাধন করে দারুন একটা রাস্তা বানিয়েছে। পিক ৫৯। বাংলাদেশের হাইয়েস্ট হাইওয়ে। এখন এই রাস্তা ধরে বাস চলাচলও সম্ভব হয়েছে। চিম্বুকের বুকে নামের একটা বাস যায়। বান্দারবান থেকে ছেড়ে আসা বাস/চান্দের গাড়ী চিম্বুকের মেইন পিক (টুরিস্ট স্পট) এসে ব্রেক নেবে কিছুক্ষন। রুপসী চিম্বুকের স্বাদ নিতে পারেন মন ভরে। এর পরে কিছুক্ষনের মধ্যে বাস উঠে যাবে আকাশের কাছা কাছি পিক ৫৯ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ হাইওয়েতে। রাস্তাটা এক কথায় পরীর মতো।
থানছি না নেমে থানছির আগে বলিপাড়া নামের এক বাজারে নেমে পড়বেন। এটা মুলত মুরং (বা ম্রো) দের এলাকা। প্রচুর বাঙ্গালী,ত্রিপুরা, তঞ্চংগ্যা মানুষ চোখে পড়বে। ব্যাবসায়ীরা মুলত মারমা অথবা বাঙ্গালী (সেটলারেরা ওখানে নিপুনভাবে শাইলকের চরিত্র ধারন করে)। বলিপাড়া থেকে গাইড নিতে হবে। সাঙ্গু পেড়িয়েই পাহাড়ের গভীরে ঢুকে পড়বেন। নদীর বুক থেকে দূরে চিম্বুক রেঞ্জের খাড়া দেয়ালের মতো কাঠামো মেঘের বুক কেটে দাঁড়িয়ে থাকে, দুর্দান্ত লাগে। সামনে কুমারী মারিয়ার ধর্মপল্লী (এটাতে প্রবেশের চেষ্টা না করাই ভালো, সাধারন থিওরী যতোক্ষন না পাহাড়ীরা আপনাকে গ্রামে বা বসতীতে প্রবেশের অনুমতি না দেয় ততক্ষন বাইরে অপেক্ষা করুন) এর পাশ দিয়ে জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে পড়বেন। আস্তে আস্তে খালি একটানা উঠতে হবে। পাহাড়ের একদম চুড়ো দিয়ে ট্রেক শুরু হবে।
পড়ের পর্বঃ Click This Link
ছবিঃ
বদ্দারহাট বাস স্ট্যান্ড, চিটাগাং
শাহ-আমানত ব্রীজ, কর্ণফুলী, চিটাগাং
চিম্বুকের চুড়ো থেকে
অজর অমর অক্ষয় চান্দের গাড়ী।
পিক ৫৯। বাংলাদেশের হাইয়েস্ট হাইওয়ে। থানছি (নীলগীরির আগে)
পিক ৫৯
সাঙ্গু। বলিপাড়া বাজারের একটু পড়ে। থানছি।
প্রথম দিনটা মোটামুটি বৈচিত্রহীন একটানা ওঠা। পরিশ্রমের বেশ।
কুমারী মারিয়া ধর্মশালার সামনে, বলীপাড়া, থানছি।
সুভাষ-দার নেতৃত্বে রেস্ট। একটানা উঠতে উঠতে দম ফুরীয়ে যায় সহজেই।
একটু পর পর পাহাড়ের কোলে জুম ঘর।
মডেলিংটাও সারা যায়।
এ উঠার যেন শেষ নেই। পায়ের ব্যাথা...
ট্রেক শুরু হলো ক্যানু টাইপ নৌকা দিয়ে, সাঙ্গু, বলিপাড়া।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:৩৬