
নারকেল আর কচুরী পানার নীলচে পুকুরের ওপারে গারো পাহাড়ের আউটলাইন।
হঠাত করে দুদিনের ফাঁক পেলাম, কোন কাজকর্ম নেই। অনেক দিন ঢাকার বাইরে যাওয়া হয় না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। সময়ও বেশী নেই হাতে ঘোরা ঘুরির জন্যে। স্বল্পতম সময়ে কোথাও থেকে একটা ঝটিকা ট্যুর করে আসা লাগবে। কই যাওয়া যায়? আমি আর বন্ধু আলেন মিলে ঠিক করলাম বিরিশিরি থেকে ঘুরে আসি, সোমেশ্বরী, ঢেপা, কংশ নদী ভরা বর্ষায় দুর্দান্ত রুপ নিয়েছে, প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে বেশ কিছু দিন ধরে। ঠিক হলো সকাল সকাল এলেন আমার বাড়ি এসে হাজির হবে, নয়টার মধ্যেই আমরা ঢাকা থেকে বেড়িয়ে যাব। ‘চল যাব তোকে নিয়ে এই নরকের অনেক দূরে, এই মিথ্যে কথার মেকী শহরের সীমা ছাড়িয়ে...।
আলেন এর আমার বাড়িতে আসার কথা ছিল সকাল নয়টার মধ্যে। সকাল সাড়ে দশটায় ও ফোন করে বললো ও বের হতে পারছেনা ভয়ানক বৃষ্টি বাইরে। যাইহোক আমরা বের হলাম ১২টার পরে। আমরা মহাখালি বাস স্ট্যাণ্ডএ গিয়ে দেখি বিরিশিরির একটাই বাস কাউন্টার জিন্নাত পরিবহন। ওটা কেমন বাস জানিনা। বাস কাউন্টারের লোকটারও কথা বলার ব্যাপারে অসীম অনাগ্রহ। টিকেট চাইলাম বল্লো, আমরা টিকেট বেচিনা, বাস এ উঠে টিকেট করবেন।
তাইলে টিকেট কাউন্টার কেন বানালো কে জানে? যাইহোক একটা নেত্রকোনার বাসের টিকেটওয়ালা ভুজুং ভাজুং মেরে তাদের বাসে উঠায় দিল। ভালো সীট পেলাম, ড্রাইভারের পিছেরটাই। ড্রাইভার লোকটা নতুন। হেল্পার আর সুপারভাইজার দুইজন মিলে তাকে বকাঝকা করছিল। বেচারা প্যান্ট না পরে লুঙ্গি পরে বাস চালাচ্ছিল। আমরা শ্যামগঞ্জে বাস থেকে নামলাম ৬টা বাজার একটু আগে। শ্যামগঞ্জ থেকে রিক্সা নিয়ে একটু এগিয়ে গেলে বিরিশিরির রাস্তা, ওখান থেকে বাস ছাড়ে, বাসএর দেখলাম করুন অবস্থা, ভিতরে এত মানুষ, তিল ঠাই আর নাহিরে, আমরা ছাদে উঠতে চাইলাম, হেল্পার ব্যাটা দিল না। শুনেছি ওখানে নাকি মোটর সাইকেল ভাড়া পওয়া যায়। ড্রাইভারের পিছে বসে যেতে হয়। হুমায়ন নামের একলোকের সাথে পরিচয় হলো, স্থানীয় কিন্ত এখন মামলার ভয়ে গাজিপুরে শ্রমিকের কাজ করে । আমাদের বললো, বাইকে যান, ১০০ টাকা লাগবে, বাইক ওয়ালা ৩০০ টাকার কমে রাজি হয়না, মুড মারে, রেগে গিয়ে বললাম থাকো তুমি গুর মুড়ি খাও, আমরা যাই, এমন সময় দেখলাম একটা ট্রাক যাচ্ছে, পিছে বালু ক্যারি করে, এখন খালি, আমাদের হুমায়ন মামা আর আরো কিছু শ্রমিক টাইপ লোক উঠেছে, আমরাও লাফ দিয়ে ট্রাক এ উঠে গেলাম।
ট্রাক হচ্ছে পথের রাজা, হেভি মজা হলো, কিন্ত রাস্তা ছিল জঘন্য, কার্পেটিং উঠে গেছে, মাঝে মাঝে ইটের রাস্তা, ট্রাক চলেও মাস্তান স্টাইলে, তাই ঝাকুনিতে আমাদের পেটের ভাত চাউল হয়ে যাবার দশা। কিন্ত আশেপাশের দৃশ্য এতোই সুন্দর, চারপাশে খালি বিল, আমরা যখন জাইরার বাজারে আসলাম তখন প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে। হুমায়ন মামার সাথে কথা হলো, উনার প্রফেশন হচ্ছে, উপকারিতা। ব্যাপারটা প্রথমে বুঝলাম না। হুমায়ুন মামা বুঝায় বললেন, গ্রামের মানুষজন ঝামেলায় পড়লে তাদের হয়ে মামলা মোকদ্দমা করে, এর গরু ওর জমির ধান খেয়েছে, হুমায়ুন মামা সাথে সাথে মামলা ঠুকে দেবে, ধুরুন্ধর মানুষ।
জাইরার বাজার গ্রামটার করুনদশা।কিন্ত পাশেই বিশাল সোমেশ্বরি নদি, সিলেটের ক্বীন ব্রীজের মতো অতি সুন্দর একটা লোহার ব্রীজ, খুব সুন্দর। আমি হুমায়ন মামার সাথে গায়ে পরে খাতির করলাম, মাম্লাবাজ মানুষ, আর বাড়ি বিরিশিরি। উনার সাথে ব্রীজ পার হলাম। জাঞ্জাইল নামের একটা জায়গা গন্তব্য। আগে বিরিশিরি ডাইরেক্ট বাস যেত, কিন্ত বন্যায় জাঞ্জাইল ব্রীজ ভেঙ্গে গেছে, বাস গুলো জাঞ্জাইল পর্যন্ত যায় এখন। রিক্সা ওয়ালারা টুরিস্ট দেখে অনেক ভাড়া চাচ্ছিল, হুমায়ন মামা না করে দিল, আমরা হেটে গেলাম জানজাইল ঘাটে, আলেন এর হাটা হাটির অভ্যাস নাই, ও ফোনে কোনো একটা মেয়ের সাথে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছিল, তাই দ্রুতই চলে এলাম জাঞ্জাইল খেয়া ঘাটে, খেয়া নৌকা সার্ভিস, অনেক লোক, অন্ধকার। আমরা নদী পার হয়ে আসলাম আরেকটা জায়গায় নাম শুকনাকড়ি, কাদায় ভরতি খেয়াঘাট। ওখানথেকে আমরা মোটর সাইকেল ভাড়া করলাম। মোটর সাইকেল ওয়ালা, এর পরে আলেন, আমি তার পিছে হুমায়ন মামা, একটা রোগা ভোগা মোটর সাইকেলএ আমরা ৪ জন। নির্জন রাত, ব্রিজ ভাঙ্গা তাই এদিকে কোনো যানবাহন নাই, রিক্সা,ভ্যান আর মোটর সাইকেল ছাড়া। উড়ে যাওয়া যায়, কিন্ত রাইডার জামাল মামা খুব স্লো চালালো, আমরা রাত সাড়ে আটটায় পৌছালাম আত্রাইল বাজার। ওখানে রেস্টুরেন্টে চা-ডালপুরি খেয়ে YMCA রেস্টহাউজে উঠলাম। আমি গোসলের জন্যে শাওয়ার অন করতেই কারেন্ট চলে গেল, কিন্ত গোসল করে অনেক আরাম পেলাম। সাড়ে দশটার দিকে ডিনার করতে গিয়ে দেখি সব দোকান বন্ধ। গ্রামের বাজার রাত দশটা অনেক রাত। একটা দোকান পেলাম, খাবার কিছুই নাই, মুরগির ঝোল আর আলু (গোস্ত শেষ) দিয়ে ভাত খেয়ে চলে এলাম। চারিদিকে অনেক ঝিঝি পোকা। বিরিশিরিতে আমাদের প্রথম রাত। কাল সকাল থেকে শুরু হবে বাকী অংশ।
ঃঃঃ চলিতেছে......।ঃঃঃ
বিঃদ্রঃ বিরিশিরতে আমরা গিয়েছিলাম পহেলা শ্রাবন, আকাশ ভাঙ্গা জোছনা আর আষাঢে পুর্ণীমা ছিল। শিতকালে নদীতে পানি না থাকায় এই রুপ হয়তো পাওয়া যাবে না। লিখাটা ফিরেই আমার ব্লগস্পট ব্লগে লিখেছিলা, বাকী পর্ব কিছুক্ষনের মধ্যেই পোস্ট করবো ।
আমার খুব বাজে অভ্যাস ছবি পেলেই ফটোশপে ঘুট ঘাট করার। এই ছবি গুলোর প্রাকৃতিক দৃশ্য গুলো আন এডিটেড।


আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি।

বৃষ্টি ভেজা ময়মনসিংহ

কেন্দুয়ায় বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর নদে এল বান।

খুব সাধারন সবুজ একটা দৃশ্য, কিন্তু জায়গাটার নাম দরিরাম পুর, ত্রিশাল। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছে।

পাখির মাস্তান কাক, রাস্তার মাস্তান ট্রাক।

কংশ নদীতে দু রঙ আকাশ।

নদীটা আসলে বিশাল কয়লা খনি।


একুল ভাঙ্গে, অকুল গড়ে, এই তো নদীর খেলা।

ট্রাকে চড়িয়া সৌম্য উড়িয়া চলিল।

কংশ নদী। সামনে দু ভাগ হয়েছে। ঢ্যাপা আর সোমেশ্বরী।