দেড় থেকে দুই বছর আগের কথা, কোন এক কুরবানি ঈদের আগে ভার্সিটি ছুটি হবে হবে ভাব, এমন একদিন এক বান্ধবী হঠাৎ বলল দোস্ত শপিং করবিনা?
আমি কইলাম, হা দোস্ত করমু তো! কিন্তু কবে যে যাই, কার সাথে যাই...
বান্ধমি আমার ব্যাপক আগ্রহ নিয়া কিলো চল আমরা দুইজন যাই!!!
আমিও মনের ভিতরে লুলিও হাসি চাপাইয়া কইলাম ‘চল যাই...’ (এমন একটা ভাব ছিল যে তার সাথে জাওয়ার কোন ইচ্ছাই আমার নাই)
দিন ক্ষণ ঠিক কইরা গেলাম শপিং করতে। মাইয়া মানুষ শপিং করবো আর চাঁদনী চকে যাইব না এমন টা হবার না। আমিও ব্যাপক উৎসাহ নিয়া সুন্দরী ললনা দেখার মন বাসনা নিয়া চাঁদনী চকে ঢুকলাম!
আমি ললনা দেখিতে লাগিলাম আর আমার বান্ধবী তার জামা কাপর কিনিতে লাগিল, আমিতো ভাইবাই নিসিলাম যে মেয়ে মানুষের শপিং এতো তাড়াতাড়ি শেষ হইব না, বেশ অনেক্ষন ধরিয়া আসেপাসের ললনাদের দেখা জাইবে।
কিন্তু বান্ধবী আমার অন্যান্য ললনাদের তুলনার তিন গুন দ্রুততার সাথে তাহার শপিং শেষ করিল! এবং বলল-
মোটামুটি সব কেনা শেষ, শুধু কপালে দেয়ার টিপ কেনা বাকি।
আমি বললাম- চল তাইলে টিপ কিনতে যাই
টিপ কেনার দোকানে গিয়া বান্ধবী দোকানদার কে বলল
মামা টিপ দেন!
কোনটা দিবো আপা? ছোটটা নাকি বড় টা ?!! বড় টিপ বেশি ভালো!!
ছোট বড় দুইটাই দেন!
উহাদের এহেন টিপাটিপি মূলক কথোপকথন শুনিয়া আমার পেটের ভিতরে হাসির বোম তৈরি হইল যাহা আমি শত চেষ্টা করিয়াও আটকাইয়া রাখিতে পারিনাই, তাই পিছন ফিরিয়া ফিক করিয়া হাসিয়া দিলাম , বান্ধবী আমার ভিষন চাল্লু, সেও বুঝিতে বাকি রাখেনাই আমার হাসির কারন টা কি ছিল!!
টিপের দরদাম ঠিক করিয়া ২ পাতা টিপ কিনে শেষ করে বের হবার পর বান্ধবীর অবাক করা প্রশ্ন!!
কি দোস্ত দিবি নাকি চাঁদনী চকে টিপের দোকান!??
প্রশ্ন শুনিয়া লজ্জা শরমের মাথা খাইয়া দুইজনই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি! রাস্তার মানুষ তো হা কইরা আমাদের হাসাহাসি দেখে! ওইদিকে কোনই দৃষ্টিপাত নাই আমাদের!
এরপর আমার শপিং এর পালা, চাঁদনিচক থেকে বের হয়ে বলাকা ছিনেমার সামনে দিয়া হাঁটতে হাঁটতে যাইতেছিলাম এমন সময় এক ফেরিওয়ালা উচ্চ মধ্যম স্বরে হাক-
মামা লাগব নাকি?? দেশি বিদেশী সিডি আছে!!
মন চাইলো হালারে ধইরা কানের নিচে ২-৩ টা দেই!
কোনোমতে ওই জায়গা প্রস্থান করিতে করিতে বান্দর বান্ধবী আবার শুধাইল
লাগব নাতো? সত্যি কইরা ক!
হারামির কথা শুইনা কইলাম রেহাই দে আমারে দোস্ত, চুপ যা দয়া কইরা! নাইলে ওই দোকানদারের কানের নিচে যেইটা পাওনা আছে ওইটা তোর কানের নিচে পড়বো!
বান্ধবী আমার একটু ঠাণ্ডা হইল!
ওভারব্রিজ পার হইয়া নিউমার্কেটে ঢুকলাম, দেখি কাপড় শিলাই করার সুচ নিয়া ২-৩ টা ফেরিওয়ালা। আমরা যখন হাঁটিয়া তাহাদের সামনে দিয়া হাইতেছিলাম তখন শুনতে পাইলাম ফেরিওয়ালা হাক দিতেছে-
আসেন আপা সুই, সুই লাগব সুই? আশেন আপা সুই! সোনামুখি সুই আছে... লাগবনাকি? আসেন আপা সুই...!!
আমিও বান্ধবীরে টিপ্পনী কাটিয়া বললাম--
কিরে??! তোরে ডাকে তো!!
বান্ধবি আমারে পারলে খাইয়া ফালায়!!!
শপিং শেষ, সন্ধ্যা হবে প্রায়, খিদায় পেটের ভিতরে চামচিকা ঘুড্ডি উরাইতাছে! দুপুরে যে খাইসিলাম তা না খাওয়ার মত! তাই বান্ধবী আমার খাবারের কথা তুলতেই আমি কইলাম
-দোস্ত কাবাব খামু, কাবাব আবার আমার খুব প্রিয়!
দুইজন পকেট খুজা দেখলাম কাবাব খাইতে গেলে বাসায় যাওয়ার রাস্তা ভাড়া পামুনা, তাই বান্ধমি আমারে কইল চল দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাই!
আমি কইলাম- ক্যাম্নে??
বান্ধবীর উত্তর- চল মুস্তাকিমের চাপ খাই!
আমার তো ব্যাপক হাসি পাইল! আমার হাসি দেইখা বান্ধবী আমারে জিগায়
তুই হাসতাসস ক্যান?
আমিও কইলাম শেষ পর্যন্ত মুস্তাকিম ভাই এর চাপ খাবি?? আর কাউরে পাইলিনা? আমারও মুস্তাকিম এর চাপ খাওয়াবি!
আবারো কিছুটা বিড়ম্বনা এবং লজ্জা শরমের মাথা কাইট্টা হাসতে হাসতে রিক্সা করে মোহাম্মদপুর গিয়া মুস্তাকিমের চাপ ভক্ষন!
কানে ধরছি, আর কক্ষনো চাঁদনী চকে যামুনা।