somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে আসা

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জানালার বাম পাশের ফুলদানি টায় তুর্য সদ্য আনা ৫ রঙের গ্লাড়িয়াস আর রজনীগন্ধা সাজিয়ে রাখল। পর্দাটা একটু টেনে সরিয়ে রাখল সে। এইতো এবার একটু রোদ অনুর পায়ের কাছে পড়ছে। রুমটাও আলোকিত লাগছে। কি সব বাতি জ্বালিয়ে রাখে ফুলিটা, রুমে একটা গুমোট গুমোট ভাব। আজ আবার অফিসে জরুরী একটা মিটিং আছে তাই ঘুম থেকে ও আজ তাড়াতাড়ি উঠেছে। গোসল টা শেষে চট্ করে তৈরী হয়ে নিল সে।
অনুর কাছে এসে ওর দেয়া হাতঘড়িটা পড়তে পড়তে বলল সে—
এই দ্যাখো ঘড়িটার ডায়ালের বামদিকটায় রং উঠে সারা, আমি তো তোমাকে বলেছিলামই আমি ঘড়ি তড়ি পরি না ,আমাকে এটা দিও না। আমি ঠিকই জানতাম তোমাকে দোকানিরা ঠকাবে। দেখেছ রং উঠে গেছে!!
এই কথা বলতে বলতে সে ফুলিকে ডাক দিল।
--জী বাইজান।
--শোন তোর ঐদিকটায় কাজ কি হল? হলে তোর ভাবীর কাছে এসে বস।
--এইতো ভাইজান, কাজ শেষ। আপনার নাস্তা ও রেডি। আপনি আসেন নাস্তা কইরা লন।
---ভাল, শোন আজ কিছু কি লাগবে? তোর ভাবীর খাবার সব আছে তো?
--না ভাই জান ,কিছু লাগবো না সবই আছে।
--আচ্ছা তোর মোবাইলে টাকা আছে তো?
--হ ভাইজান আছে। কিছু লাগবো না। আপনি আসেন তো নাস্তা কইরা লন।
--তুই যা আমি আসছি।
তুর্য নাস্তা সেরে ওর হ্যান্ডব্যাগটা গোছাতে গোছাতে অনু কে বলল। তোমাকে বলেছিলাম না আমাদের অফিসে একটা নতুন ছেলে জয়েন করেছে। ছেলেটাও আমাদের মত প্রেম করে বিয়ে করেছে । গতকাল সব শুনলাম ওর কাছ থেকে। ও তো আমদের কথা শুনে তোমাকে দেখার জন্য পাগল প্রায়। আমি সামনের শুক্রুবারে ওদের আসতে বলেছি।।কি ভাল করেছি না??
ওহ্ শুন আরেকটা কথা তো বলতেই ভুলে গেছিলাম। মা’না গত পরশু ও রোজা রেখেছে। আমি একটু রাগই করলাম মার সাথে। এত ঘন ঘন রোজা রাখলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে। উল্টা মা আমকে যা শুনাল তা আর নাই বললাম এখন।
এই দ্যাখো আমার তো কাজ সারা। অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ফুলী ........... ফুলি...........
জী আসতেছি ভাইজান। ফুলী একটু দেরিতেই যাবে এখন। কারন সে জানে ভাইজান রুম থেকে বের হবার সময় ভাবীর কপালে আলতো একটা চুমু দিবে। প্রতিদিনেরই তো রুটিন এটা। তাই সে ভাইজান কে অপ্রস্তুত না করার জন্য একটু দেরি করেই যায়।
----কিরে শেষ কাজ সব?
----হ ভাইজান।
---তাহলে বয় তোর ভাবীর কাছে। খাবার টাবার ঠিক মত দিস। আর কোন কিছু লাগলে আমাকে ফোন দিস। মোবাইল কাছে কাছে রাখিস।
----ঠিক আছে ভাই জান , আমি আছি এই হানে।
তুর্য ওকে সব বুঝিয়ে দিয়ে নীচে এসে গাড়িতে বসলো। বুক পকেট থেকে মিনি ক্যালেন্ডারটা বের করলো সে।
আজ ২০১৩ এর ২ তারিখ। তার মানে ৬ মাস ১৩ দিন। অন্য অনেক কিছুর মত এই হিসাবটাও তুর্যর প্রতিদিনের।
এক একটা দিন যায় আর ও নতুন আশা বুনে। এই ছয়টা মাসের প্রতিটি দিনের শুরু আর শেষের ক্ষণ গুলোকে ও ছাড়া আর কেও বোধহয় এত গভীর ভাবে উপলব্ধি করেনি। ওর যে প্রতিটি দিন শুরু হয় ছয় মাস আগের কথা মনে করে।
যখন অনু জোর করে ঘুম থেকে ওকে টেনে তুলত। বাচ্চাদের মত টুথপেস্ট নিয়ে ওর পেছন পেছন ঘুরত। আর সকালে টেবিলে থাকতো প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধ। এই একটা বিষয় তুর্যর মোটেও ভাল লাগত না। আচ্ছা ওকি বাচ্চা নাকি যে প্রতিদিনই দুধ খেতে হবে। কিন্তু অনুর জন্য কিছুই করতে পারত না। বাধ্য হয়ে তাই খেতে হত।
কিন্তু এখন অনু আর তেমন করে না ওর জেদটাও কমে গেছে একদম। কিভাবে করবে সে ?? ও যে আজ ছয় মাস কোমাতে!! গত গ্রীষ্মে ওরা ঘুরতে বান্দরবন গিয়েছিলো । একটা রোড এক্সিডেন্টে আজ অনুর এই অবস্থা। তুর্য সেদিন কোনমতে বেঁছে গিয়েছিলো । কিন্তু অনুর মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লাগে। টানা এক মাস আই. সি. ইউ তে ছিল । শেষে ডাক্তাররা অনুকে বাসায় আনার অনুমতি দেয় কিন্তু ওর জন্য বাসার একটা ঘরে মিনি হসপিটাল বানাতে হবে। তুর্য তাই করেছিল। প্রতিদিন সকালে উঠে অনুর শরীরের সাথে লাগানো যন্ত্র গুলো দ্যাখে আর আশার আলো বুনে । মাকে ফোন করে বলে “মা অনু ভাল আছে, তুমি কেমন আছো”।মা তুর্যর কথা শুনে আর চোখের পানি মুছে । পুত্র বধূর জন্য কত রোজা ,কত মানত করে।
তুর্য বলে এসব কিছুই লাগবে না শুদু তুমি দোয়া কর,সব ঠিক হয়ে যাবে।
হ্যাঁ সব তো ঠিক হতেই হবে। তুর্য জানে অনু আবার ফিরে আসবে। ওকে যে আসতেই হবে।
ভাবতে ভাবতে তুর্জ সামনে মিটিং এর সাদা কাগজগুলোকে ঝাপসা দেখে ।
--ওহ্ এই রোদটা যে কি, চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেয়।
আসলে ও কাঁদতে চায় না । অনুর জন্য এক ফোঁটা চোখের জলও ফেলতে চায় না সে। কারন অনু তো হারিয়ে যায়নি, অনু আছে, ঘুমিয়ে আছে, ঘুম থেকে একটু উঠতে দেরি করছে এই যা।
থাক আজ আবার তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে । অনুর জন্য জুবায়ের মামার ফুস্কা নিতে হবে। ফুস্কা ওর যা প্রিয়।
গাড়ির বাইরে তাকায় সে , ব্যাস্ত শহরের ব্যাস্ততা এখনো বাড়েনি। প্রতি সন্ধ্যার মত আজ সন্ধ্যায়ও তুর্যকে বাড়ী ফিরতে হবে অনুর ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য,আগামী কালের আরেকটি নতুন সকালের জন্য।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩৯
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×