ক্লাস নাইনে পড়ি তখন। ম্যাথ নিয়ে ঝামেলায় ছিলাম, তাই প্রাইভেট পড়তে এসেছি হাসান স্যারের বাসায়। স্যারের বাসায় আমাদের ব্যাচের সেদিনই ছিল প্রথম ক্লাস। নিতান্ত রসকষ বিহীন ও রগচটা মানুষ বলে হাসান স্যারের সুনামের (!) অন্ত নেই। তাই ভয়ে ভয়ে অঙ্ক দেখছি। এমন সময় এক ভদ্রলোক মিষ্টির বড়সর একটা প্যাকেট নিয়ে স্যারের বাসায় এলেন। সৌজন্য বিনিময়ের সময় বুঝলাম ইনি স্যারের প্রাক্তন ছাত্র। এমন সময় স্যার চোখের ইশারায় মিষ্টির প্যাকেটের দিকে ইঙ্গিত করে জানতে চাইলেন মিষ্টি কিসের। ভদ্রলোক বললেন - "গতকাল আমার একটা বাচ্চা হইছে স্যার, ছেলে"। মুহুর্তে স্যারের ভুরু কুঁচকে গেলো, কুঞ্চিত নয়নে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় স্যার বললেন - "তুমি কুকুর, না বিলাই?" হতচকিত ভদ্রলোকের সাথে সাথে আমরাও হতভম্ভ হয়ে গেছি স্যার আবার কথা বললেন - "আরে, বাচ্চা হয় কুকুর, বিড়াল, গরু ছাগলের। মানুষের হয় সন্তান। এমন ভুল আর করবা না।" বলে প্যাকেট থেকে একটা মিষ্টি তুলে মুখে দিলেন, আর প্যাকেটটা এগিয়ে দিলেন আমাদের দিকে।
হাসান স্যারের শেখানো অনেক কিছুই ভুলিনি আমি, যেমন ভুলিনি এই কথাটিও। ছোট্ট একটা কথায় এভাবে মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্য বর্ননা করতে আমি শুনিনি কখনও।
মানবসন্তানের প্রতি আমার আকর্ষন ছোটবেলা থেকেই কেন যেন খুব বেশী। তাদের আদর করে ভর্তা বানানো আমার খুবই পছন্দের কাজ। আর ৯৯% ক্ষেত্রে বাচ্চারা এতে খুশীই হয়, হাসে আর আবারও ভর্তা বানাতে বলে আদিত্য থেকে শুরু করে পরিবারের কোন বাচ্চাই আমার হাতে আদরের ঠেলায় ভর্তা হওয়া থেকে বাঁচতে পারেনি (দেশ ছাড়ার পর জন্ম নেয়া নতুন দুটো পিচ্চি ছাড়া)। তারপরেও তারা আমাকে অনেক ভালো পায় যে কোন বাসায় ফোন দিলে বাবুদের সাথে কথা না বলে ফোন রেখে দিলে আমার খবর আছে
যা হোক, লিখতে চাচ্ছিলাম মানবসন্তান বিষয়ক অনুসিদ্ধান্ত সমুহ, মানে বাবুদের নিয়ে আমার কিছু ধারনা ও পর্যবেক্ষনের কথা মাঝে মাঝে বাচ্চা দেখলেই এই কথাগুলো মনে হয়, আর নিজে নিজেই হাসি
১) বাচ্চারা খুবই ছোট
২) উহাদের মাথায় গিজগিজা বুদ্ধি
৩) বাবুদের মুখে প্রথমেই দাঁত থাকেনা কারন দাঁত থাকলে তারা নিজেদের জিভ নিজেরাই চিবিয়ে খেয়ে ফেলতো
৪) ছোট্ট বাবুরাও সব কথাই বুঝতে পারে, কিন্তু কিছু বলতে পারেনা
৫) বাচ্চারা আর কিছু বুঝুক আর না বুঝুক, আদরটা ঠিকই টের পায়
৬) বড় মানুষকে বিব্রত করে উহারা ব্যাফক আনন্দ লাভ করে
৭) বড়দের নাক, চোখ আর চশমার প্রতি উহাদের ব্যাপক আগ্রহ
৮) বাচ্চারা ইচ্ছে করে কিছু ভাঙ্গেনা, কিছু জিনিস খেলতে খেলতে ভেঙ্গে যায়
৯) মাঝে মাঝে তারা দেশ ও ঝাতি নিয়ে প্রচুর চিন্তাভাবনা করে
১০) নিজের চুল টানলে যে ব্যাথা লাগে এই তথ্য বাচ্চারা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বুঝে যায়, এরপর অন্যের চুল টানতে শুরু করে, নিজেরটা আর টানে না
১১) বাচ্চারা খুবই সাবধানী টাইপের হয়, সব সময় কিছু না কিছু ধরে রাখে
১২) উহারা দুষ্টুমি করে বুঝতে পারে যে সে একটা দুষ্টুমি করেছে
১৩) ছোট্ট একটা বাবু দিনে ৫০টার উপর কাঁথা ভেজাতে সক্ষম
১৪) বাবুরা গভীর রাতে খেলাধুলা করতে পছন্দ করে
১৫) একেবারে ছোট্ট বাবুদের গলা থাকেনা, আস্তে আস্তে গলা গজায় (এ ব্যাপারে আমার ছোট বোনের সাথে আমার দ্বিমত আছে। তার ধারনা গলা থাকে, কিন্তু ছোট থাকে)
১৬) পায়ের বুড়ো আঙ্গুল খেতে যে খুবই মজা, সেটা কেবল মাত্র বাবুরাই বোঝে, বড়রা কখনও খায়না বলে বোঝে না
১৭) বড়দের মত বাবুদের সাথেও জটিল বিষয়ে (সমাজ, সংসার, রাজনিতী) আলোচনা করা যায়
১৮) বাচ্চারা তাদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে খুবই সক্রিয় ও সচেতন
১৯) বাচ্চাদের ৩০/৩৫ রকমের কান্না আছে
২০) পৃথিবীর সব চাইতে সুন্দর আর পবিত্র দৃশ্য হচ্ছে বাচ্চার হাসি আর কান্নার দৃশ্য।
২১) মানব সন্তানের যখন দাঁত গজায় তখন তাহারা আশেপাশের সব কিছু কামড়াইয়া থাকে (সৌজন্য - কঁাকন)
২২) ছোট বাবুদের পেটে আদর করলে ওরা খুশী হয় এবং হাসে। এই সময়ে সে আপনার চুল টেনে ধরবে (সৌজন্য - Kisuna)
অনুসিদ্ধান্ত আরো কিছু আছে, এখন মনে নাই। মনে পরলে আবার পরে লিখবো। এখন আসি, আমার তরকারি চুলায়
==========================================
এই ব্লগটা না পড়ে কোথাও যাবেন না
ভালবাসার গল্প সঙ্কলন ২০১০ - লেখা আহবান
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১২:০২