মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত করে মানুষ। গভীর রাতে ফোন দিয়ে ঘুম থেকে টেনে তুলে জিজ্ঞেস করে "ভাই, ঘুমাচ্ছেন"? মনে হয় বলি - না ভাই, ঘুমের ভান করে মটকা মেরে পড়ে ছিলাম আর আপনার ফোনের জন্য ওয়েট করছিলাম। আমার এক বন্ধু ( না হলেই ভাল ছিলো ) আছে এখানে, ওর ফোন তখনই আসে যখন ওর কম্পিউটারে কোন সমস্যা দেখা দেয়। ঈদের রাতেও সে যদি ফোন দেয়, আমি জানি যে সে শুভেচ্ছা জানাতে ফোন দেয়নি। এমন আরও অনেকে আছে, কারও না কারও মাধ্যমে আমার নম্বর যোগার করে সময় অসময়ে ফোন দেয় এই 'ফেল কড়ি মাখো তেল' দেশে ফ্রীতে কম্পিউটার সারিয়ে নিতে। সমস্যা আমার মাঝেও আছে। নষ্ট কম্পিউটার দেখলে আমার চোখ চকচক করে ওঠে। ব্যাপারটা একটা চ্যালেঞ্জ মনে হয়, দেখি ব্যাটা কম্পিউটার বেশী পারে না আমি
কম্পিউটারের যে সমস্যা গুলো সব চাইতে বেশী আসে তা হলো -
১) কম্পিউটার হঠাৎ করে খুব স্লো হয়ে গেছে
২) কম্পিউটার একটু আগেও বা গতকাল কাজ করছিল ভালই, আজকে চালুই হচ্ছেনা
৩) হার্ড ডিস্ক শব্দ করছে খুব
৪) ডিস্ক ইরর দিচ্ছে বার বার
৫) সি ড্রাইভে জায়গা কম বলছে
৬) কোন কোন প্রোগ্রাম লোড হতে অতিরিক্ত সময় নিচ্ছে বা লোডই হচ্ছেনা
৭) কম্পিউটার চলতে চলতে একটা নীল স্ক্রিন আসছে (ব্লু স্ক্রিন অফ ডেথ )
৮) বিনা কারনে রিষ্টার্ট হচ্ছে কম্পিউটার
৯) কম্পিউটার শাট ডাউন হচ্ছেনা
১০) ডেস্কটপ আসার পর বা কোন প্রোগ্রাম ওপেন করার পর হ্যাং করছে
এই সব সমস্যাই সরাসরি হার্ড ডিস্কের সাথে সম্পর্কযুক্ত। খুব সামান্য কিছু কাজ করেই এই সমস্যাগুলো সমাধান করা যায়, এগুলো মোটামুটি সবাই করতে পারবে, কোন কম্পিউটার প্রফেশনালের কাছে ধরণা দেয়া ছাড়াই। কেবলমাত্র হার্ড ডিস্ক শব্দ করা ছাড়া অন্য কারনগুলোতে পিসির কেসিং খুলতেও হয়না। সামান্য কিছু মেইনটেনেন্স যদি করেন, প্রতিদিন তো নয়ই, সপ্তাহেও নয়, মাত্র এক মাসে একবার, তাহলেও এই সমস্যা গুলোর অনেক গুলোই এড়াতে পারবেন।
কম্পিউটারের বেসিক মেইনটেনেন্স এর ধারনা গুলো দেই।
১) আপনার পিসি একটি যন্ত্র, সে আপনার জন্য কাজ করে। আপনার কি বোর্ডের প্রতিটি কি প্রেস বা মাউসের প্রতিটি নড়াচড়ায় সে রেসপন্ড করে। তাই, খাওয়া দাওয়ার প্রয়োজন না থাকলেও মনিটর, কি বোর্ড আর কেসিং নরম কাপড় দিয়ে নিয়মিত মুছে দেয়া ছাড়াও এর আরও কিছু যত্নের দরকার আছে।
২) পিসির মেইনটেনেন্সের বেসিক আর কমন টুল গুলো আপনার উইন্ডোজেই (মুলত সব অপারেটিং সেষ্টেমেই) দেয়া আছে, এর জন্য বাড়তি সফটয়ার ইনস্টল করার তেমন কোন দরকার নেই।
৩) বেসিক মেইনটেনেন্স করতে আপনাকে কম্পিউটার বিদ্যায় পারদর্শি হতে হবেনা। কম্পিউটার চালাতে জানলেই হবে।
৪) মেইনটেনেন্স চালু হলে আপনাকে পিসির সামনে রাত জেগে মাছি তাড়াতে হবেনা, ঘুমোবার আগে চালু করে দিয়ে ঘুমিয়ে যাবেন, মেইনটেনেন্স শেষে পিসি চালু হয়ে গেলেও যদি তা সারা রাত চালু থাকে, তাহলে পিসির কোন ক্ষতি হবেনা।
৫) মেইনটেনেন্স করার সময় বড় ধরনের কোন সমস্যা হবার সম্ভাবনা খুব কম। আপনার পিসির হার্ড ডিস্ক খুব বেশী পুরানো, মানে ৩/৪ বছরের পুরানো না হলে চিন্তার তেমন কিছুই নেই।
৬) যতক্ষন পিসি চালু থাকে, হার্ড ডিস্কের ভেতর ডিস্কটা খুব জোরে ঘুরতে থাকে, ফলে এর ভেতরের যন্ত্রপাতি ক্ষয় হতে থাকে। তাই ৩ বছরের পুরানো হার্ড ডিস্ক বদলে ফেলা, অন্তত ব্যাক আপ হার্ড ডিস্ক কিনে ফেলাও পিসি মেইনটেনেন্সের একটা অংশ।
৭) হার্ড ডিস্ক নষ্ট হওয়ার বড় একটা কারন পাওয়ার সার্জ। বিদ্যুতের ওঠানামা, পিসি চালু অবস্থায় কারেন্ট চলে যাওয়া, পিসির কুলিং ফ্যান ঠিক ভাবে কাজ করা (হার্ড ডিস্ক বেশী গরম হয়ে গেলে), প্রয়োজনের তুলনায় কম র্যাম ব্যাবহার হার্ড ডিস্কের ওপর যথেষ্ট চাপ ফেলে।
৮) প্রতিবার কম্পিউটার চালু করার পর হার্ড ডিস্কে অনেক অপ্রয়োজনীয় ফাইল তৈরী হয়, যা কম্পিউটার নিজে থেকে মুছতে পারেনা। সে জন্য হার্ড ডিস্কে কোন কিছু সেইভ না করলেও ডিস্ক ভরে যেতে থাকে, ফলে জায়গার অভাব দেখা দেয়। মেইনটেনেন্স করে খুব সহজেই এই অদরকারী ফাইল গুলো মুছে ফেলা যায়, ফলে পিসির সি ড্রাইভে জায়গা অনেক বেড়ে যায়।
৯) কম্পিউটারের সব প্রোগ্রাম সঠিক ভাবে চলার জন্য নির্দিষ্ট পরিমান হার্ড ডিস্ক স্পেস বা জায়গার দরকার হয়, সেই পরিমান জায়গা না পেলে প্রোগ্রাম গুলো ক্রাস (হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া) করে বা পিসি হ্যাং করে।
১০) হার্ড ডিস্ক ইরর দেয়া মানেই ডিস্কটা বদলে ফেলতে হবে, বা উইন্ডোজ রি ইন্সটল করতে হবে - এমন নয়। অনেক সময়েই শুধু মেইনটেনেন্স করেই এই সব ইরর সারিয়ে তোলা যায়।
ক্রমশ ... হার্ড ডিস্ক মেইনটেনেন্সে - পর্ব ২
( এক পর্বে কিছুই দেখি শেষ করতে পারিনা আমি )