আগের পর্বঃ
আমার প্রেমিকারা - ইলোরা পর্ব
আমার প্রেমিকারা - হুমায়রা পর্ব
আমার প্রেমিকারা - জেনী পর্ব
বগুড়া আসিবার পর আমি বগুড়া জিলা স্কুলে ভর্তি হইলাম। আর আমাদের গ্রামের বাড়ী রংপুরে হওয়ায় প্রায়শই গ্রামের বাড়ী যাওয়া হইতে লাগিল। সেই সুবাদে কাঁকনের সাথে মাঝে মাঝেই দেখা হইতে লাগিলো। কাঁকন আমার চাচাতো বোন। বাড়ীতে যাইয়াই আমরা বড় চাচার হেলিকপ্টারে (স্যালো ইঞ্জিনের তৈরী ছোট ট্রাক্টর বিশেষ) করিয়া সকাল বেলাতেই শহরের বাসা হইতে গ্রামে চলিয়া যাইতাম, সারাদিন সেইখানে খেলাধুলা করিয়া সন্ধ্যায় ফিরিতাম। মাঝে মাঝে কাঁকনও আমাদের সহিত শহরে চলিয়া আসিতো। যদিও সে আমার ছোট বোনের সহিত বেশী খেলিতো, তথাপি উহার সাথে ক্রমেই আমার সখ্যতা বৃদ্ধি পাইতে লাগিলো।
একদা এক রাত্রিতে আমরা সকলে বিছানায় বসিয়া টিভিতে হিন্দি মুভী অবলোকন করিতেছিলাম। পাশাপাশি বসিয়াছিলাম আমি, আমার বোন ও কাঁকন। আমি মাঝে মাঝেই আমার দক্ষিন হস্ত পেছনে রাখা বালিশের উপর রাখিতছিলাম। এক্ষনে হঠাৎ আমার হস্তের উপর কোমল আরেকখানি হস্তের পরশে শিহরিত ও বিব্রত হইলাম, কাঁকনও দ্রুত হাত টানিয়া লইলো, কিন্তু কেহ কিছুই বলিলামনা। কিছুকাল পরে আবারও আমি উক্ত স্থানে পুনরায় হাত রাখিলাম, মন তখন মোটেও হিন্দি ফিল্মের ঢিসুম ঢিসুমের প্রতি মনযোগী হইতে পারিতেছিলনা। মুহুর্তকাল পরে আবার আমার হস্তের উপর কোমল হস্তটির উপস্থিতি আমাকে শিহরিত করিলো, কিন্তু এইবার আমি আর হাত সরাইয়া নিলামনা। সুকোমল হাতটিও জায়গা বদল করিলোনা বরং সকলের অজান্তে উহার হস্তটি আমার হস্তের কোমলতা অথবা কাঠিন্য পরীক্ষা করিতে লাগিলো এই অবস্থায় কখন যেন ঘুমাইয়া পড়িয়াছিলাম খিয়াল রাখিতে পারি নাই।
পরদিন সকালে উঠিয়া দেখিলাম কাঁকন তাহার বাড়ীতে চলিয়া গিয়াছে, সাথে আমার ভগ্নীটিকেও লইয়া গিয়াছে। আমার আর সেইদিন উহাদের বাড়ীতে যাওয়া হইয়া উঠিলনা, যদিও আমার মন সমস্ত দিন উহার কাছেই পড়িয়া ছিল কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগিতেছিল, মনে হইতেছিল আমাদের ছোঁয়াছুয়ি খেলার কথা যেন সকলে জানিয়া গিয়াছে এবং সকলে কেমন সন্দেহের চোখে আমার দিকে তাকাইতেছে, অথচ ঘটনা তখনও কেউ জানেনা। সন্ধ্যার কিছুকাল পুর্বে আমার ভগ্নী ফিরিয়া আসিলো এবং আমাকে খুঁজিতে লাগিলো। কিন্তু আমি পাশের বাসায় থাকাতে আমার আসিতে সামান্য দেরী হইয়া গেল, এই সময়ের মধ্যে আমার অতিশয় অসহিষ্ণু ভগ্নী কাঁকনের দেওয়া একখানা প্রেমপত্র ও গুলাব পুষ্প আমার মাতৃদেবীর হস্তে সমর্পন করিলো। পত্রখানীতে তেমন কিছুই লেখা ছিলোনা, শুধু অত্যন্ত দুর্বোধ্য বাংলা হস্তাক্ষরে লিখা ছিল - "আমি তোমাকে ভালবাসি" - যাহার পাঠোদ্ধার করিতে আমার মাতৃদেবীর মুহুর্তকাল সময় ব্যায় হইয়াছিল। ততক্ষনে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইয়া চরম লজ্জা শরমের মধ্যে পড়িয়া গেলাম, কারন তখন সকলে এই বিষয় লইয়া তীব্র হাসাহাসিতে ব্যস্থ ছিল
পরদিন খুব ভোরে উঠিয়া আমরা বগুড়া চলিয়া আসিলাম, আমার প্রেমের ফুল অঙ্কুরেই বিনাশ হইলো আমি উহাকে ভালবাসা জানাইবার কোন অবকাশ পাই নাই। মাসাধিককাল পরে যখন পুনরায় বাড়ীতে গমন করিলাম তখন জানিতে পারিলাম কাঁকন ততদিনে তাহাদের বাড়িতে অবস্থানরত জায়গীর মাষ্টারের প্রেমে পড়িয়া গিয়াছে
এরপর কাঁকনের সহিত কোনকালেই আমার সহজ স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়িয়া উঠে নাই। বরাবর আমি তাহা হইতে অথবা সে আমা হইতে লুকাইয়া পলাইয়া নিজেকে ছুপাইয়া চলিতাম। শেষবার উহাকে দেখিয়াছিলাম আমার ছোট চাচার বিবাহের দিনে, যখন সে নিভৃতে এক নির্জন কোনে আমাকে একেলা পাইয়া আমার হাতখানি ধরিয়া ক্ষমা চাহিয়া লইয়াছিল যদি আমার মনে কোন কষ্ট থাকে - তাহা ভাবিয়া। আমি তাহাকে বলিতে পারিনাই যে আমিও ততদিনে লোপার প্রেমে হাবুডুবু খাইয়া খাইয়া ডুবিতেছি আর ভাসিতেছি
ক্রমশ ... আমার প্রেমিকারা - লোপা পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:১৯