আগের পর্বঃ আমার প্রেমিকারা - ইলোরা পর্ব
দেখিতে ছোটখাটো হইলেও হুমায়রা ছিল বিশাল বুদ্ধিমতী। সে ঠিকই কোন না কোন প্রকারে নিজের দাবী আদায় করিয়া লইতো। যখনই সে বুঝিতে পারিল যে ইলোরার সহিত আমার কিঞ্চিৎ ইটিশ পিটিশ চলিতেছে, তখনই সে লাগিয়া পড়িল আমার দুর্বলতার খোঁজে যাহাতে সে আমারে দ্রুত কাবু করিয়া তাহার বশিভুত করিয়া ফেলিতে পারে। খাদ্য দ্রব্যের প্রতি আমার আসক্তির কথা সর্বজনবিদিত, কাজেই আমার দুর্বলতা খুজিয়া পাইতে উহাকে মোটেও বেগ পাইতে হয় নাই। হুমায়রার মাতৃদেবী (আমাদের শ্রদ্ধেয়া শিক্ষিকা রানু ম্যাডাম) রন্ধন শিল্পে অতি পটু ছিলেন, প্রত্যহ তিনি নানাবিধ মজাদার খাবার প্রস্তুত করিয়া কন্যাত্রয়ের টিফিন বাক্স ভর্তি করিয়া দিয়া দিতেন। আমিও আমার খাবার সবার সহিত বিনিময় করিয়া খাইতাম। উহাতে রোজ নতুন নতুন খাবারের স্বাদ আস্বাদন করা সম্ভব হইতো। ক্রমে আমি হুমায়রার চাইতে উহার টিফিন বাক্সের প্রতি বেশী মনোযোগী হইয়া পড়িলাম। এই সত্য উপলব্ধি করিয়া হুমায়রা একদিন আমাকে তাহার টিফিনের ভাগ দিতে অস্বিকার করিয়া বসিল। পরে আপোষ হইল এইরুপে যে - আমি রোজ একখানা চুম্বনের বিনিময়ে উহার টিফিন বাক্সের অধিকার পাইবো :!> :!>
হুমায়রা আমা হইতে শুধু চুম্বন লইয়াই ক্ষান্ত হয়নাই, একদা সে আমাকে নির্জনে ডাকিয়া লইয়া আমার হস্তে একখানি তাজা লাল গোলাপ পুস্প ধরাইয়া দিয়া পরের দিনের টিফিনে বিরিয়ানী খাওয়াইবার প্রতিশ্রুতি দিয়া অঙ্গিকার করাইয়া লইয়াছিল যে আমরা কিছু দিন পর বিবাহ করিয়া সুখের সংসার করিব। আমি নিত্যদিন উহার মায়ের মজাদার রান্নার লোভে পড়িয়া নিঃসঙ্কোচে রাজী হইয়া গিয়াছিলাম কিন্তু গোল বাধিল শ্রেনী কক্ষে ফিরিয়া আসিবার সঙ্গে সঙ্গেই। আমার হাতে গোলাপ দেখিয়া ইলোরা সহ আরও কয়েকজন বালিকা উহা লইবার জন্য ঝাপাইয়া পড়িল, আমিও প্রানপনে উহাদের বাধা দিবার চেষ্টায় গোলাপখানা মুঠোয় ভরিয়া গোলাপ রক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত হইলাম। কিন্তু যুদ্ধ জয়ের আনন্দে হুমায়রার সামনে গিয়া দাড়াইতেই কন্যা চোখ ভর্তি জল লইয়া দ্রুত ক্লাস ত্যাগ করিয়া উহার মাতৃদেবীর কক্ষের দিকে ধাবিত হইল। কারন অনুসন্ধান করিয়া দেখিতে পাইলাম যে আমার সাধের গোলাপখানি কুটিকুটি হইয়া ছিড়িয়া পদ দ্বারা দলিত মথিত হইয়া ধুলায় লুটাইতেছে, যুদ্ধ করিবার সময়ে কখন যেন উহা মুঠি হইতে মাঝেতে পড়িয়া গিয়াছে, তাহা আমি খিয়াল করিতে পারি নাই
এই ঘটনার কিছুক্ষন পরেই টিচার্স রুমে আমার ডাক পড়িল। আমি দুরু দুরু বক্ষে নানাবিধ দুশ্চিন্তায় ভীত হইয়া উক্ত কক্ষে প্রবেশ করিয়া রানু ম্যডামের মুখোমুখি হইয়া দেখিতে পাইলাম হুমায়রা অশ্রুসজল নেত্রে ম্যাডামের পাশে দন্ডায়মান। আমাকে দেখিয়া ম্যাডাম হাসিহাসি মুখে আসকাইলেন - "তুমি কি আমার কইন্যাকে বিবাহ করিতে ইচ্ছুক?"। আমি মাথা নাড়িয়া সন্মতি প্রকাশ করিতেই টিচার্স রুমে হাসির রোল পড়িয়া গেল, আর হুমায়রা লজ্জা পাইয়া তাহার মাতৃদেবীর কোলে মুখ লুকাইলো। রানু ম্যাডাম আমাকেও তাহার কোলে টানিয়া লইয়া কহিলেন - "তাহা হইলে তুমি আমার কইন্যাকে আর কাঁদাইবেনা, প্রহার করিবেনা, পড়াশুনায় সাহায্য করিবে, আমি ভাল ছেলে হইয়া থাকিবে"। আমি লাজুক মুখে সন্মতি দিয়া উক্ত কক্ষ হইতে নিস্ক্রান্ত হইলাম। আপন শ্রেনী কক্ষে প্রবেশের সাথে সাথেই দেখিতে পাইলাম ইলোরা আমার ব্যাগ বেঞ্চের উপর হইতে টানিয়া মেঝেতে ফালাইয়া দিয়ে হাপুস নয়নে কাঁদিতে কাঁদিতে স্কুল ত্যাগ করিতে উদ্দ্যত হইয়াছে। এমতাবস্তায় টিচার ক্লাসে প্রবেশ করিয়া ইলোরাকে শান্ত করিতে ব্যার্থ হইয়া প্রধান শিক্ষিকা মহাশয়াকে ইনফর্ম করিলেন। তাহার পরে আমার আর হুমায়রার প্রেম কাহিনী গোটা স্কুলে দাবানলের মত ছড়াইয়া পড়িল। :#> :#>
এই ঘটনার পর দুইদিন ইলোরা আর স্কুলে আসেনাই। পরে স্কুলে আসিলেও আমি আর তাহাকে কোন ভাবেই পটাইতে সমর্থ হইনাই। নারীজাতী বড়ই মারাত্নক, এই সত্য প্রমান করিতেই ইলোরা কিছুদিন পরে আমার উপর চরম প্রতিশোধ গ্রহন করিয়াছিল, যাহা আমি আজীবন ভুলিতে পারিবোনা
এই ঘটনার কয়েকদিন পর একদা এক রোজার দিনে আমার পিতামাতা আমাকে প্রত্যহ তিনবেলা চিকেন ফ্রাই ও চাইনিজ খাবারের লোভ দেখাইয়া মুসলমান বানাইয়া দিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন আমিও যথারিতি নারায়নগঞ্জের এক ডাক্তারের হস্তে অমুসলমানিত্ব (!) বিসর্জন দিয়া মুসলমান হইয়া আসিলাম। পরের দিন সন্ধায় ইলোরার ডাক্তার পিতা তাহার কইন্যা সম্পদকে সঙ্গে লইয়া আমাকে দেখিতে আসিলেন আমি মুসলমান হইয়াও লজ্জা শরমের মাথা খাইয়া ফেলি নাই, কাজেই আমি কোন ভাবেই ঢাকনা উন্মুক্ত করিতে রাজি হইতেছিলামনা :!> কিন্তু উনি ডাক্তার, তাই আমার পিতামাতা উনাকে ...... না দেখাইয়া স্বস্তি পাইতেছিলেননা। অবশেষে পিতার রক্ত চক্ষুর কাছে আমার মান ইজ্জত সমঝোতা করিলো, আমি উন্মুক্ত হইলাম এবং আতঙ্কিত হইয়া খিয়াল করিলাম ইলোরা সোফা সেটের উপর উঠিয়া দাঁড়াইয়া উহা অবলোকন করিতেছে তখন আর আমার কিছুই করিবার ছিল না
যাইবার প্রাক্কালে ইলোরা আমার কাছে আসিয়া চুপি চুপি কহিল - "এই কথা যদি আমি ক্লাসে না বলিয়া দেই তবে আমার নাম ইলোরা নহে, তুমি আমার সঙ্গে যাহা করিয়াছো, তাহার শাস্তি হিসাবে আমি সবাইকে এই কথা বলিয়া দিব" । শুনিয়া আমি কিছুক্ষন হতভম্ব হইয়া থাকিয়া ক্রন্দন সহকারে ঘোষনা দিলাম আমি জীবনেও আর ওই স্কুলে যাইবোনা
ক্রমশ ... আমার প্রেমিকারা - জেনী পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০০৯ ভোর ৪:১২