হঠাৎ করে দেশে থাকার সময়ের কিছু মজার কথা মনে পরে গেলো। ঘটনা গুলো সব কম্পিঊটার নিয়ে। আমরা যখন কম্পিঊটার দিয়ে গ্রাফিক ডিজাইনিংয়ের কাজ শুরু করেছিলাম, তখন খুব কম লোকেই কম্পিঊটারের সাথে পরিচিত ছিলো। পরে একটা সময় অনেকেই তাদের ছেলেমেয়ের জন্য প্রথম কম্পিঊটার কেনেন, অনেকে কেনেন কাজের অথবা ব্যাবসার প্রয়োজনে। কম্পিঊটারের সাথে সাথে বাড়তে থাকে ওয়েব সাইটের প্রয়োজনীয়তা। এইসব নিয়েই আমার কাহিনীগুলো।
বিসিএস কম্পিঊটার সিটিতেঃ
১) আমি গেছি কম্পিঊটার সিটিতে কি যেন একটা কাজে। গিয়ে দেখি একটা দোকানে প্রচুর লোকজন, সবাই হাসাহাসি করছে। কাছে গিয়ে দেখি এক লোক একটা কম্পিঊটার নিয়ে বসে আছে, তাকে ঘিরে আছে সবাই। লোকটা বেশ কিছুদিন আগে কম্পিঊটার কিনে নিয়ে গেছিলো ওই দোকানটা থেকে। অনেকদিন ব্যাবহার করার পর সে কম্পিঊটারটা একদিন পরিস্কার করতে বসে দেখতে পায় কেসিং এর ভিতর অনেক ময়লা। সে মনের আনন্দে সব যন্ত্রপাতি খূলে পানির মদ্ধে সার্ফ এক্সেল গুলিয়ে মাদার বোর্ড, হার্ড ডিস্ক, ফ্লপি ডিস্ক, মডেম, সিডি রম আর কেবলগুলো কিছুক্ষন ভিজিয়ে রেখে পরে ব্রাশ দিয়ে পরিস্কার করেন। পরে নিজেই সব এসেম্বল করার চেস্টা করেন, আর কম্পিঊটার চালু করতেই তাতে আগুন ধরে যায়। তারপর কম্পিঊটারের দোকান থেকে একজন লোক নিয়ে এসে তাকে সব দেখালে সেই লোক তাকে ঢাকায় কম্পিঊটার সিটিতে চলে যাবার পরামর্শ দেন। তখন সে বাধ্য হয়ে পিসি নিয়ে কম্পিঊটার সিটিতে চলে আসে।
২) কম্পিঊটারের দোকানে বাবা আর ছেলে ঝগড়া করছিলো। ছেলে কম্পিঊটার কিনবে, বাবাও কিনে দেবেন, কিন্তু বাবা সব কিছু কিনতে রাজি না। তার মনে হয়েছে যে কম্পিউটারের কেসিংটার কোন দরকার নেই আর মাউস শুধুই গেইম খেলার যন্ত্র ! তিনি চান না তার ছেলে গেইম খেলে সময় নস্ট করুক। কাজেই তিনি শুধু মনিটর আর কি বোর্ড কিনবেন।
অফিসেঃ
১) আমাদের একটা সেকশন আছে ওয়েব ডিজাইন আর হোস্টিং এর। একদিন সেখানে এক লোক এসে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটা ওয়েব সাইটের অর্ডার দেন। তার ওয়েব সাইটের ডেমো তৈরি হয়ে যাবার পর ঊনি ঐ প্রতিষ্ঠানের মালিককে নিয়ে ডেমো সাইট দেখতে আসলেন। পেইজ দেখতে দেখতে মালিক জানতে চাইলেন কয়টা পেইজ হয়েছে। তারপর তিনি যা বললেন, তাতে আমারা সবাই হতবাক। ঊনি বললেন “আপনারা কি পেইজ লেমিনেটিং করে দেন, না আমাকে বাইরে থেকে করে নিতে হবে?”
২) আমাদের শপ থেকে নতুন কম্পিঊটার কিনে নিয়ে গিয়ে এক লোক পরের দিনেই কমপ্লেন পাঠালেন যে তার মাউস কাজ করছে না। আমাদের টেকনিশিয়ান গিয়ে দেখে মাউস ঠিকই আছে। কিন্তু যে লোক কম্পিঊটারটা কিনেছেন তিনি চালাতে গেলেই মাউস কাজ করে না। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? দেখা গেল, ভদ্রলোক ট্রাকবল মাউসে হাত দিয়েই মাউসটা মাউস প্যাডে চেপে না রেখে প্যাড থেকে অল্প একটু উপরে তুলে নাড়াচাড়া করেন, ফলে কারসার মনিটর কামড়ে পরে থাকে, একটুও নড়েনা।
৩) কম্পিঊটার কেনার ২ সপ্তাহ পর এক লোক খুব উত্তেজিত ভাবে ফোন করে জানালেন তার কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকেছে তারপর হঠাৎ করে কম্পিউটার আর চালু হচ্ছেনা। তার পিসিতে মডেম বা ল্যান কার্ড ছিলোনা, কাজেই ইন্টারনেট থেকে ভাইরাস আসেনি, নতুন কোন সিডি বা ফ্লপি ব্যাবহার করেননি, কাজেই ভাইরাস ঢোকার কোন কারন নেই। তখন CIH ভাইরাস ২৬শে এপ্রিল তারিখে ঝামেলা করতো, কিন্তু সেটা এপ্রিল মাসই ছিলোনা। টেকনিশিয়ান পাঠানোর বদলে আমি নিজেই যাই উনার অফিসে। গিয়ে দেখি C ড্রাইভে প্রায় কিছুই নেই, কিন্তু সেটা CIH ভাইরাসের কাজ না, CIH ধরলে কোন ফাইলই দেখাতোনা। জানতে চাইলাম পিসি বন্ধ হয়ে যাবার আগে কি করেছিলেন। উনি বললেন পিসি বন্ধ হয়ে যাবার আগে উনি C ড্রাইভ ক্লিন করছিলেন সব অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিট করে করে, উইন্ডোজ চলার জন্য প্রয়োজনীয় অনেক ফাইল তিনি জঞ্জাল ভেবে ডিলিট করে দেন, ফলে এই বিপত্তি।
বাসায়ঃ
১) বাসায় কম্পিউটার নিয়েছি সপ্তাহ খানেক। একদিন বিকেলে বাসায় ফিরছি কাজ থেকে, মোড়ের কম্পিউটার কম্পোজের দোকান থেকে শাহীন ভাই ডেকে নিয়ে এক প্রকার জোর করে কোক, মোগলাই পরোটা, সিগ্রেট খাওয়ালেন, উপলক্ষ্য জানতে চাইলেন বললেন "আরে খান তো ভাইজান, কারন পরে কইতাছি"। আমি ভেবেছিলাম হয়তো উনার জন্মদিন, কাজেই অন্তত উইশ করা উচিৎ। কিন্তু উনি সেটা না বলা পর্যন্ত উইশ কিভাবে করি? যাই হোক, খাওয়া শেষ হলে উনি আমার হাতে ১২০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললেন "আমাগোরে খাওয়ানির লিগগা ধন্যবাদ। অহন বাসায় যান গা"। আমি তো অবাক !! ব্যাটার মাথা ঠিক আছে তো? আমার অবাক চোখের দিয়ে তাকিয়ে হাসতে হাসতে খুলে বললেন ঘটনা। আমি বেড়িয়ে যাওয়ার পর আমার মা আমার ঘর পরিস্কার করতে গিয়ে মাউসটা নাড়িয়ে ফেলেন। কম্পিউটার বন্ধ করে যেতে ভূলে গিয়েছিলাম বলে মনিটরে স্কিন সেভার চলছিলো। মা মাউস নাড়ানোর পর স্কিন সেভারটা চলে যেতেই মা ভয় পেয়ে যান। ভাবেন তিনি হয়তো কিছু নষ্ট করে ফেলেছেন, তাই ওই দোকান থেকে শাহীন ভাইকে ডেকে আনেন যাতে ছেলে ফিরে এসে নতুন কম্পিউটার নষ্ট দেখে রাগ না করে বজ্জাত শাহীন ভাই কায়দা করে স্কিন সেভার আবার এনে দিয়ে আমার সহজ সরল মা'র কাছ থেকে দুশ টাকা নিয়ে এসে এই খাওয়াদাওয়ার কাহিনীটা করেছেন
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:০৮