গত শনিবার সন্ধ্যার ফ্লাইটে নিউ জিল্যান্ডের বিখ্যাত শহর অকল্যান্ড বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে দিন পাচেঁক থেকে গত বৃহঃবার রাতে সিডনী ফিরেছি। প্রচন্ড ক্লান্ত থাকায় রাতে নেটে না বসে ঘুমিয়ে পড়েছি, পরদিন সকালে আবার অফিস ছিলো। শুক্রবার অফিস থেকে ফিরেই বিছানায়। প্রচন্ড জ্বর! শনিবার সারাদিন বাসায় বসে বিশ্রাম নিতে হয়েছে। একটু আগে ঘুম থেকে উঠে পিসি খুলে নেটে লগিন করলাম। গায়ে এখনও জ্বর আছে কিছুটা। মনিটরের দিকে তাকাতে পারছি না। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আর সেই সাথে প্রচন্ড মাথা ব্যথা তো আছেই!
এখন আসল কথায় আসি, এইকথা আমি সেদিনই বহুবার বলেছি, এখনও বলছি, টিয়া নামের কোন নারী বা পুরুষের সাথে আমার কখনো কোথাও চ্যাট হয়নি। ব্লগের টিয়া নামের একজন নারী নিকের ব্লগার আমার পোস্টে প্রায়ই এসে টুকটাক কমেন্ট করে যেত। তার সাথে কথা বার্তার সীমানা ঐটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিলো। ব্লগের বাইরে এই নিকটির সাথে কখনোই আমার কোনরুপ যোগাযোগ হয়নি।
আমার ইয়াহু আই ডি দিয়ে যে কনভারসেশন দেখানো হয়েছে, সেগুলোর একটা বর্ণও আমার লেখা নয়। যে ব্যক্তির ছবি এবং ভিডিও দেখানো হয়েছে সেই ব্যক্তিটিও আমি নই। গতবছরে আমার নিক নিয়ে যেভাবে একটা নাটক সাজানো হয়েছিলো, এটা স্রেফ সেইরকমই একটা নাটক বৈ আর কিছু নয়।
একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করেছিলাম, একজন নতুন, অপরিচিত এবং খুবই অনিমিয়মিত একজন ব্লগার নারী নিকে কিছু স্ক্রীনশট আর ছবি নিয়ে পোস্ট দিলো আর তাতেই পুরো ব্লগের সবাই সেটা নিয়ে মেতে উঠল! সেটা নিয়ে একের পর এক মুখরোচক পোস্ট দিতে লাগল, কমেন্ট করতে লাগল! (আমার এই পোস্টা দেয়ার পরেও এই ব্যাপারটি ব্লগের সবাই আবারো দেখতে পাবে। আমার অভিজ্ঞতা তাই বলে।) একটি নারী নিকে বোকা বানানো কতটা সোজা, সেটাও দেখা হয়ে গেল।
প্রায় ১৪ মাস ধরে এই ব্লগে ব্লগিং করছি। এই দীর্ঘ সময়টাতে বহু মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে এখানে। কিন্তু, কোন মেয়ের ব্লগে গিয়ে কোন বাজে বা অশ্লীল কথা বলেছি, অথবা আমার কোন পোস্টে কোন মেয়ের কমেন্টের রিপ্লাই বাজে বা অশ্লীলভাবে দিয়েছি. এমন কথা কেউ বলতে পারবেনা। বরং অনেক মহিলা ব্লগার তার পোস্ট বা কমেন্টে আজে বাজে বা কটু ভাষা ব্যবহার করেছেন, আমি সেগুলো দেখামাত্র সেটার প্রতিবাদ করেছি। এমনকি গত ১৪ মাসে আমি একটা ১৮+ পোস্টও দেইনি। আমার কোন লেখায়ও কেউ কোনদিন বিন্দুমাত্র অশ্লীলতাও খুজেঁ বের করতে পারেনি। ইয়াহু বা এম এস এন ম্যাসেনজারেও আমার অনেকের সাথে কথা হয়। তাদের সাথেও কখনো কোনদিন অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেছি বা "ভিডিও ভালবাসা বাসির" প্রস্তাব দিয়েছি, এমনটাও কেউ বলতে পারবে না। আমি যদি টিয়া নামক ব্লগারটির দাবীতে সত্য হতাম, তাহলে আমার সেই রুপটা ব্লগে বা ম্যাসেনজারে গত ১৪ মাসে একটিবারের জন্য হলেও প্রকাশ পেত। কিন্তু কখনো পায়নি। কারন আমি তেমন নই। কখনো ছিলামও না।
সেই আমাকেই যদি এহেন লজ্জাকর এবং ঘৃণ্য অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেটা নিতান্তই হয়রানিমূলক বৈকি!
শুধু তাই না, আমি নাকি আবার তাকে কিসব বলে হুমকিও দেখিয়েছি। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার!!! একজন ব্লগার আমাকে জানিয়েছিলো, টিয়া নামক ব্লগারটি নাকি সেদিন রাতেই ২য় পোস্ট দিয়েছিলো আরো স্ক্রীনশট নিয়ে। কিন্তু আপসোস, সেদিন আমি ততক্ষনে লগাউট করে ফেলিছিলাম। তাই আমি তাকে আরো কি কি বলেছিলাম, সেটা আর আমার জানা হলো না!
টাইটেল পোস্ট ঃ যেভাবে নাটকের স্ক্রীপ্টটা লেখা হয়েছিলোঃ
এটা বলার আগে অনেক পুরনো একটা বাংলা সিনেমার ঘটনা বলি সংক্ষেপে। মুভির নামটা ভুলে গিয়েছি। বাকীটুকু মনে আছে। নায়ক সালমান শাহ গ্রামের অত্যাচারী আর নারীলোলুপ চেয়ারম্যান হুমায়ূন ফরীদির বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার। বাংলা মুভির নায়কদের যে যে গুন থাকার কথা সবই সালমানের ছিলো যার ফলে গ্রামের সবাই তাকে ভাল পায়। ভালবাসে। একিদন গ্রামের এক মেয়েকে অপহরন করার সময় নায়ক হাতে নাতে ভিলেনকে ধরে ফেলে। সেটা জানা জানি হয়ে যায় পুরো এলাকায়। সবাই ছি ছি করতে থাকে। কারন ভিলেন হলেও সমাজে একটা ভালো মানুষের মুখোশ ছিলো ফরীদির। সেটা সালমান শাহ খুলে ফেলে। সেই থেকে ফরীদি সালমান শাহের পেছনে উঠে পড়ে লেগে যায়। একদিন সুযোগ বুঝে তাকে এক নারী কেলেংকারীতে ফাসিঁয়ে দেয়া হয়। সালমান শাহকে গ্রামের সবার সামনে প্রকাশ্যে কোমড়ে দড়ি বেধেঁ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আর সবাই তাকেই এবার ছি ছি করতে থাকে। এতে ফরীদির দুইটা লাভ হলো। এক. পথের কাটা দূর। এখন সে ইচ্ছেমত লম্পটগিরি করতে পারবে। দুই. তার কাধেঁর অপবাদটা এখন তার শত্রুর ঘাড়ে। তাই সমাজে তার হারানো ইমেজটা সে আবার ফিরে পায়।
ঠিক এই স্ক্রীপ্ট দিয়েই আমাকে নিয়ে করা নাটকটি লেখা হয়েছে।
তবে এইখানে কে নায়ক আর কে ভিলেন, সেইটা পুরান এবং সচেতন ব্লগাররা ভালোই বুঝতে পেরেছেন বলে আমার মনেহয়! নিজের কাঁধের বোঝা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে আমার মুখে চুনকালি মেখে ব্লগছাড়া করার যে নীল নকশাটা আকাঁ হয়েছিলো, সেটা নীলই থেকে থেকে গেল!!! বাস্তব হলো না!
আমার ডিফেন্সঃ আমি গত শুক্রবার রাতে ইয়াহুতে মেইল করে জানিয়েছি যে আমার আই ডিটি হ্যাক করা হয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা নিতে। তারা ফিরতি মেইলে জানতে চেয়েছে যে আই ডি টি যে আমারই সেটার প্রমান দিতে। আমি রিপ্লাই দেবার পর তারা জানিয়েছি যে একাউন্টটি সাময়িকভাবে ফ্রিজ করে দেয়া হয়েছে এবং এটাকে কেউ লগিন করার চেষ্টা করলে তারা সেই আই পির উপর নজরদারী করবে। আমি নিশ্চিত হয়ে অকল্যান্ড চলে গিয়েছি। বাসায় ফিরে এসে আমি সরাসরি "ইয়াহু সেভেন" (ইয়াহু অস্ট্রেলিয়াকে এখানে একনামে 'ইয়াহু সেভেন' বলা হয়।)-টিমের সাথে সরাসরি ফোনে আলাপ করে জানতে পেরেছি কিছু মূল্যবান তথ্য। বাংলাদেশের দুইটি আই পি থেকে আমার একাউন্টে গত প্রায় তিন মাস যাবৎ বেশ কয়েকবার ঢোকা হয়েছে। (এমনকি, সোমবার রাতেও তারই একটা আই পি থেকে আমার একাউন্টে আবার প্রবেশ করার চেষ্টা করা হয়েছিলো বলে তারা জানায়। অথচ সোমবার রাতে আমি নিউ জিল্যান্ডে ছিলাম। এবং যতদিন নিউজিল্যান্ড ছিলাম, একবারের জন্যও ইয়াহুতে ঢোকা হয়নি। শুধু মোবাইল থেকে উইন্ডোজ লাইভ ম্যাসেনজার ব্যবহার করা হয়েছিলো। ঠিক একই সময়ে আমার ব্লগের এ্যাকাউন্টেও প্রবেশ করার চেষ্টা করা হয়েছে। পাসওয়ার্ড রিসেট করতে চেয়ে আমার অন্য একটি মেইল সার্ভিস প্রোভাইডারে একটি মেইল এসেছে। কিন্তু ঢুকতে পারেনি। ইয়াহুর চেয়ে সামু ব্লগের সাইট সিকিউরিটি কি তাহলে বেশী হয়ে গেল নাকি! আমি যখন নিউ জিল্যান্ডে, তাহলে তখন কে বারবার আমার ব্লগে আর ইয়াহুর এ্যাকাউন্টে অবৈধ প্রবেশ করার চেষ্টা করছিলো?) আই পি দুটো হচ্ছে -- 193.167.45.194 ??? 113.27.107.129 (এবার তো ইয়াহু আমাকে হেল্প করেছিলো বলে অন্তত আই পিটা জানতে পেরেছি। এইরকম হেল্প যদি আমাকে সামু মডারেটরা গতবার করতেন, তাহলে তখনও আমার নিকগুলার আই পি জানতে পারতাম।)
এখন, টিয়ার আই পির সাথে এর কোন একটি মিলে যায় কিনা, সেটাই বিবেচ্য। এর আগেও আমার নিক নিয়ে ঝামেলার সময় আমি ব্লগ কর্তৃপক্ষের কাছে আই পি চেক করার আবেদন জানিয়েছিলাম। তারা কর্ণপাত করেনি।এবার করে কিনা, কে জানে! এখন, এ্যকাউন্টি যদি ফ্রিজ করে না দেয়া হতো, তাহলে হয়তো আরো কিছু মজাদার স্ক্রীনশট দেখতে পেতো ব্লগাররা!! আর আমার পিসির সামনে বেশ কিছুদিন না থাকার সুযোগটিও যে নেয়া হবে, এটা সহজেই অনুমেয়।
হ্যাক হবার বিষয়টি আমার প্রথমেই মাথায় এসেছিলো। কিন্তু লোকাল ফাইভের পোস্টে সেটা বেমালুম চেপে গেছি। ফটোশপে স্ক্রিনশট বানানোর মত আবল তাবল বকে নাট্যকারকে তৃপ্ত থাকার সুযোগ দিয়েছি। পরে প্রমান সমেত পোস্ট দেয়াই মুখ্য উদ্দেশ্য ছিলো। তাছাড়া, তখন হ্যাকের কথা বল্লে হয়ত অনেকেই বলতো- প্রলয় খালি একই গান গায়। ওর নিকই খালি হ্যাক হয়! কিন্তু বাজনা যদি একই হয়, তবে গানও একই গাইতে হয় বইকি! গতবার করা হয়েছে ব্লগের নিক, এবার করা হলো ইয়াহুর নিক, ঘটনা বেশ পরিস্কার।
সে সময়গুলোতে ঢোকা হয়েছে বা ঢোকার চেষ্টা করা হয়েছে, সে সময়টাতে হয় আমি অফিসে, নাহয় ঘুমাচ্ছি। মোটকথা পিসির সামনে নেই। তবু মাঝে মাঝে লগড ইন থাকা অবস্থায়েও হয়ত ঢোকা হয়েছে। তাই হয়তো আমি সিডনীতে বসে ইয়াহু থেকে বারবার অটো সাইনাউট হয়ে যাচ্ছিলাম। তখন ব্যাপারটাকে পাত্তা দেইনি। ভেবেছি আমার পিসি বা নেটের প্রবলেম! এখন বুঝতে পারছি ঘটনা আসলে কি ঘটেছিলো।
এখন আমি যদি বলি, বাংলাদেশ থেকে আমার আই ডি দিয়ে ইয়াহু ম্যাসেজারে প্রবেশ করে টিয়া নামক একটি বানানো আই ডিতে চ্যাট করে সেটার কনভারসেশন আর্কাইভে রাখা হয়েছে এবং সেটারই স্ক্রীনশট সবাইকে দেখানে হয়েছে, তাহলে কতটুকু অবান্তর চিন্তা করা হবে? ঘটনা খুব সম্ভবত এটাই ঘটানো হয়েছে এবং বলা বাহুল্য সবাই সেটা একবাক্যে বিশ্বাস করেছে!
এক্ষেত্রে কিন্তু দোষ সেটা নয়। কারনটা হলো, একবিংশ শতাব্দির এই ভার্চুয়াল জীবনে একটা নিক বা একটা আই ডির অনেক ক্ষমতা! সেটা যেই ব্যবহার করুক না কেন, সেটা দিয়ে করা সমস্ত কাজের দায় সেই নিকের মালিকের ঘাড়ে বর্তানো খুবই সোজা। এবং তারচাইতেও দুঃখজনক এবং ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, সবাই তাকেই প্রকৃত অপরাধী ভাববে!
সেইসাথে অনেকে তখন বলতে লাগল, আমার নির্লিপ্ততাই ঘটনার সত্যতা প্রমান করে। কিন্তু এই ব্যাপারটিও ভ্রান্ত। আমি নির্লিপ্ত কখন ছিলাম? আমি চুপ ছিলাম না। আমি গত শুক্রবার বিকেলে পোস্ট দেখার সাথে সাথে টিয়া এবং ফিউশন টকের পোস্টে প্রচুর কমেন্ট করি। সেই রাতেও করি, প্রচন্ড ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও! তবু যখন এই কথা বলা হল, তখন বুঝেছিলাম ব্লগের কিছু কিছূ মানুষ আছে, যাদের কথাকে খুব একটা পাত্তা দেয়ার কিছু নেই। সেখানে আমাকে যথেষ্ঠ প্রশ্নবানে বিদ্ধ করা হয়। সবারই জবাব ঠান্ডা মাথায় দেবার চেষ্টা করেছি। ব্লগে এর আগে কখনো এত মাথা ঠান্ডা রাখেনি। আর সে পরিস্থিতে হয়ত খূব বেশী একটা লোকের তেমনটা পারার কথা নয়। যাইহোক, তারা সেগুলো দেখেনি এবং আমি ক্লান্ত বলে চলে যাবার পরও আজ দেখলাম সেখানে অনেক কথাই বলা হয়েছে! কিছু কিছু ব্যাপার খুব হাস্যকর এবং কিছু খুবই বিরক্তিকর! আর ঘটনা যদি সত্যি হয়, তাহলে অবশ্যই আমি অপরাধী। আর একজন অপরাধীকে তার অপরাধের কথা নিজের আসল নিকে জিজ্ঞেস করার সাহসটুকুও অনেক ব্লগারের সেদিন ছিলো না!! আনকোড়া নতুন, এককথায় "আগাছা" টাইপ কিছূ নিকের সাহায্যে বলতে হয়েছিলো। সেসব নিকে এসে আমার সাথে কথা বলছিলো। আপসোস!! তখন বুঝতে পারলাম যে, সেদিন যারা চেচামেচিঁ করেছিলো, তার সিংহভাগ ব্লগাররই কবুতরের কলিজাধারী। একটা ফালতু হুজুগ নিয়ে ফালতু ক্যাচালের সৃষ্টি করার চেষ্টা করা ছাড়া আর কোন কাজ নেই তাদের।
আর আমি পোস্ট তখন কেন দেই নি সেটাও বহুবার বলেছিলাম। তারপরও এটা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। একই প্রশ্নের উত্তর একই জাগায় অযথা বারবার দিতে ভালো লাগার কথা নয়। আবার অনেকেই বলেছেন আমি নাকি এটেনশন সীকার। কথাটা দেখে খুব হাসি পেয়েছিলো সেদিন। না চাইতেই যে পরিমান এটেনশন পেয়েছি, "সীকার" হলে যে কি হতো!!!!
প্রথমে সবারই এক বক্তব্য ছিলো, আমি যে কাজটা করেছি, সেটা ভালোয় ভালোয় স্বীকার করে নেই। যেন, আমি কাজটা না করলেও জোর করে আমাকে দিয়ে স্বীকার করিয়ে ছাড়বে। কিন্তু আমার কথা হলো, যে কাজ আমি করিনি, সেটা আমি কেন স্বীকার করবো?
এবার আমার ছবির ব্যাপারে বলি। ব্লগের কোথাও হয়তো আমি বলেছিলাম যে আমার শ্মশ্রু রয়েছে। যার ফলেই হয়ত একজন শ্মশ্রু ওয়ালা ব্যক্তির ছবিকে আমার ছবি বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আপসুস, আমার যে ফ্রেন্চ কাট শ্মশ্রু !
আমার ছবি ব্লগের কোথাও কখনো দিবোনা, এটাই আমার দৃঢ় ইচ্ছা ছিল। একটি ভাচুর্য়াল চরিত্রের মজা পুরোপরি নেয়ার জন্যই এমনটা ভেবেছিলাম। তাছাড়া গর্ডন ফ্রিম্যানকে আমি আমার আইকন বানিয়ে ফেলেছি ব্লগে। আর আমার কি এই বিবেচনাবোধটুকু নাই যে, যেখানে ব্লগের কোথাও কোন ছবি নাই আমার সেইখানে ব্লগেরই একটা মেয়েকে দুইদিনের পরিচয়ে আমার ছবি দিয়ে দেব! শুধু তাই না, আবার ভিডিও চ্যটও করব!! ব্যাপারটা কারো কাছেই অস্বাভাবিক লাগেনি!
গত সপ্তাহে কিছু ব্লগার আমার ছবি দেখতে চেয়েছেন। এসব কারনে সংগত কারনেই আমি রাজি হইনি। ভেবেছিলাম খুব বেশী বাধ্য না হলে আমার ছবি দেখাবো না। এখন এটাকে জরুরী মনে করছি।
আমার ছবি যারা দেখতে চেয়েছেন, তাদের ভেতর যাদেরকে বিশ্বাস করি যে তারা আমার অনুরোধ রাখবেন, তাদের কাছে আমি মেইল করে আমার ছবি পাঠিয়ে দিবো। তার সেটা দেখে ব্লগে এসে বলুক যে ঐ লোকটার সাথে আমার চেহারার বিন্দুমাত্রও মিল রয়েছে কিনা।
হাসিব ভাই আর সাঝবাতির রুপকথা ওরফে অমিত, এই দুইজন ব্লগার ইচ্ছে করলে তাদের মেইল ঠিকানা কমেন্টর ঘরে দিতে পারেন। ফিরতি মেইলে আমার ছবি তাদের কাছে চলে যাবে। সেইসাথে আমি তাদেরকে অনুরোধ করছি, আমার ছবিটি যেন কোন অবস্থাতেই ব্লগে প্রকাশ করা না হয়। কারন গত সপ্তাহে টিয়ার দেয়া ছবিটিকে অনেক ব্লগার অনেকভাবে হেয় ও লান্চিত করেছে। ছবিটি সবার পোস্টে পোস্টে গিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি সেই ছবিটি দিয়ে একটি উদ্দেশ্যমূলক নিকও খোলা হয়েছিলো। আমি চাই না আমার ছবি দিয়ে এইরকম কিছু হোক। আশাকরি, হাসিব ভাই আর সাঝু ভাই আমার অনুরোধ রাখবেন, এই বিশ্বাসেই তাদেরকে আমার ছবি দিবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আমার যা বলার ছিলো বলে দিলাম। বিশ্বাস-অবিশ্বাস বা গ্রহনযোগ্যতার প্রশ্নের ব্যাপারটা পুরোটাই আপেক্ষিক। তবে গতবারের নিক স্ক্যান্ডালের মত আমি অতটা অসহায় নই। কে কিভাবে আমার কথাগুলোকে নিলো সেটা ভেবে আমি অস্থির হবো না আর আগের মত। স্ব বক্তব্য পেশ করার পরও এই সাজানো স্ক্যান্ডালটাকে যদি লোকে গুরুত্বের সাথে নেয়, অন্তঃত আমার তাতে বিচলিত হবার কোন কারন খুজেঁ পাইনা। কিন্তু আমার কাছের মানুষেরা যদি আামকে ভুল বুঝে, তাহলে সেটা অতি অবশ্যই আমার জন্য মন খারাপের একটা কারন হবে। আমি সেটা কিছুতেই চাই না।
নাটকের যে অংকগুলোতে নাট্যকার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেঃ
নাটকের কিছু কিছু অংক বেশ দারুন হয়েছে। যেমনঃ
১. জাগা মত স্ক্রিনশট নিয়ে সেটা আবার পিপিতে বসিয়ে দেয়া হয়েছে ডিটিইলড ইমেজ পাবার জন্য।
২. সরাসরি ব্লগে কোন তথ্য প্রমান দেয়া হয়নি। থার্ড পার্টি সাইটের সাহায্য নেয়া হয়েছে।
৩. পোস্ট ছাড়া হয়েছে বৃহঃবার রাতে। অথচ শেষ কনভারসেশন দেখানো হয়েছে তারো তিন-চারদিন আগে। তাহলে পোস্টা দিতে কেন এতদিন দেরী করা হলো? তার কারন হচ্ছে পরদিন ছুটি বলে ব্লগে বৃহঃবার রাতে বেশী ব্লগার থাকেন। নাট্যকার ব্লগের এই ম্যাস ট্রাফিকটাকে টার্গেট করেছেন।
৪. পুরানো দুজন ব্লগার দম্পতি, প্রতিফলন এবং বরুনাকে কৌশলে জড়িয়ে নাটকের অংক সাজানো হয়েছে, যাতে করে তারা প্রয়োজনের সময় এসে ঘটনার সত্যতার স্বাক্ষ্য দেন। নাটকের এই অংকটিকে সত্যি করার জন্য ইয়াহুর টিয়া নিক দিয়ে তাদের সাথে সত্যি সত্যিই যোগাযোগ করা হয়েছে।
৫. তথ্য প্রমান হিসেবে স্ক্রীটশট এবং ছবির ব্যবহার।
৬. পাবলিক সাপোর্ট পেতে একটি নারী নিকের ব্যবহার।
নাটকের যে যে অংকে ভুল ছিলোঃ
নাটকের কিছু অংকে যে ভুল ছিলো সেটা আমি সেদিনই বলেছিলাম। এখানে আরো কিছু দিলামঃ
১. খুব সম্ভবত টিয়া নিকটি বানানোই হয়েছিলো আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করার উদ্দেশ্য নিয়ে। সেক্ষেত্রে নাটকের প্রথম ভুলটি হয়েছে নিক হিসেবে টিয়াকে ব্লগে ঠিকমত হাইলাইট না করতে পারা। অনেকে খেয়াল করে থাকবেন যে, এই নিকটির কমেন্টগুলো স্বাভাবিক ছিল না। আমার পোস্টেও সে এমন সব কমেন্ট করেছে যে যেগুলো দেখলে যে কেউ-ই ভাববে আমাদের ভেতর গভীরতর সম্পর্ক রয়েছে। অথচ, সেই কমেন্টের আগে সে জীবনেও আমার ব্লগে কমেন্ট করেনি, আমিও তার ব্লগে করিনি, আর ব্লগের বাইরে যে কোন যোগাযোগ ছিল না সেটা তো আগেই বলেছি। (ব্লগার "আমিই রুপকের" পোস্টে তার এইরকম আরো কমেন্ট দেখা যাবে।) তাছাড়া, ব্লগে এসেই সবাইকে তুমি করে বলা, ন্যাকামো করা, ব্লগের মাথায় মেইল ঠিকানা টাঙ্গিয়ে রাখা, ইত্যাদিও আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি। এইরকম সন্দেহজনক এবং আনকোড়া নতুন এবং অনিয়মিত একটা নিককে দিয়ে পোস্ট দেয়াটা ছিল নাট্যকারের বিরাট ভুল।
২. প্লটের দুর্বলতাঃ
পোস্টে একাধিকবার উল্লেখ ছিলো আমার প্রতারনার বিষয়টি। কিন্তু কৃত্রিম চ্যাট আর্কাইভ আর অন্যলোকের ছবি দিয়ে কিভাবে আমার সাথে তার প্রতারনার অভিযোগটি প্রমান করার চেষ্টা করতে চেয়েছে সেটা আমার বোধগম্য নয়। পুরো ঘটনাকে যদি সত্য হিসেবে ধরে নেয়া হয়, তাহলে কিভাবে এখানে আমি তার সাথে প্রতারনা করলাম? আমার ছবি এবং চ্যাট আর্কাইভ ব্লগে প্রকাশ করে দিয়ে উল্টো সেই-ই তো আমার সাথে প্রতারনা করল। বরং, ব্যাপারটা যদি এমন দেখানো হতো যে, তার সাথে আমি ভালবাসার কথা বলছি, আরেকটি মেয়ের সাথে আমি ঠিক একইভাবে ভালবাসার কথা বলছি, তাহলে দুই মেয়ের সাথে কথপকথনের হিস্টরি পাশাপাশি স্ক্রীনশট দিয়ে দেখালে সবাই সহজেই বুঝতে পারত যে আমি টিয়া নামক ব্লগারটির সাথে প্রতারনা করেছি। কারন, এইরকম ভালবাসার কথা আমি সব মেয়েকেই বলে বেড়াই। কিন্তু স্ক্রীনশট বলছে যে, আমি তার সাথে শুধু ভালবাসা বা প্রাপ্তবয়স্ক কথাই বলেছি, এটা কিভাবে আমার "প্রতারনাকে" প্রমান করে? একটা ছেলে তো একটা মেয়েকে এমন কথা বলতেই পারে। এটা প্রতারনা হবে কেন? সুতরাং, এটাকে আমরা আলোচ্য নাট্যাংশের একটা বড় রকমের ফাকঁ বলতে পারি।
৩. আমার হুমকির স্ক্রীনশটটা না দেখানো। এখন, টিয়া নামক ব্লগারের ভাষ্যমতে, যদি এমন দাবী করা হয় যে, আমি তার ছবি ব্লাকমেইল করার হুমকি দিয়েছি। এক্ষেত্রে কিছুটা প্রতারনার অভিযোগের সত্যটা প্রমান করা হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, অভিযোগকারী এত এত প্রমান নিয়ে স্ক্রীন শট দেখালো, যেগুলোর কোনটাই তার অভিযোগের সত্যটা প্রমান করে না। অথচ যেটা তার অভিযোগ প্রমান করে, মানে হচ্ছে আমি যে তাকে হুমকি দিয়েছি, সেটার কোন স্ক্রীনশট সে দেখাতে পারেনি। যতদূর মনে পড়ে, টিয়া তার পোস্টের একেবারে শেষের লাইনে এ কথাটি বলেছে। এখন কথা হচ্ছে, যদি আসলেই তেমনটা হয়ে থাকত, তাহলে তার তো উচিৎ ছিলো এ কথা পোস্টের প্রথমে বলা এবং তারচাইতেও গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার হচ্ছে, "হুমকি দেবার" একটা স্ক্রীনশটও মিডিয়া ফায়ারে আপলোড করা। যেটা আমার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশী কাজ করত। কারন ইন্টারনেটে হুমকি প্রদান করা সাইবার আইনে একটি দন্ডনীয় অপরাধ। সুতরাং, সেই স্ক্রীনশটটি দিলে আমাকে আরো ভালভাবে ফাসানোঁ যেত। কিন্তু টিয়ার প্রথম পোস্টে তো নয়ই, এমনকি ২য় পোস্টেও এমন কোন স্ক্রীনশট ছিল না বলে জানা গেছে। কিন্তু এটা না দেয়ার কারটা কি ছিলো তাহলে?
ক. হতে পারে নাট্যকার হুমকির স্ক্রীনশটটা তৈরী করতে ভুলে গেছেন।(পরে আবার মনে পরেছিলো হয়ত। যার ফলশ্রুতিতে গত সোমবার রাতে আরেকবার চেষ্টা করা হয়েছে আমার ইয়াহু আই ডি তে প্রবেশ করতে। যাতে করে ভুলে যাওয়া সেই স্ক্রীনশটটা আমার আই ডি দিয়ে করিয়ে নিয়ে ৩নং পোস্টটা দেয়া যায়।)
খ. এটা একটা সাজানো নাটক, এটা তারই প্রমান।
এই আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হলো যে, "প্রলয় আমার সাথে প্রতারনার করেছে, আর কেউ যেন এইরকম প্রতারনার ফাদেঁ না পড়ে সেইজন্য পোস্ট দিলাম" বলে যে কারনটি বলা হয়েছিলো পোস্টে, এই কথাটার মূলত কোন ভিত্তি নাই। আর এটা যে পুরোটাই একটা পরিকল্পিত নাটক এবং সেই কথাটা ছিলো সেই নাটকটাকেই মন্চস্থ করার একটা দুর্বল অযুহাত মাত্র, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা এটাকে প্রকৃতপক্ষে নাটকেরই একটা দুর্বলতা হিসেবে ভাবতে পারি। অন্ততঃ পোস্ট অবতীর্ন করার অযুহাতটা নাটকে আরেকটু শক্তভাবে তুলে ধরা যেত।
৪. সব তথ্যপ্রমান একবারে দিয়ে দেওয়াঃ
এটা না করে একটু একটু করে তথ্য দিয়ে কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন ছবি আর চ্যাট হিস্টরি দিয়ে দিলে নাটকটা আরেকটু জমতো। সব একবারে দেবার ফলে অনেকেই নাটকটাকে সেটাপ বলতে পারছে।
৫. চ্যাট হিস্টরির লেখাগুলো যে আমার নয়, এবং সেখানে কি কি ভুল ছিলো সেটা আগেই বলেছি। আর কিছু কিছু অংশ ছিলো খুবই আপত্তিকর, সেটা যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে, সেটা যে কেউ দেখলেই বুঝবে। সামুর ব্লগাররা কেন বুঝে নাই, এইটাই আমি বুঝতে পারছি না। চ্যাটের লেখাগুলো ভালকরে পড়ে বুঝলাম যে, কিছু কিছু জাগায় বেশ ভাল করে বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করা হয়েছে যে, সেগুলো আমারি লেখা। যেমনঃ এক জাগায় আমার নিক দিয়ে বলানো হয়েছে আমার ২০ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকার ব্যাপারটি। এটা আমি প্রায়ই ব্লগে বলি। প্রথম বলেছিলাম ফিউশন টকের সেই নিকের প্রথমদিকের একটা পোস্টে, জানাপুকে উদ্দেশ্য করে। এই ব্যাপারটি নাট্যকার খেয়াল করেছেন এবং তার নাটকে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তিনি এখানেও তিনি একটা ভুল করেছেন। সেটা হচ্ছে, আমি সেদিন আসলে তাকে বলেছিলাম - ২০ হাজার মাইল। কিলো মিটার নয়। দুটার মাঝে পার্থক্য আছে।
৬. বস্তাপচাঁ বাংলা সিনেমার ডায়ালোগঃ-
নাট্যকার খুব সম্ভবত বাংলা সিনেমার ভক্ত। কারন তার স্ক্রীপ্ট এবং ডায়ালোগ মেকিংয়ে তার প্রমান পাওয়া যায়। যেমনঃ আলাপ চারিতায় রোমান্টিকতা দেখানো হয়েছে, মান -অভিমান দেখানে হয়েছে। নাট্যকার রসিক ছিলেন বটে! কিন্তু বাংলায় লেখা লাইনগুলো পড়ে সত্যিই ভীষন হতাশ হয়েছে। এইরকম বস্তাপচাঁ সিনেমার ডায়ালোগ দিয়ে আমি একটা মেয়েকে তো প্রপোজ করার কথা ঘুমের ঘোরেও ভাবতে পারি না। বোঝা গেল, নাট্যকারের সাহিত্যবোধের বেশ ঘাটতি রয়েছে। সেই কথাগুলো আমার নিক দিয়ে আরো সুন্দর করে বলানো যেত।
তাছাড়া চ্যাটের ভেতর খুব ঘন ঘন আদি রসাত্নক বিষয়গুলো এসেছে। ন্যাচারাল চ্যাট হলে এটা এত ঘন ঘন আসার কথা ছিল না।
৭. টিয়ার কোন পোস্ট বা কমেন্টে অশুদ্ধ ভাষা যেমন “খাইছি - গেছি” এইসব লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু সেদিনের পোস্টে অনেকেই এ ভাষার ব্যবহার লক্ষ্য করেছেন। যারফলে অনেকে তাকে ছেলে ভেবেছেন। (আমিও ভেবেছি, কিন্তু এখন এই প্রশ্নটাকে বির্তকের উর্ধে রাখলাম)। নাট্যকারের উচিৎ ছিলো আরেকটু গুছিয়ে সুন্দর এবং সাবলীল ভাষায় নাটকটি দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা।
৮. টিয়া নামক ব্লগারটির পোস্ট দিয়েই উধাও হয়ে যাবার ব্যাপারটিও অনেকে খেয়াল করেছেন। এ ব্যাপারটি রীতিমত সন্দেহজনক। পোস্ট দিয়ে পালিয়ে যাবার মানে কি এই নয় যে সে সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন অথবা তার ষড়যন্ত্রের নকশা সবার সামনে প্রকাশ হয়ে যাবার আশংকায় সে শংকিত? এমনকি সে তার পোস্টের কোন কমেন্টরও রিপ্লাই দেয়নি। তার লিংগ নিয়ে প্রশ্নও তোলা হয়েছিলো, তখনও সে সম্পূর্ন নিশ্চুপ থেকেছে!
৯. কিছু সূক্ষ ব্যাপার নাট্যকারের চোখ এড়িয়ে গেছে। যেমন আমার ইংরেজি বানান করে বাংলা লেখার ধরন বা পোস্টে যে ব্যক্তিগত তথ্যগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, সেসবই আমি ব্লগে আমার কোন না কোন কেমেন্টে বলেছি। নাট্যকারের উচিৎ ছিলো এমন কোন তথ্য প্রকাশ করা যেটা আমি ব্লগের কোথাও কখনো বলিনি।
১০. অনেকেই প্রথমদিনেই নাটকটি সাজানো বলে সন্দেহ করেছে। যদিও পুরো ব্যাপারটিই খুব ঠান্ডা মাথায় বাস্তব সম্মত ভাবে সাজানো হয়েছে। আমাকে অপরাধী প্রমানের জন্য চেষ্টার কোন ক্রুটি ছিল না। তবু যদি সেটাকে অনেকে সেটাপ বলে ভাবে সেটা তাহলে নাটকেরই ব্যর্থতা!!
নাটকের সার্থকতাঃ
নাটকের বেশ কিছু অংশ দুর্বল হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নাটক সফল হয়েছে। যেমনঃ একজন নতুন এবং নিয়মিত ব্লগারের সাথে আমার খুব ঘনিষ্ট যোগাযোগ হয়ে গিয়েছিলো। আমরা পরস্সপরকে লিংকসেও রেখে দিয়েছিলাম। কাল তার ব্লগে গিয়ে দেখি আমার লিংকসটি কে মুছে ফেলা হয়েছে। তার একটা পোস্ট থেকে আমার নামটাও মুছে ফেলা হয়েছে। আরেকজন নতুন এবং নিয়মিত ব্লগারের সাথে ঘনিষ্ঠতা না হলেও তার একটা পোস্টে আমার কিছু কমেন্ট ছিলো, কাল তার ব্লগেও গিয়ে দেখি সেখান থেকে মাত্র দুটি কমেন্ট রেখে বাকী গুলা মুছে ফেলা হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, মুছে ফেলা কমেন্টগুলো থেকে সব শেষের কমেন্টটি তার কাছে এতভাল লেগেছিলো যে, সে আমাকে রিপ্লাইতে বলেছিলো যে পোস্ট প্রিয়তে রাখার মত করে কমেন্টও প্রিয়তে রাখা গেলে সে আমার সেই কমেন্টটাকে প্রিয়তে রেখে দিত। আর সেখানে এ ঘটনার পর এই দুইজন ব্লগার এত ভয় পেয়েছে যে আমার চিহ্নও তাদের ব্লগে রাখতে সাহস পায়নি। হা হা। অন্য একটা সোশ্যাল নেটওর্য়াকিং সাইটেও তাকে কমেন্ট করেছি, কিন্তু এখনো কোন রিপ্লাই পাইনি। আরো না জানি কত ব্লগারের এমনটা হয়েছে!! এটা স্বাভাবিক। তাদেরকে দোষ দিচ্ছি না। নিজেকে কেই বা চায় ঝামেলায় জড়াতে? আর আামার ইমেজ যে কিছূটা হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সেটা এটুকুতেই বোঝা গেছে।
আরেকজন ব্লগারের মুখে শুনলাম, আমার খুব প্রিয় একজন ব্লগার, কিছুদিন আগে ব্লগে প্রকাশ্যে আমাকে পারভার্ট টারভার্ট বলে অস্থির!! এইটাও নাটকের সার্থকতা। তার কাছ থেকে যেটা আমি কখনোই আশা করিনি। বেশ চমকপ্রদ হয়েছিলাম খবরটা শুনে, নাটক মন্চস্থ করে অসম্ভবকে যে কতটুকু সম্ভব করা যায়, সেটা ভেবে।
এত লোক থাকতে আমাকেই কেন বারবার বেছে নেয়া হচ্ছে?
এই প্রশ্নটা অনেকের মত আমারো। এই প্রশ্নটা সেদিন টিয়া নামক ব্লগারের পোস্টেও করেছিলাম। কোন জবাব পাইনি। আমি কি এমন পাকা ধানে মই দিলাম, যে নাট্যকার বারবার আমাকে নিয়েই নাটকের অংক রচনা করছেন! এর কিছু কারন হতে পারে যে, আমি তথাকথিত সুশীল নই। মুখের উপর রাজাকার, ছাগু, লুলদের লাথি দিয়ে বসি। আমার সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতার পোস্টেও যদি একটা ছাগু আসে, আমার কবিতার গাম্ভীর্য নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তাকে গদাম লাথি মারতে দ্বিধা করিনা। কোন লুল এসে ছ্যাবলামি করলেও তাকে ছেড়ে কথা বলিনা। তাছাড়া, আমি বিশেষ কোন গ্রুপের সাথেও যুক্ত নই। ব্লগে যখন এসেছি তখন এটিম তাদের কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছে। আর রাশু ভাই বিমা ভাই মানু ভাইদের যে গ্রুপটা আছে, সেখানে একে অপরের বিপদে একজন এগিয়ে আসে। রাশুদাকে কেউ বকা দিলে বিমা ভাই আসবেই। বিমা ভাইকে কেউ কিছূ বল্লে গুলাবি ছুটে আসবেই। রাশু ভাইর সাথে দুরত্ব বাড়ার কারনে তাদের পুরো গ্রুপটার সাথেই দুরত্ব বেড়ে যায়। যদিও এই ব্যাপারটা মিটমাট হয়ে গেছে, তবুও অনেকে ভুলতে পারেনি। আর নতুন ব্লগারদের মধ্যে চাংকু, কাকঁন, সাঝু এদের যে একটা গ্রুপ আছে, সেটাতেও আমি একদমই নিয়মিত না। এইগ্রুপগুলো থেকে বিছিন্ন থাকার ফলে আমাকে স্বভাবতই দুর্বল ভাবা হয়েছে। আর দলবদ্ধ হরিনকে তো আর বাঘ শিকার করে না। দলছুট হরিনকেই করে। প্রয়োজন পড়লে দলছাড়া করে তারপর ঘাড় মটকায়!
ব্লগে অনেকেই আছেন যারা খুব ভাল লেখেন এবং এইসব ক্যাচাল সযত্নে এড়িয়ে চলেন। তারা পারতপক্ষে ব্লগের কোন ঝামেলায় জড়ান না। আমি তেমনটা নই। জামাতীদের লাথি মারায় বা লুল তাড়ানোর ব্যাপারটা আমার লেখালেখিতে আগে খানিকটা বিঘ্ন সৃস্টি করতো। কিন্তু এখন একটুও করে না। অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আবার কিছু লোক আছেন, যারা নিয়মিত ছাগু তাড়ায়, তাদের গালাগাল করে। কিন্তু লেখালেখিতে খুব একটা ভাল নয়। তাদেরকে সবাই এমনিতেই গালিবাজ হিসেবে জানে। সুতরাং, আলাদা করে আর তাদের ইমেজ নষ্ট করার কিছু নেই। কিন্তু এই দুইটার কোনটাই আমার জন্য প্রযোজ্য নয়। তারউপর থাকি একা একা, ছন্নছাড়া। সুতরাং, আক্রমন আসলে সেটা যে আমার উপরই সবার আগে আসবে, সেটা তো অস্বাভাবিক কিছু নয়। আর আগেই তো বলেছি.....কিভাবে কিভাবে যেন ব্লগের খুব বড় একটা শত্রু আমাকে পেয়ে বসেছে।
আমার মত লোকাল্ভাইও কোন গ্রুপের নয়। ছাগু, তিনকুনা আর লুলের বিরুদ্ধে সে কম ক্যাম্পেইন করে নাই ব্লগে। যার ফলে তার নিকও দেদারছে ব্যান খেয়েছে। এখন বেচারা খানিকটা থিতু হয়েছেন। একটা নিকেই নিয়মিত লেখালেখি করে যাচ্ছে। সুশীল টাইপ পোস্ট বা কমেন্ট করে যাচ্ছে। তার আলোচিত নিক গুলোও এখন চুপচাপ। আর তাকে এখন আর আগের মত সেইসব নিয়ে ক্যাম্পেইনও করতে দেখা যায় না। তার বদলে জাতীয় বা সামাজিক জীবনের সমস্যা নিয়ে পোস্টান। এখন আর তার নিকও ব্যান হয় না। মাঝে মাঝে এইসব দেখি আর হাসি। এটা বলার মানে হলো, একা একা বেশীদিন এটা কন্টিনিউ করা টাফ। কিছুদিন পর রণে ভংগ দিয়ে তার মত সুশীল হয়ে যেতে হবে। সে আগে হয়েছে। এখন হয়ত আমার পালা।
আগেও খেয়াল করে দেখেছি যে, ব্লগের একটা গ্রুপ আমার পেছনে লেগে আছে সেই প্রথম থেকেই। তারাই শয়ে শয়ে নিক নিয়ে মাঠে নামে। আমি বুঝতেও পারি কার নিক কোনটা। কিন্তু কিছু বলি না। আর তাদের কর্মকান্ডে একটা জিনিসই ফুটে উঠে, তারা আমাকে চিরতরে ব্লগ ছাড়া করতে চায়। লাভ তো একটা অবশ্যই আছে!
অরপি ভাইকে নিয়ে কিছুদিন আগে যে বাক-বাতন্ডার সৃষ্টি হয়েছেলো, তখনও দেখেছি কিছু এই রকম আগাছা টাইপ নিকগুলোর সক্রিয়তা। তারা পোস্টের পর পোস্ট দিয়ে পাবলিক সেন্টিমেন্ট তাদের ফেভারে আনার চেষ্টা করেছে এবং কিছূটা সফলও হয়েছে। কেউ কেউ তো অরপি ভাইকে ব্যান করার দাবীও তুলেছে। এখন কথা হলো, ব্লগের একেকটা ক্যাচালে এইরকম নিকগুলা কোথা থেকে উদয় হয়? এমনিতে তো দেখা যায় না। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিগুলোকে এইরকম একটা একটা করে টার্গেট করার মানে কি?
সেলিব্রেটিদের নিয়ে কদিন পর পর স্ক্যান্ডাল ছড়ায়। আমি তো আর তা নই। তাহলে আমাকে নিয়ে কেন স্ক্যান্ডাল কেন?
কিছু আস্ফালনঃ
---------------------
পুরো নাটকটি ব্লগে মন্চন্থ হবার সময় আগাছা টাইপ গুটিকয়েক নিকের আস্ফালন চোখে পড়েছে বেশ। আমি কেন পোস্ট দিচ্ছি না- বলে ব্লগারদের কান ঝালা পালা করেছে এই আগাছাগুলা। সবাইকে অধৈর্য করতে পোস্টও কম ছাড়েনি। আর আমাকে নিয়ে করা পোস্ট গুলো গোনায় না ধরলে এই সব নিকগুলার কোন অস্তিত্তই থাকে না ব্লগে। হতে পারে নিকগুলো একই ব্যক্তির। আবার হতে পারে একটা গ্রুপের কিছু লোকের। আবার স্বাতন্ত্র নিকও হতে পারে। আবার এমনটাও হতে পারে যে, সে নিকগুলোর বেশীর ভাগই ছিলো নাট্যকারেরই বিভিন্ন নিক। এমন ধারনাও উড়িয়ে দিতে পারছি না। সুতরাং নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না আপাততঃ।
আবার নাট্যকার স্বয়ং আস্ফালনকারীদের ভেতর আত্নগোপন করে থাকতে পারেন। কিছুই বলা যায় না। তবে নাটকের প্রথম অংক মন্চন্থ করবার সাথে সাথে কিছু কিছু ব্যক্তি বা একই ব্যক্তি বিভিন্ন নিক নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন। যেমনঃ কালপুরুষ (আমার সবচেয়ে পুরনো এবং প্রিয় শত্রু। শুক্রবার ঈদ হলে সবাই যেমন ডবল খুশী হয়, আমার এই স্ক্যান্ডালের ঘটনায় সে এইরকম ডাবল খুশী হয়েছেন বলে দুর্জনেরা তখন ব্লগে বলে বেড়াচ্ছিল!), বহ্নি শিখা, (এটি একটি হিজড়া নিক, এই নিক দিয়ে পর্যায়ক্রমে একজন মেয়ে এবং একজন ছেলে ব্লগিং করেছে বলে জানা গেছে), ড্রাকুলা (আমাকে ভালো চোখে দেখে না, আমার বিরুদ্ধে দেদারছে কুৎসা রটিয়ে বেড়ায় চান্স পেলেই), ঘনাদা ওরফে আরিফুর রহমান ওরফে নিতাই ভট্টাচার্য, (একটা পোস্টে আমি আর নারু একে ইচ্ছেমত পিছন মেরেছিলাম, সেটার ঘা এখনও শুকায়নি বোধহয়, তাই মাঝে মাঝে আহা উহু করে), তুই রাজাকার (এইটা আমাকে এতদিন তুই করে বলে ব্যান খাবার ঠিক আগে আপনি সম্বোধন করে মিনমিন করে কমেন্ট করে গেছে আমার আগে পোস্টে) এবং বিডি আইডল। (বি এন পি ধ্যান ধারনার এই লোকটি যে একসময় রগরগে চটি লিখত বলে সে নিজের মুখে স্বীকার করেছে, সেই লোক যে কি ভাবে আবার আরেকজনের স্ক্যান্ডাল নিয়ে মেতে উঠতে পারে বুঝিনা।) এই চারজনের ব্যাপারটাই ছিলো স্রেফ প্রতিশোধমূলক। কারন, গর্তে পড়লেও চামচিকাও হাতিকে লাথি মারে।
এখনও আঃ খালেক নিকটি দিয়ে আমাকে হ্যারাস করার চেষ্টা করা হয়। এই নিকটি এখন যে পরিচালনা করছে যে হয়ত জানে না যে তার নিকের বয়সটিই তার প্রধান শত্রু। কারন পুরনো ব্লগাররা সবাই জানেন যে, আড়াই বছর আগে রেজিঃ করা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৪১