অনুভূতি গুলো বিক্ষিপ্ত, প্রচন্ড রকম ভাবে বিক্ষিপ্তভাবে ছুটোছুটি করে নিউরনের এ প্রান্ত ও প্রান্তে! প্রবল ও প্রকান্ড কোন স্মৃতিরেখার পথ ধরে হেটে হেটেও এই সংক্রান্ত কোন স্থির এবং সংবেদনশীল অনুভূতির সন্ধান পেলাম না।
প্রাচীনপন্হী দৃশ্যপর্বে কাশফুল, হেমন্ত বিকেল, পুরানো জীর্ণ শার্ট, কেশবতীর একা বসে থাকা আর একটি আকাশ!! বিচ্ছিন্ন এই স্থিরচিত্র গুলো নির্মম ভাবে ব্যার্থ হয়েছে আমায় একটা সুগঠিত অনুভূতির সন্ধান দিতে। অথচ এই দৃশ্যায়নে কখনোই তৃপ্তি মেলেনি ...
অতলান্তিক বিভ্রমে ক্রমাগতভাবে বিক্ষিপ্ত হতে থাকাটা কোন ক্রমেই সুখকর নয়! মস্তিস্ক কিংবা মনোরোগ বিশারদ একজন অবশ্য আমাকে খোলা আকাশ পথ্য হিসেবে দিয়েছেন, সাথে মাঝে মাঝে নিজস্ব একটা নদীর দখল নিতেও বলেছেন নদীতীরে কাশফুলের আধিক্য বাধ্যতামুলক!
স্থিরচিত্র গুলো কোন ক্রমেই নিজস্ব নয়! আমার মস্তিষ্কে কেউ ভুল করে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। বিচ্ছিন্ন কতগুলো দৃশ্যপট এক ফ্রেমের আওতাধীন হচ্ছেইনা! সম্ভবত সেই একলা আকাশ কিংবা কাশফুলের নদী আমাকে নিয়ে যাবে সেখানে, যেখান থেকে যাবতীয় বিভ্রম!
এক বিকেলে গল্প লিখতে বসলাম সম্বল শুধু একটা খোলা আকাশ, একটা নদী। নদীতীরে কয়েকটা গাছ নিজেই বসিয়ে নিলাম, নদীটার নাম দিলাম "অবেলা"! নামটা শুরুতে পছন্দ হচ্ছিলোনা, গল্প লিখার স্বার্থে অবেলায় যেতে যেতে এক সময় ভালো লাগতে শুরু করলো। গল্পের জন্য এখনো কোন চরিত্র ঠিক করতে পারিনি, নাকি গল্প বাদ দিয়ে কবিতা লিখবো? বিক্ষিপ্ত, প্রচন্ড রকম বিষণ্ন কয়েকটি শব্দ দিয়ে ছড়িয়ে দেবো বিষাদ, সবার বিকেল গুলোকে শূন্যতায় আচ্ছাদিত করে দিতে। না থাক নিরাকার বোধগুলো আমার কাছেই বন্দী থাকুক। গল্পের চরিত্র হিসেবে কেশবতী কেউ মোটেই মন্দ হয়না।
রোগ সারাতে প্রায়শই অবেলায় গিয়ে বসে থাকি! গল্পের কেশবতীর সাথে গল্প করি, বিচ্ছিন্ন স্থির চিত্র গুলোকে এক ফ্রেমে নিয়ে আনায় আমার অসহায়ত্ব স্বীকার করি। গল্পের একমাত্র চরিত্র সেই কেশবতী আমার আমির বন্ধু হয়। তার সাহায্যে আরো কিছু স্থিরচিত্র যোগ হয় দলছুট নিষ্পাপ কিশোর, বিবর্ণ ধুলোময় কবিতার খাতা, কয়েকটি ঘুড়ি, নাটাই, অবিশ্বাস্য মায়াবতী এক মায়ের মুখ যারা চেহারায় রাজ্যের বিষাদ!
কেশবতী বলে এবার মেলাও, সাজিয়ে দেখো কোন অতৃপ্তির গল্প পাও কিনা?
তারপর থেকে আমি দেখি কাশফুল, হেমন্ত বিকেল , পুরোনো জীর্ণ শার্ট, একটি আকাশ, এক বসে থাকা কেশবতী, দলছুট নিষ্পাপ চেহারার কিশোর, ধূলোজমা কবিতার খাতা, ঘুড়ি, নাটাই আর একজন মা !
আরো তীব্র হতে থাকে আমার বিচ্ছিনতাবোধ! ছবিগুলো এক করে একটা গল্প হবে, সেই গল্প আমায় তৃপ্তি দেবে!
কেশবতী আর সেই মায়াবতী মা সম্ভবত বিপরীত পন্থী ছিল।সমাপ্তিতে অসমাপ্ত কোন আর্তনাদ ছিল।
তবে কি কেশবতী কেড়ে নিয়েছিল কোন দলছুট কিশোরের বাবাকে যে কিনা কবিতা লিখতো, বাবার সাথে কাশবনে ঘুড়ি উড়াতে যেত ... সেই নদীতীরের কাশবন আর একা বসে থাকা কেশবতী কি তবে প্রেমে পড়েছিল ধূলোজমা এবং উড়িয়ে দেয়া কবিতা গুলোর!
সেই প্রেম কেশবতীকে দিলো বাবা হারানো এক কিশোরের আর এক প্রেমময়ী স্ত্রীর আজন্ম অভিশাপ!
নিশ্চিত ভাবে সে সুখী হয়নি তাই ফিরে ফিরে এখনো একাই বসে থাকে আর একলা আকাশ দেখে!
স্থির চিত্র গুলো চলচ্চিত্র হয়ে দেখা দিলো, সত্যি সত্যি কিছু বছর পরে আবার সেই নদীতীরে একাই বসে থাকে, আমার অবেলায় নয়! একা বসে অপেক্ষা করে নাটাই হাতে ঘুড়ি উড়াতে আসবে কোন কিশোর, সেই কিশোর কে জড়িয়ে ধরে কেদে কেটে ক্ষমা চাইবে বলে!
কোথায় পাবো সেই কিশোরকে, যে হয়তো এখন যুবক হয়েছে কিংবা তার মা কে জানিয়ে দিতে কেশবতী তাদের ব্যাথা দিয়ে সুখী হয়নি শেষ অব্দি!
আমি ও তাদের খুজিঁ, দেখা হলেই বলে দিবো গল্পের অতৃপ্তি টা মুছে দিতে ....
নাকি মেলেনি? অন্য কোন গল্প বলতে চায় হয়তো স্থিরচিত্র গুলো ...