প্রিয়
বিকেলের ছাদে জমাট বাঁধা ভুলে যাওয়া শব্দগুলো নিয়ে ভুল করেই বসে থাকি। শরীরবৃত্তীয় চলনের ভাষাটা আমি ঠিক টের পাইনা , না হলে ঠিক এই চিঠিতেই লিখে দিতাম ... বহু আগেই শরীর জুড়ে তোমার চলাচল, মস্তিস্কের নিউরন তোমার চোখের কাজলে থমকে আছে। জ্যামিতিক কোন নিষ্টুর প্রয়াসে ঈশ্বরের চোখের ভাষার সংখ্যাতান্ত্রিক জটিলতায় থমকে আছে তোমার আর আমার প্রেম! আর এই সমাজের রক্তাত্ব শরীরের ক্ষতগুলো তোমার আর আমার মাঝে দেয়াল হয়ে আছে তোমার আমার জন্মের বহু আগেই । জানো আমি মাঝে মাঝেই সেই দেয়ালে হাতড়ে খুঁজি ক্ষতচিহ্ন । কেন জানি আমার হাতের অনুভূতিতে ধরা দিতে চায়না দেয়ালের ক্ষত , নগ্ন কিন্তু লজ্জায় কুঁকড়ে থাকা টেলিছবির নায়িকার মত !
তাই বুঝতে পারিনা কোথায় থেমে আছে বৃষ্টিপ্রলাপের আগের মুহূর্ত , বিকেলের ছাঁদে রংধনুর খেলা ? আমাদের নাগরিক যান্ত্রিকতার এই শহরের বিকেলের মরণ হয় লালচে সন্ধ্যার করুণ সুরে। অথচ এই সন্ধ্যাগুলোর কোন রঙ থাকেনা। রোজ সন্ধ্যায় আমি জ্বরে কুঁকড়ে থাকি, অথচ ঘোরটা থাকে সন্ধ্যা পেরিয়ে মাঝরাতে , শুভ্র প্রভাতে , তপ্ত দুপুরে !
আমি সমুদ্রবীক্ষণে তোমার চোখের বাঁকা চলন দেখি ,সামুদ্রিক পাখির ডানায় উড়তে দেখি তোমার খোলা চুল , আর সামুদ্রিক গর্জনে শুনি খোঁড়া চাঁদের আর্তনাদ !
ইতি
আমি !!
............................................................................................. প্রতিউত্তর ১।
প্রিয়
শব্দজটের নিষ্পেষণে তোমার যন্ত্রণা আমার চাইতে বেশী কি? আমার কিন্তু ঠিক ই মনে পড়ে
সেদিন রাতে ভুলে ডুবে যাওয়া চাঁদের কথা , জোনাকিদের ছুটোছুটিতে তোমার নিমগ্নচিত্তে শব্দের প্রতীক্ষার কথা !
তোমার চোখের অন্ধকার , আমার আলোর ভুবন !
সেই অন্ধকারেই ক্রমশ ঝড় তুলি
শরীর এলিয়ে
বাঁকে বাঁকে লেপ্টে থেকে !
বাড়ি ফিরেই চোখে পড়ে আমার জানালার কার্নিশের ছায়ায় বিমর্ষ সূর্যের প্রতিফলন! গরাদে ঝুলে থাকে বাবার মলিন শার্ট আর তার বুক পকেটে বিবর্ণ চশমার ফ্রেম।
তুমিহীনা নিমগ্ন রাতগুলোতে ক্রমশই চোখে ভাসতো ক্যানভাসে বাবার মুখ , মায়ের মলিন হাসি! পাড়ার পিসিদের অপচ্ছায়া আর কণ্টক হাসি ! এই ভেবেই ক্রমশই ঘামতে থাকি, হাপিয়ে উঠি আমাদের নিম্মবর্গীয় গন্ডির খেলাঘরেই ।
বিশ্বাস করো আবেগী তুলিতে নয়
কল্পনাতেও নয় , আমার সমস্ত ভাবনায়
চষে বেড়াই পৃথিবীর সমস্ত ধর্ম
ভূ-খন্ডের চর থেকে চরে !
তারপর আয়োজন করে ফেলি
আমার শৈশবের স্কুল , স্কুলে যাবার পথে একলা পড়ে থাকা নদী , তার তীরে ঘাসফুল আর ভাসতে থাকা নৌকো!
আমাকে একটা নদী দেবে , সেই নদীটার মত ! আমি ডুব দিয়ে তোমাদের সমাজের চোখে কাপড় বেঁধে মুখ লুকাতাম তোমার নিঃশ্বাসে!
ইতি
তোমার প্রিয় !
........................................................................................................ প্রতিউত্তর ২
প্রিয়
গতরাতে আমি একটি ছবি একেছি শূণ্যের ভিতরে শূন্যের ছায়া !
সেই কবেই তো , তোমার শৈশবের সেই নদীতে ফেলে এসেছি আমার বুকের বা-পাঁশের ধুপধাপ ! বাড়ি ফিরে তেজপাতার ঘ্রাণে খেই হারিয়েছি , অতঃপর ঘুমের ভিতরেই ব্যাক্তিগত সংলাপ সেরে নিয়েছি।
কত দূরে অথচ কত কাছে ! এখানের রাতগুলো শেষ হবার আগেই শেষ চিরকুট না লিখেই ,
নগ্ন চাঁদটা ঝুলে থাকে আমার জানালায়। আমি ব্যাবচ্ছেদ করে নিয়েছি তোমার আর আমার শরীরবৃত্তীয় জৈবিক বিজ্ঞানের ফারাক , কিছু দিনের কিছু সেকেন্ডের হিসেবের গড়মিল পেয়েছি , তোমার চোখে সমস্ত পৃথিবীর সমস্ত ধর্ম চষে বেড়ানো শেষে বলে দিলাম
পাঁজরের হাড়ে অন্তমিল
অংক কষার ভুলে
হয়না
হয়
নিঃশ্বাসের রসায়নের স্বস্তিতে
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাকরণে
প্যাঁচানো ধারালো
নেশায়!
হেলে দুলে গান গাইতে গাইতেই বলে দিতে পারি মানিনা এই উচ্চমর্গীয় বিধানের দেয়াল। যে দেয়াল রক্তাত্ব , ক্ষত – বিক্ষত সহস্র বছর ধরে । অথচ দেয়ালের ওপাশেই আছে তোমার উঠোন জুড়ে থাকা আঁধারের ছায়া!
অজস্র মায়াবী ঘোড়া যুগপৎ ঘুমিয়ে আছে তোমার শৈশবের নদীতীরে। তুমি আসলেই ঘুম ভাঙবে ওদের । ওদের ঘাড়ে রেখে দিয়েছি তৃষ্ণার্ত প্রজাপতি, ওদের ডানাভাঙ্গা রঙ আর তোমার চোখের কাজলদানি ! ওরা তোমায় নিয়ে আসবে – কুয়াশার গালিচায় !
দেয়ালের ক্ষতগুলো মুছে গেলেই তোমার বাবার বিমর্ষ চেহারাটা হাসোজ্জ্বল হবে , পাড়ার পিসীদের কণ্টক হাসি থেমে যাবে! ক্ষতগুলো সাড়িয়ে তুলতে হবে যে ......
ইতি
আমি !!
প্রতিউত্তর ৩ আসেনি এখনো!
আসেনি যুগপৎ ঘুমিয়ে থাকা ঘোড়াগুলো ও , ওদের ঘুম ভাঙ্গে ভুল গন্ধে , ভুল হৃৎস্পন্দনে! আবার ঘুমিয়ে পড়ে , দেয়ালের ক্ষতটা বাড়তে থাকে ক্রমশই !
অপেক্ষার প্রহর কাটতে থাকে প্রিয় শৈশবের নদীতীরে কিংবা ডাকঘরের খোলা মাঠে ! প্রতিউত্তর আসতে পারেনা রক্তাত্ব দেয়াল পেরিয়ে কিংবা সংখ্যাতাত্বিক গড়মিলে ! তবে আসবেই ... এই গল্পের শেষে কিংবা অন্য কোন গল্পের শুরুতে !