* Synaesthesia / সাইনাসথেসিয়াঃ এক ধরনের নিউরোলজিকাল আশ্চর্য ধরনের মানসিক রোগ ! যদিও এই রোগ টিকে পুরোপুরি খারাপ বা ভয়ানক বলা যাবেনা ! এই সমস্যায় যারা ভোগে তারা আশ্চর্য রকমের ক্রিয়েটিভ হয়ে থাকেন (আর দশ জনের চেয়ে )!
Synaesthesia শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ syn থেকে যার বাংলা অর্থ একত্রে বা একসাথে ! খুবই মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ধরনের সমস্যায় ভোগা লোকজনকে আপনি সুপার হিউম্যান ও বলতে পারেন , কেননা তাদের মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন অংশ নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের উপর একসাথে কাজ করা শুরু করে দেয় ! সহজ বাংলায় এভাবেও বলা যায় তাদের মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন অংশের মাঝে এক ধরনের সংযোগ স্থাপিত হয় যার কারনে তারা সংখ্যাকে চেনেন রঙের ভিন্নতার মত করে ! আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে ভুক্তভোগী সাউন্ড এবং খাবারের স্বাধ একসাথে মিশিয়ে ফেলেন ! !
এই রোগটি হতে পারে যে কোন দুটি ভিন্ন ধরনের অনুভূতির সংমিশ্রণ ! পাঁচটি অতি সাধারণ অনুভূতির ( দৃষ্টিশক্তি , ঘ্রাণশক্তি , শ্রবণশক্তি , স্বাদ অনুভূতি এবং স্পর্শশক্তি ) যে কোন দুটির মিশ্রণে মোট ২০ রকম সমস্যায় ভুগতে পারেন ভুক্তভোগী , যার মস্তিস্ক একটার সাথে আরেকটার মিশ্রণ করে দেয় ! কি অদ্ভুত সমস্যা !
যদি ও লজিকালি অনেক রকম সমস্যার আগমন হতে পারে , তারপর ও সবচেয়ে বেশী দেখতে পাওয়া কয়েক টি Synaesthesia কম্বিনেশনের ব্যাপারে একটু আলোকপাত করছিঃ
১ । Grapheme-Color Synesthesia:
সবচেয়ে কমন সমস্যা । ভুক্তভোগী এক্ষেত্রে বর্ণমালা বা সংখ্যাকে দেখে রঙ্গীন করে , যেখানে একজন সাধারণ মানুষের কাছে সে বর্নমালা বা সংখ্যাগুলো সাদা-কালো । তারা ভিন্ন ভিন্ন বর্ণমালা বা সংখ্যাকে ভিন্ন ভিন্ন রঙে দেখে ! আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে দুজন ভিন্ন ভুক্তভোগী অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোণ বর্ণমালাকে নির্দিষ্ট কোন রঙে দেখে থাকে , পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক না কেন ! অধিকাংশ ক্ষেত্রে “A” তাদের চোখে লাল হয়ে ধরা দেয় !
২। Sound-to-Color Synesthesia:
এই ধরণের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী , শব্দের সাথে কল্পনায় বিভিন্ন রঙের ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির বস্তু দেখার মত এক ধরণের অনূভূতির স্বাদ পেয়ে থাকেন । যখনই ভুক্তভোগী শব্দ শুনতে পান তখন সে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির জিনিসপত্র তার কল্পনায় স্পষ্ট ভাবে অনূভব করে থাকেন ! ভালো দিক হচ্ছে এক্ষেত্রে তারা যে কোন ধরণের শব্দে এমনটা অনুভব করেন না , নির্দিষ্ট কিছু শব্দ শুনলে তারা এমনটা অনুভব করে থাকেন ।
** বলিউডের “তারে জামিন পার” মুভিটিতে চমৎকার ভাবে দেখানো হয়েছে এই রোগের ভুক্তভোগীকে !
** Oniomania / অনিমেনিয়াঃ
সহজ বাংলায় এই রোগ হলো তীব্র শপিং এর প্রতি আকর্ষণ ! ব্যাপার টা শুনতে যতটা সহজ বা হাস্যকর লাগছে ভুক্তভোগীর জন্য তার চেয়ে অনেক বেশী কষ্টকর ! শপিং এর আকাঙ্ক্ষা টা তখনই রোগ হিসেবে পরিগণিত হয় যখন বারবার শপিং করাটা বাধ্যতামূলক হয়ে যায় ! খুবই ইন্টারেষ্টিং ব্যাপার হচ্ছে ভুক্তভোগী শপিং চলাকালীন সময়ে তার যাবতীয় কষ্ট ভুলে থাকে এবং প্রফুল্ল থাকে ! যখনই বাড়ি ফিরে যায় তার ব্যাক্তিগত জীবনের নানা সমস্যার কথা আবার মনে হয় এবং সে তার কিছুক্ষণ আগের করা অপচয়ের জন্য অনুশোচনায় ভুগে ! কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা এই ধরণের শপিং এর জিনিসপত্র নষ্ট করে ফেলে একেবারেই যাতে পরের বার না যায় ! কিন্তু রোগের সংজ্ঞাই বলে শপিং তাকে করতেই হবে !!!!
এই রোগের কারণে ভুক্তভোগী সামাজিক ভাবে , আর্থিকভাবে , মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ! অনেকেই ড্রাগ এডিক্টেক হয়ে পড়েন ! রোগ টির সূচনা স্বাভাবিকভাবেই শপিং এর প্রতি আকর্ষণ থেকে !
অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক একটি অলাভজনক প্রতিষ্টান “ BLUE STAR FOUNDATION ” এই রোগের জন্য কাউন্সেলিং এবং সচেতনতা তৈরীর কাজ করছে !~
*** Trichotillomania / ট্রিচোটিলোমিয়াঃ
আজব ধরণের একটি মানসিক রোগ ! এই ক্ষেত্রে রোগী নিজের মাথার চুল ,মাথার চামড়ার কাছাকাছি চুল , নাকের চুল , ভ্রু এর চুল নিজ থেকেই ক্রমাগত উঠাতে থাকে ! প্রাথমিকভাবে টিন এইজ বয়স থেকেই এটি শুরু হয় ! সাধারণত তীব্র হতাশা থেকে এটির সূত্রপাত হয় এবং এক সময় এটি নিজেই একটি হতাশায় পরিণত হয় ! অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধু মাথার চুল চেড়াতে সীমাবদ্ধ না থেকে ভ্রু বা অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় অংশের চুল ও চিড়তে শুরু করে যখন রোগটি সিরিয়াস আকার ধারণ করে ! ভুক্তভোগীরা ঘোরের বাইরে এলে মাথায় হ্যাট , কৃত্তিম ভ্রু পড়ে বাইরে বের হয় ! ক্রমাগত কাউন্সেলিং বা মানসিক প্রশান্তির মাধ্যমে রোগ টি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব ।
**** Dissociative Identity Disorder :
"sybil " মুভির একটি অংশ - ইউটিউব থেকে
এই ক্ষেত্রে রোগী মাঝেই মাঝেই সব কিছু ভুলে যায় ! আরো ভয়ানক ব্যাপার হচ্ছে সে একই সাথে দুইজন মানুষের রুপ ধারন করে ! কিছুক্ষন নিজের , কিছুক্ষণ অন্য আরেকজনের ! মাঝেই মাঝেই সম্পূর্ন ভিন্ন ব্যাক্তিত্ব তার ভিতরে ভর করে ! ভুক্তভোগী সবকিছুই ভুলে গিয়ে থাকেন যেটা মোটেই স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রমের ভিতরে পড়েনা ! খুবই দুর্লভ এই রোগ টি সবচেয়ে বেশী দেখা গিয়েছে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৫ সালে , ওই সময় প্রায় ৪০,০০০ ভিন্ন ভিন্ন রোগী পাওয়া গেছে বিশ্বব্যাপি !এই নিয়ে নির্মিত ১৯৭০ সালের একটি মুভিতে দেখানো হয়েছে ভুক্তভোগীর সমস্যার নানা মাত্রা ! আমাদের দেশে হলে ভূতে ধরা রোগী হিসেবে তাকে ওঝার কাছে পাঠানো হতো সবার আগে ! দক্ষ সাইক্রেষ্টিকের নিয়মিত তত্ত্বাবধানে রোগ মুক্তি হয়ে থাকে ।
প্রাককথণঃ চেয়েছিলাম গল্প লিখতে , একটি ছেলের গল্প যে হারিয়ে থাকে স্বপ্নের ভিতরে , ঘুমের ভিতরে দেখা স্বপ্ন আর বাস্তবতার মিলে মিশে তার জীবন হয়ে উঠে ভয়ানক ! গল্পের খাতিরেই গুগুলের শরণাপন্ন হই , ডাক্তার তাকে কি বলবে জানার জন্য ! গুগল আমাকে যা দেখালো তাতে মনে হলো আমার মত দুর্বল গল্প লেখকের গল্প লিখার চেয়ে এই রোগ গুলো নিয়ে আলাদা একটা পোষ্ট দেয়াই উত্তম ! যেই সমস্যার সমাধান বা তথ্য জানতে গুগলের কাছে যাওয়া সেই রোগ টি সহ আরো কয়েক টি রোগ নিয়ে আরেক টি পোষ্ট দেয়ার ইচ্ছে রয়েছে ! "