মানুষ খুন করা খুব সহজ কাজ। সম্ভবত সবথেকে সহজ কাজ গুলোর একটা কাউকে খুন করা। এই কথাটা বা এই বোধটা আসিফকে অনেকক্ষণ থেকে খোঁচাচ্ছে।
আসিফ খুব সাধারন একটা ছেলে। সবে মাত্র পড়ালেখা শেষ করেছে। এখনও কোন কাজ শুরু করতে পারেনি তাই বেকার বলা যায়। তার কাজকর্মে বা চেহারায় উল্লেখ করার মত তেমন কিছুই নেই। অবশ্য তাঁর চোখ দুটো নাকি বেশ মায়াবি। এই কথাটা কে তাকে বলেছিল সেটা তার ঠিক মনে নেই। কথাটা এতো বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয় যে সেটা মনে রাখতে হবে। অবশ্য এখন তার কাছে কোনকিছুই তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
রাত প্রায় তিনটা বাজে। আসিফ তার ঘরের বারান্দায় বসে আছে। কতক্ষন ধরে সে এভাবে বসে আছে তা নিজেও জানেনা। সিগারেটের প্যাকেটে আর আছে চারটা সিগারেট। চারটা সিগারেট দিয়ে আর বড়জোর দেড় ঘণ্টা পার করা যাবে। তারপর তাকে ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়তে হবে। কিন্তু তারতো ঘুমাতে ইচ্ছে করছেনা। তার মাথায় কেবল একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে, আর সেটা হল ‘মানুষ খুন করা খুব সহজ’!
এই অদ্ভুত চিন্তাটা কিভাবে আসিফের মাথায় আসলো সেটা নিয়েও সে মোটেও চিন্তিত নয়। তার শুধু মনে হচ্ছে, ‘এই সহজ কাজটা আমার করে দেখা দরকার’! মজার বিষয় হচ্ছে, তার কাছে এই চিন্তাটাকে মোটেও অদ্ভুত বা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। সে খুব ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে শুরু করেছে কাকে খুন করা যায় সে বিষয়ে।
বেশ কিছুক্ষন ভাবার পর তার মনে হল ‘খুব কাছের কোন মানুষকেই খুন করতে হবে’। কিন্তু মানুষটা কে হতে পারে সেটা এখনও সে ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেনাই। সে কল্পনা করছে তার খুব প্রিয় একজন মানুষ তার সামনে রক্তাত হয়ে পড়ে আছে। আর সে হাসি মুখে সেই রক্তাত দেহটার দিকে তাকিয়ে আছে।
রাত শেষ হয়ে এসেছে। ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় আসিফ তার শেষ সিগারেটটা শেষ করে উঠে পড়লো। এখন তার ঘুমাতে যাবার সময় হয়েছে।
আবারো রাত, এবং আসিফ সিগারেট হাতে বারান্দায়। সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যে সে একটা খুন করবেই। যদিও কাকে খুন করবে এখনও ঠিক করতে পারেনি। কিন্তু খুনটা করবেই এ বিষয়ে আর কোন সন্দেহ নাই। বেশ কয়েকজনের কথা তার মাথায় এসেছে। এবং সবাই তার খুব কাছের মানুষ। এর মধ্যে একজন হচ্ছে নাজিয়া। নাজিয়ার সাথে আসিফের পরিচয় প্রায় চার বছরের। প্রথমে বন্ধুত্ব এবং তারপর ভালোবাসা। নাজিয়াকে সে প্রচন্ড ভালোবাসে। আর সেকারণেই নাজিয়ার নামটাই সবার প্রথমে মাথায় এসেছে। এছাড়াও সফিক এবং শুভ্র কেও সে মাথায় রেখেছে। ওরা দুজন আসিফের সবচাইতে কাছের বন্ধু। বলা চলে এই তিনজনকে সে সবচাইতে কাছের এবং আপন ভাবে। সুতরাং খুনটা করতে হলে এই তিনজনের মধ্যেই একজনকে বেছে নিতে হবে।
আসিফের এখন প্রধান চিন্তা এই তিনজনের মধ্যে সে কাকে বেছে নেবে। খুনটা করার পর কি হবে সেটা নিয়ে সে মোটেও চিন্তিত না। সে পরিনতি নিয়ে একদমই ভাবছে না। তার খুব ইচ্ছা হচ্ছে খুনটা করার পর তার নিজের অনুভূতি কেমন হবে তা জানতে। এবং যাকে খুন করবে সে যখন জানতে পারবে যে সে তার খুব কাছের একজনের হাতে খুন হতে যাচ্ছে তখন তার অনুভূতি কেমন হয় তা জানতে!
কিভাবে খুন করবে সেটা সে এর মধ্যেই ঠিক করে ফেলেছে। বলা যায় সারাটা দিন সে এটা নিয়ে ভেবেছে। এবং সে একটা চমৎকার উপায় খুঁজে পেয়েছে। কাল বিকেলেই সে একটা গুলি ভর্তি পিস্তল হাতে পেয়ে যাবে। এটার জন্য তাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি। তার এক পরিচিত বড় ভাই আছে নাম কবির। কবির বিভিন্ন ধরনের ড্রাগস এবং চোরাচালানির ব্যাবসা করে। আজ বিকেলে সেই ভাইয়ের কাছে গিয়ে আসিফ বুদ্ধি খাটিয়ে পিস্তলের ব্যাপারটা বলেছে। প্রথমে কবির অবাক হলেও আসিফ তাকে এমন কিছু একটা বুঝিয়েছে যে সে একটা পিস্তল জোগাড় করে দেবে বলে কথা দিয়েছে। এবং সেটা আসিফ আগামিকাল বিকেলেই পেয়ে যাবে।
সুতরাং মাত্র একটা গুলিতেই কাজ হয়ে যাবে।
কিন্তু সমস্যা সেটা না। সমস্যা হচ্ছে, কাকে খুন করবে সেটা সে এখনও ঠিক করতে পারছেনা। রাতের খুব বেশি আর বাকি নেই। কিছুক্ষনের মধ্যেই ভোরের আলো ফুটবে। তার ঠোটের কোনে এখন একটা বিভ্রান্তিকর হাসি!
পরদিন বিকেলে কবির ভাইয়ের কাছ থেকে ডেলিভারিটা পাবার পর বেশ ফুর্তি নিয়ে আসিফ অপেক্ষা করছে নাজিয়ার জন্য। নাজিয়ার সাথে ঘণ্টা খানেক থাকার পর সে যাবে সফিক এবং শুভ্রর কাছে। ওদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে। এবং আজ রাতেই ঠিক করতে হবে কাকে সে বেছে নেবে।
নাজিয়ার সঙ্গে লেকের পাড়ে ওদের সবথেকে প্রিয় জায়গাটাতে বসে আছে সে। বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে তার ঘাড়ে মাথা রেখে নাজিয়া বসে আছে। ওরা একসাথে থাকলে বেশিরভাগ সময়ই চুপচাপ থেকেই সময় কেটে যায়। পুরো সময়টাতেই অদ্ভুত একটা ভালোলাগা কাজ করে ওদের মধ্যে। অথচ আজ আসিফের প্রচন্ড অস্থির লাগছে। সে কিছুতেই তার ভাবনা গুলোকে গুছিয়ে উঠতে পারছেনা। নাজিয়াকে কি যেন বলবে বলে ভেবেছিল কিন্তু এখন সেটাও মনে করতে পারছেনা। এভাবেই একসময় নাজিয়ার চলে যাবার সময় হয়ে আসলো।
নাজিয়া চলে যাবার পর বন্ধুদের কাছে যাবার জন্য পা বাড়াল আসিফ। যথাসময়ে দুই বন্ধুর সাথে দেখা হল। আড্ডাও জমল বেশ। অবশ্য সফিক আর শুভ্রই জমিয়ে রাখলো পুরোটা সময়। আসিফ অনেকটা বিব্রত ভঙ্গিতে বসে থাকলো সারাটা সন্ধ্যা। বারবার সিগারেট জ্বালিয়ে বিব্রত ভাবটা কাটানোর চেষ্টাও সে করছিলো। তবু ভালো যে বন্ধুরা কিছুই বুঝতে পারেনি। আসিফ নিজেকেই যেন বোঝাল!
তারপর, আবার সেই রাত। আজ রাতের মধ্যেই যা ঠিক করার করে ফেলতে হবে। যদি নাজিয়াকে বেছে নিতে হয় তাহলে কাল সন্ধায় ওকে নিয়ে বেড়ি বাধের দিকে যেতে হবে। সন্ধায় ঐ জায়গাটা একরকম নির্জনই থাকে। তাই খুব বেশি সমস্যা হবে না। আর যদি সফিক বা শুভ্র কে বেছে নিতে হয় তাহলে কাজটা করতে হবে রাতে। রাতে নেশার লোভ দেখিয়ে সময় সুযোগ মতো কাজ সেরে ফেলতে হবে।
আসিফ প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে একই ভাবে বসে ভাবছে। যতই সময় যাচ্ছে ভাবনা গুলো তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। পিস্তলটা ওর হাতের কাছেই আছে। একদম লোডেড। ছয় টা গুলি। এর মধ্যে খুব বেশি হলে দুইটা গুলি খরচ করতে হবে। কপালে ঠেকিয়ে গুলি করতে পারলে একটাই যথেষ্ট।
আরো প্রায় এক ঘণ্টা কেটে গেছে। আসিফের ঠোটের কোণের বিভ্রান্তিকর হাসিটা ধীরে ধীরে বিস্তৃত হচ্ছে। সে এখন জানে তাকে কি করতে হবে। হটাত করেই সবকিছু একদম পরিস্কার হয়ে গেছে। এই অনুভূতিটা তার কাছে একদমই অচেনা। সে এখন প্রস্তুত একটা মানুষ খুনের স্বাদ পেতে। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে প্রান ভরে টান দিল আসিফ। এখন খুব শান্তি লাগছে তার। প্রচন্ড অস্থির মনটা একদম শান্ত হয়ে গেছে। বরং তার এখন প্রচন্ড খুশি লাগছে। সে কিছুক্ষনের মধ্যেই সম্পূর্ণ অজানা দুটো অনুভূতির স্বাদ পেতে যাচ্ছে। একটা খুনের স্বাদ সেইসাথে মৃত্যুর স্বাদ!
অনেকটা আনমনেই জীবনানন্দ দাশের কবিতার দুটো লাইন বলে উঠল আসিফ।
“যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হলো তার সাধ।”
চাঁদটা ডুবে গেছে অনেকক্ষণ হয়। আজকের চাঁদটা কি পঞ্চমীর চাঁদ ছিল?
(ছবি- গুগল থেকে পাওয়া)
আলোচিত ব্লগ
বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !
"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমিত্ব বিসর্জন
আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।
"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন