একটা অজ্ঞাতনামা লাশ পড়ে আছে।
মিরপুর ১০ নং গোল চক্কর পেরিয়ে বেগম রোকেয়া সরণিতে পড়ে আছে লাশটা। সময় সন্ধ্যা ৭ টা। পথে ঘরে ফেরার জন্যে ব্যস্ত মানুষজনের চলাচল। রাস্তাটায় এই সময় এমনিতেই যানজট লেগে থাকে তার উপর আজ আবার একটা লাশ পড়ে আছে! পথে চলাচলরত মানুষজন দুঃখিত হবার বদলে কিছুটা যেন বিরক্ত। এমনিতেই জ্যাম তার উপর আজ আবার এক্সিডেন্টের কারনে একটা লাশ পড়ে আছে, অনেকেই বিরক্ত হয়ে ভাবছে "আজ বাড়ি ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যাবে"।
বিরক্ত তো সবাই হবেই। লাশটা যে অজ্ঞাতনামা একজনের!
ছেলেটার বয়স ২৪-২৫ এর মতো হবে। পরনে মেরুন রংএর ফুলহাতা শার্ট, আর নেভি ব্লু জিন্স। পায়ে একজোড়া কালো চটি। ছেলেটির চোখে সেলুলয়েডের মোটা কালো ফ্রেমের চশমাও ছিল। চশমাটা ভেঙে পাশেই পড়ে আছে।
ছেলেটির শরীরে কোথাও আঘাতের তেমন কোন দাগ নেই। শুধুমাত্র কপালে রক্তের একটা মোটা দাগ, ঠিক যেন তার শার্টের রঙের মতো!
কোথায় যাচ্ছিল ছেলেটি, বা আসছিল তা কেউ জানেনা এবং জানার ইচ্ছেও নেই কারো।
একটা অজ্ঞাতনামা লাশের কথা কেইবা জানতে চায়।
এখন যেটি একটি অজ্ঞাতনামা লাশ সে কিছুক্ষন আগেই একজন মানুষ ছিল। তার একটি পরিচয় ছিল। হয়তো কোন গন্তব্যও ছিল তার। কিন্তু এখন সে শুধুই একটি লাশ, নাম পরিচয়হীন একটা লাশ।
ঘটনাটির কিছুক্ষন পরের পুলিশ এসে অবস্থান নিয়েছে সেখানে। তারা চেষ্টা করছে দুর্ঘটনাটির কারণ বের করার। ছেলেটি কে সে বিষয়ে জানার খুব একটা আগ্রহ তাদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছেনা। এবং তারাও কিছুটা বিরক্ত। আর বিরক্ত হবেইবা না কেন, ছেলেটি অন্য কোন থানার রাস্তায় মরে পড়ে থাকলেইতো তাদেরকে এখানে এসে দাড়িয়ে থাকতে হতো না। যা করার সেই থানার লোকজনই করতো।
দুই একজন উৎসুক মানুষ এসে ভিড় করার চেষ্টা করছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন প্রত্তক্ষদর্শীও আছে। পুলিশ তাদের কাছ থেকে ঘটনাটির বিবরন নেবার চেষ্টা করছে।
পথের মানুষজন এখন বেশ বিরক্ত! একটা লাশের কারনে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে, ঘরে ফিরতে দেরি হচ্ছে! ছেলেটি যে আর কোনদিন তার ঘরে ফিরতে পারবেনা সেটা তো তাদের ভাবার কোন প্রয়োজন নেই।
কিছুক্ষন পর পুলিশ লাশটা নিয়ে চলে গেলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো সবাই। যাক শেষ পর্যন্ত রাস্তা পরিস্কার হয়েছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে গেলো সবকিছু, যেন কিছুই ঘটেনি এই পথে।
সময় রাত ১২ টা। লাশটা এখন মেডিকেলের মর্গে পড়ে আছে।
একটা অজ্ঞাতনামা লাশ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৪২