somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেড পয়েটস সোসাইটি, পরিবর্তন আর পরিবর্তিত সমাজ

১১ ই জুন, ২০১০ ভোর ৫:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডেড পয়েটস সোসাইটি দেখলাম। ১৯৮৯ সালের মুভ্যি, ২১ বছর আগের মুভ্যি। মুভ্যির সেটিংস ছিল ষাটের দশকের। কত কিছু বদলে গিয়েছে তখন থেকে। ক্লাসে টিচার আসলে সবাইকে দাঁড়াতে হবে, আনকনভেনশনাল কিছু করা যাবে না, ক্রিয়েটিভ টিচিঙের কোন অবকাশ নেই। আর এখন সেই বিপ্লবী মুভ্যিটাই স্কুলে কারিকুলামের অংশ হিসেবে দেখানো হয়। মীরা স্কুল থেকে দেখে এসেই এত দিন আমাকে অস্থির করে ফেলেছিল যেন দেখি। আজকে কাজ থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে দেখলাম।

আমার ইংলিশ টিচার মিস র‌্যামজি আমার জীবনে পাওয়া অন্যতম সেরা টিচার। এক কানে দুল পড়তেন। ছোট ছোট ব্লন্ড চুল স্পাইক করা। যখন ম্যাকবেথ হতেন তখন খুনী খুনী শোনাতো, লেডি ম্যাকবেথ হয়ে যখন বলতেন, 'অল দ্যা পারফিউমস অফ পারসিয়া উইল নট সুইটেন দিস লিটল হ্যান্ড', তখন মিসেস র‌্যামজির গলায় তীব্র অনুতাপ, বিষন্নতা উপচে পড়ত, গায়ে শিহরণ হতো। মনে আছে, মাত্র এক বছর আগে বাংলাদেশে বাংলা মিডিয়াম থেকে আসা আমার ক্রিয়েটিভিটির ছোট্ট একটা নমুনা দেখে আমাকে অ্যাডভান্সড ইংলিশের সেরা ক্লাসটায় নিয়ে নিলেন। অথচ তখন আমার ইএসএল (ইংলিশ এজ আ সেকেন্ড ল্যাংগুয়েজ) ক্লাসে বসে গ্রামার করার কথা ছিল। এরকম টিচারেরা ছোট ছোট সুযোগের দিয়ে মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে।

মিসেস র‌্যামজি হয়তো ভিন্ন চিন্তা করতেন, কিন্তু এখনকার পরিবর্তিত সময়ের জন্যই হয়তো, তিনি হেড টিচার ছিলেন। তাঁর ক্রিয়েটিভির মর্যাদা তিনি পেয়েছিলেন, যা মিস্টার কীটিংস পান নি। র‌্যামজির ক্লাসে টেমপেস্টের সাথে সাথে আমরাও চলে যেতাম সেই যাদুময় দ্বীপে। 'বেল শেক্সপিয়ারের' টেম্পেস্ট দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন আমাদের, ছোট্ট একটা থিয়েটার, বুঝাই যায় মানুষ কাজের শেষে মাথা ঠান্ডা করার বিনোদনের জন্য যায় না সেখানে। ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টরা, ভিন্ন কিছুর স্বাদের জন্য যায় ওখানে। ডেড পয়েটস সোসাইটির ছেলেগুলো রম্য লিখেছিল মেয়ের অভাব নিয়ে, আর আমাদের স্কুল থেকে নিয়ে যাওয়া সেই নাটিকায় সেকচুয়াল ইমেজারির কোন অভাব ছিল না। নাটকটা দারুন ক্রিয়েটিভ ছিল, কিন্তু পারমিসিভ সোসাইটির কারণে পরিবর্তনটা লক্ষনীয়।

ডেড পয়েটস সোসাইটি অসম্ভব ভালো লেগেছে, শিহরণ হয়েছে, কিন্তু ভাবতে বসে মনে হচ্ছে, মানুষ এক সময় যার জন্য সংগ্রাম করে, পরে এমন একটা সময় আসে যখন সেটার বিরুদ্ধেই আবার সংগ্রাম করতে হয়। এক সময় পশ্চিমা সমাজটা কি ভীষণ রেস্ট্রিক্টিভ ছিল, যেখানে পড়াশোনা করানো হতো এক একটা গাধা বানাতে, মেশিন বানাতে। এখন সেই সিস্টেমটাই এত বেশি পারমিসিভ যে সবার ঘাড়ের উপরই দুইটা করে মাথা। ডেড পয়েটস সোসাইটিতে নীইল বাবা মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অভিনয় করতে না পেরে শেষ মেষ আত্মহত্যা করে। এখন বাবা মাকে যতটুকু সম্মান আর কৃতজ্ঞতা বোধ না দেখালেই নয়, ততটুকুই দেখতে পারি না আশে পাশে।

আমাদের স্কুলটা স্টেইটে রেটিংস বেশ ভালো ছিল, মেয়েদেরও সুনাম ছিল। কিন্তু মিস্টার এন্ডিকটকে সহ্য হতো না বলে ওনার প্যান্টের পিছনে চক দিয়ে চরম অপমানজনক লেখা লিখে সেই নিয়ে হাসাহাসি। অথচ মিস্টার এন্ডিকট নিতান্তই ভালো মানুষ ছিলেন। বোরিং ছিলেন, কিন্তু ভালো মানুষ ছিলেন।

এখানকার স্কুলে পড়েছি বলে সমাজের অনেকটুকু ভিতরে যেভাবে দেখতে পেরেছি ততটা হয়তো অন্য ভাবে দেখা যেত না। তখন মনে হয়েছে, ফ্রি থিংকিং, ক্রিয়েটিভিটি, ভিন্ন চিন্তা, এগুলো সবাই একই অর্থে নিচ্ছে না। কারো কারো কাছে এগুলো অর্থই স্বার্থপরতা, নিষ্ঠুরতা। হবে না কেন, মন কে ট্রেইন করতে না পারলে, অনেকগুলো ভুল ইমোশন কন্ট্রোল নিয়ে নেয়। ক্রোধ থাকা ভালো, কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে। অন্যায়ের ডেফিনিশনটা মানুষ ঠিক মত না বুঝলে, তখন ন্যায়কেও অন্যায় মনে হবে। তখন গার্লফ্রেন্ড অনুমতি ছাড়া কম্পিউটার ঘেটেছে , সেটাকে অন্যায় এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ মনে হয়ে, সেটাকেও খুনের জাস্টিফিকেশন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে (দ্রষ্টব্য: ৯ জুন ২০১০, সিডনী মর্নিং হেরাল্ড)

এমন ভাবে আটকে রাখা নিদারুণ অনুচিত, যাতে রস কস সব মরে যায়। কিন্তু বড় হওয়ার সময়টায় একটু পথ দেখানোও কি প্রয়োজন না, যেন ভিন্ন চিন্তা, স্বাধীন চেতনার বদলে দৈত্য দানোর জন্ম না হয়? ডেড পয়েটস সোসাইটিতে নীইল যখন আত্মহত্যা করল, তখন খুব হতাশ হলাম। এটা তো 'থিংকিং ফ্রর ইউরসেলফ' না!

পারমিসিভ সোসাইটি থেকে রেস্ট্রিক্টিভ সোসাইটিতে উল্টো হেঁটে যাওয়ায় কোন যৌক্তিকতা নেই। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছা হয়, সমাজটা এক সময় এমন জায়গায় যাবে যেখানে নিজে নিজে ভাবা মানে ক্রিয়েটিভিটি আর ফ্রি থিংকিঙের বলি দেয়া না, কিন্তু নিজে নিজে ভাবা মানে স্বার্থপরতা আর নিষ্ঠুরতাও না। যেখানে বিপ্লব আর ভিন্ন চিন্তা শুধু নিজের এড্রোনলিন রাশ না, যেই ভিন্ন চিন্তা আর বিপ্লব মানুষের জন্য, সমাজের জন্য। স্বপ্ন দেখি ততটুকু সামষ্টিক বুদ্ধিমত্তার জন্য, যেই পর্যায়ে গেলে পার্থক্যটা বুঝা যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১০ ভোর ৫:২০
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×