আমাদের দেশে ইহুদী থিউরি দ্বারা পরিচালিত মুনাফিক যুদ্ধাপরাধী মওদুদী জামাতী, দেওবন্দীরা সবসময়ই প্রচার করে থাকে যে, (বিশেষ করে নিজামীর বচন উল্লেখ্য) “শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন। সুতরাং এখন আবার কিসের বিচার?” কিন্তু প্রিয় পাঠক! ‘খাবার ঘরে কে রে? আমি কলা খাই না’ বাংলার এই সুপরিচিত প্রবাদের মতোই হাস্যকরভাবে এই মুনাফিক জামাতীরা প্রমাণ করে দেয় যে, আসলেই তারা অতি ঘৃণিত রাজাকার। ’৭১-এও যেমন ছিল আজও তেমনই আছে।
অথচ বাস্তবতা হলো, এই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ক্ষুধাক্লিষ্ট অনেক মানুষের হাতেই ছিল অস্ত্র। ফলে হাইজ্যাক থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপরাধ ঘটেছিলো। বিশেষত ব্যক্তিগত আক্রোশে সুযোগ বুঝে “রাজাকার ধর ধর” বলে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার ঘটনাতে বেসামাল হয়ে যাচ্ছিলো বাংলাদেশ। সে রকম এক নাজুক পরিস্থিতিতে শেখ সাহেব ঘোষণা করেন সাধারণ ক্ষমা। ফলে যাকে তাকে রাজাকার বলে তাৎক্ষণিক হত্যা করার মতো পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। তো সেই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিতে মওদুদী জামাতীরা গোয়েবলসীয় কায়দায় এমনভাবে প্রচার করেছিল; ফলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। তারা ভাবতে শুরু করছিল যে, নিশ্চয় বঙ্গবন্ধু তাদের সবাইকে আমভাবে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
১৯৭২ সালে দেশে ফেরার পর পরই পাকিস্তানি দালাল, রাজাকার, আল-বাদর, আল-শামস তথা মওদুদী জামাতীদের বিচার করার জন্য জারিকৃত হয় রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর-৮ “স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল অর্ডার ১৯৭২”। ওই আদেশের আওতায় শেখ সাহেবের নৃশংস হত্যাকান্ডের পরও ১১ হাজার আল-বাদর, আল-শামস-এর বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন ছিল। এদের মধ্যে ছিল ছাত্রসংঘের তৎকালীন সভাপতি মইত্যা রাজাকার, শীর্ষস্থানীয় জামাতী রাজাকার আব্বাস আলী খান। এরা কেউই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় তো দূরের কথা; ধারে কাছেও ছিল না। শুধু তাই নয়, ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বরে সংবিধানের ১২ এবং ৩৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী ধর্মভিত্তিক সকল রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৭৩ সালের ১৮ই এপ্রিল ইংরেজি তারিখে এ গেজেট জারির মাধ্যমে গো’আযম এবং মইত্যা, মুইজ্যা সবার নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়া হয়। এ সময়ই পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যও জারি হয় ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ১৯৭৩’।
অতএব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজাকারদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার বৈ কিছুই নয়।