প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের লিখিত কিতাবের বক্তব্য দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, “সূরা হামীম সিজ্দা”-এর ৩৩তম আয়াত শরীফ প্রচলিত তাবলীগের জন্য খাছ। অর্থাৎ একমাত্র প্রচলিত তাবলীগকারীরাই এ আয়াত শরীফের পূর্ণ মেছদাক্ব বা নমুনা।
(ফাজায়েলে তাবলীগ, পৃষ্ঠা-৪; দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কে?, লেখক- ওবায়দুল হক, পৃষ্ঠা-১১৮; তাবলীগে ইসলাম, লেখক-আব্দুল সাত্তার ত্রিশালী, পৃষ্ঠা-৯)
মূলতঃ উল্লিখিত আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক বলেন, “সেই ব্যক্তি অপেক্ষা কার কথা অধিক উত্তম হতে পারে? যিনি আল্লাহ পাক-এর দিকে মানুষকে ডাকেন এবং নেক কাজ করেন এবং বলেন, নিশ্চয়ই আমি মুসলমানের অন্তর্ভূক্ত।” (সূরা হামীম সিজ্দাহ ৩৩)
এই আয়াত শরীফখানা সম্পর্কে হযরত আয়িশা সিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, “এটা মুযাজ্জিনদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।” (তাফসীরে মায্হারী)
এখানে উল্লেখ্য যে, কুরআন শরীফের সূরা বা আয়াত শরীফসমূহের নুযুল খাছ অর্থাৎ বিশেষ কারণে নাযিল হয়েছে। কিন্তু হুকুম আম অর্থাৎ ঐ আয়াত শরীফের মেছদাক্ব বা নমুনা যারাই হবে তাদেরই উপর সে হুকুম বর্তাবে।
অতএব, উপরোক্ত আয়াত শরীফ যদিও মুযাজ্জিনের জন্য খাছ করে নাযিল হয়েছে, তথাপিও যাঁরা ঈমান-আক্বীদা শুদ্ধ রেখে আল্লাহ পাক-এর দিকে মানুষকে ডাকবে, তা যেভাবেই হোক, যেমন- কিতাব লিখে, মাদ্রাসায় পড়িয়ে, ওয়াজ করে, তা’লীম দিয়ে, দাওয়াত দিয়ে, জিহাদ করে ইত্যাদি, তাদের সকলের উপরই এ আয়াত শরীফের হুকুম বর্তাবে। (তাফসীরে খাযিন, বাগবী, রুহুল মায়ানী, রুহুল বয়ান, বায়ানুল কুরআন, মায্হারী, ইবনে কাছীর, কবীর, কানযুল ঈমান, তাবলীগী নেছাব-মাওঃ জাকারিয়া)
কাজেই এ আয়াত শরীফকে কখনোই প্রচলিত তাবলীগের জন্য খাছ করে নেয়া শরীয়তসম্মত হবেনা। বরং “তাফসীর বিররায়” হবে, যা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের মনগড়া তাফসীর করলো, সে কুফরী করলো।”
হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের মনগড়া তাফসীর করে, সে যেন তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।”
অন্য রেওয়াতে বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি বিনা ইল্মে বা না জেনে কুরআন শরীফের ব্যাখ্যা করে, সেও যেন তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।” (তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, উরফুশ্শজী, তালীক)
সুতরাং এরূপ মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা করা সম্পূর্ণ হারাম। কারণ মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যার কারণে যেমন নিজে গোমরাহ্ হয়, তেমন অপরকেও গোমরাহ্ করে। যার ফলে সমাজে ফিৎনা বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়, আর হওয়াটাই স্বাভাবিক। অথচ ফিৎনা সৃষ্টি করা কবীরা গুণাহ্র অন্তর্ভূক্ত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “তোমরা জমিনে ফিৎনা সৃষ্টি করোনা।” (সূরা বাক্বারা ১২)
অন্য আয়াত শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “ফিৎনা হত্যার চেয়ে অধিক শক্ত গুণাহ্।” (সূরা বাক্বারা ১৯১)
অন্য আয়াত শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “ফিৎনা হত্যার চেয়ে অধিক বড় গুণাহ্।” (সূরা বাক্বারা ২১৭)
কাজেই সমাজে ফিৎনা সৃষ্টি হয়, এ ধরণের শরীয়ত বিরোধী কথা বলা প্রত্যেক মুসলমানের বিরত থাকা সমীচীন।