somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি মুভি স্ক্রিপ্টের ছেঁড়া ক'পাতা

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ ভোর ৪:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডিসক্লেইমার।। বিচিত্র জিনিসে আমার আগ্রহ। অথচ অলসতায় আগ্রহ তারে'চে কয়েকগুন। তার একটি ফলশ্রুতি নিচে আমার লিখা মুভির স্ক্রিপ্টের একটা দৃশ্য। মাথায় একটা স্ক্রিপ্ট নিয়ে লিখা শুরু করে কয়েক দৃশ্য পর্যন্ত লিখে রেখে দিয়েছিলাম। আজ হঠাৎ পুরনো খাতা খুলে দেখতে পেয়ে ভাবলাম, সামুতে লিখে দিই একটা দৃশ্য। এইটা স্ক্রিপ্টের ৪নং দৃশ্য। আগের পরের কোন কথা না বলে এমন মাঝের অংশ লিখার কোন মানেই নেই, তাতে না পাবে কেউ ধারাবাহিকতা, না পাবে কোন মজা। কিন্তু ইচ্ছে তো ইচ্ছে, যুক্তির ধার ধারতে সবদিন ভাল লাগেনা। লেখাটি স্রেফ মজা করার জন্যই লিখা। ধারাটিও বাণিজ্যিক ধারার সিনেমার কথা মাথায় রেখে। । তথাস্তু...

( নোয়াখালি ভাষা না জানা পাঠকের মুসিবত হবে বলেই মনে হয়)

বি.দ্র: আঞ্চলিক ভাষার বৈচিত্র্য যে কোন দেশের একটা অপরূপ সম্পদ। বাংলাদেশ এই অপরূপ সম্পদে সমৃদ্ধশালী , আমার কাছে এটা একটা দারুন ব্যাপার বলে মনে হয়। নোয়াখালী ভাষাকে হেয় করার কোন সুদূরতর বাসনাও আমার মনে নেই। আমি নিজেই নোয়াখালীর ছেলে।

উৎসর্গ।। আমার ব্লগে কবিতা পোষ্ট দেখতে দেখতে সামুর যে সব বন্ধুরা ত্যক্ত বিরক্ত, তাদের জন্য। বাই দ্যা ওয়ে, আমি নিজেও ত্যক্ত বিরক্ত।
........ মিথ্যে যদি মধুর এমন ( নামটি চুড়ান্ত নয়)........



স্থান: ঢাকার রাস্তায় একটি মধ্যম মানের রেস্টুরেন্ট।
চরিত্র: নায়িকা, রেস্টুরেন্টের কর্মচারী, রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার
দৃশ্য বর্ণনা: নায়িকা সদ্য জেল থেকে বেরিয়ে এসেছে। রাস্তার ধারে একটা রেস্টুরেন্টে প্রচুর খাওয়া দাওয়া করে। কিন্তু তার কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই। পুরনো স্বভাবমত সে মিথ্যে অভিনয় করে বিল দেবার হাত থেকে বেঁচে যায়। তার মিথ্যে গল্পে প্রভাবিত হয়ে ম্যানেজার বিল দূরে থাক, উল্টো তাকে ক্যাব ভাড়া দিয়ে দেয়।
ডিরেক্টিং নোট: দৃশ্যটি সম্পূর্ণ কমেডি। কর্মচারী এবং ম্যানেজার দুইজনেই নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলবে।
ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে নায়িকা ক্লান্ত হয়ে হাঁটছে। ঘড়ি দেখছে। ব্যাগ থেকে সানগ্লাস বের করে পরে। ব্যাগের টাকা গুনে দেখে।

নায়িকা: ( স্বগত) খিদা এমন লাগছে, কিন্তু টাকা তো বেশি নাই। ট্রেনের ভাড়া বাদ দিলে খুব বেশী থাকবোনা। কিন্তু খিদার চোটে ইচ্ছে করতেছে হোটেল সুদ্ধ খাই। কি যে করি।

( নায়িক এদিক ওদিক তাকায়। ক্যামেরায় লোভনীয় সব খাবারের ছবি দেয়া হোটেলের সাইন দেখা যাবে। লোকজনের ভিড় রাস্তায়, গরম, রোদ, ট্রাফিকের হর্ন, কাট কাট করে দেখানো যেতে পারে তরমুজ ওয়ালার লাল টকটকে তরমুজ, শরবত ওয়ালার শরবত বানানোর কায়দা কানুন, যে সব দেখে প্রচন্ড গরমে ক্ষুধা তৃষ্ঞা বেড়ে যায় নায়িকার, ক্যামেরা ক্লোজ শট করে তার মুখে ধরে, নায়িকার এক্সপ্রেশনে সে ভাবটি প্রকাশ পায়, হঠাৎ রাস্তার অপর পাশ হতে একজন হোটেল কর্মচারীর কাস্টমার ডাকার আওয়াজ শোনা যেতে থাকে)

হোটেলের কর্মচারী।। এই দু'পারে আন্নেগো হেডে ভোক লাগে ন্ নি। আইয়েন, আইয়েন, আগে খানা , হরে টিঁয়া, এক্কানা জিরাই যান, খাই যান, ভাবীর লাই লই যান। আগে টিঁয়া, হরে খানা, থুক্কু, আগে খানা হরে টিঁয়া।

( হঠাৎ নায়িকার দিকে তার চোখ পড়ে তার। অমনি নায়িকাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে)

হোটেলের কর্মচারী।। ও আপা, ও সোন্দর আপা, আহারে, রইদে ঘুইরেন না, আংগো হোটেলে জিরাই যান। কিছু খাই যান, আন্নের লাই ফিফটি পারসেন্ট ফিরি। আরে আইয়েন্না আপা। এমন হোটেল সারা দুনিয়াত হাইতেন্ ন। হোটেল চালাদিয়া ইটালিয়া। আইয়েন আইয়েন।

নায়িক( স্বগত)।। আচ্ছা, আমার জন্য ফিফটি পারসেন্ট ফ্রি, দেখাচ্ছি দাঁড়াও। ( তারপর ছেলেটির দিকে এগিয়ে যায়) ঠিক আছে , চল, দেখি কেমন খাবার দাবার তোমাদের।

( ছেলেটি প্রথমে একটু হকচকিয়ে যায়, কেননা সে আশাই করেনি তার ডাকে কেউ সাড়া দিবে, হন্তদন্ত হয়ে সে নায়িকাকে পথ দেখিয়ে হোটেলের ভিতরে নিয়ে যায়।
একটি মধ্যম মানের টিপিক্যাল হোটেল। অল্প কয়েকজন কাস্টমার ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। নায়িকাকে ঢুকতে দেখে সবাই মাথা ঘুরিয়ে তাকায়। কাউন্টার থেকে স্বয়ং ক্যাশিয়ার/ ম্যানেজার উঠে আসে। কর্মচারীটি উচ্চস্বরে দোকানের টেবিল মোছার ছোট্ট ছেলেটিকে ডাকে)

হো.ক।। ঐ বলইদ্যা। টেবিল বালা করি মোচ। ঘসি চামড়া উডাই হালা। গ্লাস থুই হানি দে। আপা, আইয়েন , আইয়েন।

ম্যানেজার।। জামাইল্যা, বেডা হাগল, ম্যাডামরে কেবিনে বইয়্যা। আপা আন্নে আইয়েন আঁর লগে। জামাইল্যা তুই রাস্তাত যা। কাস্টমার বোলা। আপারে আঁই নিজে খাওন দিতাছি।

( জামাইল্যা ( হো.ক) অসন্তুষ্ট হয়, বিতৃষ্ঞা চোখে ম্যানেজারের দিকে তাকায়, মনে মনে বলে-)

জামাল( হো.ক) = ব্যাডা বুড়া অইছে, অনও মাইয়া দেখলে ফাল দি উডে। খবিশের দুলাভাই।

( জামাল বেরিয়ে যায়, ম্যানেজার নায়িকাকে একটা কেবিনে বসায়)

ম্যানেজার।। ম্যাডাম, এই কেবিনে বইয়েন। আগে একটু ঠান্ডা অন। তারপরে অর্ডার দিয়েন। বাউরে, রইদ যা উঠছে।

( নায়িকা কেবিনে বসে, আয়েশ করে এটা সেটা দেখে)

নায়িক।। আপনি কি এই হোটেলের মালিক?

ম্যানেজার।। হে: হে: জ্বেনা আপা। তয় হরায় মালিকি কন যায়। মালিক অইল গিয়ে আঁর আপনা খালতো ভইনের আপন দুলাভাইয়ের আপন ভাতিজার আপন বন্ধুর আপন শালার আপন জেঠতো বাইয়ের আপন বাইগনার আপন...

নায়িক।। ( বাধা দিয়ে) ও আচ্ছা আচ্ছা, এত আপন যখন, তাহলে তো বলা যায় এটা আপনার আপন দোকান।

ম্যানেজার।। হেঃ হেঃ আপা। কত ঠিকই কইছেন। তয় আরো কয়েকটা আপন বাদ রইছে, কমু?

নায়িক।। না না , তার দরকার নেই। শুধু বলেন, হোটেলের নাম ছালাদিয় ইটালিয়া রাখছেন কেন?

ম্যানেজার।। বুজলেন্না আপা, ছালাদিয়া মানে অইল ছালা মানি চট দিয়া ঘিরা, আর ইটালিয়া মানে অইল ইট বসাইন্না। হইলা হইলা এই হোটেল চটের বেড়া আর ইটে বইয়নের ব্যবস্থা আছিল তো। তই, অন মাশাল্লাহ উন্নতি কচ্চি, কিন্তু নাম পাল্টেনো, আমনেগো দোয়ায় এই নামের বরকতে আঁর আপন খালতো বইনের আপন দুলাভাইয়ের আপন...

নায়িক।। ( বাধা দিয়ে) তা আপনি যে এখানে ক্যাশ কে সামলাবে?

ম্যানেজার।। আরে, ক্যাশের গুল্লি মারি। আন্নেগো মতন বড়ো লোকেরা আঁর আপন খালতো বইনের .. মানে আঁর দোকানে আইছেন। আমনেরা অইলেন বিশিষ্ট মেহমান।এই শিক্ষা আঁর আছে আল্লার রহমতে, আঁই আমনেগো মতন লোকের খানার তদারকি নিজে করি। আন্নে শুধু কন কি কি খাইবেন?

নায়িকা।। আচ্ছা, তরকারি মানে সব্জি কি আছে?

ম্যানেজার।। কি নাই হেইটা কন। ধরেন মুলা, ডুল্লা, কদু, লাউ, কুমড়া, লাল শাক, নীল শাক, পালং শাক, ঝিংগা, চিচিংগা ধুন্দুল কোন্দল...

নায়িকা।। থামেন থামেন, কদু আবার লাউ, তারপরে লাল শাক আবার নীল শাক, আবার ধুন্দুল কোন্দল.. বুঝলাম না্।

ম্যানেজার।। আপা, কদু কম দামী কাস্টমারগো লাই, লাউ আন্নের মতো কাস্টমারের লাই, লাল শাক অইল যেইটা আইজকা রান্না অইছে, নীল শাক যেইটা দুই তিন আগে রান্না অইছিল, অখন বাসী অই গেছে.. এই রকম আর কি।

নায়িকা।। হুম, আচ্ছা, মাছ আছে কি কি?

ম্যানেজার।। বেক জাতের আছে ম্যাডাম। বড় তোন ছোড কমু না ছোড তন বড় কমু?

নায়িকা।। ছোট থেকে বড় বলেন।

ম্যানেজার।। এই ধরেন চউক্কা, কাঁচকি, বোঁচকি, বাইলা, বুরুলি, ইচা, ইচা আবার কয়েক পদের, কুঁচা ইছা, মাঝারি ইঁচা, আবার রাজ ইচা। তারপরে ধরেন পুঁটি , খইলস্যা, বাতাসা, ভেদা, কই, মেনা, পাবদা, শিং , মাগুর, টাকি গজার , রুই, কাতল, চিতল, মৃগেল , বোয়াল, রুপচান্দা, হাঙর তিমি আর আর...

নায়িকা।। আরে আরে , কি বলছেন এইসব। আসলেই এত রকম মাছ আছে নাকি। এই সব মাছ তো সারাদেশেই নাই। তার উপর হাঙর তিমি...

ম্যানেজার।। আপা, না থাকলে কান কাইট্টা হালামু। তয় আন্নে আবার এগুলির অর্ডার দিয়েন্না, রিকুয়েস্ট। আন্নের লগে দুইনম্বরি নাই। পাবলিকে যা চাইবো , কোন না নাই। ছোড ছোড পিস কইরলে সব একরকম, একরকম কিনা আন্নে কন?

নায়িকা।। হ্যাঁ, তা অবশ্য।[ ( স্বগত) খাইচে, এতো আমার থেকেও বড় ফোর টুয়েন্টি। আল্লায় জানে ধরা না খাই শেষ পর্যন্ত] আচ্ছা, তাহলে এইটা শুধু বলেন কুসের মাংস নাই?

ম্যানেজার।। খালি মাইসের গোস্ত নাই আপা। তাও দিতে হাইরতাম, এইটা ধরেন কোন ব্যাপার না, তয় খাইব কেডা? লবণ লবণ লাগবো। বেশি কডা। যাউগ্যা, অন আমনে কন কি খাইবেন,
--- ঐ বলইদ্যা, আরে বেডা এই টেবিলে গেলাস ধু্ই হানি দে, পিরিজের হানি আন। কোক আর পেপসি দোনোটা দে-
ম্যাডাম আন্নে এক কাজ করেন, আঁর উপর চাড়ি দেন, আংগো হোটেলের সেরা খানা সব আঁই আইনতেছি, আন্নে আস্তে আস্তে খান।

নায়িকা।। ( স্বগত: খামু যখন ভালো মতই খাই। তুমি কত বড় ফোর টুয়েন্টি দেখতাছি আমি) ঠিক আছে ভাই , তাই করেন। তবে একটু তাড়াতাড়ি করবেন। আমার ট্রেন ধরতে হবে।

ম্যানেজার।। আন্নে আরাম করি বইয়েন। আঁই ব্যবস্থা করতাছি অখ্খনি। ঔ কইরে..

( হাঁক ছাড়তে ছাড়তে ম্যানেজার কেবিন হতে বেরিয়ে যায়)

-----------দৃশ্যের দ্বিতীয় ক্রম.........................
স্থান। একই রেস্টুরেন্ট , যে কেবিনে নায়িক বসেছিল সেই কেবিন।
চরিত্র।। অনুরুপ
দৃশ্য বর্ণনা।। এই দৃশ্যে দেখা যাবে নায়িকার টেবিলে প্রচুর খাবার দাবার। একদম টেবিল বোঝাই।
ডিরেক্টিং নোট।। এই দৃশ্যটি ফরোয়ার্ড মুডে দেখানো যেতে পারে। নায়িকা একের পর এক খাবার খাচ্ছে। ম্যানেজার তাকে বার বার এটা ওটা এনে দিচ্ছে। প্লেট একর পর এক খালি হচ্ছে। এভাবে কিছুক্ষন দেখানো যেতে পারে। একসময় সবগুলো প্লেট ড্রিংকসের বোতল সব খালি হয়ে যায়। এবারে ক্যামেরার ফরোয়ার্ড মুড নরম্যাল স্পিডে চলে আসবে)

নায়িক।। ( বেশ বড় সড় সশব্দ ঢেঁকুর তুলবে) আহ হা। ম্যানেজার সাহেব, আপনার দোকানের খাবার দাবার তো খুবই ভালো। আপনার দোকানের আরো উন্নতি হবে।

ম্যানেজার। জ্বে আপা, আপনেগো দোয়ায়। আন্নে আঁরে এক্বান সার্টিফিকেট দি যাইবেন্নি কোন?

নায়িকা।। সার্টিফিকেট? কিসের সার্টিফিকেট?
ম্যানেজার।। এই ধরেন, আংগো হোটেলের রাঁধা বালা, আন্নে খাই আরাম পাইছেন, এমন দুই চাইরখান কথা লেখি দিবেন। আঁই হোটেলে টাংগাই রাইখখুম।

নায়িকা।। ( হেসে) আমি তো বিখ্যাত কেউনা। ধরুন কোন লেখিকা কিংবা চিত্র নায়িকা বা মডেল হলেও আপনাকে একটা সার্টিফিকেট দিতাম।

ম্যানেজার।। আপা, কিচ্ছু বুঝনের উপায় নাই গো আইজ কাল। কে যে মডেল, কে যে মডেল না , কে নায়ক, কে নায়িকা কিছুই বুঝন যায় না। যেমন ধরেন, হেদিন দুপারে এক চেংড়া পোলা হোটেলে আইলো। হেভি ভাব। খাজুরের কাঁডার মতন চুল, প্যান্ট এরুম ঢোলা, পোট পাচ। খাই দাই কয় কি, হে তে বলে কিয়ের মডেল। কোন চিলমচি না বদনরাল, হেতের লগে অন টিঁয়া নাই, হরে দাম দি যাইব, হেতে মানিব্যাগ হালাই আইছে। মোট কথা বেড়া ছেড়া কতা বার্তা। আঁই কি কম সেয়ানি ? কইলাম, কোন চ্যানেলে আস্সেরে দেখা যায়, কন। ওমা, হেতে কয়, বেক চ্যানেলে। আইঁ টিবি চালাই কইলাম, চাই কই, কোন এডভ্যাটাই আমনে কইচ্ছেন, দেখি। কইলে বিশ্বাস কইত্তেন ন আপা। হরায়, দুই ঘন্টা টিভি চালাইলাম, হেতে একবার কয় চ্যালেন আই দেন, দিলাম চ্যানেল আই, আবার কয় এন টিভি, আবার ইটিভি... মোটকতা কতা ঘুরায়। ওম্মা কোন চ্যানেলেই হেতেরে দেখা যায়না। আঁই লোকজন বোলাই হেতেরে কইলাম- হাগলামি গিন থুই টিঁয়া বার করেন। আন্নে মডেল অইলে আঁইয়ো চিনামার গুন্ডা।

নায়িকা।। (উদ্বিগ্ন বোধ করে, বলে) তারপর?

ম্যানেজার।। তার হরে হেঁতে কাঁদি কাডি মাপ চায়। আঁই কি এত সোজা নি। আত্তেততন ঘড়ি খুলি রাই দিছি। কইছি, টিঁয়া লই আইলে ঘড়ি হিরাই দিমু। এই যে আঁর আঁতের ঘড়ি, এইটাই রাকছিলাম। ঠগি না , কি কন?

নায়িকা।। ( স্বগত: খাইচে ব্যাটাতো ওয়ান টুর ব্যাপারে বড় ওস্তাদ) খুব ভালো করেছেন। ঠকেন নাই একদম। আপনিতো খুব দক্ষ ম্যানেজার।

ম্যানেজার।। হেঃ হেঃ হেঃ । আঁর সামনে দি ওগ্গা মাছি ওতো গলি যাইতো হাইত্তনো।

নায়িক্।। আচ্ছা, ধন্যবাদ। খাওয়া বোধহয় একটু বেশমীই হয়ে গেছে। কেমন যেন লাগছে।

ম্যানেজার।। জ্বে না আপা, কি আর আন্নে খাইছে। আরো মেলা হদের তরকারী তো আন্নে ছুন ওনো।

( এমন সময় নায়িকা একটু শরীর খারাপের ভান করবে)
ম্যানেজার।। ও আপা, কি অইছে আপনের? ( স্বগত: খাইছে, হারামজাদারা কোন হুরান তরকারির লগে নোয়া তরকারি মিলাইন্না ছালন খাবাই দিছি নি কোন) , ও আপা...

নায়িকা।। না না আপনি এত ব্যস্ত হবেন না। এই এমনি মনে হয়। আচ্ছা এক খিলি পান পেলে বোধহয় হতো। আছে পান?

ম্যানেজার।। আছে নি মানে। এক্কেরে বাবা জর্দা, কাকা জর্দা লগে গুয়া মুরি, সিলেটের খয়ের, পাঁচ মিশালি মশলা... ঐ কইরে, কোনগা আছোন। এই দিকে ডবল খিলি হান লই আয়।

নায়িকা।। আপনা এই ফাঁকে বিল টিল নিয়ে আসুন না।

ম্যানেজার।। আরে থোন আন্নের বিল। হরে অইব। আগে আন্নে ঠিক অন।
(স্বগতঃ মাবুদ রে, কোন কেইসে নি হড়ি। বড় লোকের হে ডি কি এই সব বাসী তরকারী সহ্য অয়। ইন্নাল্লিলাহ, ইন্নাল্লিলাহ)

( একটা ছেলে পান দিয়ে যায়)
ম্যানেজার।। আপা হান খান, হানি খান। হানের কস হালাই দি খাইয়েন।

( নায়িকা পানে নেয়, মুখে পুরে চিবুতে থাকে)

নায়িকা।। থ্যাংক ইউ ভাই।

( খানিক চিবুনের পর আরো বেশি করে অসুস্থ হয়ে পড়ার ভান করে)

নায়িকা।। একি ম্যানেজার সাহেব, আপনাকে দুইটা দেখছি কেন?

ম্যানেজার।। অম্মা অম্মা কিয়া কঁয়? আঁরে দু'গা দেননি? কই আঁই তো একজন। মাগো ভূত হেত্তনি আইছে নি কুম্মুই তন। খাইছে রে, কাম সারছে, ঐ কি হানরে দিচচ?

নায়িকা।। এই যে চোখের সামনে দুইটা দোকান। ও কি দোকান ঘুরছে কেন? আপনি ঘুরছেন কেন?

ম্যানেজার।। আঁই কই ঘুরিয়ের। আপা, ভালা করি চান। মাবুদ রে, আপারে তো তাইলে লাইয়ে ধইচ্ছে। আঁই অন কি করি। দেশ দুইন্নার যে অবস্থা । রেবের যুগ, রেটের যুগ, চারদিকে চিতা কোবরা, আঁর অন কি অইব। দোঁয়ান তো আঁর উঁডি যাইব। আপা, ও আপা-

নায়িকা।। জ্বি জ্বি, ভাই আমার বিল দেন, আমি বাসায় যাই..

ম্যানেজার।। আপা, জুতাদি আঁরে দু'গা বাড়ি দেন, বিলের কতা কইয়েন না।
( ইতিমধ্যে দোকানের কর্মচারী দু'একটা জড়ো অয়, তাদের উদ্দেশ্য বকাবকি করে) আঁরে তোরা বেইজ্জত কইরচছ। কত বড় লোকের মাইয়া, কত শরীফ ঘরের মাইয়া আঁর ইয়ানে খাইতো আইছে। অঁন আঁর জেলের ভাত খানের জোগাড়। দেখছ্ছত্তি, মাথা ঘুরি হড়ি যায়ের, মগর বিলের কতা ভোলে ন। আঁরে তেঁরা খাইচত। এই যা, এক্কা্ন ক্যাব বোলাই লই আয়।
অই, এক্কান ফিরিজের কোক দে, আপা কোক খান । এক্কানা বইয়েন, ক্যাবে করি বাড়ীত যান গো আপা, আঁরে মাপ করি দেন।

( কোক আসে, নায়িকা কোক শেষ করে। এর ফাঁকে দর্শকদের উদ্দেশ্যে চোখ টিপ, ক্যাব আসে)

ম্যানেজার।। আপা, অখন কেরুম লাগে। আঁই ক্যাব বোলাইছে। আল্লা আল্লা করি উডেন। বেগগুনের চারকী যদি আইজ আঁই ন খাইছি।

( নায়িকা উঠে, যেতে যেতে অসুস্থতার ভান চলতে থাকে)
নায়িকা।। কিন্তু ভাই বিল?

মানেজার। আপা শরম দিয়েন না। আঁরে জেলের ভাত খাবাইয়েন না । আন্নে ক্যাবে উডেন।
নায়িক।। কিন্তু আপনাকে সার্টিফিকেট তো দেয়া হলো না?

ম্যানেজার।। লাইগদো নো গ আপা। লাইগদো নো। আঁর কল্লা কাডা গেছে আন্নের কাছে। আন্নে যান। বাসাত যাই সুন্থ অন। ( ক্যাবওয়ালাকে) ঐ বেডা, ধর ৩০০ টিঁয়া দি দিলাম, যিয়ানে যাইব কয়, লাই যা। সাবধানে যাবি।

নায়িকা।। ক্যাব দুই এনেছেন কেন ভাই?

ক্যাবচালক।।ভাই, মদ খাইছে নি। ক্যাব দুইটা কয় ক্যান।

ম্যানেজার।। ব্যাডা, থাবড়াই কান গরম করি হালাইয়ুম। তুই একখান ক্যাবই চালা। তাইলেই অইব।

( দোকানের একটা ছোকরা খানিক নিচু স্বরে ম্যানেজারকে বলে)

ছোকরা।। ম্যানেজার সাব। বিল কিন্তুক বহুত অইছিলো।

ম্যানোজর।। হারামজাদা, হারামদার আঁরে ক্রসফায়ারে হালাতি চাচ বেগগুনে। রেব চিনসনি, চিনছ? চামড়া খুলি হালাই বো। উল্টা সিধা খাবাই আবার বিল।
আপা, আঁরে মাপ করি দিয়েন, আঁই কানে ধইচ্চি, এমন ভুল আর অইতোন, যান সাবধানে যান।

( নায়িকা ক্যাবেতে উঠে, ক্যাব পেছনে একরাশ ধোঁয়া তুলে সামনে এগিয়ে যায়, ক্যামেরায় দেখা য়ায় ধোঁয়ায় ঝাপসা হতে থাকে ম্যানেজার ও তার দোকা্‌ন।)

ছবিসূত্র: গুগল
------------ইংরেজী নতুন বছরের শুভেচ্ছা---------------------------
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ ভোর ৬:৪৮
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×