বাংলাদেশই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে তার জন্মের বিরোধিতাকারীরাও বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারে! দিব্যি রাজনীতি করে যেতে পারে! রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে! বলছিলাম জামাতে ইসলামী দলটির ব্যাপারে। যে দলটি একাত্তরে শুধু স্বাধীনতার বিরোধিতাই করেনি, তারা সরাসরি বিরুদ্ধে পাক হানাদারদের হয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অংশগ্রহন করেছিল। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পাক হানাদাররা ফিরে গেলেও তাদের এই দালালেরা এখনও স্বাধীন বাংলার ভুখন্ডে রয়ে গেছে!
বিএনপি ও আওয়ামিলীগের কাঁধে ভর করে জামাত আজও এই বাংলার মাটিতে টিকে আছে! শুধু টিকেই আছে তা নয়, এই দলটি আজ বাংলাদেশের রাজনীতির এক নির্ণায়ক অপশক্তিতে পরিনত হয়েছে! আর এ অবস্থার জন্যে দুই বৃহত রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আ:লিগ উভয়ই দায়ী কারণ এই দুই দলই বিভিন্ন সময় নিজ নিজ স্বার্থে জামাতকে ব্যবহার করেছে। আর এ থেকে জামাত যতটুকু সুযোগ লাভ করেছে সেটার পূর্ণ ফায়দা উঠিয়ে আজ এক প্রকার দানবে পরিনত হয়েছে!
পবিত্র ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহার করে রাজনীতি করা জামাত যে কোনো সত্যিকারের ইসলামী দল নয় তা ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকেও প্রমান করা সম্ভব। আজ সেই আলোচনায় যাবো না তবে তাদের মুনাফেকির একটি উদাহরণ দেখাবো।
আমরা জানি ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভ হলো কালেমা, সালাত, রোজা, হজ এবং যাকাত। এই পাঁচটি বিষয় হলো ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস ও আমল। তবে জামাতিরা কিন্তু বিষয়টা সেভাবে দেখে না! জামাতিদের নিকট ইসলামের এই পাঁচটি মূল স্তম্ভের চেয়েও যে কর্মটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ তাহলো জিহাদ! তাদের ভাষ্য অনুযায়ী জিহাদকে কেন্দ্র করেই ইসলামের সবকিছু! এর বাইরে, বাকিসব হলো ট্রেনিং কোর্স! নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত এগুলো নাকি ট্রেনিং কোর্স! (নাউজুবিল্লাহ মিন যালেক)
এমন ইসলামপরিপন্থী, ধৃষ্টতাপূর্ণ, কুফরী কথাবার্তাই বলে গেছে জামাতিদের গুরু আবুল আলা মউদুদী। তার লেখা তাহফিমুল কোরআন কিতাবটিতে এই সমস্ত বয়ানের পাশাপাশি নানানরকম কুফুরী ও নবী রাসুলের শানে বেয়াদবিপূর্ণ কথাবার্তা লক্ষ্য করা যায়। এই তাহফিমুল কোরআনকে আবার জামাতিরা বিশ্বের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ কোরআনের তাফসির বলে দাবি করে থাকে! মজার বিষয় হলো উর্দুতে লেখা মউদুদীর এই তাহফিমুল কোরআনের`তাফসির আজ পর্যন্ত আরবী ভাষাতেই অনুবাদ করা হয়নি। ইংরেজিতেও হয়নি। অথচ জামাতিরা বলে বেড়ায় এটা নাকি দুনিয়ার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ তাফসিরুল কোরআন! মিথ্যাচারের তো একটা সীমা থাকা উচিত!
বাংলাদেশে এই জামাতিরা ইসলামের নাম ব্যবহার করে ও তাদের আর্থিক সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে এ দেশের একটা বড় অংশের মানুষকেই প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছে। এই মানুষগুলো প্রকৃত অর্থে দীন ইসলাম সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে না! তারা সরল বিশ্বাসেই ইসলামের লেবাসধারী এই প্রতারক জামাতিদের ফাঁদে পা দিয়েছে।
জামাতে ইসলামী নামের এই সর্বনাশা সংগঠনটি তাদের মূল দেশ পাকিস্তানেও একটি ঘৃণ্য ও প্রত্যাখ্যাত সংগঠন! আর বাংলাদেশে কিনা এরা রাষ্ট্রক্ষমতায় পর্যন্ত চলে গেছে! অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে জামাতের শুধু রাজনীতি কেন, কোনো কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকার নৈতিক অধিকার থাকার কথা নয়। সুতরাং জামাতের নিষিদ্ধ হওয়াই বাঞ্চনীয় এবং এতদিনে তাই হবার কথা ছিল। সরকার অবশ্য জামাত নিষিদ্ধের বিষয়টি আদালতের উপর ন্যস্ত করেছে কিন্তু তার আদৌ প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয় না। স্বাধীনতাবিরোধী বিরোধী কলাবরেটর ফোর্স জামাতের ব্যাপারে যে কোনো পদক্ষেপ নেবার এখতিয়ার রাষ্ট্রের আছে। রাষ্ট্র চাইলেই নির্বাহী এদেশের মাধ্যমে জামাত ও তার অঙ্গসংগঠন সমূহকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু তা না করে সরকার আদালতের দারস্থ কেন হলো সেটাই আমার বোধগম্য নয়। যাইহোক, এবার যত দ্রুত সম্ভব, কোনরকম টালবাহানা না করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি জামাতকে নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করা হোক।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৬