আজ রাতটিও সেই রাতের মতোই মনে হচ্ছে। ঝড়ো হাওয়া,অবিরাম বরষন। তবে পার্থক্য এতটুকুই সেদিন হারাবার অনেক কিছুই ছিল আজ নেই। নিজের নামটাই বিলীন হয়ে গেছে নতুন অস্তিত্বর কাছে। রাজকন্যা থেকে সে আজ নিশিকন্যা। বাবার বড় আদরের মেয়ে ছিল পরী। কিন্তু এখন রাত হলেই তার নাম হয়ে যায় পুতুল। হ্যা। আসলেই সে পুতুল। জীবন,সমাজ তাকে নিয়ে খেলেছে নিষ্ঠুর খেলা।
সেই রাতেও এমন ঝড়-বৃষ্টি ছিল। কোচিং থেকে বাসায় ফিরছিলো পরী। পোড়োবাড়িটার কাছাকাছি আসতেই তিনজন অমানুষের একটা দল তাকে তুলে নিয়ে যায়। যখন হুশ ফিরলো তখন বিদ্ধস্ত অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করলো পোড়োবাড়িটার মেঝেতে।
কোনমতে সে বাসায় ফিরলো। এর মধ্যে বাড়িতে তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে গেছে। বাবা বাইরে গেছেন তাকে খুঁজতে। সবকিছু জানার পর মা অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলেন।
সেদিনের পর থেকে সবাই যেন কেমন হয়ে গেল। এর মধ্যে তাদের বাসার মোবাইলে কয়েকবার ফোন আসছে। বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এতো টেনশন বাবা সইতে পারলেননা, হুট করে একদিন বাবাটা মারা গেলেন। পরী এবং তার ছোট দুই ভাইবোনকে নিয়ে তার মা অকুল পাথারে পড়লেন।
অভাব সইতে না পেরে পরী নামলো কাজের খোঁজে। পড়াশোনাতো আগেই বন্ধ হয়েছে। প্রথমেই সে গার্মেন্টসগুলীতে গেল।কোথাও সে চাকরি পেলনা। তিন চার দিন ঘোরার পর এক মহিলার সাথে তার দেখা হলো। চাকরির আশসাস দেখিয়ে তাকে পরদিন তার বাসায় আসতে বললো। ওই মহিলার বাসায় পরদিন ও গেলো। পরী জানতোনা তার জীবনে কি ঘটতে চলেছে। ওই মহিলা ছিল এক নামকরা পতিতালয় এর রাণি। সে পরীকে তার বাসায় আটকে ফেললো। সেদিন পরী আবারো বুঝতে পারলো তার শরীর তার কতবড় শত্রু! নারীত্ম তার অভিশাপ! ওখান থেকে সে ছাড়া পেলো রাত দশটায়।একটা সিএনজি ডেকে তাকে সেটাতে তুলে দেয়া হলো।আর তার হাতে কিছু টাকা গুজে দেয়া হলো।
এরপর কেটে গেল কিছুদিন।।।
এখনো কোথাও কাজ পায়নি পরী।
অভাবের অত্যাচার প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। অবশেষে পরী সিদ্ধান্ত নেয়। মনকে বোঝায় হারাবারতো আর কিছুই নেই।।।।
এখন পরী ওই মহিলার বাসার নিত্য মেহমান।।।
একজন পরী এভাবেই বিলীন হয়ে গেলো সমাজের অন্ধকার জগতে।
এমন হাজারো পরীর সপ্ন হারায় প্রতিনিয়ত, এমন হাজারো পরী ভেসে যায় কালের স্রোতে। কি দোষ পরীদের???
প্রশ্ন সময়ের কাছে,সভ্যতার কাছে,সমাজের কাছে।।।
প্রশ্ন, বিবেকের আদালতে।।।