গণভবনের ডাইনিং স্পেসে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন শেখ হাসিনা। ডোর বেল বাজল এসময়। ঈষত বিরক্তি প্রকাশ করল হাসিনার ভ্রু জোড়া। এই অসময়ে কে? গণভবনের বেল যেহেতু বাজিয়েছে, নিশ্চয় তেমন কেউই হবে। একটু মাথা নাড়িয়ে খাওয়ায় মন দিলেন তিনি। জোর করে না দিলে মুখে কিছু ঢোকানোয় দায়। রূচির এমনই অবস্থা। সামনে প্লেট নিয়ে মনের সাথে জোরজবরদস্তি করতে হয়।
দুমিনিটের মত সময় কাটল। তখন হাসিনার আড় চোখ জানান দিল, হালকা গোলাপী শাড়ী পড়া কোনো মহিলার আগমণ ঘটেছে কক্ষে। মহিলাটি একটু যেন খুঁড়িয়ে হাটছে। মুখ তুলে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালেন। আর তখনই অস্ফুট শব্দগুলো ছিটকে বেরোলো।
"আরেহ, খালেদা বু যে! হঠাত?"
"আরে বস, বস। ব্যস্ত হতে হবে না।"-খালেদা বললেন।
"এসময়ে যখন এসেছ, দুটো ডালভাত খেয়ে নাও।"
"আরেহ, জানই তো, আমি স্বল্পহারী। দুপুরে চা খায়, রাতে একেবারে ভাত। একটু চা-ই করতে বল"
নির্দেশ দিলেন হাসিনা। তারপর খালেদার দিকে ফিরে বললেন-
"এত অল্প খেলে হবে কি?" অসন্তোষ জানাল হাসিনার গলা।
খালেদা আস্তে করে বললেন, "আমার খেয়ে হবে কি বোন। দেশটাতো তুমিই চালাচ্ছ। পরিশ্রম তোমার"
"ও কথা বল না বু। তুমিই তো মাথার ওপর ছায়া হয়ে আছ, নয়ত কবে রোদ পুড়িয়ে মারত"
"হয়েছে হয়েছে. আমি আর কদিন"
"কেন বু? তুমি নিশ্চয় একদিন ক্ষমতায় আসবে। আমার চেয়ে ভাল দেশ চালাবে। তেমনি তো কথা ছিল।"
"সে জন্যই তো বেঁচে থাকা। দেশের হয়ে যা করতে পারতাম, কিছুই তো করিনি। শেষ সময়ে তাই পুষিয়ে দেবার চেষ্টা।"
"তাই বল বুবু। অনেক দায় মাথার উপর।। শোধ করতেই হবে।"
কথা বলছিলেন দুজন। একপর্যায়ে খালেদার হাত ধরে বেডরুমে নিয়ে গেলেন হাসিনা। বললেন, বস। কেন এলে বলত?
হাসিনা, জোর করে সরকার করেছ। নেতিবাচক কথা শুনি কেন?
কি কথা শুনলে আবার? আচ্ছা বু বলত, দেশের উন্নতি কি আমার সরকার করছে নাহ?
খালেদা বললেন, তাতো করছেই। এজন্যই তো জনগণ চুপ, বিশ্ব নির্বিকার, সেনাবাহিনী সাবলীল।
আর তুমি? চোখে চোখে তাকালেন হাসিনা।
হাসিনা, আপাতত তুমিই আমার চেয়ে যোগ্য। কিন্তু যেদিন তোমাকে যোগ্যতায় ছাড়িয়ে যাব সেদিনই বিএনপি ক্ষমতায় আসবে।
হাসিনা হাসলেন। সে তো জানি। তাই তো ক্রমাগত উন্নয়নে নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার চেষ্টা। আচ্ছা, নেতিবাচক কি বলছিলে? হাসিনা জিজ্ঞাস করলেন।
ওই ব্যাটা লতিফ সিদ্দিক এসব কি বলল? খালেদা জিজ্ঞেস করলেন।
"ওহ! ওকে চড়ানো দরকার। এমন বেয়াড়া।"
একশন নিলে না কেন?
যতপারি নিলাম তো বু। আসলে কর্মী নিবদ্ধ দল। হূট করে এত বছরের মানুষগুলোকে ছুড়া যায় না। প্রসেস লাগে। তোমার মত সমর্থন নিবদ্ধ দল তো নয় বুবু।
"সমর্থন দিয়ে কি হবে? দেখছ না আমার দলের দুরাবস্থা? "
যাই বল, বু। কিন্তু তোমার ছেলে বিদেশে বসে এসব কি বলছে? হাসিনার সপ্রশ্ন দৃষ্টি।
বেয়াদপ ছেলের কথা বল না হাসিনা। ওনি কখনো বঙ্গবন্ধুর চোখে চোখ রেখে কথা বলেননি আর তার ছেলেই কিনা। ছি: ছি:
আহ! বাদ দাও বু।
আচ্ছা, হাসিনা। তোমার দলের কিছু নেতাকে আমার ব্রেইন ডিফেক্টেড মনে হয়েছে। কটাকে তো মন্ত্রী বানিয়ে রেখেছ।
বাদ দিব বুবু। একটু সময় লাগছে। সবগুলোকে আস্তাকূড়ে ফেলব। ফ্রেশ ব্লাড আনব।
তা কি উদ্যোগ নিলে?
ছাত্র সংসদের খোলনলচে পাল্টাচ্ছি। আধবুড়ো সন্ত্রসীগুলোকে ছাত্রসংগঠন থেকে বের করব। শিক্ষিতদের প্রাধান্য দিচ্ছি। বুদ্ধিমান, তরূন, প্রগতিশীল নেতা আসবে। অস্ত্র ভিত্তিক সংগঠন এখন হবে কলম ভিত্তিক সংগঠন। একনাগাড়ে বলে হাপিয়ে উঠলেন হাসিনা।
আমিও নতুন ধারায় যাচ্ছি। এত দুর্বল ভাব কেন? দেশের সব রাজনৈতিক ঘটনার আমিই তো প্রাচীনতম সাক্ষী। এদেশের মানুষের ভালোবাসা আবার আমি আদায় করব
বুবু। সে বিশ্বাস আমার আছে। এখনো দেশের একজন অভিভাবক তুমি।
খালেদা আবার বললেন, রাজাকার হায়েনাদের ফাসি দিতে এত দেরী কেন?
হচ্ছে সব। আইনের ফাক বড় বেশী। সময় দরকার।সময়।
হাসিনা, দেশকে আমাদেরই তো এগিয়ে দিতে হবে। আর কদিন আছি আমরা?
হাসিনা বললেন, তাইতো! আর কদিন?
এপর্যায়ে এসে কথোপকথনটি স্বপ্ন হয়ে ভেংগে গেল। নাহ! কোন ব্যক্তিবিশেষ এ স্বপ্ন দেখে উঠে বসেনি ধরফর করে। কারন, এ স্বপ্ন দেখছিল, দেশের পনের কোটি মানুষ। পনের কোটি মানুষের পক্ষে একসাথে ধরফর করে উঠে বসা সম্ভব নয়।
-------------------বাস্তব দেশের অবাস্তব ঘটনা: হাসিনা-খালেদার কথোপকথন।
(বিদ্র: ঘটনা কাল্পনিক। সব প্রেক্ষাপট কাল্পনিক। রম্য হিসেবে লেখা. তুচ্ছ একক রম্য। )