****** হিজাব ও বিকৃত মানসিকতা ********
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি ডিপার্টমেন্ট এর নীল দলের প্রভাবশালী শিক্ষক ও সিনেট সদস্য একজন ছাত্রী কে হিজাব পরার অপরাধে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছে।
তিনি ছাত্রীকে বলেন - " হিজাব পরলে আমি কিভাবে বুঝব তুমি ছেলে নাকি মেয়ে।"
স্যার আমি বলতে চায়- কোন ছেলের পরিচয় জানার জন্য কি তাদের শার্ট পেন্ট খুলতে হয় ?
একজন মেয়ের বোরখা, হিজাব কি তার বাহ্যিক পরিচয়ের জন্য যথেষ্ট নয়?
সৌদি আরবের বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী আব্দুল্লাহ বিন সালমানকে এক বিবিসির সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন- সৌদি নারীরা ব্যবসা কিংবা ঘরের বাহিরে কাজ করেনা কেন? এ ক্ষেত্রে সরকার তাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কি?
আব্দুল্লাহ বিন সালমান বলেন- সৌদি নারীরা ঘরের বাহিরে কাজ করতে কিংবা ব্যবসা করতে অভ্যস্থ না। তাছাড়া সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে তারা এ সংস্কৃতির সাথে নিজেদের Adjust করে নিয়েছে। এখন কেউ যদি বলে আমরা নারীরদের ঘরের বাহিরে যেতে দিচ্ছিনা, তাহলে কথাটা যুক্তি সংগত নয়। কারণ যদি কেউ সেচ্ছায় ব্যবসা কিংবা চাকরি করতে চায়, তাহলে আমরা তাদেরকে বাধা দিচ্ছিনা। কিন্তু নারীর ক্ষমতায়নের নামে, কর্মক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণের নামে, প্যাশন সো এর নামে নারীদের ভোগের পণ্য বা অন্যের প্রদর্শনী বস্তুতে পরিণিত হতে দিতে পারিনা। প্রত্যেক কে প্রত্যেকের মুল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত। আর এর দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করবেন শিক্ষকেরা অন্যের মতামত কিংবা মুল্যবোধকে শ্রদ্ধা করার মাধ্যমে, ক্লাস থেকে বের করে দিয়ে নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কোন ড্রেস কোড নেই। এখানে যদি শার্ট পেন্ট, শর্ট পেন্ট, টি শার্ট, পাঞ্জাবী,টুপি, ট্রাউজার, খেলোয়াড় ড্রেস পরে ক্লাস করা যায়, তাহলে কেন হিজাব, বোরখা পরে ক্লাস করা যাবে না। আমারা সব ক্ষেত্রে Open Minded. কিন্তু অন্যের মুল্যবোধ কে শ্রদ্ধা জানাতে কেন আমারা Narrow Minded হয়ে যায়। অন্যের মুল্যবোধকে অশ্রদ্ধা কিংবা হেয় করার নাম মুক্তিবুদ্ধি চর্চা বা প্রগতিশীলতা নয় বরং এটা হল বিকৃত ও অসুস্থ মানসিকতার পরিচয়।
শিক্ষকেরা হল জাতির পথপ্রদর্শক, আর তার ছাত্ররা জাতির Future Maker । আমরা জানি আমাদের শিক্ষকরা উদার মানসিকতা লালন করে। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষকেরা ছাত্র ছাত্রীর প্রতি এই উদার মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেনা। এই যদি শিক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গি হয়, তখন শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের সম্মান দেখানো প্রশ্নাতীত। কারণ সম্মান জোর করে নেওয়ার বিষয় নয়।
আর কেমন জানি বাংলাদেশে একটা ট্রেন্ড শুরু হয়েছে- ভাল কিছু করতে দেখলেই এক ধরণের মানুষের চুলকানী বেড়ে যায়। সারা দেশে যখন মুক্তবুদ্ধি চর্চার নামে অপসংস্কৃতির পালন আর সভ্যাতার নিদর্শন নামে নগ্নতা আর বেহায়াপনার জোয়ার বইছে, তখন এক শ্রেণীর লোক এগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় লিপ্ত। দেশে চলমান প্রতিতাবৃত্তি, হোটেলে দেহ ব্যবসা,পর্ণগ্রাফি ইত্যাদি নৈতিকতা ধ্বংসকারী ও আত্মা সংহারক কর্মকান্ড সমুহের বিরুদ্ধে এই সকল বুদ্ধিজীবিদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না।
একবার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্রদের বলেছিলেন- বাংলাদেশে নাকি প্রতিতাবৃত্তি থাকা উচিত। তা নাহলে অপকর্ম নাকি বেড়ে যাবে এবং বর্তমান যুগের পুরুষেরা তাদের উচ্ছাসিত যৌবন সে কোথায় বিসর্জন দিবে। তখন এক ছাত্র দাড়িয়ে বললেন- স্যার আপনি ঠিক বলেছেন। তাহলে আপনার ছোট মেয়ে যে আমাদের ডিপার্টমেন্ট এ পড়ে তাকে নিয়ে শুরু করা হউক।
প্রত্যেক ধর্মে নারীদের পর্দা করার কথা বলা হয়েছে। খ্রিস্টান মহিলা পুরোহিত বা পাদ্রিরাও নির্দিষ্ট পোষাক পরিধান করে যা কিনা অনেকটাই বোরখার মত। ইসলাম প্রথমে পুরুষের পরে নারীদের পর্দা করার কথা বলা হয়েছে। নারীরা যেমন তাদের শরীর মোবারক হেফাজত করবে, তেমনি পুরুষেরা ও তাদের দৃষ্টিকে সংযত করবে। উভয়ের জন্য পর্দার বিধান রয়েছে। এই ক্ষেত্রে আমি দুটি উদাহরণ দিতে চায় -
১. কিছুদিন আগে ভারতের মধ্যে একজন নারীর লাশ কবর থেকে তুলে কিছু কুলাংগার ধর্ষন করেছে। সুতরাং এখানে নারীর পর্দার বিষয় নিয়ে কথা বলা যাবেনা। এটি পুরুষের বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। এক্ষেত্রে ছেলেদের অবশ্যই দোষ আছে। কেননা তাদেরকেও পর্দা করতে বলা হয়েছে, তবে পর্দা কেবল পোশাকে হয় না। চোখ , মুখ , অন্তর -এসবেরও পর্দার প্রয়োজন আছে। নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।
২. অনেক মেয়েরা আছেন- যারা কিনা বলেন আমরা যেভাবে চলাফেরা করি না কেন সেটা কোন সমস্যা না। পুরুষেরা নিজেদের সংযত করলেই সব ঠিক হবে যাবে। এটাও যুক্তিসংগত না। ধরুণ-আপনার কাছে অনেক টাকা আছে । আর আপনি প্রতিদিন ১০০০ টাকা রাস্তায় ফেলে রাখেন কিন্তু পরের দিন এসে তা খুঁজে পান না। টাকা যে রাস্তায় ফেলে রাখার জিনিস নয় - একথা আপনি বুঝতে চান না। বরং চিৎকার করে বলেন যে, আমার টাকা আমি যেখানে খুশি রাখব, চোর কেন তা চুরি করবে? চোর কেন তার মনকে পবিত্র রাখল না! টাকা দেখলেই কি চুরি করতে হবে?
বর্তমান কর্পোরেট কোম্পানী গুলোও দেখি নারীদের নিয়ে নতুনভাবে বিজনেস শুরু করেছে। কোন পণ্যের বিজ্ঞাপন নারী ছাড়া হয়না।আর এভাবে যে ওরা কেবল নারীকে নিয়ন্ত্রণ করে তা নয়, ওরা এভাবে ওদের ব্যবসাকেও নিয়ন্ত্রণ করে।এসব সূক্ষ বুদ্ধির লোকেরা তাদের প্রোডাক্টকে নানা আকর্ষণীয় ভঙ্গিমায় মানুষের সামনে উপস্থাপন করে আর ক্রেতা তৈরি করে।
সর্বশেষ একটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করতে চাই-
নোবেল বিজয়ী ইয়ামেনের তাওয়াক্কুল কারমান কে প্রশ্ন করা হয়েছিল - আপনি হিজাব পরিধান করেন কেন?
কারমান উত্তরে বলেছিলেন- কাপড় পরিধান না করাটা যদি আধুনিকতা হয়, তাহলে আদিম যুগের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি আধুনিক ছিল। কারণ তারা ত কাপড়ই পরিধান করতনা।বনের পশুরা হবে More Civilized.
সুতরাং আধুনিকতা মানে নগ্নতা নয়, লজ্জাহীনতা কোন সভ্যাতার নিদর্শন নয়। শালিন,মার্জিত, ভদ্র, সুস্থ মানসিকতার ব্যক্তিই সবচেয়ে আধুনিক ও সভ্য।