আমরা নাকি সন্ত্রাসী
নিযার কাব্বানী
(সিরীয়ান কবি, কুটনীতিক, নাট্যকার নিযার কাব্বানী ১৯২৮ সালে দামেস্কের এক বিত্তশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৫ দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে গ্রাজুয়েট কাব্বানী বহুদেশে সিরিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৫০টির। একটি কবিতার জন্য তাকে সিরীয়ান পার্লামেন্ট দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় যেখানে সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। এর পর ১৯৬৬ সাল থেকে তিনি বৈরুতে সাহিত্য সাংবাদিকতা ও প্রকাশনার সাথে জড়িত থাকেন। ১৯৯৮ সালে লন্ডনে তিনি ইন্তেকাল করেন।)
ওরা আমাদের সন্ত্রাসী বলে
যদি আমরা রক্ষা করতে চাই গোলাপ, নারী
ক্ষুরধার কবিতা আর আকাশের নীলকে।
এ এমন এক উপনিবেশ যেখানে কিছুই নেই
নেই পানি, নেই বাতাস
নেই তাঁবু, নেই উট
এমনকি আরবীয় কালো কফিও মেলে না এখানে!!
ওরা আমাদের সন্ত্রাসী বলে
যদি আমরা সাহসিকতার সাথে রক্ষা করতে যাই
বিলকিসের চুল
মায়সুনের ঠোঁট
যদি আমরা রক্ষা করি হিন্দকে, দা’দকে
লুবনা গাছ আর রাবাবকে
আর সুরমার প্রবাহকে
ঐশীবাণীর মত যা চোখের পাতায় নাযিল হয়।
তোমরা আমার কাছে পাবে না
একটি গোপন কবিতা
বা কোন গোপন ভাষা
অথবা লুকানো কোন বই
আমার কাছে এমন কোন কাসিদাও নেই
যা হিযাব জড়িয়ে রাস্তায় বের হয়।
ওরা আমাদের সন্ত্রাসী বলে
যদি আমরা একটি দেশের ধ্বংসাবশেষের কথা লিখি
বিচ্ছিন্ন ক্ষয়িষ্ণু একটি দেশ
ভাঙ্গনের শব্দ শোনা যায় যেখানে ক্রমাগত
এমন এক দেশ যে ঠিকানা খুঁজছে
এমন এক জাতি যাদের মাথার উপর আকাশ নেই
মর্যাদাপূর্ণ কোন কবিতা আর অবশিষ্ট নেই সে দেশের
আছে শুধু বিলাপ আর মার্সিয়া
এ দেশের দিগন্তে নেই কোন
বর্ণিল স্বাধীনত, লাল
বা নীল বা হলুদ
এমন এক দেশ যেখানে আমরা বাধাপ্রাপ্ত হই
পত্রপত্রিকা কিনতে
খবর শুনতে
এমন এক দেশ
এখানে সব পাখির
গান গাওয়া মানা
এমন এক দেশ
যেখানে লেখকরা অতি আতঙ্কে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে
শুন্যে লেখালেখি করার!!
এ দেশের কবিতা আমাদের মতই
এর বাক্য অসার, ছন্দহীন, রপ্তানীমুখী
অনারব চেহারার আর ভাষার ন্যায়
এর যেমন শুরু নেই
নেই তেমন সমাপ্তি
এর কোন সংস্রব নেই মানুষের সাথে
বা দেশের সাথে।
মানুষের দুরাবস্থার সাথেও নেই সংশ্লিষ্টতা
এমন এক দেশ
যে দেশ শান্তি সম্মেলনে অংশ নিতে যায়
অসম্মানের সাথে আর নগ্নপায়ে!!
যে দেশের পুরুষরা কাপড় ভিজিয়ে ফেলে
ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে
নারী ছাড়া কেউ নেই সেখানে
লবনাক্ত আমাদের চোখ
লবনাক্ত আমাদের মুখ
লবনাক্ত আমাদের কথা।
আমাদের অন্তরও কি অনুর্বর হয়ে পড়েছে
এই অনুর্বরতা কি সুপ্রাচীণ যুগ থেকেই বিদ্যমান
আমাদের উম্মতে আজ মুয়াবিয়া বা আবু সুফিয়ানও নেই
‘না’ বলার মত নেই কেউ
নেই কেউ উচ্ছেদকারীদের মুখোমুখি দাঁড়াবার
ওরা ছিনিয়ে নিয়েছে আমাদের ঘর, খাবার, যায়তুন
ওরা আমাদের গৌরবান্বিত ইতিহাসকে পন্য করেছে
আমাদের নেই কোন নিষ্কলুষ কাব্য
বাদশাহর হারেমে সতিত্ব হারিয়েছে সব কবিতা
মনুষত্যের কী আর অবশিষ্ট থাকে
যখন মানুষ লাঞ্ছনায় বাঁচে??
ইতিহাসে খুঁজি উসামা বিন মুনকিয
উকবা বিন নাফে, উমর, হামযা
আর খালিদকে, শামদেশ জয় করতে যারা ছুটে এসেছিলেন
আমি চাই একজন মু’তাসিম বিল্লাহকে
যিনি নারীদের রক্ষা করতে পারবেন পাশবিক নির্যাতন থেকে
আগুনের লেলিহান থেকে
অথচ এখনকার মানুষদের দেখি
সন্ত্রস্ত বিড়ালের মত নিজের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত
ইঁদুরের সাম্রাজ্যে।
আমরা কি গণঅন্ধত্বে আক্রান্ত?
নামি আমরা বর্ণ অন্ধ?
ওরা আমাদের সন্ত্রাসী বলে
যদি আমরা মরতে অস্বীকার করি
ইসরাইলী বুলডোজারে পিষে মরতে
ছিন্ন ভিন্ন করে আমাদের দেশ
আমাদের ইতিহাস
আমাদের বাইবেল
আমাদের কুরআন
আমাদের নবীদের কবরস্থান
যদি এটাই আমাদের পাপ হয়
তবে কত সুন্দর এই সন্ত্রাসবাদ!!
ওরা আমাদের সন্ত্রাসী বলে
যদি আমরা নিশ্চিহ্ণ হতে না চাই
মোঙ্গল, ইয়াহুদী আর বর্বরদের হাতে
যদি আমরা একটা ঢিল ছুড়ি
নিরাপত্তা পরিষদের জানালায়
মহান অধিপতিরা যা দখল করে আছে।
ওরা আমাদের সন্ত্রাসী বলে
যদি আমরা নেকড়ের সাথে আলোচনায় না বসি
আর বারবণিতার হাতে হাত না মিলায়!!
ওরা শিল্প সংস্কৃতির বিপক্ষে
কারণ ওদের এর অভাব আছে
ওরা সভ্যতা শিষ্টতার বিরোধী
কারণ এগুলো নেই ওদের মধ্যে।
ওরা এক বিশাল অট্টালিকা
অথচ দেয়ালবিহীন।
ওরা আমাদের সন্ত্রাসী বলে
যদি আমরা এই শতাব্দীকে প্রত্যাখ্যান করি
ওরা পরিণত হয়েছে
উদ্ধত, শক্তিশালী আর ধনী রাষ্ট্রে
আর ওরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হিব্রƒ পরিবেশক।
ওরা আমাদের সন্ত্রাসী বলে
যদি আমরা একটা গোলাপ ছুড়ে দেই
জেরুজালেমের দিকে
খালীলের দিকে
গাযার দিকে
নাসেরার দিকে
যদি আমরা খাদ্য পানীয় বয়ে নিয়ে যাই
অবরুদ্ধ নগরীর দিকে।
ওরা আমাদের সন্ত্রাসী বলে
যদি আমরা বিরোধীতা করি
আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে
যারা নিজেদের লক্ষ্যস্থির করেছে
একতা ছেড়ে দালালীর দিকে।
যদি আমরা বিদ্রোহ করি মহান অধিপতির আদেশের বিরুদ্ধে
তার গদির বিরুদ্ধে
যদি আমরা আইন ও রাজনীতি অধ্যয়ন করি
যদি আমরা মহান আল্লাহকে স্মরণ করি
যদি আমরা সূরা ফাতহ তেলাওয়াত করি
যদি আমরা জুমআবারে খুতবা শুনি
তবে আমরা সন্ত্রাসের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত।
ওরা আমাদের সন্ত্রাসী বলে
যদি আমরা লড়াই করি দেশের পক্ষে
মাটির সম্মানে
যদি আমরা বিদ্রোহ করি জাতির ধর্ষণ ঠেকাতে
আমাদের ধর্ষণ ঠেকাতে
যদি আমরা রক্ষা করি আমাদের মরুভূমির শেষ খেজুর বৃক্ষটা
আকাশের শেষ তারাটা
আমাদের নামের শেষ অক্ষরটা
আমাদের মায়ের দুধের শেষ ফোঁটাটা
যদি এটাই আমাদের পাপ হয়
তবে কত সুন্দর এই সন্ত্রাসবাদ
আমি এই সন্ত্রাসের সঙ্গেই আছি
যদি এটা সক্ষম হয় আমাকে বাঁচাতে
রাশিয়া, রোমানিয়া, হাঙ্গেরিয়া আর পোল্যান্ডের অভিবাসীদের কাছ থেকে।
তারা ফিলিস্তিনে বসতি গেড়েছে
আমাদের কাঁধে পা রেখে
ওরা চুরি করতে চায় আমাদের কুদসের মিনার
আকসার দরজা আর
কারুকার্যময় গম্বুজসমূহ।
আমি এই সন্ত্রাসেরই সমর্থক
যদি তা এই জাতিকে অত্যাচারীর হাত থেকে স্বাধীনতা দিতে পারে
মানুষকে যদি রক্ষা করতে পারে মানুষেরই হিংস্রতা থেকে
ফিরিয়ে দিতে পারে কমলা আর যায়তুনের বাগান
স্বর্ণালী ফিঞ্চ পাখি, যাযাবরের হাসি
তবে আমি সন্ত্রাসের সাথেই আছি
যা উদ্ধার করবে ইয়াহুদী আগ্রাসন থেকে।
আমি ততদিনই সন্ত্রাসের সঙ্গী যতদিন
আমেরিকা আর ইসরাইলেন মধ্যে বন্টনকৃত এই বিশ্ব স্বাধীন না হয়।
অনুবাদ: তাসনীম আলম
ঃধংহরসধষধস@ুধযড়ড়.পড়স