এখনও কুড়ালদের রাজত্ব। ছিদ্রদোষে দোষী করে সুইদের বন্দী করেছিল কুড়ালেরা। জানলেওয়ালা শ্রেণীর কুড়াল বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকবৃন্দ। এই যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন সভা সমিতিতে, টিভি চ্যানেলের ক্যামেরার সামনে প্রায়শই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামী শিক্ষকরা (দামীও বটে) সুইদের সংসদভবনের অকার্যকরতার অভিযোগ তুলতেন। দেশের সুইদের, রাজনীতিকদের অনেক ছিদ্রের একটি- তারা কলহপ্রিয়, তারা পরমতসহিষ্ণু নন, বলতেন শিক্ষকবৃন্দ। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ফোরাম- সিনেটে এমন সব কান্ডকারখানা করেন সেইসব নামী শিক্ষক মহোদয়েরা যাতে তাদের কুড়ালগুনের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত না হয়ে পারি না।
কাছাকাছি একটা উদাহর দেই। বার্ষিক সিনেট অধিবেশন ২০০৮। পেশাগত দায়িত্ব- সংবাদ সংগ্রহের জন্য উপস্থিত থাকতে হয়েছিল আমাকে। অধিবেশনের প্রধান কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরের বাজেট পাশ করা। সেই সাথে ২০০৭-২০০৮ এর সংশোধিত বাজেট। অধিবেশনের শুরুতে ছিল উপাচার্যের অভিভাষণ। তারপর কোষাধ্যক্ষের বাজেট-ভাষণ। কথা ছিল সিনেট সদস্যরা তারপর ভাষণের ওপর ‘আলোচনা’ করবেন। মানে বাজেট নিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হাল-হকিকত নিয়ে আলোচনা। কিন্তু যা হলো তাকে ‘কথা ছোড়াছুড়ি’ না বলে ‘আলোচনা’ বললে ‘আলোচনা’ শব্দটার ওপর নিরেট অবিচার করা হবে। শিক্ষকরা কথা ছোড়াছুড়ি করলেন একে অপরকে লক্ষ্য করে। চার পাঁচজন সিনেট সদস্য একই সাথে নিজেদের মাইক্রোফোন অন করে রীতিমত চিৎকার করে কথা বললেন অনর্গল। কেউ কারো কথা শুনলেন না।
অথচ এরকম তুমুল তর্কেও একবারও বাজেটের কথা আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নের কথা বললেন না কেউ। আবাসন সমস্যা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে চরমে সে কথা কারও মাথায় আছে বলে মনে হয় নি। হলে অবস্থানরত ছাত্রদের আবাসন সমস্যা কিংবা অনাবাসিক ছাত্রদের প্রাণান্তকর পরিবহন সমস্যার সমাধানের উপায় খুঁজতে আগ্রহী নন বক্তাদের কেউ। সমস্যার শিকার অবশ্য শিক্ষকবৃন্দও। যেমন- শিক্ষক আবাসন ব্যাবস্থার অপর্যাপ্ততা। যে সমস্যার কথা বলতে ভোলেন নি তারা। সিনেটে আলোচিত হয়েছিল ২২ আগস্টের কথা। ২২ আগস্টকে বিশেষ দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবী করা হলো তুমুল বক্তৃতায়। হলপ্রভোষ্ট পদে সাদা নীল ভাগাভাগি নিয়েও হৈ চৈ হলো খুব। ভালো কথা। নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাহসের সঞ্চারণের উদাহরণ হয়ে আছে ২২ আগস্ট। দিবস ঘোষণাও খারাপ কিছু নয়। কিন্তু দিবস ঘোষণা করেই কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বাড়ানো যায় বলে তো শুনিনি। হলপ্রভোষ্ট পদে সাদা নীল প্যানেল সমান থাকলে আপত্তি করার কিছু নেই। কিন্তু তাতে হলে নুন্যতম সুযোগ সুবিধা বাড়ার তো কোনো সম্ভাবনা নেই।
উপাচার্য নিজে যখন বক্তৃতায় জানান দেন বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ২৬ জন তখন তিনি আসলে কি বলেন? তিনি কি তো আসলে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম-শিক্ষাপদ্ধতি-শিক্ষক ও শিক্ষার পরিবেশের মানহীনতার কথা জানান দেন। আর্ন্তজাতিক রেটিং-এ প্রথম পাচঁশো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থাকে না।
এবারের বাজেট ১৬৪ কোটি টাকার অথচ শিক্ষার মান উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ মাত্র ৮ কোটি টাকা (প্রায়)। সিনেটে বাজেটের কথা হয় না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা হয় না। বাজেটে শিক্ষার মান উন্নয়নে বরাদ্দ যৎসামান্য। বলি, শিক্ষকবৃন্দ কোন জিনিসটাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য মনে করেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য উচ্চশিক্ষা তো? নাকি অন্যকিছু? এই যেমন- রাজনীতি।