শিরক করলে তৌহিদ থাকে না আর বিদআত করলে ভবিষ্যৎ ইবাদত কবুল হয় না। শিরক করলে আল্লাহকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয় আর বিদআত করলে রাসুল (সাঃ) কে অপমান করা হয়।
শিরক নিয়ে একটা পোষ্ট করেছিলাম, এবার বলবো বিদআত নিয়ে। বিদআত এমন এক পাপ যা মানুষ করে সওয়াব মনে করে। আর তাই একজন সন্ত্রাসীকে হেদায়েত করা সহজ কিন্তু বিদআতি কে হেদায়েত করা সহজ নয়।
বিদ’আতের কয়েকটি সহজ পরিচয় হল বিদ’আত সুন্নতের চেয়ে অতিরিক্ত, সুন্নতের এক রূপ আর বিদ’আতের থাকে কয়েক রূপ, সুন্নাত হল আল্লাহর রাসুল (সাঃ) থেকে অনুসৃত আর বিদ’আত হল ব্যক্তি বিশেষ কর্তিক উদ্ভাবিত। আর এই বিদ’আতের ব্যপারে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তাঁর উম্মতের জন্যে কঠোর সতর্কতা বানী উচ্চারন করেছেন। তিনি বলেনঃ
যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করল, যা করা সম্পর্কে আমাদের কোন হুকুম বা নির্দেশনা নেই তা অগ্রাহ্য। (মুসলিম)
যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনি কাজের উপর অন্য কোন কাজ আবিষ্কার করল তা হবে অগ্রাহ্য। (আবু দাউদ)
সাবধান তোমরা দ্বীনে নতুন কোন (ইবাদত) কিছু করা হতে বিরত থাকবে। কেননা, প্রত্যেক নতুন কিছু করার নামই বিদ’আত আর প্রত্যেক বিদ’আতি গোমরাহী এবং প্রত্যেক গোমরাহী হবে জাহান্নামী। (আবু দাউদ ও নাসাই)
আমাদের সমাজে সুন্নাতের নামে প্রচলিত কিছু বিদ’আতঃ
১, সম্মান করার নামে কদমবুসি করা (পা ছুয়ে সালাম করা)
২, নতুন দোকান, বাড়ি, অফিস বা গাড়ি উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে কুরান খতম , মিলাদ মাহফিল বা খতমে গাউসিয়া পড়া।
৩, ছেলে বা মেয়ের পরীক্ষা, বিদেশে যাত্রার প্রাক্কালে, বিপদ থেকে রক্ষা বা আর্থিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কোন আলেম বা মৌলভী দ্বারা কুরআন খতম করানো।
৪, হাফেজ দ্বারা খতমে সাবিনা পড়ানো।
৫, রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশিত দুরুদ ছাড়া অন্য দুরুদ পড়া। যেমন—দুরুদে লাখি, দুরুদে তাজ, দুরুদে হাজারী, দুরুদে মুক্কাদাস, দুরুদে নারীয়া দুরুদে মাহী, দুরুদে মুজাদ্দেদিয়া, দুরুদে কাদেরিয়া, দুরুদে চিস্তিয়া, দুরুদে নকশ বন্দিয়া বা অন্য সকল দুরুদ যা ব্যক্তি বিশেষ কর্তৃক রচিত।
৬, রাসুলের(সাঃ) এর উপস্থিতি মনে করে দাঁড়িয়ে দুরুদ পড়া।
৭, ইসতিনজার ক্ষেত্রে ঢিলা বা টয়লেট পেপার দিয়ে পুরুষাঙ্গ হাতে ধরে এদিক ঐদিক হাটা হাটি কিংবা চল্লিশ কদম হাটা, মাটিতে জোরে জোরে পা মারা, এক উরু দিয়ে অন্য উরু তে চাপ দেয়া , যা ভদ্রতা, সভ্যতা , সুরুচি দ্বীনি মর্যাদা ও লজ্জার বিপরীত।
৮, আযানের পূর্বে সালাত ও সালাম পেশ করা।
৯, সালাত শুরু করার পূর্বের ‘ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়ালিল্লাযি’ এই দোয়া পাঠ করা।
১০, মুখে নিয়্যাত উচ্চারণ করে পড়া।
১১, সালাতের শেষে ইমামে নেতৃত্বে মোনাজাত আবশ্যিক মনে করা।
১২, জুমআর খুতবার সময় ইমাম কারুকার্য সম্পন্ন ও লম্বা লাঠি ব্যবহার করা।
১৩, রোজার নিয়্যাত মুখে মুখে বলা।
১৪, কোন পীর অলীর মাজার জিয়ারত করা। (কবর জিয়ারত করা যাবে)
১৫, রবিউসসানির ১১ তারিখে ফাতেহা ইয়াজদাহুম এর নামে বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী সাহেবের নামে ফাতেহা বা উরস করা।
১৬, শবে বরাত ও শবে মেরাজের বিশেষ সালাত পড়া।
১৭, নারায়ে রিসালাত ও নারায়ে গাউসিয়া স্লোগান দেয়া।
১৮, হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়ে প্রথমে বায়তুল্লাহ না গিয়ে সরাসরি মদীনা শরীফ জেয়ারত করা।
১৯,তাসবীহের ছড়া দিয়ে তাসবীহ গননা করা বিদ’আত, আঙ্গুলের গিরা দ্বারা গননা করা সুন্নাত। কেননা আঙ্গুল সমূহ হাশরের ময়দানে সাক্ষ্য দেবে (আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসায়ি)
২০, কুরআন তিলাওয়াতের সময় কানে মুখে হাত দিয়ে চেহারা বিকৃত করে তেলাওয়াত করা এবং তেলাওয়াত শেষে ‘সদাক্বাল্লাহুল আ’যীম’ বলা।
২১, মীলাদ-কিয়াম করা
২২, জামায়াতবদ্ধ বা সম্মিলিত যিকির করা
২৩, শুধু আল্লাহ বা ইল্লাল্লাহ যিকির করা (বলতে হবে-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)
২৪, কুলখানী, চেহলাম বা চল্লিশা এবং মৃতের উদ্দেশ্য খানা খাওয়ানো
২৫, আযান ইকামতের মধ্যে বা অন্য যেকোনো সময় রাসুল সা. এর নাম শুনলে বৃদ্ধা আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখে লাগানো
২৬, কুরআন নীচে পড়ে গেলে লবণ কাফফারা দেয়া, সালাম করা,কপালে লাগানো ইত্যাদি
২৭, জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ না করা। যে কোন সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ না করলে সালাত বাতিল হয়ে যায়
২৮, মৃত ব্যাক্তির কাজা নামাজের কাফফারা দেয়া
২৯, ৭০ হাজার বার কালিমা খতম করা বা দল বেধে লক্ষ বার কালেমা খতম করা
৩০, অজুতে ঘাড় মাসেহ করা
ইত্যাদি ইত্যাদি............আরো অসংখ্য।
বিদ’আতীদের পরিনামঃ
আল্লাহ বলেছেনঃ
"আপনি বলে দিন, আমি কি তোমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের সম্পর্কে জানিয়ে দিব? (দুনিয়াবী জীবনে) যাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে গেছে। অথচ তারা ভাবে যে, তারা সুন্দর আমলই করে যাচ্ছে।"
***সুরা কাহফঃ আয়াতঃ ১৮: ১০৩-১০৪।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
"তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হতে বিরত থাক। নিঃশ্চয় প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদআত ও প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী।"
***আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাতঃ ১৬৫।
"বিদআতীর উপর আল্লাহ এবং ফেরেশতা ও সকল মানুষের লা‘নত বর্ষিত হয় এবং বিদআতীর কোন আমলই কবুল হয় না।"
***বুখারীঃ ৩১৮০।
"প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম।"
***নাসাঈঃ ১৫৭৮।
"বিদআতিরা হাউযে কাওছারের পানি পান করা হতে বঞ্চিত হবে।"
***মুসলিমঃ ৪২৪৩।
আল্লাহপাক আমাদের বিদআত থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দিন, আমীন।
YOU CAN VISIT MY BLOG:
https://www.shishir54.xyz
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৫