আমাদের দেশে বিয়ের আগেরদিন গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান করার রীতি সেই প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে। এটা আমাদের ঐতিহ্য ও লালিত একটি সংস্কৃতি।
মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী থানাধীন আড়িয়ল- বালিগাঁও ইউনিয়ন এর বালিগাঁও গ্রাম।
বিগত ১০/১২ বছর যাবত এখানে একটি অদ্ভুত সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।আমাদের এলাকায় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক(!!??!!) অনুষ্ঠান থাকতেই হয়। কয়েকজন গানের শিল্পি বা দল আর একটি "ড্যান্স গ্রুপ"। নাচ/ গানের দলে "নারী" পারফরমার মাস্ট। সেই নারি পারফরমারকে সুন্দরী, তরুনী, সেক্সি হতে হবে। নাচ সবই "ডিসকো নাচ"। আশেপাশের আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশি, আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলেই এই অনুষ্ঠান উপভোগ করে। অনুষ্ঠানের শিল্পি যত উড়াধুড়া- হোস্টের গর্ব তত বেশি।
ধনী গরিব সবাইকেই সাধ্যমত এরকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হয়। ইয়াং পোলাপান এক্ষেত্রে ব্যাপক উতসাহী। বর/কনের ভাই/মামা/চাচারা সাধারনত এর উদ্যোক্তা। শিল্পি ও সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করা হয়। ব্যপক আলোকসজ্জা করা হয়। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে রাত ২/৩ টা পর্যন্ত চলে নাচ গান।
যাদের বিবাহ যোগ্য ছেলে মেয়ে নাই কিন্তু শখ আছে ষোল আনা তারা তাদের ছেলের সুন্নতে খাতনা বা মেয়ের নাক/কান ফোড়ানী অনুষ্ঠানের আগের রাতে "গায়ে হলুদ" অনুষ্ঠান করে।
এপর্যন্ত ঠিক আছে। এর সাথে সাথে এসব অনুষ্ঠানে "মদ/বিয়ার" অত্যাবশকীয়। এটা ছাড়া অনুষ্ঠান পূর্ণতা পায় না । ১৬-৩৫ বছরের মেহমানদের (বর/কনের ছোট/বড় ভাইয়ের দোস বন্ধুদের) জন্য এটা লাগবেই। দাওয়াতের সময়ই জিজ্ঞাস করা হয়- "কয় বোতল/কেস আনছোস???"
এটাও ধনী গরিব সাধ্যমত আয়োজন করে। মদ- বিয়ারের জন্য গায়ে হলুদে বাজেট থাকে ১০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত।
একদিকে চলছে বিকট শব্দে নাচ গান আর একটু আড়ালে গিয়ে ছেলেদের মদ বিয়ার খাওয়া। খেয়ে দেয়ে তারা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। মিউজিকের তালে তালে তারা উদ্দাম নৃত্যে মেতে ওঠে। মুরুব্বিরা এদিন একটু নমনীয় থাকে। একটু ধনীদের বাড়িতে মোটামোটি প্রকাশ্যেই খাওয়া চলে। বয়সের ব্যবধানও অনেকে ভুলে যায়। বাপের বন্ধু আর পোলার বন্ধু একাকার হয়ে যায় । তো নাচানাচির সময় প্রায়ই ঘটে আগত কোন মেয়ের উপর অথবা আগত কোন নারী শিল্পির উপর উচ্ছৃংখল হামলা, ইভটিজিং। কখনো কখনো ব্যপার্টা ভয়ানক পর্যায়ে চলে যায়- মারামারি পর্যন্ত হয় ।
তো সম্প্রতি আমাদের গ্রামের মুরুব্বিরা আর মসজিদের ইমাম সাহেব মিলে ফতোয়া দিয়েছে যে- গায়ে হলুদে নাচ গান আর সাউন্ড সিস্টেম চলবে না। যে/যারা করবে তাদের অনুষ্ঠানে গ্রামের কেউ যাবে না।
দারুন ফল দিয়েছে তাদের এই শক্ত অবস্থানের কারনে। এখন প্রায় ৬/৭ মাস যাবত কোন অনুষ্ঠানে নাচ গান হয় না। এটা নিয়ে অবশ্য অনেকে মনঃক্ষুন্ন। কারন তাদের বাড়িতে হয়তো বহু বছর পর কারো বিয়ে শাদি হচ্ছে। তারা নাচাগানা করতে পারছে না।
নাচ গান বন্ধ হলেও মদ বিয়ার বন্ধ হয় নি। এখন দাওয়াতি পোলাপান অনুষ্ঠানে গিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ার পর মদ/বিয়ার খেয়ে চুপ করে চলে আসে। এটা থামানোর উপায় মুরুব্বিরা এখনো বের করতে পারে নি।
এই সংস্কৃতি কম বেশি সমস্ত মুন্সিগঞ্জ জেলা জুড়ে চলছে।
-----------------------*************-----------
ব্লগে দেখতে দেখতে ২ বছর হয়ে গেল। নানা ঘটনামুখর এই ২ বছরে সামুতে নিয়মিতই ছিলাম। অত্যন্ত আনন্দের সাথেই ছিলাম। কখনো হয়তো ক্ষুব্ধ হয়েছি, বিরক্ত হয়েছি। এই ব্লগীয় পথচলায় যাদের অকুন্ঠ সমর্থন, ভালোবাসা পেয়েছি তাদের সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।