মেঘনার বুকে বসত মোদের – নৌকাতে ঘর বাড়ি
শত বছর ধরে আমরা নৌকাতেই বাস করি।
ডাঙ্গায় কোন জমি জমা নেই, নেই কোন অধিকার
নদীর পাড়ে নৌকা বেধে চলছে এই সংসার
এখানে শিশুর জন্ম হয়- এখানেই বেড়ে ওঠা
এ নৌকা- ও নৌকা- যাবে ওরা কোথা।
পেশায় আমরা সবাই জেলে- দিন আনি দিন খাই
বেঁচে আছি এইতো বেশি- অন্য স্বপ্ন নাই
সন্তানেরা বড় হচ্ছে – বিদ্যা শিক্ষা ছাড়া
আমরা ভাসমান- নদীতে থাকি- স্থায়ী ঠিকানা হারা
ছেলে মেয়ে পায়না সুজোগ ডাঙ্গার স্কুলে পড়ার
কিভাবে স্বপ্ন দেখবে নতুন জীবন গড়ার।
এমনি করেই দিন চলে যায় – বহমান এই জীবন
আমিও জেলে ছেলেও জেলে- এটাই ভাগ্য লিখন
আমাদের মেঘলা ভাগ্যাকাশে হঠাত সূর্যোদয়
পোড় খাওয়া মানুষ আমরা- নতুনে ভয় হয়।
হাতে নিয়ে আলোর প্রদিপ এলেন মহাশয়
সীমিত সাধ্যে গড়ে দিলেন ধীবর বিদ্যালয়।
স্বপ্ন দেখি নতুন করে সন্তানদের নিয়ে
ভর্তি করে দেই ওদেরকে সেই ধীবর স্কুলে গিয়ে।
আমরা পারিনি ওরা পারবে নতুন জীবন গড়তে
অভাবের সংসার, তবুও ওদের পাঠিয়েছি পড়তে
বাচ্চারা সব দারুন খুশি নতুন বই পেয়ে
আগ্রহ ভরে স্কুলে যায় নেচে আর গান গেয়ে
পড়াশোনা আর ছবি আকায় হতনা অবহেলা
সমান তালে চলতো ওদের সংস্কৃতি আর খেলাধুলা।
স্বল্প বেতনেও আন্তরিক ছিলেন শিক্ষকেরা
শিশুদের জন্য ভালোবাসায় মনটা তাদের ভরা।
সেই মহাশয়, আরো মহাশয় – তাদের সহায়তায়
চারটি বছর কি সুন্দর চলে গেল হায়।
স্বপ্ন গুলো বাড় বাড়ন্ত মেলছিল বেশ ডানা
কিন্তু হায় অভাগাদের স্বপ্ন দেখতে মানা।
টিনের চাল আর বাশের বেড়ার ছোট্ট বিদ্যালয়
কাল বৈশাখির ভয়াল থাবায় ভেঙ্গে চুরমার হয়
ছাত্র শিক্ষক অবিভাবক সবাই মূহ্যমান
তিলে তিলে গড়া স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে হয় খানখান
তবুও ক্ষীণ আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিলাম মোরা
খোলা আকাশে- গাছের নিচে ক্লাস করতো ওরা
সেই মহাশয় দ্বারে দ্বারে ঘুরে চেয়েছিল সহায়তা
অনেকেই তখন এগিয়ে আসে দেখিয়ে মানবতা।
কেনা হয় টিন- ঊঠলো নতুন ঘর
সবার মাঝে বইছে তখন দারুন খুশির ঝড়
আবার ওরা স্কুলে যায়- বড় হতে হবে
আসুক তুফান কালবৈশাখি- রুখে দিব তবে।
এই সমাজে আছে এমন অনেক মহাজন
তাদের জন্যই গড়ে ওঠে-
মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন।
---------------------------------------------------------
চিত্রগ্রহনঃ আজমান আন্দালীব
পরিচালনাঃ শিপু ভাই