অরণ্য, পাহাড়, ঝর্না, লেক, পাহাড়ী নদী আর পাহাড়ী আদিবাসী এসব যাদের পছন্দ ভ্রমনের জন্য তারা বেছে নিতে পারেন রাঙ্গামাটি জেলাকে। আর সগুভলং ঝর্ণা দেখার শ্রেষ্ঠ সময় কিন্তু এখন।
কি কি দেখবেন?
১) শুভলং ঝর্ণাঃ কেবল বর্ষাকালে শুভলং ঝর্নার পানি থাকলেও অসাধারন শুভলং চ্যানেল দেখতে সারা বছরই পর্যটকদের আগমন ঘটে এখানে। ঘুরে দেখতে পারেন শুভলং আর্মী ক্যাম্প ও শুভলং বাজার। রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার থেকে শুভলং আপ-ডাউন রিজার্ভ বোট ভাড়া প্রায় ১২০০ টাকা।খরচ কমাতে এবং ইঞ্জিন বোটের ইঞ্জিনের বিকট শব্দ থেকে রক্ষা পেতে রিজার্ভ বাজার থেকে লঞ্চে শুভলং যেতে পারেন। লঞ্চ ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা।
২) ঝুলন্ত ব্রিজঃ দুই পাহাড়ের মাঝে প্রায় ঝুলন্ত এই ব্রিজটি দেখতে রাঙ্গামাটিতে অসংখ্য পর্যটকের আগমন ঘটে। ব্রিজের এক পাশের পাহাড়ের উপর রয়েছে শিশুদের জন্য দোলনা, স্লিপার সহ অন্যান্য বিনোদনের ব্যবস্থা।ব্রিজের নিচ থেকে নৌকা ভাড়া করে লেকে ভ্রমন করতে পারেন। ঝুলন্ত ব্রিজে প্রবেশ ফি জনপ্রতি ১০ টাকা।শরের তবলছড়ি থেকে ঝুলন্ত ব্রিজে সিএনজি ভাড়া ৫০-৬০ টাকা, বনরূপা থেকে ১২০ টাকা।
৩) রাজবন বিহারঃ রাঙ্গামাটি ঘুরতে গেলে আবশ্যই রাঙ্গামাটির ঐতিয্যবাহী রাজবন বিহার ঘুরে আসবেন।এটি রাঙ্গামাটি জেলার চাকমাসহ অন্যান্য উপজাতীদের প্রধান বিহার। মূলত পাশ্চাত্য ধাচের নৈর্মান কৌশল ও স্থাপত্যের কারনে পর্যটকদের আকর্ষন এই বিহারটি। বিহারে গেলে বনভান্তেরর (ধর্মগুরু) মমি দেখে আসবেন। রাজবন বিহারের পাশেই চাকমা রাজার বাড়ি।রাজবাড়ি যেতে নৌকা পারাপার জনপ্রতি ৫ টাকা। শহরের বনরূপা থেকে রাজবন বিহারের সিএনজি ভাড়া ৫০ টাকা, তবলছড়ি থেকে ১২০ টাকা।
*** রিজার্ভ বাজার থেকে ১৫০০ টাকায় বোট নিয়ে উপরের ৩/৪ টি স্পট সাথে টুকটুকি ইকো ভিলেজ, চাংপাং, পেদাটিংটিং একসাথে ঘুরতে পারেন। তবে শেষ ৩ টি স্পট মুলত দ্বীপের মধ্যে খাবার রেস্ট্যুরেন্ট।খাবার সামান্য কস্টলি হলেও পরিবেশ ও পাহাড়ি ধাচের কিছু খাবারের জন্য অন্তঃত একবেলা এখানে খেয়ে নিবেন।
৪) শেখ রাসেল এভিয়ারী এন্ড ইকো পার্কঃ কাপ্তাই অবস্থিত পার্কটিতে রয়েছে বাংলাদেশের ধীর্ঘতম (২.৫ কিঃমিঃ) ক্যবল কার।পার্কে প্রবেশ ফি ২৩ টাকা এবং ক্যাবল কারের টিকেট ফি ২৩০ জনপ্রতি টাকা (বাচ্চাদের ১১৫ টাকা) টাকার পরিমান একটু বেশি মনে হলেও ১৫ মিনিটের এক অসাধারন এডভ্যাঞ্চার উপভোগ করবেন এই ক্যবল কার ভ্রমনে। রাঙ্গামাটি হতে ইকো পার্কের বাস ভাড়া জনপ্রতি ৬০ টাকা।
৫) ঝুম রেস্তোরাঃ কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত এই ট্যুরিস্ট স্পটটি শেখ রাসেল এভিয়ারী এন্ড ইকো পার্ক থেকে ৬ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত। প্রবেশ ফি ২০ টাকা।এখানে বসে উপভোগ করবেন পাহাড়ী নদী, নদীর বাক, পাহাড় এবং চা বাগান। দুপুরের খাবার এখানেই সেরে নিবেন। আর নৌকায় নদী ভ্রমন মোটেও মিস করবেন না।নদীর দুই পাশে খাড়া পাহাড় ও অরণ্যের কারনে বাংলাদেশের যে কোন নদী অপেক্ষা এখানে নৌ ভ্রমনের স্বাদই আলাদা।
৬) চিৎমরম গ্রাম ও টাওয়ারঃ ঝুম রেস্তরা হতে ৪ কিঃমিঃ দূরে চিৎমরম। এখানে রয়েছে বনবিভাগের নির্মিত ২ টি টাওয়ার। দূরদূরান্তের পাহাড়, কাপ্তাই লেক, কর্নফুলী নদী উপভোগ করা যাবে এই পাহাড় থেকে। হাতে সময় থাকলে নদী পাড় হয়ে ঘুরে আসতে পারেন চিৎমরম গ্রামে।মার্মা অধ্যুষিত এই গ্রামে মার্মাদের কৃষ্টি-কালচার দেখার পাশাপাশি চিৎমরম মন্দিরও ঘুরে দেখতে পারেন। *** রাঙ্গামাটি হতে ১৫০০-২০০০ টাকায় সিএনজি অথবা ৩০০০-৪০০০ টাকায় মাইক্রবাস রিজার্ভ নিয়ে কাপ্তাই উপজেলার শেখ রাসেল এভিয়ারী এন্ড ইকো পার্ক,ঝুম রেস্তোরা,চিৎমরম গ্রাম ও টাওয়ার দেখতে পারেন।রিজার্ভ গাড়িতে অসাধারন প্রাকৃতিক সৌন্দয্যে ভরপুর রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই এর নতুন রাস্তা ভ্রমন করতে পারেন যা বাসে ভ্রমনে সম্ভব নয়। আর আগে থেকেই অনুমতি নিয়ে আসলে কাপ্তাই এ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও কর্ণফুলী পেপার মিল ঘুরে দেখতে পারেন।
*** রাঙ্গামাটি বেড়াতে আসলে অবশ্যই একদিন কাপ্তাই উপজেলার জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত।
কোথায় থাকবেন? ১) রংধনু গেস্টহাউজঃ বনরূপায় এটি মূলত হোম স্টে টাইপের গেস্টহাউজ। এখানে রয়েছে ওয়াইফাই, রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা।রুম ভাড়া ত্রিপল/ফ্যামিলি বেড ছুটির দিন ৮০০ টাকা অন্যান্য দিন ৬৫০ টাকা। যোগাযোগ- ০১৭১২৩৯২৪৩০। ফেসবুকঃ http://www.facebook.com/rangdhanuguesthouse. ২)পর্যটন মোটেলঃ রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত ব্রিজের পাশেই অবস্থিত।ভাড়া নন এসি টুইন বেড- ১২০০ টাকা, এসি টিন বেড- ২০০০ টাকা। ফোন- ০৩৫১-৬৩১২৬ ওয়েবসাইট- Click This Link ৩) হোটেল গ্রিন ক্যাসেলঃ রিজার্ভ বাজারে অবস্থিত। ভাড়া নন এসিঃ সিঙ্গেল বেড- ৮০০ টাকা, কাপল বেড- ১০০০ টাকা, ত্রিপল বেড ১২০০ টাকা। এসি- কাপল বেড-১৬০০, ত্রিপল বেড ২০০০ টাকা। যোগাযোগঃ ০৩৫১-৬১২০ 4) হোটেল সুফিয়াঃ ০১৫৫৩৪০৯১৪৯, ফিসারী ঘাট, কাঁঠালতলী, রাঙ্গামাটি।
কিভাবে যাবেন ?
ঢাকা হতেঃ ঢাকার ফকিরাপুল মোড় /সায়দাবাদ জনপদের মাথায় রাঙ্গামাটিগামী অসংখ্য বাস কাউন্টারের অবস্থান। সকল বাসই সকাল ৮.০০ হতে ৯.০০ টা এবং রাত ৮.৩০ হতে ১১.০০ এর মধ্যে ঢাকা ছাড়ে। ভাড়াঃ ঢাকা-রাঙ্গামাটিঃ এসি ৯০০ টাকা (শ্যামলী), বিআরটিসি এসি ৭০০ টাকা, নন এসি সকল বাস- ৬২০ টাকা।
চট্টগ্রাম হতেঃ চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড়ে রাঙ্গামাটিগামী বাস কাউন্টার সমূহের অবস্থান। এখানে লোকাল ও ডাইরেক্ট দুই রকমের বাস পাওয়া যায়। ভাড়া সামান্য বেশি হলেও ডাইরেক্ট বাসে উঠাই বুদ্ধিমানের কাজ। ভাড়াঃ চট্টগ্রাম- রাঙ্গামাটিঃ ১২০ টাকা(ডাইরেক্ট)
ঈদে রাঙ্গামাটি ভ্রমনে রংধনু ভ্রমন বিলাসের আকর্ষনীয় প্যাকেজ গ্রহন করতে পারেন। বিস্তারিত http://www.facebook.com/rangdhanuguesthouse
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০৯