মানুষ স্বপ্ন দেখে, কখোনো ঘুমিয়ে আবার কখোনো জেগে। স্বপ্নের বিপুল বিশ্বে কোন সীমান্ত নেই, নেই কোন অনুশাসন। তাই তো মানুষ স্বপ্ন দেখে আকাশে উড়ে বেড়াবার, রাজা হয়ে সিংহাসনে বসে থাকার, প্রিয় মানুষের হাত ধরে ইচ্ছে স্বাধীন ছুটে বেড়াবার।এরকম আরো কত কী..।
আমি মানুষটি ক্ষুদ্র, আমার স্বপ্নের পরিসর ছোট। আর যে স্বপ্ন দেখি তার রেশ কাটতেও খুব একটা সময় লাগেনা। কিন্তু গত সপ্তাহে রাতে যে স্বপ্নটি দেখেছি তার রেশ কাটতে আমার বহুদিন পর্যন্ত যে সময় লাগবে, তাতে সন্দেহ নেই।
আমি একা ঘুমাচ্ছিলাম। স্বপ্নে কাতর যে মুখটি আমার সামনে ভেসে উঠল, সে আমার মায়ের মুখ। তাঁর বড় অসুখ,জটিল রোগ। দুরারোগ্য ব্যাধি। তাকে বাঁচিয়ে তোলার সাধ্য আমাদের নেই। মনে হতে লাগল, আমাদের ছেড়ে তিনি বহুদূরে চলে যাচ্ছেন...হারিয়ে যাচ্ছেন... কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে সাদা মেঘের রাজ্যে ক্রমশ লীন হয়ে যাচ্ছেন। আমি হাত বাড়াচ্ছি কিন্তু তাঁকে পাচ্ছি না। উচ্চৈঃস্বরে কাঁদছি....................
আমার ঘুম ভেঙে গেল। ঘন ঘন শ্বাস পড়তে লাগল। ভেতরে ভেতরে ঘামতে লাগলাম। বিছানায় উঠে বসলাম। চারপাশে তাকালাম। মৃদু আলোয় আবছা ভাবে ঘরের চারপাশ দেখা যাচ্ছে। আমি মশারির একটা কিনার তুলে বেরিয়ে এলাম। ছুটে গেলাম মায়ের কাছে, মা তখন অঘোরে ঘুমোচ্ছেন। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। তারপর মায়ের বিছানার পাশে বসলাম, একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলাম মায়ের মুখের পানে। আমার দুগাল বেয়ে কয়েক ফোঁটা তপ্তঅশ্রু গড়িয়ে পড়ল। একটা ভয় যেন আমাকে পেয়ে বসেছে।
কিছুক্ষণ পর মা জেগে উঠলেন। জিজ্ঞেস করলেন,
-কী হয়েছে?
আমি বললাম,
-ভয় লাগছে মা।
মা আমাকে তাঁর পাশে শুতে বললেন। আমি মায়ের পাশে শুয়ে পড়লাম। আমার কান্না যেন উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠছিল। মা তাঁর একটি হাত আমার গায়ে রাখলেন। স্নেহের পরশ বুলাতে লাগলেন। মনে হল আমি যেন ফের আশ্রয় খুঁজে পেয়েছি।
আমার সেদিনের স্বপ্ন এবং পরবর্তী ব্যাপারগুলো সামান্য ঘটনা। কিন্তু এ ঘটনা আমার জীবনে এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। মায়ের প্রতি আমার ভালোবাসাটা আমি কখনো এমন ভাবে উপলব্ধি করিনি। জীবনযাত্রা আগের মতই চলতে থাকবে, হয়তোবা আগের মতই কোন কোন ব্যাপারে মায়ের সাথে ঠোকাঠুকি হবে; কিন্তু আমার এই মনটা বারবার বলে উঠবে - মাগো, তোমাকে ভালোবাসি...।
তোমার আদরে মাগো, তোমার মমতায়, ভালোবাসায় মাগো...আমায় ভরিয়ে দিও ।