আজকে মিমের সাথে প্রথম দেখা করবে আদিল। সুন্দর একটি পাঞ্জাবী পড়ল, সুন্দর পারফিউম মাখল, আর এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করতে লাগল। আজকে সারাদিন তারা একসাথে থাকার প্ল্যান করেছে। আদিল চন্তা করছে আজকেই মিমকে তার ভালোবাসার কথা বলবে। মিমকে প্রথমেই দেখে আদিল বিস্মিত। ছবি থেকে অনেক বেশি সুন্দর।
"হ্যালো কি অবস্থা আদিল?" শুরু থেকেই বেশ ফ্রি হয়ে গেল মিম।
"ভালো। তুমি কেমন আছ ? বেশ তাড়াতাড়ি এসে গেলে। জ্যাম এ পর নাই। আমি ত বিশাল জ্যাম পার হয়ে আসলাম।"
"তাও ত তুমি আমার আগেই আসলে। আমি তেমন একটা জ্যাম পাই নি।"
"এইগুলো তুমার জন্য," বলে গোলাপের গুচ্ছটা মিমের দিকে বাড়িয়ে দিলো আদিল।
"ওহ থ্যাংকস"!
স্যুপ খেতে খেতে তাদের মধ্যে অনেক কথা হল। কে কি পছন্দ করে না করে, কার শখ কি, প্রিয় খাবার, প্রিয় রং, এসব আর কি।
খাওয়া শেষ করে দুইজন একসাথে বাইরে বের হয়ে আসল। মিমকে রিক্সায় তুলে দিয়ে, আদিল তার মোবাইলটা বের করল, দেখল তার ম্যাডামের ম্যাসেজ আসছে; আরেকটি কবিতা।
রিক্সার মধ্যে মিমের মোবাইলটা ভাইব্রেশন করল, মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল আদিলের ম্যাসেজ, আর তাতে লিখা , "আই লাভ ইউ"।
মিম একটা হাসির ইমো পাঠিয়ে দিয়ে মোবাইলটা ব্যাগে রেখে দিলো। রাতের বেলা অনেকক্ষণ স্কাইপিতে ভিডিও চ্যাট করল আদিল। তখন অবশ্য ফোনটা বন্ধ করে রেখেছিলো, যাতে মিম ফোন করে না পায়।
দুইদিন পর আদিল বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় একটি গাড়ি এসে আদিলের সামনে দাঁড়াল, মিম জানালা দিয়ে গলা বের করে দিলো।
"এসো তোমায় নামিয়ে দিই। আমার মামার বাসা তোমার অফিসের কাছেই"।
আদিল হেসে গাড়িতে উঠল। আদিল উঠার পর মিম আদিলের বেশ কাছে এসে বসল। যদিও আদিলের ম্যাসেজের কোন উত্তর মিম দেয়নি। আদিল বেশ বুঝতে পারছে মিম তার প্রতি আগ্রহী।
"আজ এত দেরি করে অফিসে যাচ্ছ"?
"সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছিল, তাই"।
"ও, কেন? রাতে ত বেশ তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেলে"।
"তোমার সাথে কথা বলে অফিসের কাজ করেছিলাম। তাই ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল"।
"একি তোমার হাতে কি হয়েছে"? বলেই মিম আদিলের হাতটা ধরল। আদিলের হাতে ছোট একটা ব্যান্ডেজ। কাল রাতে ছুরি দিয়ে হাত কেতে ফেলেছে। আদিলের হাটতা ধরার সাথে সাথে মিম আর আদিলের মাঝে কেমন যেন একটা দৃষ্টি বিনিময় হল।
"ঐটা কিছু না। কাল ছুরি দিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে কেটে গিয়েছে"।
"একটু সাবধানে থাকলেই ত হয়"। মিমের এই খেয়ালটা আদিলের বেশ ভালো লেগেছে।
আদিল যখন অফিসে ঢুকে, তখন দেখে ম্যাডামও অফিসে ঢুকছে। ম্যাডামেরও আজ আসতে বেশ দেরি হয়েছে। দুপুরের খাবারের সময় ম্যাডাম আদিলকে একসাথে লাঞ্চের অফার করল। আদিল আর ম্যাডাম প্রায়ই একসাথে লাঞ্চ করে। আর এই বিষয়টা নিয়ে তাদের অফিসে বেশ কানাঘুষাও হয়। তবে এটাকে তারা তেমন একটা পাত্তা দেয় না।
"গতকালকে রাতে আমার নতুন লেখা কবিতাটা পড়েছিলে"? স্যুপের চামচে চুমুক দিতে দিতে ম্যাডাম জিজ্ঞেস করল।
"হুম, ম্যাডাম পড়েছি। ভালোই হয়েছে। বেশ প্রাঞ্জল আর সাবলিল ছিলো কবিতার লাইনগুলো"।
"বাড়িয়ে বলছ না ত"?
"না না, ম্যাডাম একদম না। কেন ম্যাডাম অন্যান্য ব্লগারদের কমেন্টসগুলো পড়েন নি"?
"তা পড়েছি। লাঞ্চ শেষ করে আজ আর অফিসে যেতে হবে না। একটু শপিংএ যাব। তুমিও চলো আমার সাথে। তোমার আপত্তি নেই ত"।
"না ম্যডাম, আপত্তি নেই"।
ম্যাডাম এই অফিসের বস, ম্যাডামের সাথে কোথাও গেলে আর যাই হউক অফিসের কোন ঝামেলা হবে না।
ম্যাডামের সাথে শপিং করে, ডিনার করে বাসায় ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হলো আদিলের। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে মিমকে ফোন করল আদিল। রাত প্রায় দু'টা পর্যন্ত কথা বলে আদিল ঘুমাতে গেল।
অফিসে মনোযোগ দিয়ে কাজ করছিল আদিল। হটাৎ ল্যাপটপের দিকে চোখ পড়তেই দেখে একটা ই-মেইল এসেছে ম্যাডমের কাছ থেকে। ম্যাডাম রাতের বেলা আদিলকে ডিনারে দাওয়াত দিয়েছে তার বাসায়। ই-মেইল শেষে আবার এটাও লেখা আছে যে, ম্যাডাম বাসায় একা থাকবেন। ই-মেলটা পড়ে আদিল মুচকি হাসল।ই-মেইল পাওয়ার ঘন্টখানেক পর আদিল ম্যাডামের রুমে গেল একটা ফাইল নিয়ে। ফাইলটাতে ম্যাডামের সই দরকার। ফাইলটা সই করে ম্যাডাম আদিলকে চা/কফি খাওয়ার অফার করল। আদিল না করল।
"ম্যাডাম আমি এখন একটু ছুটি নিয়ে বাসায় যেতে চাই"।
"ওকে যাও। সমস্যা কোথায়?" ম্যাডাম আদিলের এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন। কারণ ম্যাডাম ভালো করেই জানেন আদিল বাসায় যাচ্ছে ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আদিল তার অতি প্রিয় সাদা রঙের শার্টটা পড়ল। বেশ সেজেগুজে পরিপাটি হয়ে আদিল ম্যাডামের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। যাওয়ার সময় একটা ফুলের তোড়া নিয়ে গেল।
দু'বার বেল বাজতেই ম্যাডামই দরজা খুলে দিল।
"বাসায় কেউ নেই"?
ম্যাডাম একটা হাসি দিয়ে চুল গুলো সামনের দিকে এনে বলল, "না নেই, তোমাকে না তখনই বললাম"।
ফুলের তোড়াটা টেবিলের উপর রেখে আদিল সোফায় বসল। ম্যাডামও সোফায় বসল পা ভাঁজ করে, বন পায়ের উপরে ডান পা তুলে। আদিল ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে আছে। অপরূপ সুন্দর লাগছে ম্যাডামকে। একটা
পাতলা টিস্যুর শাড়ী, ম্যাচিং করা ব্লাউজ, গহণা, পারফিউম সব মিলিয়ে মাথা ঝিম করা পরিবেশ। ম্যাডামের পারফিউমের গন্ধ সারা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়েছে। ম্যাডামের চুলগুলো তখনও সামনের দিকে রয়েছে। ম্যাডাম
আঙ্গুল দিয়ে ছুলে বিলি কাটছেন আর আদিলের দিকে তাকিয়ে আছেন।
"চলো বেডরুমে গিয়ে তোমাকে একটা জিনিস দেখাই"।
সুবোধ বালকের মত ম্যাডামের পিছন পিছন গেল আদিল। বেডরুমে ঢুকতেই আদিল ম্যাডামের কোমর ধরে ম্যাডামকে তার কাছে নিয়ে আসল। ম্যাডামও যেন ঠিক এটার জন্যই অপেক্ষা করছিল। একদম আদিলের বুকে গিয়ে পরে গেল।............
বাথরুমের বেসিনে আদিল মুখ ধুচ্ছে। সাদা শার্টের মধ্যে লাল রক্তের দাগটা বেশ অনেকটাই লেগেছে। এই রঙটা আদিলের মুখে একটা পৈশাচিক হাসি ফুটিয়ে তুলে। বেডরুমের মেঝেতে ম্যাডামের গলা কাটা নিথর দেহটা পরে আছে। আর ওদিকে আদিলের মোবাইলে মিমের ফোন বেজেই চলেছে।
(আদিল বর্তমানে মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সে এ পর্যন্ত ১১ টা মেয়েকে এভাবে খুন করেছে। গ্রেফতারের পর আদালত তাকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেয়)